নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কমরেড চৌ এন-লাই এর ১২২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৬


আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা কমরেড চৌ এন-লাই (Zhou Enlai)। তিনি ছিলেন মহান সর্বহারা-শ্রেণীর বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ, সমরবিদ এবং কূটনীতিবিদ, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন গণ-প্রজাতন্ত্রের প্রধান নেতৃবৃন্দের অন্যতম, চীনা গণ-মুক্তি-ফৌজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি অক্টোবর, ১৯৪৯ থেকে জানুয়ারি, ১৯৭৬ পর্যন্ত দেশমাতৃকার সেবা করে যান। অবিসংবাদিত নেতা মাও সে তুংয়ের অধীনে তিনি কাজ করেন ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায় আরোহণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি দীর্ঘকাল ধরে পার্টি ও দেশের দৈনন্দিন কার্যের ভারী কর্তব্য বহন করেছেন। এছাড়াও, বৈদেশিক নীতি পুণর্গঠনসহ চীনা অর্থনৈতিক উত্তরণে সবিশেষ অবদান রাখেন। তিনি পর পর এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কয়েক ডজন দেশ সফর করেন, বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক নেতৃবৃন্দ এবং বন্ধুভাবাপন্ন ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা জানান, চীনা জনগণ এবং বিশ্বের জনগণের মৈত্রী বাড়ানোএবং পৃথিবীতে চীনের প্রভাব সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আজ এই বিপ্লবী নেতার ১২২তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৮ সালের আজকের দিনে তিনি চীনের চিয়াং সু প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কমরেড চৌ এন-লাই এর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

কমরেড চৌ এন লাই ১৮৯৮ সালের ৫ মার্চ চীনের চিয়াং সু প্রদেশের হুই আনের চৌ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চৌ ইনেং এবং মাতা ওয়ান। চৌ এন-লাই এর পিতা চৌ ইনেং তাঁর সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ভদ্রতা, বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও দূর্বলচিত্তের অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সফলতা লাভ করেননি। চীনের বেইজিং, শানতুং, আনহুই, শেনইয়াং, ইনার মঙ্গোলিয়া এবং সিচুয়ান প্রভৃতি এলাকায় বহুবিধ পেশায় কাজ করেছেন। চৌ এন-লাই পরবর্তীকালে উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর বাবা সবসময় বাড়ী থেকে দূরে থাকতেন এবং পরিবারকে সহায়তা করতে পারছিলেন না। জন্মের কিছুকাল পরেই বাবার ছোট ভাই ঝো ইগেন তার দেখাশোনার ভার নেন। এ দত্তক প্রক্রিয়া ছিল মূলতঃ উত্তরাধিকারী রক্ষার স্বার্থে। অল্প কিছুদিন পর ঝো ইগেন মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী চেনের কাছে বড় হতে থাকেন চৌ এন-লাই। মাদাম চেন বৃত্তিপ্রাপ্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং সনাতনী ধারায় সাহিত্যে শিক্ষালাভ করেছিলেন। চৌ এন-লাইয়ের ভাষ্য মোতাবেক, তিনি দত্তক মায়ের খুবই কাছাকাছি ছিলেন। ফলে তাঁর কাছ থেকে চৈনিক সাহিত্য ও অপেরা সম্পর্ক আগ্রহান্বিত হন। চেন, চৌকে শৈশবকাল থেকেই পড়তে ও লেখতে সাহায্য করেন। ছয় বছর বয়সেই জনপ্রিয় উপন্যাস জিইউজি পড়তে সক্ষমতা দেখান চৌ এন-লাই। আট বছর বয়সে তিনি ওয়াটার মার্জিন, রোমান্স অব দ্য থ্রী কিংডোমস, ড্রিম অব দ্য রেড মেনসনসহ অন্যান্য চীনা প্রাচীন উপন্যাস পড়ে ফেলেন। দক্ষ ও ঝানু কূটনীতিবিদ হিসেবে চৌ এন-লাই ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কোরীয় যুদ্ধের পর তিনি পশ্চিমা দেশসমূহের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালান। ১৯৫৪ সালে জেনেভা কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন

১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত চীনের প্রথম পাঁচ সালা পরিকল্পনা চলাকালে তিনি ১৫৬টি নির্মান প্রকল্পের কেন্দ্রীভূত শিল্প গঠনের কাজে নেতৃত্ব দেন। তিনি চীনের শিল্পায়নের জন্য প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করেন বিশেষভাবে জলসেচ নির্মান এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগতউন্নয়নের উপর মনোযোগ দেন, এবং এর জন্য বিরাট অবদান রাখেন।তিনি চীনের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রণয়ন এবং কার্যকরী করেন। ১৯৫০ সালে কোরিয় যুদ্ধ বাঁধলে তিনি কমরেড মাও সে তুংকে সহযোগিতা করে চীনা গণ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পরিচালনা করেন, চীনা প্রতিনিধি দলের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় নেতৃত্ব করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি চীনের প্রতিনিধি দল নিয়ে জেনিভা সম্মেলনে অংশ নেন, আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর করার ফলে ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া এই তিনটি দেশের স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। তিনি চীন সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র-রাষ্ট্র সম্পর্কের মৌলিক নীতি হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি উত্থাপন করেন। এছাড়াও ১৯৬০ সালের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হন।ফলশ্রুতিতে ১৯৭২ সালে রিচার্ড নিক্সনকে চীনে সফরে নিয়ে আসতে সমর্থ হন। যুগোপযোগী নীতি-নির্ধারণী পন্থা তৈরী করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, ভারত এবং ভিয়েতনামের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বৈদেশিক নীতিতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী ব্যক্তিত্ব। মাও সে তুং এবং চৌ এন-লাই দুই ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলেও উভয়েই কার্যকরী কর্মপন্থার সন্নিবেশ ঘটিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে আমেরিকান কূটনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার উভয়ের সাথে পৃথক বৈঠক করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে চীন-আমেরিকার মধ্যেকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটতে শুরু করে। মাওয়ের কর্মীরা উদীয়মান অর্থনৈতিক খাত হিসেবে পেট্রোলিয়াম শিল্পে কর্মরত ছিল। তাঁর পরামর্শে পার্টির নেতৃত্বে পেট্রোলিয়াম শিল্প বিকাশে বড় ধরনের আমেরিকান প্রযুক্তি ও কারিগরী বিদ্যায় অভিজ্ঞদের অংশগ্রহণ অনিবার্য্যতার কথা তুলে ধরা হয়। এ প্রেক্ষাপটে চীন আমেরিকার পিং-পং দলকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানায় যা পিং-পং কূটনীতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

(১৯৫৬ সালে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই বাংলাদেশ সফরে এলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সৌজন্যে স্বাগত বক্তব্য দেন)
চীনের সঙ্গে তৎকালীন বঙ্গভূখণ্ডের সুসম্পর্ক কয়েক হাজার বছরের। সেই অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। দুই ভূখণ্ডের শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিনিময় ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ। চীন-বাংলার মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ১৪০০ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে মিং রাজাদের রাজত্বকালে। ১৪০৪ সালে চীনের রাজা জু দির রাজত্বকালে বাংলার সুলতান চীনে নিজস্ব দূত পাঠিয়েছিলেন। ১৪০৯ সালে এই দূতিয়ালির সংখ্যা বাড়তে থাকে। চীন রাজারাও বাংলায় দূত পাঠাতেন। সেটা বছরে ২০০ বার পর্যন্ত অতিক্রম করত। চীন আর বাংলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি ঘটনা ঘটে ১৪১৪ সালে। তৎকালীন বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিনের ছেলে সুলতান সাইফুদ্দিন শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ ছিলিন নামে আফ্রিকার একটি জিরাফ চীনকে উপহার দেন। এ ধরনের প্রাণীর বিষয়ে তখন চীনবাসীর কোনো ধারণা ছিল না। দেশ ভাগের পরপরই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের পর্যায়ে চলে যায়। পঞ্চাশের দশকে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সফরের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ববাংলার সঙ্গে চীনের সুগভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার জাতীয় নেতা। চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিনি দুইবার চীন সফরে যান। সে সুবাধে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয় চীনের জাতীয় নেতা মাও সেতুং, চৌ এন লাই, জু দে ও লিউ সাউছি প্রমুখের সঙ্গে। ১৯৭৬ সালের ৮ জানুয়ারী চৌ এন লাই পেইচিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশে নেমে আসে শোকের কালো ছায়া। তাঁকে হারানোর বেদনা জনগণের অশ্রু-বৃষ্টিতে প্রতিফলিত হয়। তিনি সবসময় পরিশ্রম করেন, নিজেকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, জনসাধারণকে যত্ন করেন, তাই তাঁকে "জনগণের উত্তম প্রধানমন্ত্রী" বলে ডাকা হতো। আজ এই বিপ্লবী নেতার ১২২তম জন্মবার্ষিকী। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কমরেড চৌ এন-লাই এর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


চীনে কম্যুনিষ্ট বিপ্লবের পর, কয়েক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় দুর্ভিক্ষ থেকে, উনি ও মাও মানুষকে রক্ষা করতে সমর্তন হননি।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং
ও রাষ্ট্রপতি শি (জিনপিং) করোনা ভাইরাস
থেকে তাদের জনগণকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়নি
এ জন্য কি তাদের ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ফেলতে হবে?

২| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো একটা তথ্য দিয়েছেন।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে খান সাব,
তথ্যটি ভালো লাগার জন্য !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.