নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও ছান্দসিক আবদুল কাদিরের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬


রবীন্দ্র ও নজরুল উত্তর যুগে তথা তিরিশের দশকের শক্তিমান কবি আবদুল কাদির। প্রথমেই বলতে হয়, সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণ করলেও কবি হিসেবেই তিনি সর্বাধিক খ্যাতিমান। কেননা মরহুম কবি আবদুল কাদির তিরিশের দশক থেকেই কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর মৃত্যুর দীর্ঘকাল পরেও অদ্যাবধি কবি হিসেবে খ্যাতিমান। কবি শব্দটি তাঁর নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ছান্দসিক কবি হিসেবেও তাঁর বিশেষ পরিচিতি ও খ্যাতি রয়েছে। মুসলিম সাহিত্য সমাজের (১৯২৬) নেতৃত্বে ঢাকায় ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন সূচিত হয়- কবি আবদুল কাদির সেটির নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন সাহিত্য সমাজের মুখপত্র বার্ষিক শিখা (১৯২৭) পত্রিকার প্রকাশক। ছন্দ সমীক্ষণ (১৯৭৯) নামে তার একটি বিখ্যাত বই রয়েছে। যাতে তিনি বাংলা ছন্দ সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য রেখেছেন। তার ছন্দ বিচারের ক্ষমতা ছিলো অতুলনীয়। সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও তিনি পরিশ্রমী এবং একনিষ্ঠতার ছাপ রেখেছেন। তিনি শুধু কবি নন, একাধারে শক্তিমান সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক এবং নজরুল গবেষক। তাঁকে নজরুল বিশেষজ্ঞ বলাই যথার্থ। কবি আবদুল কাদির একজন সাংবাদিক এবং সাময়িক পত্রের সম্পাদক হিসেবেও খ্যাতিমান। বাঙ্গালি কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও ছান্দসিক আবদুল কাদিরের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮৪ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সাংবাদিক, কবি আবদুল কাদিরের মৃত্যু দিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

(ঢাকা বেতারের একটি কবিতাপাঠের অনুষ্ঠানে (বাম থেকে) : কবি আহসান হাবীব, কবি ফররুখ আহমদ, কবি আবুল হোসেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান ও কবি আবদুল কাদির)
বাঙালি কবি, সাহিত্য-সমালোচক ও ছান্দসিক হিসেবে খ্যাত আবদুল কাদির ১৯০৬ সালের ১ জুন তিনি বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আড়াইসিধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অতি শৈশবে তিনি মাতৃহারা হন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা মডেল হাইস্কুল থেকে পাঁচটি বিষয়ে লেটারসহ ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন তবে সম্পূর্ণ করতে পারে নি। আবদুল কাদিরের সাংবাদিক জীবনের শুরু ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। এ সময় আবদুল কাদির কলকাতায় বিখ্যাত সওগাত পত্রিকায় সম্পাদনা বিভাগে চাকরি নেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা করপোরেশনের একটি প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কমরেড মুজাফফর আহমদের কন্যা আফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। বাংলা ১৩৩৭-এ জয়তী নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ এবং সম্পাদনা ছাড়াও একই বছর নবশক্তি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার যুগান্তর পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৈনিক নবযুগ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সরকারের প্রচার সংস্থার বাংলা অনুবাদক পদে যোগ দেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও অর্ধ-সাপ্তাহিক পয়গাম পত্রিকায় চাকরি করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপত্র মাসিক বিখ্যাত মাহেনও পত্রিকায় কর্মরত থাকার পর ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশনা কর্মকতা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন তিনি সরকারী চাকুরি থেকে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

আবদুল কাদির অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। তাঁর কাব্যপ্রয়াসে মোহিতলাল মজুমদারের ধ্রুপদী সংগঠন এবং নজরুলের উদাত্ত আবেগের চমৎকার সমন্বয় প্রত্যক্ষ হয়। মুসলিম সাহিত্য সমাজ (১৯২৬)-এর নেতৃত্বে ঢাকায় যে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন সূচিত হয়, কবি আবদুল কাদির তার নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন সাহিত্য সমাজের মুখপত্র বার্ষিক শিখা (১৯২৭) পত্রিকার প্রকাশক ও লেখক। প্রকাশিত কাব্য দিলরুবা (১৯৩৩) ও উত্তর বসন্ত (১৯৬৭)। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দিলরুবা’ই তাঁকে কবি খ্যাতি এবং প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘দিলরুবা’ প্রকাশের পর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার, জসীমউদ্দীন, কাজী আবদুল ওদুদ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক আবদুল কাদিরের ‘দিলরুবা’র অন্তর্গত কবিতাগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ‘দিলরুবা’ যে তাঁকে বাংলা কাব্যে স্থায়ী আসন দেবে, তেমন কথাও বলেন। আবদুল কাদিরের অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ ছন্দ সমীক্ষণ (১৯৭৯) যাতে তিনি বাংলা ছন্দ সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য রেখেছেন। আবদুল কাদিরের ছন্দ বিচারেও অধিকার সংশয়াতীত। একজন ছান্দসিক কবি হিসেবে তিনি তাঁর কবিতায় যেমন ছন্দ নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি ছন্দ বিষয়ে লিখেছেন বহু নিবন্ধ এবং ‘ছন্দ সমীক্ষণ’ নামে অনন্য সাধারণ গ্রন্থ। প্রখ্যাত ছন্দবিজ্ঞানী প্রবোধ চন্দ্র সেনেরও বিশেষ প্রশংসা লাভ করেছেন তিনি। একজন ছান্দসিক কবি ও ছন্দশাস্ত্রবিদ হিসেবে এখানেই তাঁর সাফল্য। সাহিত্য সম্পাদক হিসাবেও তিনি পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠতার ছাপ রেখেছেন। তিনি সম্পাদনা করেছেন বিখ্যাত কাব্য সঙ্কলন কাব্য মালঞ্চ, মুসলিম সাহিত্যের সেরা গল্প, নজরুল রচনাবলী (প্রথম খণ্ড-পঞ্চম খণ্ড), রোকেয়া রচনাবলী, শিরাজী রচনাবলী, লুৎফর রহমান রচনাবলী, ইয়াকুব আলী চৌধুরী রচনাবলী, আবুল হুসেন রচনাবলী, কাব্যবীথি ইত্যাদি। আবদুল কাদিরের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ
১। দিলরুবা (কাব্য), ২। উত্তর বসন্ত (কাব্য), ৩। কাব্যমালঞ্চ (সংকলন), ৪। ছন্দ সমীক্ষণ - (সাহিত্যালোচনা), ৫। বাংলা কাব্যের ইতিহাস : মুসলিম সাধনার ধারা (১৯৪৪) ৬। গবেষণা গ্রন্থঃকবি নজরুল (১৯৭০), ৭। মওলানা মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন (১৯৭৯) (জীবনী) ৮। কাজী আবদুল ওদুদ (১৯৭৬)(জীবনী) ৯। লোকায়ত সাহিত্য (১৯৮৫) ও ১০। ড. মুহম্মদ এনামুল হক বক্তৃতামালা (১৩৯০),

আবদুল কাদির তাঁর সাহিত্যকীর্তির জন্য ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার , ১৯৬৭ সালেআদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে একুশে পদক,১৯৭৭ সালে নজরুল একাডেমী স্বর্ণ পদক , কুমিল্লা ফাউণ্ডেশন পদক, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন স্বর্র্ন পদক ও মুক্তধারা পুরস্কার প্রভৃতি লাভ করেন। স্পষ্টবাদিতার কারণে এবং চাতুর্য ব্যবহারের দুর্বলতার কারণে হয়ত তিনি জনপ্রিয়তা অর্জনে এবং বহু হৃদয় জয়ে ব্যর্থ হয়েছেন; কিন্তু বাঙলী মুসলিম মনীষীকৃত সাহিত্য-সৃষ্টি-রক্ষাকারী, উন্নতশির প্রহরী হিসেবে তিনি যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আশা করি বাঙলী সাহিত্য ও কাব্যপ্রেমীরা তা পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত বিস্মৃত হবেন না। আজ এ্ই সাহিত্যিকের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ছান্দসিক হিসেবে খ্যাত আবদুল কাদির ১৯৮৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কবি, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও ছান্দসিক আবদুল কাদিরের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৩

মেহেদী হাসান শীষ বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: শীষ ভা্ই
পুলকিত হলাম শীতের প্রাতে
আপনার উষ্ণ মন্তব্যে!!
ভালো থাকবেন।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৫

মেহেদী হাসান শীষ বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ
এবং শীতের শুভেচ্ছা

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৬

এম এ কাশেম বলেছেন: কবি, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও ছান্দসিক আবদুল কাদিরের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

আপনাকেও শুভেচ্ছা ।

কেমন আছেন নুরু ভাই?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: কাশেম ভাই খুব মিস করি আপনাকে
আলোর পরে ঘুড়ি কালের গর্ভে বিলিন
হবার পরে আর কোন কথা হয়না!!
এখানে পেয়ে ভালো লাগলো আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.