নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আজ ১৫ অক্টোবর বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস। বাংলাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে দিবসটি । সাদা ছড়ি বহনকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিরাপদে পথ চলতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সচেতনতা বাড়ানোই এই দিবসটির লক্ষ্য। ১৯২১ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরের জেমস বিগস নামে এক ফটোগ্রাফার দুর্ঘটনায় তার দৃষ্টিশক্তি হারালে পথ চলার জন্য লাঠিটাকে সাদা রঙে রাঙিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে অপরের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেক আগে থেকে ছড়ি ব্যবহার করে আসছে নিরাপদ চলাচলের হাতিয়ার হিসেবে। অবশ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ছড়ি বা লাঠিই যে তাদের চলাচলের উপযুক্ত উপকরণ, তা স্বীকৃত ছিল না। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বজুড়ে লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে চক্ষুষ্মান এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একে অপরকে সহায়তার হাতিয়ার হিসেবে সাদাছড়ি বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৩১ সালে ফ্রান্সের গুইলি ডি হারবিমোন্ট সে দেশে ‘জাতীয় সাদাছড়ি মুভমেন্ট’ হিসেবে ১৫ অক্টোবরকে ঘোষণা ও চালু এবং সে বছর প্যারিসে পাঁচ হাজার সাদাছড়ি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর মধ্যে বিতরণ করেন। ১৯৫১ সালের তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি স্যার আইজেন হাওয়ার্ড ১৫ অক্টোবর তার দেশে বিশ্ব সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালন শুরু করেন। সেই থেকে ঐ দিনে বিশ্ব সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালিত হয়ে আসছে। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ৭০ দশক থেকে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় অন্ধ সংস্থা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পাওয়া পাঁচ শতাধিক সাদা ছড়ি বিতরণের মাধ্যমে দিবসটি পালন শুরু হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭৫ সালের ৯ ডিসেম্বর সাদাছড়ি নিরাপত্তা আইন অনুমোদন ও কার্যকর করার অনুকূলে প্রস্তাব পাস করে (প্রস্তাব নং- ৩৪৪৭)। আর্ন্তজাতিক শ্রমসংস্থা (আইএলও) একই বছর তার ৬০তম অধিবেশনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বৃত্তিমূলক পুনর্বাসন আইন অনুমোদন করে। এরপর থেকে সাদাছড়ির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সাদাছড়ির তেমন কোনো বাধাধরা ধরন বা মাপ নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী, সাদাছড়ির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সাধারণভাবে পায়ের পাতা থেকে ব্যক্তির বুকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধরা হয়। তবে দ্রম্নত পথ চলতে হলে একক লম্বা মাপের ছড়ি ব্যবহার করা সুবিধাজনক। বহনের সুবিধার্থে কাঠের ছড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন হালকা উপকরণ যেমন অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিকে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী দিয়ে তৈরি সাদাছড়ির ব্যবহার বাড়ছে। আজকাল ভাঁজ করা সাদাছড়িও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সাদাছড়ির ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যাকে বলা হয় ভার্চুয়াল সাদাছড়ি। টেকনিক্যাল নাম লেজার বেইজড রেঞ্জ সেন্সিং ডিভাইস। এতে একটি ক্যামেরা, লেজার টর্চ ও মাইক্রো প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ছোট্ট, অনায়াসে পকেটে রাখা যায়। হাতের মুঠোতে রেখেই এটি দিয়ে পথের উঁচু-নিচু, দূরত্ব, বাধা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং বড় সাদাছড়ির প্রায় সব প্রয়োজনই মেটানো যায় এর মাধ্যমে।
পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে সারা বিশ্বে সাদাছড়ি দিবস পালন করা হলেও দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে সাদাছড়ি ব্যবহারে তেমন সচেতনতা গড়ে উঠেনি। সারা বছর এ ব্যাপারে এক প্রকার উদাসীন থেকে দিবসটিকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভা ওর্ যালির আয়োজন করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সাদাছড়ি ব্যবহারে সচেতন করতে সারা বিশ্বের ন্যায় আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব সাদাছড়ি দিবস। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৮ লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আছে। অপুষ্টি, টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, পোলিও, এসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দিন দিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না পারা। তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টি নিয়ে রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করা উচিত। বাংলাদেশ ট্রাফিক আইন মোতাবেক কোনো অবস্থায় অনির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি থামানো না গেলেও রাস্তা পারাপারের সময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। 'করুণা নয়, চাই সহযোগিতা, সহমর্মিতা' এই আহ্বানে একীভূত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৪০ লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে অংশগ্রহণের প্রয়াসে উদযাপিত হয় এই দিবসটি। নিরাপদে, আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের এই সাদাছড়ি একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সাদাছড়ি নিশ্চিত ব্যবহার, এই দিবসের অঙ্গীকার’। মূলত সাদাছড়ি হচ্ছে একটি লাঠি, যেটা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের (অন্ধ) নিরাপত্তার প্রতীক। কারণ, এটি প্রয়োজনীয় চলাচল গাইড, সহায়ক ও নিরাপত্তা উপকরণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার জন্য প্রায় ১০০ বছর ধরে এই সাদাছড়ি ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশ সরকার এ দিবসকে সামনে রেখে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনে ইতিবাচক সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা দিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা, চাকরির কোটা, স্থানীয়পর্যায়ে নির্বাচন করা, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা, যানবাহনে বিশেষ সঙ্কেতে ওঠানামা, আসন সংরক্ষণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকপর্যায়ে বিনা খরচায় লেখাপড়ার সুযোগ, ব্রেইল বইয়ের সহজলভ্যতা ইত্যাদির সুব্যবস্থা করা হয়েছে। ৬৪টি জেলায় সমন্বিত অন্ধ শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টিমান শিশু বা শিক্ষার্থীদের সাথে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু বা শিক্ষার্থীরা একত্রে সমন্বিত শিক্ষা গ্রহণ করছে। সাদাছড়ি কেউ ব্যবহার করলে অন্য মানুষ সহজেই বুঝতে পারে, সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সাদাছড়ি ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের একা চলাফেরা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে রাস্তা পারাপারের সময় সহযোগিতার জন্য সর্বস্তরের মানুষ স্বউদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সাদাছড়ি উত্তোলন করলে ট্রাফিককে লাল সিগন্যাল দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত্ম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি রাস্তা পার না হবে, ততক্ষণ যানবাহন বন্ধ রাখতে হবে। দেশব্যাপী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে সাদাছড়ি ব্যবহারের প্রচলন ঘটাতে হবে। এ ছাড়া দেশে সাদাছড়ি আইন অনুমোদন করা আবশ্যক। সাদাছড়ি ব্যবহার করলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহযোগী হিসেবে আরেকজন লোকের প্রয়োজন হয় না। এতে একজন সহযোগী ব্যক্তির শ্রম, সময়, অর্থ বাঁচে। তাই সাদাছড়ি বহনকারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিরাপদে পথ চলতে সাহায্য করার উদ্দেশে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সাদাছড়ির ব্যবহার।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সহমত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ ভৃগু'দা। তবে শুধু
সহমত প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে
চলবেনা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের সহযোগিতায়ও
এগিয়ে আসতে হবে।
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৯
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
গুরুত্ববহ বিষয়ে চমৎকার পোষ্ট! অনেক কিছুই জানা হল!
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে ভ্রমরের ডানা
চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৩
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সাদাছড়ি ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের একা চলাফেরা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে রাস্তা পারাপারের সময় সহযোগিতার জন্য সর্বস্তরের মানুষ স্বউদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সাদাছড়ি উত্তোলন করলে ট্রাফিককে লাল সিগন্যাল দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত্ম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি রাস্তা পার না হবে, ততক্ষণ যানবাহন বন্ধ রাখতে হবে। দেশব্যাপী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে সাদাছড়ি ব্যবহারের প্রচলন ঘটাতে হবে। এ ছাড়া দেশে সাদাছড়ি আইন অনুমোদন করা আবশ্যক। সাদাছড়ি ব্যবহার করলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহযোগী হিসেবে আরেকজন লোকের প্রয়োজন হয় না। এতে একজন সহযোগী ব্যক্তির শ্রম, সময়, অর্থ বাঁচে। তাই সাদাছড়ি বহনকারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিরাপদে পথ চলতে সাহায্য করার উদ্দেশে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সাদাছড়ির ব্যবহার।
হুম। সহমত।
কিন্তু দু:খের বিষয় এই দেশে দৃষ্টিমানদের দৃষ্টিই যখন পক্ষপাত দুষ্ট
প্রতিবন্ধিদের জন্য আর ভরসা কই!!!
তারপরও আশাই ভরসা- একদিন সবাই চক্ষুষমান হয়ে উঠুক, নীতির সাদা ছড়িতে