নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
উনিশ শতকে বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি নবীনচন্দ্র সেন। দেশপ্রেমিক কবি হিসেবেই খ্যাত ছিলেন নবীনচন্দ্র সেন। পলাশীর যুদ্ধের কবিরূপে ঊনিশ শতকের নবজাগরণের কবি নবীনচন্দ্র সেকালে বাংলাসাহিত্যে সর্বাধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও তাঁকে আমরা এখন প্রায় ভুলতে বসেছি। ‘পলাশীর যুদ্ধ’ প্রকাশের সাথে সাথে চট্টলার খ্যাতিমান এই কবির এই কাব্যগ্রন্থ নিয়ে ‘বঙ্গদর্শন’, ‘বান্ধব’ ও ‘আর্যদর্শন’ এই তিন সাময়িক পত্রিকায় উল্লেখযোগ্য আলোচনা হয়।ছাত্রজীবন থেকেই নবীনচন্দ্র কবিতা রচনা শুরু করেন। প্যারীচরণ সরকার সম্পাদিত এডুকেশন গেজেটে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অবকাশরঞ্জিনী’ প্রকাশিত হয় ১৮৭১ সালে। কবি সুকৌশলে আপন-জীবনের দুঃখের কাহিনী বয়ান করেন এই কাব্যে। ১৮৭৫ সালে ‘পলাশীর যুদ্ধ’ মহাকাব্য প্রকাশিত হলে নবীনচন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন। স্বজাতিবোধ ও স্বদেশানুরাগ তাঁর কাব্যের মৌলিক অবদান। বস্তুত একজন দরদী স্বভাবকবি ছিলেন নবীন চন্দ্র। পলাশীর যুদ্ধ কাব্য প্রকাশিত হলে তিনি যে একজন প্রতিষ্ঠিত সফল লেখক, তা সবাই বুঝতে পারেন। তিনি ভগবতগীতা ও চন্ডি’র কাব্যানুবাদ করেন। অতঃপর কবি নবীনচন্দ্র সেন ক্রমান্বয়ে রঙ্গমতী, রৈবতক, কুরুক্ষেত্র, প্রভাস, অমিতাভ, অমৃতাভ প্রভৃতি কাব্য প্রণয়ন করেন। এ কাব্যগুলো সাধারণ পাঠক মনে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কর্মজীবনে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন নবীনচন্দ্র সেন। সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত থাকাকালে বহুস্থানে বহু জনহিতকর ও সংস্কারকর্মে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আজ এই করিব ১০৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯০৯ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কবির মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কবি নবীনচন্দ্র সেন ১৮৪৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিমগুজরার (নোয়াপাড়া) সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন জমিদার রায় পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার ‘রায়’ উপাধি বাদ দিয়ে তিনি কেন ‘সেন’ উপাধি ব্যবহার করতেন তা জানা যায় না। জাতিতে তাঁরা ‘বৈদ্য’ ছিলেন। পরিবারটি বিশাল সহায় সম্পত্তি ও গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী ছিল। নবীনচন্দ্র সেনের পিতার দোর্দ্দণ্ড প্রতাপের সাথে প্রজাবৎসল সহজ-সরল-উদার মানসিকতার কারণে যথেষ্ট সুনাম ছিল। নবীনচন্দ্রের কবিতানুরাগী পিতার ফার্সি ভাষায় পাণ্ডিত্য ছিল। তাঁর পিতা-গোপীমোহন রায় এবং মাতা রাজ রাজেশ্বরী। নবীনচন্দ্রের পিতা গোপীমোহন ছিলেন চট্টগ্রামের জজ আদালতের পেস্কার, পরে আইন পড়ে মুন্সেফ ও উকিল হন। নবীনচন্দ্রের হাতেখড়ি হয় পাঁচ বছর বয়সে। দু’বছর গ্রামে গুরু মশাইর কাছে, পরে আট বৎসর বয়সে চট্টগ্রাম শহরে পিতার তত্ত্বাবধানে তাঁর পড়াশুনা চলে স্কুলে। মাত্র পাঁচবছর বয়সে লেখাপড়া শুরু করেন নবীনচন্দ্রস সেন। মেধাবী অথচ অমনোযোগী ছাত্র নবীনচন্দ্র ১৮৬৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম স্কুল (বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথমশ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির বৃত্তি লাভ করেন। এই সময়ে এক আত্মীয়কন্যাকে কেন্দ্র করে কিশোর নবীনচন্দ্রের অন্তরে যে প্রণয় সঞ্চারিত হয়েছিল তার আবেগ ও ব্যর্থতার সুরধ্বনিত হয়েছে তাঁর প্রেমের কবিতাসমূহে। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নবীনচন্দ্র ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। এফএ পরীক্ষার একমাস পূর্বে তাঁর বিয়ে হয় লক্ষ্মীকামিনী দেবীর সাথে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা যান। ১৮৬৫ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফএ এফএ পাশ করেন বটে, কিন্তু বৃত্তি না পাওয়াতে তাঁকে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়তে হয়। তিনি ভর্তি হন জেনারেল এসেম্ব্লিজ ইনস্টিটিউশনে (স্কটিশচার্চ কলেজ) । জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশনথেকে ১৮৬৮ সালে বিএ পাশ করেন। এসময় পিতৃবিয়োগের কারণে দুর্ভাগ্যের মেঘ ঘনিয়ে আসে নবীনচন্দ্রের পারিবারিক জীবনে। তখন বিদ্যাসাগরের অর্থসাহায্যে এবং ছাত্র পড়িয়ে নবীনচন্দ্র কোলকাতায় নিজের ব্যয় ও চট্টগ্রামের পোষ্যবর্গের ব্যয় নির্বাহ করেন। এর পর ১৮৬৮সালের ১৭ জুলাই থেকে ১৯০৪সালের ১ জুলাই সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৬ বৎসর নবীনচন্দ্র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর রূপে উপমহাদেশের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার বিভিন্নস্থানে শাসনকার্য পরিচালনা করেন দক্ষতা ও যোগ্যতাসহকারে।
(This ornate chair belonged to poet Nabin Chandra Sen)
নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা "কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি" প্রকাশিত হয় তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা এডুকেশন গেজেট-এ, যখন তিনি এফ.এ (বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক) শ্রেণীর ছাত্র। তাঁর প্রথম বই "অবকাশরঞ্জিনী"র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮৭১ সালে এবং এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারি, ১৮৭৮ সালে। এটি ছিলো দেশপ্রেম ও আত্মচিন্তামূলক কবিতার সংকলন। কিন্তু তাঁর কবিখ্যাতি পরিপূর্ণতা পায় ১৮৭৫ সালে প্রকাশিত পলাশীর যুদ্ধ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর। নবীনচন্দ্রের কাব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কাব্য হচ্ছেঃ ১। পলাশির যুদ্ধ-১৮৭৫, ২। রৈবতক- ১৮৮৭, ৩। কুরুক্ষেত্র-১৮৮৩ ও ৪। প্রভাস-১৮৯৭ শেষের কাব্য তিনটি একটি বিরাট কাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ। এই কাব্য তিনটিতে কৃষ্ণচরিত্রকে কবি বিচিত্র কল্পণায় নতুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কবির মতে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধ হয়েছিল। এবং আর্য অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন। নবীনচন্দ্রের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ১। ক্লিওপেট্রা (১৮৭৭), ২। অমিতাভ (১৮৯৫), ৩। রঙ্গমতী (১৫ই জুলাই ১৮৮০) এবং ৪। খৃষ্ট (১৮৯০)। নবীনচন্দ্র কিছু গদ্যরচনাও করেছিলেন। তাঁর আত্মকথা "আমার জীবন" উপন্যাসের মত একটি সুখপাঠ্য গ্রন্থ। আত্মজীবনীতে স্মৃতিকথায় নবীনচন্দ্র সেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাঁর পরিচয়-হৃদ্যতা গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেন। আমার জীবন পাঁচ খণ্ডে সামাপ্ত করেণ তিনি। এছাড়াও তিনি ভানুমতী নামে একটি উপন্যাসও রচনা করেছিলেন। তিনি ভগবতগীতা এবং মার্কণ্ডেয়-চণ্ডীরও পদ্যানুবাদ করেছিলেন। নবীনচন্দ্রের কবিত্ব জায়গায় জায়গায় চমৎকার কিন্তু কবি এই চমৎকারিত্ব সব জায়গায় বজায় রাখতে পারেন নি। এই কারণে এবং কাব্য বাঁধুনি না থাকায় নবীনচন্দ্রের কবিত্বের মূল্যায়ন হয়নি।
১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামস্থ স্বীয় বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কবি নবীনচন্দ্র সেন। আজ কবি নবীনচন্দ্র সেনের ১০৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। উনিশ শতকের দেশপ্রেমিক কবি নবীনচন্দ্র সেনের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
রাজীব ভাই হিসেবে বড় গড়মিল হয়ে গেল,
আমিও জীবনের হিসাব মিলাতে পারিনাই
অংকে কাঁচা বলে।
কবি নবীনচন্দ্র সেন বেঁছে থাকলে তার বয়স
হতো ১৭১ বছর। ভালো থাকবেন।
২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২১
আবু তালেব শেখ বলেছেন: ১২৭৮ সালে তাঁর ‘অবকাশরঞ্জিনী’ প্রকাশিত হ য়। তাহলে এবার হিসাব করেন কত বয়স হত এখনো বেচে থাকলে
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভ্রাতা আবু তালেব,
সম্ভবত ভুল হয়েছে কোথাও
প্রকৃত পক্ষে ১৮৭১ তাঁর ‘অবকাশরঞ্জিনী’
প্রকাশিত হয়। আশা করি হিসাবটা মিলবে এবার।
৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:২৯
প্রামানিক বলেছেন: কবি নবীনচন্দ্র সেনের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই
কবি নবীনচন্দ্রের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৮
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: কবি নবীনচন্দ্র সেন আমাদের ফেনী মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে অনেক শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ লিটন ভাই.
কবি নবীনচন্দ্র সেনের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: বেচে থাকলে লোকটার ১০৮ বছর হতো আজ।