নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৬


কল্লোল যুগের বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। তাঁর রচনায় আছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন কথা। অতি সাধারণ জীবনকথা তাঁর লেখনীতে অসাধারণ হয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি তার বহুমুখী প্রতিভা ও সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগৎকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করে গেছেন। গল্প-কবিতা, উপন্যাস, নাটক চিত্রনাট্য, প্রবন্ধ, রম্যরচনা প্রভৃতির পাশাপাশি নিজেরই লেখা কাহিনী ও নিচত্রনাট্য নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তাঁর কয়লাকুঠির দেশ গল্পটি সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "আমরা দোতালার জানালা দিয়ে গরীবদের দেখেছি, তুমি তাদের সঙ্গে মিলে মিশে একাত্ম হয়ে তাদের সুখ দুঃখ অনুভব করেছ গভীর ভাবে। তোমার লেখা আমার ভালো লাগে, সাহিত্য তোমায় স্থায়ী আসন দেবে"। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁরা দুজন ছিলেন এন্ট্রান্স শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলে প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা না দিয়ে দুজনে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে পালিয়ে যান আসানসোল। কিন্তু মেডিক্যাল টেস্টে শৈলজানন্দ বাদ পড়ে যাওয়ায় ফিরে আসেন, আর নজরুল যুদ্ধে চলে যান। পরে শৈলজানন্দ এন্ট্রান্স পাস করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুকাল পরে কলেজ ত্যাগ করে শর্টহ্যান্ড-টাইপরাইটিং শিখে কয়লাকুঠিতে চাকরি নেন। এ চাকরিও তিনি বেশিদিন করেননি। চাকরি ছেড়ে তিনি সাহিত্যচর্চা ও চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ ঘটলেও শৈলজানন্দ পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যিক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। খনিশ্রমিক সাঁওতাল ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের শ্রমজীবী মানুষের জীবন অবলম্বনে তিনি অনেকগুলি উপন্যাস রচনা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। কয়লাখনির শ্রমিকদের নিয়ে তিনি অনেক গল্পও লিখেছেন। শৈলজানন্দ দীর্ঘকাল কালিকলম পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি নিজেও একজন পরিচালক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নন্দিনী’। পরে তিনি বন্দী, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, অভিনয় নয় ইত্যাদি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ‘নিউ থিয়েটার্স’ নাট্যদলের তিনি একজন কাহিনীকার ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সাপ্তিাহিক সাহানা পত্রিকা ও গল্পভারতীর সম্পাদনা করেছেন। ১৯৭৬ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুৃবরণ করেন। আজ তার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে হয়। সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ সালের ১৮ মার্চ বীরভূম জেলার রূপসীপুরের হাটসেরান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ধরনীধর মুখোপাধ্যায় ও মা হেমবরণী দেবী। ববা ধরণীধর মুখোপাধ্যায় ছিলেন আপনভোলা শিল্পী মানুষ। খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন এবং মাটির কাজ করতেন। সাপ ধরা ও ম্যাজিক দেখানো ছিলো তার অন্যতম কাজ। বাবার শিল্পীসত্তা শৈলজানন্দের চরিত্র ও মননে গভীরভাকে প্রভাব বিস্তার করেছিলো। তিন বছর বয়েসে মায়ের মৃত্যুর পর বর্ধমানে মামাবাড়িতে দাদামশাই রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বড় হন। নাকোড়বান্দা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বাগবাজারের কাশিমবাজার পলিটেকনিক কলেজে যোগ দেন টাইপরাইটিং শিখতে। এরপর তিনি কুমারডুবি কয়লা কুঠিতে চাকরি নেন। কয়লাখনিতে কাজ করার সময়েই একের পর এক স্মরণীয় গল্প লেখেন। খনি শ্রমিকদের নিয়ে সার্থক বাংলা গল্প রচনায় শৈলজানন্দ পথিকৃৎ। তাঁর লেখাতে কয়লাখনির শ্রমিকদের শোষিত জীবন উঠে আস। এ সময় বাঁশরী পত্রিকায় তাঁর রচিত ‘আত্মঘাতীর ডায়েরী’ প্রকাশিত হলে মাতামহ তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর তিনি কলকাতায় আসেন। আশ্রয়হীন শৈলজানন্দ কলকাতা এসে পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এখানে অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক যেমন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু, প্রবোধকুমার সান্যাল, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, দীনেশরঞ্জন দাস প্রভৃতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং তিনি কালিকলম এবং কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক শ্রেণীভুক্ত হন। কল্লোল ও কালিকলম পত্রিকাকে ঘিরে সাহিত্য আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন তিনি । সেই সময়ের বিখ্যাতসব পত্রিকা যেমন ভারতবর্ষ, প্রবাসী, বিচিত্র, মাসিক বসুমতী, কল্লোল, কালিকলম, বঙ্গবাণী, বঙ্গয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, সংহতি, ছায়া, সাহানা প্রভৃতিতে একের পর এক গল্প প্রকাশিত হতে থাকে।

শৈলজানন্দ উপন্যাস ও গল্পসহ প্রায় ১৫০টি বই লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, বাংলার মেয়ে, ঝড়ো হাওয়া, মানুষের মত মানুষ, ডাক্তার, রূপং দেহি, সারারাত, কয়লাকুঠির দেশ, নিবেদনমিদং, চাওয়া পাওয়া, বন্দী, ক্রৌঞ্চমিথুন ও অপরূপা। নজরুলকে নিয়ে লিখেন ‘কেউ ভোলে না কেউ ভোলে’। ‘নিউ থিয়েটার্স’ নাট্যদলের তিনি একজন কাহিনীকার ছিলেন। তাঁর অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি নিজেও একজন পরিচালক ছিলেন। তাঁর প্রথম ছবি ছিল পাতালপুরী। নিজের কাহিনী চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় শৈলজানন্দের বিখ্যাত ছবি ‘নন্দিনী’। তার বন্ধু ও সহপাঠি নজরুল ইসলাম এই সিনেমার একাধকি গান লিখে দিয়েছিলেন। ছবিটি দারুন জনপ্রিয় হয়। এর পরে তিনি বন্দী, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, অভিনয় নয়, শ্রীদূর্গা, রায় চৌধুরী, ঘুমিয়ে আছে গ্রাম, রংবেরং, সন্ধ্যাবেলার রূপকথা, বসাইন্ড লেন, মনি ও মানিক, বাংলার নারী, কথাকও, আমি বড় হব ইত্যাদি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ছবি তৈরীর জগতে থেকে আবার সাহিত্য জগতে ফিরে এলেন শৈলাজনন্দ। যোগ দিলেন কলকাতা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগে। আকাশবাণীতে তিনি বহু নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছিলেন। যার মধ্যে গ্রহচক্র, কবি, কালরাত্রি, নারায়ণী, রাহু, নিরুদ্ধেশ প্রভৃতি। সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ১৯৫৯ সাল প্রফুল্লকুমার ও সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৬০ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে উল্টোরথ পুরস্কার এবং যাদবপুর এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট এবং ১৯৭৬ সালে মরোণোত্তর শরৎ পুরস্কার লাভ করেন শৈলজানন্দ।
১৯৭২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন শৈলজানন্দ। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি শুক্রবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটে তি্নি পরলোকগমন করেন। আজ তাঁর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: এই লেখকের বইও আমি পড়েছি।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ লেখকের বই পড়ার জন্য,
ভালো্ থাকবেন।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫

বিজন রয় বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বিজন'দা ভালো থাকবেন
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ, এইসব গুনিজনের জন্ম মৃত্যু দিবস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ তারেক ভাই
চমৎকার মন্তব্য প্রদানের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.