নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুসাহিত্যিক বিমল ঘোষের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৪


শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক এবং মণিমেলার প্রতিষ্ঠাতা বিমল ঘোষ। মৌমাছি তার ছদ্দ নাম। মৌমাছি বিমল ঘোষ মূলত কবি ছিলেন না, ছিলেন শিশুসাহিত্যিক। ১৯৪০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় ছোটদের জন্য “আনন্দমেলা” নামক একটি অংশ নির্দিষ্ট করা হয়। বিমল ঘোষ “মৌমাছি” নামে এই বিশেষ বিভাগটি পরিচালনা করতেন। তাঁর রচিত শিশুসাহিত্য বিষয়ক রচনা শতাধিক। কবিতা, ছড়া, নাটক, গল্প সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। শিশু-কিশোরদের নিয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনার অন্ত ছিলোনা। তাদের নিয়ে ভাবতেন বলেই তাঁর লেখা অসংখ্য বইয়ে তিনি ছোটদের জন্য সৃষ্টি করলেন এমন এক অনন্য ভুবন যেখানে মায়াবী জগতের সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, তাদের সাথে মজার খেলায় মত্ত হয়েও ছোটরা একই সঙ্গে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে এক প্রবহমান শক্তি-প্রাচীর। নিছকই আজগুবি কোনো কিছুকে মৌমাছি শিশু-মনে লালন করতে দিতে চাইতেন না। চল্লিশের দশকে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি থেকে তাঁর একটি নাটক ‘সোনার বাংলা’-র গ্রামাফোন রেকর্ড দু’ খন্ডে প্রকাশিত হয়। ভ্রমণ ও শিক্ষামূলক এই নাটকে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ছোটদের দেশাত্মবোধের কথা শুনিয়েছেন। ওই নাটকেই তিনি স্পষ্টভাষায় ছোটদের ভূতুড়ে গল্প পড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা তাতে ক্ষতিকর দিক ছাড়া, ছোটদের ভীতু করা ছাড়া গঠনমূলক কিছু নেই বলে তিনি মনে করতেন। তিনি চাইতেন ছোটরা অল্প বয়স থেকেই মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হয়ে উঠুক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সেই সমাজের যেখানে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ থাকবে না। তাঁর অধিকাংশ লেখাতে তাই আমরা ছোটদের ভবিষ্যতের সুনাগরিক হওয়ার প্রত্যাশার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাঁর শিল্পীসত্তা দিয়ে অনুভব করেছিলেন, ছোটবেলা থেকে শিশুদের মধ্যে পড়াশুনার পাশাপাশি শিল্পচেতনা জাগিয়ে তুলতে পারলে তারা ভবিষ্যতে সুনাগরিক হবার সুযোগ পাবে। তাই মৌমাছি মণিমেলার কর্মসূচির মধ্যে শিল্পকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, শিক্ষামূলক শিল্পচর্চা শিশু ও কিশোরদের সুস্থ, সরল ও আনন্দময় জীবনের সন্ধান দেবে এবং নিয়মানুবর্তিতা ও নম্র হতে সাহায্য করবে। শিশুদের চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে তিনি ‘মণি পাঠাগার’কে মণিমেলা কর্মসূচির মধ্যে প্রধান বিষয় হিসাবে স্থান দিয়েছিলেন। আজ শিশুসাহিত্যিক বিমল ঘোষের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিশুসাহিত্যিক বিমল ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিমল ঘোষ ১৯১০ সালের ১৮ মার্চ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৯ সালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার ও প্রফুল্লকুমার সরকারের ডাকে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দিয়েছিলেন। এর কিছু দিন পর, ১৯৪০-এর ১৫ এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকার শেষ পাতায় ভারতীয় ভাষায় ছোটদের গল্প, কবিতা, ছড়া, ছবিতে সুসজ্জিত হয়ে প্রকাশিত হল একটি চমকপ্রদ চিরনতুন পাতা-- ‘আনন্দমেলা’। পরিচালক ‘মৌমাছি’ ছদ্মনামে বিমল ঘোষ। এর পর থেকে প্রতি সোমবার আনন্দের নানা পশরা সাজিয়ে এটা প্রকাশিত হত। আনন্দমেলার পরিচালক হিসাবে তিনি এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁর কাছে ছোটদের হাজার হাজার চিঠি আসত আর সপ্তাহান্তে আনন্দমেলায় প্রকাশিত তাঁর ‘মৌমাছির চিঠি’ পড়ার জন্য ছোটরাও মুখিয়ে থাকত। আসলে শুধুই আনন্দদান বা তাৎক্ষণিক তৃপ্তির জন্য তিনি মৌমাছি কলম ধরেন নি। শিশুদের ভালোবেসে, জাতি গঠনের জন্য তাদের দায়িত্বসচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি আনন্দমেলার পাতায় নিয়মিত যে চিঠিগুলি লিখতেন তা পড়ে শিশুরা যাতে জ্ঞানার্জন করতে পারে সেজন্য তাঁর চেষ্টার অবধি ছিল না। শোনা যায় শিশুকিশোরদের চিঠির প্রশ্নের উত্তরে এই চিঠিগুলি লেখার সময় মাঝেমাঝে তিনি বিশেষজ্ঞদের সাহায্যও নিতেন। আর তাই সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, মজার খেলা, শিল্পচর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলি আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপনের জন্য আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শিশু-কিশোরদের কাছে ‘মৌমাছি’ এবং ‘আনন্দমেলা’ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ছোটদের জন্য মৌমাছি প্রায় একশ চল্লিশটি বই লিখেছেন। যদিও তার অধিকাংশই আজ আর পাওয়া যায় না। শিশু সাহিত্য সংসদ(কলকাতা) প্রকাশিত তাঁর চেঙা বেঙা সিরিজের তিনটি বই(পিকনিক, নাকাল নেংটি, চালাক বোকা) এবং কার্তিক ঘোষ সম্পাদিত মৌমাছি রচনা সম্ভার (মায়ের বাঁশি-উপন্যাস, কয়েকটি কবিতা, দুটি রূপকথা ও অ্যাঙাচি ব্যাঙাচি, টুনটুনি আর ঝুনঝুনি, কালটু-গুলটু) ছাড়া আর কোনো বই পাওয়া যেত না। আশার কথা এই যে, তাঁর জন্মশতবর্ষকে স্মরণে রেখে ২০১০ সালে কলকাতার লালমাটি প্রকাশন নিমাই গরাই-এর সম্পাদনায় মৌমাছি রচনাসমগ্র ১ নামে অত্যন্ত শোভন একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। শোনা যাচ্ছে তাঁরা খন্ডে খন্ডে মৌমাছির অধিকাংশ লেখাই প্রকাশ করবেন। মৌমাছি রচনাসমগ্র ১-এ স্থান পেয়েছে, গল্পগ্রন্থ : যে গল্পের শেষ নেই, নয়া যুগের রূপকথা, বাছা বাছা, কালটু গুলটু ; উপন্যাস : মায়ের বাঁশি, ঝড়ের পালক ; কার্টুন : রাজার রাজা(স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী); নাটক : কথামালা রাজকন্যে; এবং মৌমাছির চিঠি।

ছোটদের কাছে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই চেঙা-বেঙা(১৯৫৬)। মজার ছবি ও গল্পের এ এক অনন্য বই। মৌমাছির লেখা গল্পে ছবি এঁকেছিলেন শিল্পী ধীরেন বল। অবশ্য বর্তমানে যে সংস্করণ পাওয়া যায় তার ছবি এঁকেছেন প্রশান্ত মুখার্জি। ধবধবে সাদা এক ছোট্ট খরগোশ-- নাম তার চেঙা। আর সবুজ গা, থপথপে চলন যে ব্যাঙের তার নাম বেঙা। এই দুই বন্ধুর মজার কান্ডকারখানা নিয়ে তিনটি অ্যাডভেঞ্চারের গল্প লিখেছিলেন মৌমাছি-- পিকনিক, নাকাল নেংটি, চালাক বোকা। তিনটিই শিশুদের কাছে সমান জনপ্রিয়। এই গল্প সিরিজটি লেখার জন্য মৌমাছি সাহিত্য অকাদেমি কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছিলেন। উপন্যাসের পাশাপাশি ছোটদের উপযোগী অনেক গল্পও লিখেছেন বিমল ঘোষ। কিন্তু প্রতিটি গল্পেই তিনি তাদের জন্য কিছু না কিছু বার্তা রেখেছেন যা তাদের মানসগঠনে সহায়ক হতে পারে। এমনই দুটি গল্পগ্রন্থ ‘যে গল্পের শেষ নেই’(১৯৪২) এবং ‘নয়া যুগের রূপকথা’(১৯৪৭)। সুন্দর কিছু ছড়া-কবিতাও লিখেছিলেন মৌমাছি। যদিও তাঁর ছড়ার বই ‘মৌ-মিছরি-মন্ডা’ প্রকাশিত হয়েছিল তার মৃত্যুর অনেক পরে ১৩৯০ বঙ্গাব্দে। কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি যে সব ছড়া-কবিতা লিখতেন তা প্রায় সর্বাংশেই কৌতুকদীপ্ত ও রসোত্তীর্ণ। গল্প-কবিতা-উপন্যাসের পাশাপাশি মৌমাছি ছোটদের জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক রচনা করেছিলেন। শুধু নাটক লেখা নয়, ছোটদের দিয়ে তিনি সেগুলি মঞ্চে অভিনয়ও করিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রধান দুটি নাটক হল-- ‘পুতুলের দেশ’ এবং ‘যারা মানুষ নয়’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী শিক্ষাবিজ্ঞানী না হলেও মৌমাছি প্রকৃতঅর্থেই ছিলেন এক আধুনিকমনস্ক শিক্ষাবিজ্ঞানী যিনি তাঁর ভাবনা ও কর্মকে শিশুকল্যাণে যুগপৎ মিলিয়েছিলেন। আজ শিশুসাহিত্যিক বিমল ঘোষের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিশুসাহিত্যিক বিমল ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: বিমল মিত্র নামে তো একজন লেখক আছেন না?

০৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জি আছে খান সাহেব।
বিমল মিত্র কজন ভারতীয় বাঙালি লেখক।
তিনি বাংলা ও হিন্দি উভয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন।
তার 'কড়ি দিয়ে কিনলাম' গ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ সালে তিনি
রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। তার বিখ্যাত উপন্যাস "চাই"
'সাহেব বিবি গোলাম', গুলমোহর, আসামী হাজির ইত্যাদি।
আগামী ১৮ মার্চ তার জন্মদিন। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
চাইলে আমার সাথে থাকুন।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সম্মান ,শ্রদ্ধা ।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে আলি ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.