নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
নাট্যমঞ্চের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ও সু-অভিনেতা, সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক এবং কবি বিজন ভট্টাচার্য। বিশ শতকের বাংলা নাট্যকলার ইতিহাসে ট্র্যাজিক নায়কের বিপজ্জনক প্রথম শিরোপা যদি শিশিরকুমার ভাদুড়ির প্রাপ্য হয়, তা হলে ওই শিরোপার দ্বিতীয় দাবিদার সম্ভবত বিজন ভট্টাচার্য। ১৯৪৩ সালে বাংলার মন্বন্তরের উপর আধারিত তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘নবান্ন’ আজও জনপ্রিয়। খুবই শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন বিজন ভট্টাচার্য, কিন্তু নাটক বা ফিলমে অভিনয়ে তাঁর যে অভিমুখ তৈরি হয়েছিল, তাও আমাদের মন থেকে তাঁর ট্র্যাজিক ছবিটি মুছে দিতে পারেনি। তিনিই প্রথম বাংলা রঙ্গমঞ্চকে পুরাণ ও ইতিহাসের রোম্যান্টিক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন। তাঁর রচিত নাটকের তালিকা খুব দীর্ঘ নয়। অথচ নাটককার হিসেবে তাঁর কলমে শক্তি কম ছিল না। তাঁর অভিজ্ঞতা পরিধি ছিল বিশাল। উচ্চমধ্যবিত্ত জীবন থেকে গ্রামীণ চাষি বেদে শ্রমিকদের জীবন পর্যন্ত সকলের মুখের বাগ্ভঙ্গিটি তিনি অনায়াসে তুলে আনতে পারতেন। মৃত্যুর ছ’বছর আগে তাঁর নাট্যরচনার সমাপ্তি ঘটে। ভারতীয় ‘সংসদ বাংলা নাট্য অভিধান’ অনুযায়ী তার নাট্য তালিকায় আছে ‘আগুন’ (একাঙ্ক, ১৯৪৩), জবানবন্দী (১৯৪৩), ‘নবান্ন’ (১৯৪৪), ‘মরা চাঁদ’ (১৯৪৮, প্রথমে একাঙ্ক, ১৯৬০-এ পূর্ণায়িত), ‘অবরোধ’ (১৯৪৭), ‘জতুগৃহ’ (১৯৫১), ‘গোত্রান্তর’ (রচনা ১৯৪৭, ১৯৫৬-৫৭), ‘ছায়াপথ’ (১৯৬১), ‘দেবীগর্জন’ (১৯৬৬), ‘কৃষ্ণপক্ষ’ (১৯৬৬), ‘গর্ভবতী জননী’ (১৯৬৯-৭১), ‘আজ বসন্ত’ (১৯৭০), ‘সোনার বাংলা’ (১৯৭১), ‘চলো সাগরে’ (১৯৭২)। রবীন্দ্রনাথের গল্পের নাট্যরূপও দিয়েছিলেন তিনি, আর আকাশবাণীর জন্য লিখেছিলেন গীতিনাট্য ‘জীয়নকন্যা’ (১৯৪৮)। বিজন ভট্টাচার্য মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ও বাঁচবার কথা তাঁর নাটকগুলির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি এই ভাবনা থেকে সরে যান। গণনাট্য সঙ্ঘ ত্যাগ এবং নিজের নাটকের দল একাধিক বার ভেঙে গড়ে তিনি তৈরি করেন। ক্রমে মার্কসীয় দর্শনের পরিবর্তে বা সঙ্গে তাঁর রচনায় লোকায়ত ধর্ম দর্শন, হিন্দু ধর্মের সমন্বয় প্রয়াসী মানসিকতা কাজ করেছিল। চিরকালীন মাতৃকা ভাবনা তাঁর নাটকে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। বিজন ভট্টাচার্য কিছুদিন (১৯৩১-১৯৩২) আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেন এবং ১৯৩৮-৩৯ সালে তিনি আলোচনা, ফিচার ও স্কেচ লেখার কাজ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে তিনি মাতুল সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের অরণি পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন এবং বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে থাকেন। ১৯৪২ সালে সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। এছাড়া তিনি ভারত ছাড় আন্দোলন, জনযুদ্ধ-নীতি প্রচার, ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘ স্থাপন এবং প্রগতি লেখক সঙ্ঘ এবং ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আজ নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজন ভট্রাচার্যের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। নাট্যমঞ্চের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব বিজন ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বিজন ভট্রাচার্য ১৯১৭ সালের ১৭ জুলাই বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার খানখানাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ক্ষীরোদবিহারী ভট্টাচার্য ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। পিতার কর্মসূত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করার সুবাদে তিনি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন; ফলে তাদের সংগ্রামী জীবন ও আঞ্চলিক কথ্য ভাষার ছাপ তাঁর রচিত নাটকে পরিলক্ষিত হয়। বিজন ভট্টাচার্য ছাত্রাবস্থাতেই যুক্ত হন স্বদেশি আন্দোলনে। অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২০-২২) যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন বিজন ভট্রাচার্য। ১৯৩১-৩২ সালে কলকাতার আশুতোষ কলেজ ও রিপন কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি জাতীয় আন্দোলনে যোগ দেন এবং মহিষবাথানে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। ফলে লেখাপড়ায় (বিএ) ছেদ পড়ে এবং ১৯৩৪-৩৫ সালের ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তিনি বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় সূচিত বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পর তাঁর মাতুল প্রখ্যাত সাংবাদিক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার কর্তৃক অরণি পত্রিকা প্রকাশিত হলে শুরু হয় সেখানে তাঁর গল্প লেখা। সমকালেই খ্যাতিমান মার্কসবাদী রেবতী বর্মণের লেখা পড়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। আনন্দবাজার পত্রিকায় রেবতী বর্মণের লেখার সমালোচনা লেখেন এবং সংস্পর্শে আসেন কমিউনিস্ট নেতা মুজফ্ফর আহমদের। ১৯৪২-৪৩ সালে সদস্যপদ লাভ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির। ১৯৪৪ সালে আনন্দবাজারের চাকরি ছেড়ে পার্টির হোলটাইমার হন। এছাড়া তিনি ভারত ছাড় আন্দোলন, জনযুদ্ধ-নীতি প্রচার, ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘ স্থাপন এবং প্রগতি লেখক সঙ্ঘ এবং ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নবনাট্য আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক বিজন ভট্টাচার্য গণজীবনের সংগ্রাম ও দুঃখ-দুর্দশা, শোষণ-বঞ্চনা, প্রগতিশীল চিন্তা ও সমাজবোধ নিয়ে নাটক রচনা করে এবং এ ক্ষেত্রে তিনি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তবে তাঁর শেষজীবনে রচিত নাটকে মার্কসীয় দর্শন, হিন্দু ধর্ম ও দর্শন সংমিশ্রিত হয়েছে। তিনিই প্রথম বাংলা রঙ্গমঞ্চকে পুরাণ ও ইতিহাসের রোম্যান্টিক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন। তাঁর প্রথম নাটক আগুন (১৯৪৩) নাট্যভারতীতে অভিনীত হয়। পরে তিনি রচনা করেন জবানবন্দী (১৯৪৩); এটি কৃষকজীবনের আলেখ্য। তাঁর প্রতিভার সার্থকতম নিদর্শন হলো নবান্ন (১৯৪৪) নাটক; বন্যা, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর পটভূমিকায় রচিত এই নাটকে দুঃস্থ-নিপীড়িত কৃষকজীবন প্রতিফলিত হয়েছে। গণনাট্য সংঘের প্রযোজনায় নবান্ন নাটকে তিনি নিজে অভিনয় করেন। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার পটভূমিকায় তিনি রচনা করেন জীয়নকন্যা নাটক। এছাড়া তাঁর আরও দুটি নাটক হলো মরাচাঁদ ও কলঙ্ক। মরাচাঁদ চবিবশ পরগনার এক অন্ধ গায়কের জীবনকাহিনী, আর কলঙ্ক বাঁকুড়ার সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জীবনালেখ্য। তাঁর গোত্রান্তর (১৯৬০) নাটকের বিষয়বস্ত্ত ছিন্নমূল পূর্ববঙ্গবাসীর ভাগ্যবিপর্যয়। পরে তিনি লেখেন মুনাফাখোর মিল-মালিক ও শোষিত শ্রমিকদের নিয়ে অবরোধ (১৯৪৭)। ১৯৬৬-তে লেখেন দেবীগর্জন ও বেদেদের জীবন নিয়ে গর্ভবতী জননী। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি গল্প হচ্ছে তেভাগা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত ‘জনপদ’ এবং দেশবিভাগের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘রাণী পালঙ্ক’। ১৯৭০ সালে তিনি ক্যালকাটা থিয়েটার ছেড়ে দিয়ে কবচ-কুণ্ডল নামে নতুন দল গঠন করেন। এখানে তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কৃষ্ণপক্ষ, আজবসন্ত, চলো সাগরে, লাস ঘুইর্যা যাউক প্রভৃতি। এছাড়া তিনি নাগিন, সাড়ে চুয়াত্তর, বসু পরিবার, তৃষ্ণা, ডাক্তারবাবু প্রভৃতি ছবির স্ক্রিপ্ট তৈরি করেন। গায়ন ও সুরযোজনায়ও তিনি পারদর্শী ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিজন ভট্টাচার্য বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন, যদিও তাঁদের দাম্পত্য জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।প্রয়াত কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক নবারুণ ভট্টাচার্য নাট্যকার-অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্য এবং সাহিত্যিক-সমাজসেবী মহাশ্বেতা দেবীর পুত্র। অভিনেতা হিসাবে বিজন ভট্টাচার্য অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। নানারকম চরিত্রকে মূর্ত করে তুলতে তিনি দক্ষ ছিলেন । নানা উপভাষার সংলাপ উচ্চারণেও তিনি সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্রের মধ্যে ছিল বেন্দা (জবানবন্দী), প্রধান সমাদ্দার (নবান্ন), পবন ও কেতকাদাস (মরাচাঁদ), হরেন মাস্টার (গোত্রান্তর), প্রভঞ্জন (দেবীগর্জন), মামা (গর্ভবতী জননী), কেদার (আজ বসন্ত), সুরেন ডাক্তার (চলো সাগরে) প্রভৃতি। নাট্যনির্দেশক হিসাবেও তিনি সমান সফল ছিলেন। গণনাট্য সঙ্ঘে তাঁর নাটক জবানবন্দী এবং নবান্ন ছিল অসাধারণ দুটি প্রযোজনা। পরে তিনি তাঁর নিজের গ্রুপ থিয়েটারেও বহু নাটকের সফল প্রযোজক এবং নির্দেশক ছিলেন। নাট্যজগতে বিশেষ অবদানের মূল্যায়নস্বরূপ কেন্দ্রীয় সঙ্গীত নাটক আকাদেমি, পশ্চিমবঙ্গ সঙ্গীত নাটক আকাদেমি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পুরস্কৃত করে। ১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু বরণ করেন নাট্যজন বিজন ভট্টাচার্য। আজ এই গুণী নাট্যব্যক্তিত্বের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। নাট্যমঞ্চের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব বিজন ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০২
চাঁদগাজী বলেছেন:
দেখা যাচ্ছে, উনি ১৯৪৩ সালের বাংগালী জাতির মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষের উপর লিখেছিলেন!
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।মনে করিয়ে দেবার জন্য।