নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব এইডস দিবস আজঃ এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় একটিও আর, বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়বো সবাই, এই আমাদের অঙ্গীকার’

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪


১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস আজ। বিশ্ব মানবতার জন্য মারাত্মক হুমকি এইডস (AIDS-Acquired Immune Deficiency Syndrome)। চিকিৎসা দ্বারা এ রোগের আরোগ্য সম্ভব নয়। অনেক চেষ্টা আর গবেষণার পরও বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত এই ঘাতক ব্যাধির প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেননি। এ কারণেই ‘এইডস’ আজ সারা বিশ্বের সবার কাছে আতঙ্কিত একটি শব্দ। অনস্বীকার্য যে বিশ্বে এইডস বিষয়ে জনসচেতনতা বেড়েছে, গবেষণার পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতিরও অগ্রগতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ রোগের ভয়াবহতা এখনো কমেনি।’ ইউএন এইডস এর তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডস-এ আক্রান্ত এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ মরণঘাতি রোগে মৃত্যুবরণ করেছে। ১৯৮৮ সালে এইচআইভি ভাইরাসের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছিল বিশ্ব এইডস দিবস। ১৯৮৮ সালে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক এইডস সোসাইটি এবং সে বছরই ১ ডিসেম্বরকে বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এইডস বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এর স্বাস্থ্যগত দিকের পাশাপাশি মানবিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর পালিত হয় বিশ্ব এইডস দিবস। সেই থেকে এই দিবস পালনের সূচনা। এ বছর বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য হল ‘এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় একটিও আর, বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়বো সবাই, এই আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এইডস-এর প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করা হয় লালফিতা বা রিবন। লালফিতার মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতাসহ প্রতিরোধের অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়। রোগটি কীভাবে বিস্তার করে কিংবা রোগটি প্রতিরোধে কী কী করণীয় এ সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক।

জানা যাক যেভাবে এইডস ছড়ায়ঃ বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে অবাধ যৌনসঙ্গমই এইডস রোগের অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে পেশাদার যৌনকর্ম সংঘটিত হয়। মহিলা যৌনকর্মীরা যৌনপল্লীতে, আবাসিক হোটেলে যৌনকর্ম সম্পন্ন করে। বাস্তবতার বিবেচনায় তারা তাদের যৌনসঙ্গীদের সঙ্গে রাস্তায়, ম্যাসেজ পার্লারে, বিউটি পার্লার বা টেলিফোন ও সেলফোনে যোগাযোগ রক্ষা করে, এসব যৌনসঙ্গীর মধ্যে বেশিরভাগ বেকার ও শ্রমজীবী পুরুষ অধিকসংখ্যক। বাংলাদেশ ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনাল ২০০১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে একজন ট্রাকচালক ও রিকশাচালকের বছরে ৬ থেকে ১০ দশজন যৌনসঙ্গী থাকে, পাশাপাশি যৌনপল্লীর একজন মহিলা যৌনকর্মীর প্রতিসপ্তাহে যৌনসঙ্গীর গড় সংখ্যা ১৮.৮ এবং আবাসিক হোটেলে একজন যৌনকর্মীর প্রতি সপ্তাহে যৌনসঙ্গীর গড় সংখ্যা ৪৪ জন, যা শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, সমগ্র এশিয়ার অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় অত্যধিক। জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশে এইডস ছড়ানোর সব উপকরণ বিদ্যমান। যেমন এইডস প্রধানত ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনের মাধ্যমে। অর্থাত্ অবৈধ যৌন মিলন এইডস সম্প্রসারণের প্রথম এবং প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। সমাজে অনুমোদনযোগ্য না হলেও পতিতাবৃত্তি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত আছে বহুকাল ধরে। পেশাদার যৌনকর্মী ও তার খদ্দেরদের মধ্যে যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। রক্ত ও রক্তজাত দ্রব্য পরিসঞ্চালন, অপরিশোধিত সিরিঞ্জ, সূচ, শল্য ও দন্ত চিকিত্সায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির রেজার, ব্লেড ইত্যাদি দিয়েও এইচআইভি বা এইডস ছড়াতে পারে। এইডস আক্রান্ত মা সন্তান গর্ভকালীন সময় অথবা বুকের দুধ পানের মাধ্যমে এইডসের বিস্তার ঘটতে পারে। এইডস এমন একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি যা ভাইরাস সংক্রমণের রোগীর ভাগ্যে অর্জিত হয়। এইডস স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মেরুদণ্ডী প্রাণীর সাদৃশ্যমূলক অনাক্রম্য ব্যবস্থাকে সংক্রমণ করে। আফ্রিকার নর-নারী উভয়েই এইডসে সমভাবে আক্রান্ত যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নত দেশে এইডস পুরুষদের মধ্যে এখনও বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এ রোগ প্রকাশ পায় এবং একই সালের জুন মাসে সর্বপ্রথম প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল থেকে লসএঞ্জেলেসের পাঁচ সমকামী এইডস রোগে আক্রান্ত হয়, যদিও পরে তথ্য প্রকাশ, ১৯৮১ সালের এক দশক আগে থেকেই আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এইডস রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছে। সমকামীদের মধ্যে এইডস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ অনেকে বিবেচনা করেন, পায়ুসঙ্গমে মলাশয়ের কোষের আঘাত ও ক্ষতি বেশি হওয়ার কারণে বীর্যের ভাইরাস খুব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে রক্তে শোষিত হয়

বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি কেস শনাক্ত হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশে ৩৩৮ জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনও কম হলেও আশঙ্কামুক্ত নয়। দেশে কয়েক হাজার মানুষ নিজের অজান্তে এইচআইভি জীবাণু বহন করছে এবং অন্যদের শরীরে ছড়াচ্ছে। ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশে নতুন করে ৩৭০টি এইচআইভি কেস শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২৯৯ জন এইডস রোগী সনাক্ত হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ২৪১টি। ওই সময়ের মধ্যে এইচআইভি থেকে এইডসে রূপান্তর হয় ৯৫ জন এবং ৮২ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে ইউএন এইডসের হিসাব মতে বাংলাদেশে আট হাজার থেকে ১৬ হাজার এইচআইভি আক্রান্ত রোগী আছে। জাতিসংঘের এইচআইভি ও এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের সর্বশেষ ‘ইউএনএইডস গ্যাপ রিপোর্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এইচআইভি আক্রান্তদের ৫৪ শতাংশ অর্থাৎ বিশ্বের ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ জানেই না যে তারা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ৮ কোটি কোটি মানুষ। বাংলাদেশে এ সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার। বাংলাদেশে শুধু ২০১৩ সালেই এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮২ নারী পুরুষ। ২০১০ সালে যা ছিল ৩৭ জন। ২০১৩ সালে ২৭০ জনের শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে। যার মধ্যে ৯৫ জনের শরীরে এটি এইডস আকারে রূপান্তরিত হয় এবং ওই সংখ্যক মানুষ মারা যায়। দেশে গত ২৫ বছরে এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্য ৪৭২ জন। ভয়াবহ এই রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব এইডস দিবস। ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি-৬ অর্জনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে এইচআইভি/এইডস শনাক্তকরণ, চিকিৎসা, পরিচর্যা ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক। এ ব্যাপারে ব্যক্তিবিশেষকে সচেতন হতে হবে। অবৈধ যৌনসঙ্গম পরিহার করতে হবে ও যৌন মেলামেশায় স্বামী এবং স্ত্রীকে একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস থাকতে হবে। স্বামী বা স্ত্রী এইডস রোগে আক্রান্ত হলে সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করা উচিত। পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, এ অবধি এইডসের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, তাই প্রতিরোধই একমাত্র সমাধান এবং ব্যাপক গণসচেতনতা হতে পারে এইডসের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর হাতিয়ার। আসুন এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে নিজে জানি, অন্যকেও জানাই। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি সামাজিক বৈষম্য রোধ, মৃত্যুহার হ্রাস ও এমডিজি-৬ অর্জনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে দাতাগোষ্ঠীসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে এইচআইভি ও এইডস কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনকে আরো সংহত করতে পারলে রোগটি থেকে আমরা দূরে থাকতে পারব। এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় একটিও আর, বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়বো সবাই, বিশ্ব এইড দিবসে এই আমাদের অঙ্গীকার’

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

তুমি আমি আমরা বলেছেন: যথাযথ নৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতাই পারে হাজার হাজার তরুণ, শ্রমজীবী, সাধারণ মানুষকে এই ভয়াবহ মরণ ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে!

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার মন্তব্যে
মরণ ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮

কাবিল বলেছেন: বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়বো সবাই, বিশ্ব এইড দিবস সফলতা কামনা করি।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: কাবিল ভাই ধন্যবাদ আপনাকে,
এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় একটিও আর,
বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়বো সবাই,
বিশ্ব এইড দিবসে এই আমাদের অঙ্গীকার’

ভয়াবহ এই রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.