নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বুদ্ধিজীব, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক আবু সয়ীদ আইয়ুব। রবীন্দ্রানুসারী শিল্পবোধের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রূপ, আধুনিক মনন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুসন্ধান ছিলো আবু সয়ীদ আইয়ুবের জীবন-সাধনা। ঊর্দুভাষী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও নিজের আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের জোরে বাংলাভাষা শিখেন। কথিত আছে, উর্দু পত্রিকা 'কাহকুশান'-এ রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি'র গদ্যানুবাদ পড়ে মুগ্ধ হন এবং ১৬ বৎসর বয়সে তিনি বাংলা ভাষা শেখেন। বাংলাভাষায় অসাধারণ গ্রন্থ রচনা করে তিনি তাঁর প্রজ্ঞার যে নজির রেখে গেছেন, তার তুলনা মেলা ভার। খুব বেশি না হলেও তাঁর মৌলিক ও শিল্পনৈপুণ্যে ভাস্বর রচনাবলি তাঁকে বাংলার সাহিত্য-আসরে একটি বিশিষ্ট আসনে অভিষিক্ত করেছে। তাঁর চিন্তার অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ (প্রথম প্রকাশ এপ্রিল ১৯৬৮), ‘পান্থজনের সখা ‘ (প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর ১৯৭৩), ‘পথের শেষ কোথায়’ (প্রথম প্রকাশ মে ১৯৭৭ ), ‘ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক’ ( প্রথম প্রকাশ ১৯৯১) প্রভৃতি গ্রন্থে। তিনি বলেছেন, "মানুষের জীবন যদি অভিশপ্ত হয়ে থাকে, তবে অভিশাপ মোচনের দায়িত্বও মানুষের ওপরই বর্তায়, সত্য বা মিথ্যা দেবতার ওপর নয়।" তাঁর এ কথায় বিশেষভাবে লক্ষণীয় তাঁর সদর্থক আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। তাছাড়া সর্বভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও ভ্রান্তি নিরসনে, সত্য, সুন্দর ও শ্রেয়কেই জাগ্রতকরণে তিনি সবচেয়ে সংস্কৃতিবান ও নাগরিকতাসম্পন্ন চিন্তাবিদরূপে চিহ্নিত। ১৯৮২ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন চিন্তাবিদ আবু সয়ীদ আইয়ুব। আজ তাঁর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। নন্দনতাত্ত্বিক চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক আবু সয়ীদ আইয়ুবের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আবু সয়ীদ আইয়ুব ১৯০৬ সালের ৫ এপ্রিল কলকাতার দ্বারবাঙ্গার ওয়েলেসলি স্ট্রিটে এক রক্ষণশীল ঊর্দুভাষী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবুল মোকারেম আববাস ছিলেন বড়লাটের করণিক। মায়ের নাম আমিনা খাতুন। তাঁর বড় ভাই ডাক্তার আব্দুল গনি ছিলেন সাবেক ভারতীয় রেলমন্ত্রী। আইয়ুবের শৈশবের কিছুকাল সিলেটে অতিবাহিত হয়। পারিবারিক ও মাতৃভাষা উর্দু হলেও আইয়ুব কৈশোরে মিশনারি স্কুলে শেখেন ফার্সি। ফার্সি কবিতা পাঠ করে তিনি মুগ্ধ হন। এমন একটা সময় এলো তাঁর জীবনে, যে সময় তিনি বাংলাভাষা শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বাংলাভাষার লেখা রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলী পড়ার আগ্রহে তিনি বাংলাভাষা শিখলেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি কলকাতার সেন্ট এন্টনিজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আই এসসি পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পদার্থবিদ্যায় অনার্স ডিগ্রি লাভ করে তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ বিষয়ে আগ্রহী হন এবং অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের সাহায্যে এডিংটনের Mathematical Theory of Relativity-র ওপর অধ্যয়ন করেন; কিন্তু অসুস্থতার কারণে এম এসসি পরীক্ষা না দিয়ে তিনি বিভাগ পরিবর্তন করে দর্শনে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ভারতের বিখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণন ও অধ্যাপক কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে Content of Error in Perception and Thought বিষয়ে গবেষণা করেন। পেশাগত জীবনে অল্পসময়ের জন্য তিনি প্রেসিডেন্সি ও কৃষ্ণনগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় পরদর্শী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বেশি বয়সে বাংলাভাষা শিখে বাংলাভাষায় অসাধারণ গ্রন্থ রচনায় ঋদ্ধতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখলেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আইয়ুবের কলকাতা জীবনে গানবাজনা, চিত্রকলা, সিনেমা কিংবা থিয়েটার তাকে টানতে পারেনি, যেমন টেনেছিল সাহিত্য। আবু সয়ীদ আইয়ুবের প্রথম বাংলা প্রবন্ধ ‘বুদ্ধিবিভ্রাট ও অপরোক্ষানুভূতি’ ত্রৈমাসিক পরিচয় (১৯৩৪) পত্রিকায় প্রকাশিত হলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী ও অতুলচন্দ্র গুপ্ত এর প্রশংসা করেন। সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁকে দিয়ে দ্রুত ‘সুন্দর ও বাস্তব’ (১৯৩৪) শীর্ষক প্রবন্ধ রচনা করান। আইয়ুবের মতে, এ প্রবন্ধ থেকেই তাঁর রবীন্দ্রচর্চার সূত্রপাত। ১৯৫৩ সালে আইয়ুবের সম্পাদনায় ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ প্রকাশিত হয়। বাংলাভাষায় লেখা আবু সয়ীদ আইয়ুবের গ্রন্তগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’-এর কথা। তিনি গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন কবি বুদ্ধদেব বসুকে। ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ গবেষণা গ্রন্থটিতে তিনি রবীন্দ্রনাথকে নতুন মাত্রায় আবিষ্কার করতে সচেষ্ট হন। এ গ্রন্থের জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার ও সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারও লাভ করেন।
আবু সয়ীদ আইয়ুবের প্রকাশনা তালিকা খুব দীর্ঘ না হলেও অত্যন্ত মূল্যবান। তাঁর আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮) গ্রন্থটি কলকাতার সাহিত্য-জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত বক্তৃতামালা Poetry and Truth (১৯৭০) দর্শন ও কাব্যব্যাখ্যায় তাঁর গভীর জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। পরবর্তী গ্রন্থ পান্থজনের সখা ও (১৯৭৩) পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্র-কাব্যব্যাখ্যা ও কিছুটা পূর্ব গ্রন্থের সম্পূরক। পথের শেষ কোথায় এবং পূর্বপ্রকাশিত কয়েকটি প্রবন্ধ: ১৯৩৪-৬৫ (১৯৭৭)। তাঁর সাহিত্যচিন্তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে ব্যাপ্তি সে বিষয়ে পাঠককে দিগদর্শনের ইঙ্গিত দেয়। তাঁর অনুবাদ গ্রন্থ গালিবের গজল থেকে (১৯৭৬) উর্দু সাহিত্যে তাঁর অনুরাগ এবং তাঁর প্রিয় কবি গালিব সম্পর্কে এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রতিতুলনায় রবীন্দ্র-বিশ্লেষণের একটি প্রাঞ্জল রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে। এ ছাড়া রয়েছে, One Hundred and One Poems by Rabindranath Tagore (১৯৬৬) ও মীরের গজল থেকে। সম্পাদনা-সূত্রে জড়িত তাঁর তিনটি প্রকাশনা খুবই বিখ্যাত: আধুনিক বাংলা কবিতা (হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সহযোগে, ১৯৪৭), পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা (১৯৬৩) এবং 10 years of Quest (অম্লান দত্ত সহযোগে, ১৯৬৬)। এ ছাড়া প্রকাশিত তিনটি গ্রন্থ Varieties of Experience (১৯৮০), Tagore’s Quest (১৯৮০) এবং ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক আইয়ুবের সুদীর্ঘ সাধনার সাক্ষর বহন করে। বাংলা সাহিত্যে তার অবদা্নের জন্য ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'রবীন্দ্র পুরস্কার', ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির 'সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার', ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতীর 'দেশিকোত্তম' উপাধি লাভ এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে 'রবীন্দ্র তত্ত্বনিধি' উপাধি প্রদান করে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সমর্থন এবং বুদ্ধিজীবীদের সহায়তাদান বিশেষভাবে স্মরণীয় আইয়ুব ছিলেন মানসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় তীক্ষ্ণ এবং পরিশীলিত। ভারতীয় বা পাশ্চাত্য দর্শন শুধু নয় কোনো বিষয়ই ভাসা-ভাসাভাবে জানায় তাঁর ছিলো বিশেষ আপত্তি। আইয়ুব লিখেছেন অপেক্ষাকৃত কম, অধ্যয়ন করেছেন বেশি, ভেবেছেন আরও বেশি। বাংলা এবং ইংরেজি দু’ভাষায়ই তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি ব্যক্ত করেছেন নিজস্বচিহ্নিত এক সুসংবদ্ধ অথচ দ্যুতিময় ভাষায়। বস্তুজগৎ ও ভাবজগৎ দুই'ই ছিলো তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এই দুইয়ের সমন্বয়েই মানুষের জীবন। ব্যক্তিগত জীবনে ধীরেন্দ্রমোহন দত্তের কন্যা অধ্যাপিকা গৌরী দত্তের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন আবু সয়ীদ আইয়ুব। বিয়ের পর এক সময় তিনি আবু সয়ীদ আইয়ুব দত্ত নামে কিছু রচনা প্রকাশ করেন। আকৈশোর ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী আবু সয়ীদ আইয়ুব দীর্ঘকাল পার্কিনসন্স রোগে ভোগার পর ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও দার্শনিক, প্রাজ্ঞচিন্তক প্রফেসর আবু সয়ীদ আইয়ুবের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ কাঠের চশমা
নন্দনতাত্ত্বিক চিন্তাবিদ
অধ্যাপক আবু সয়ীদ আইয়ুবের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩০
কাঠের চশমা বলেছেন: প্রাবন্ধিক ও নন্দনতাত্ত্বিক চিন্তাবিদ অধ্যাপক আবু সয়ীদ আইয়ুবের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি থাকল ।