নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর ব্যক্তিত্ব রায় বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহা। আর. পি. সাহা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করেও প্রভূত ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। ধনসম্পদের সবটাই বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলার মানুষের সেবায়। দেশের মানুষের শিক্ষা ও সেবার মানসিকতা থেকে তিনি গড়ে তোলেন কুমুদিনী হাসপাতাল, কুমুদিনী কলেজ, বাবার নামে দেবেন্দ্র কলেজ, ঠাকুরদার মায়ের নামে ভারতেশ্বরী হোমসের মতো শিক্ষা ও সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠান। সন্তান প্রসবকালে প্রায় বিনা চিকিৎসায় অকালে মারা যান রনদাপ্রসাদের মা। মায়ের সেই স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে ফিরেছে। তাই পরিণত জীবনে দুস্থ মানুষের সেবা দিতে গড়ে তুলেছেন মায়ের নামে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা নামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান। পরিবারের ভরণপোষণের খরচ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন কিছুই নিতেন না তিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন। পরবর্তীতে তার আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি। সমাজকল্যাণে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া এ মানুষটির ১১৯তম আজ জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৬ সালের আজকের দিনে ঢাকা জেলার সাভারে জন্মগ্রহণ করেন রণদাপ্রসাদ সাহা। দানবীর রায় বাহাদূরের জন্মদিনে তার জন্য রইল আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছা।
(নিজের বাড়ীর সামনে রণদাপ্রসাদ সাহা, ডান থেকে পঞ্চম)
রণদাপ্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের ০৭ নভেম্বর ঢাকা জেলার সাভারের উপকন্ঠে কাছুর গ্রামে তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ সাহা পোদ্দার এবং মাতার নাম কুমুদিনী দেবী। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইল জেলার মীর্জাপুরে। পিতা-মাতার চার সন্তানের মধ্যে রণদা ছিলেন দ্বিতীয়। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ সাহা পোদ্দার অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। তার বিশেষ কোনো স্থায়ী পেশা ছিল না। তিনি পেশাগত জীবনে দলিখ লেখার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসাও করেছেন, তবে ব্যবসার মানসিকতা তার ছিল না। মা ছিলেন গৃহিণী। মায়ের আদর বেশিদিন পাননি রণদা। অভাবের সংসারে মায়ের অসুস্থ্যতায় ডাক্তার জোটেনি; জোটেনি ওষুধ-পথ্য বা সেবাযত্ন। তখন গ্রামের হিন্দু সমাজে অশৌচের অজুহাতে সেবাযত্ন ও চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া ছিল নারীদের নিয়তি। মাকে সেভাবেই মারা যেতে দেখেছেন সাত বছরের শিশু রণদাপ্রসাদ। তার বয়স যখন সাত বছর, তখন তার মাতা সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অ এর পর তার পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করেন। বিমাতার আশ্রয়ে বহু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে ও অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে রণদা'র শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। রনদাপ্রসাদ চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত মীর্জাপুর বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান। সেখানে গিয়ে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে মুটের কাজসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হন। এরই মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করে কয়েকবার কারাবরণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সময় বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরে যোগ দিয়ে মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক) যান। সেখানে তিনি হাসপাতালে এক অগ্নিকা-ের ঘটনায় রোগীদের জীবন বাঁচালে তাকে নবপ্রতিষ্ঠিত (১৯১৬) বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ সালে পঞ্চম জজের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে রেলওয়ে বিভাগে টিকিট কালেক্টরের চাকরি নেন। পরে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। চার বছরে ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এ সময়ে দ্য বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি নামে নৌ-পরিবহন সংস্থা এবং নৌ-পরিবহন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪২ ও ১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের এজেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং জর্জ এন্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ ক্রয় করে নেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস ক্রয় করেন। চামড়ার ব্যবসাও শুরু করেন এই সময়।
(বিচারপতি আবু সাদত চৌধুরীর সাথে রণদাপ্রসাদ সাহা)
এভাবেই নিজ মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধনকুবেরে পরিণত হন। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে প্রচুর অর্থ দান করতে থাকেন তিনি। রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৩৮ সালে মির্জাপুরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট 'কুমুদিনী ডিস্পেনসারি' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৪ সালে সেটিই কুমুদিনী হাসপাতাল নামে পূর্ণতা লাভ করে। ১৯৪২ সালে তাঁর প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে 'ভারতেশ্বরী বিদ্যাপীঠ' স্থাপন করে ঐ অঞ্চলে নারীশিক্ষার সুযোগ করে দেন যা পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে ভারতেশ্বরী হোমস-এ রূপলাভ করে। ১৯৪৩ সালে টাঙ্গাইলে কুমুদিনী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার নামে মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে রণদাপ্রসাদ তার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ গরীবদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করার জন্য কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল নামে অলাভজনক প্রাইভেট কোম্পানী রেজিস্টার্ড করেন। মীর্জাপুরে ডিগ্রী মহিলা কলেজ কুমুদিনী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৩-৪৪ সালে সংঘটিত পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় রেডক্রস সোসাইটিকে এককালীন তিন লক্ষ টাকা দান করেন এবং ক্ষুধার্তদের জন্য চার মাসব্যাপী সারাদেশে দুইশত পঞ্চাশটি লঙ্গরখানা খোলা রাখেন। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইলে এস. কে. হাইস্কুল ভবন নির্মাণ এবং ঢাকার কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল (সিএমএইচ)-এর প্রসূতি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। মানবতাধর্মী কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তৎকালীন বৃটিশ সরকার রণদাপ্রসাদ সাহাকে রায় বাহাদুর খেতাব প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় ও তাঁর কাজের যথাযথ স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করেন।
(রণদাপ্রসাদ সাহার স্ত্রী কিরণবালা দেবী)
ব্যক্তিগত জীবনে রণদাপ্রসাদের সুযোগ্য সহধর্মিণী ছিলেন বালিয়টির জমিদারকন্যা কিরণবালা দেবী। তাদের চার সন্তানের মধ্যে বড় বিজয়া। কন্যা বিজয়া অল্প বয়সেই সংসারী হয়ে যান। দ্বিতীয় পুত্র দুর্গাপ্রসাদ। তৃতীয় সন্তান কন্যা জয়া লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে ভারতেশ্বরী হোমসের দায়িত্ব নেন। কনিষ্ঠ সন্তান পুত্র ভবানীপ্রসাদ বাবার আদর্শে গড়া দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথে রণদাপ্রসাদের ভাল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকহানাদার বাহিনী রণদাপ্রসাদ ও তার ২৬ বছর বয়সী সন্তান ভবানীপ্রসাদ সাহা (রবি)-কে তুলে নিয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর তারা বাড়ী ফিরে আসলেও পুণরায় ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার-আলবদররা নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে স্বপুত্রক ধরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ঐদিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাকে হত্যা করে। মৃত্যুকালে তিনি পুত্রবধূ স্মৃতি সাহা (২০০৫ সালে রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত) ও পৌত্র রাজীবকে রেখে যান।
দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা নেই, কিন্তু তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো আজও অকাতরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মানবকল্যাণে নিবেদিত রণদাপ্রসাদ সাহা সেসবের মাঝেই বেঁচে আছেন। মানবকল্যাণে নিবেদিত রায় বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহার জন্মদিনে তার জন্য আমাদের ফুলেল শুভেছ্ছা ও গভীর শ্রদ্ধা।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে দেশ প্রেমিক
মানবকল্যাণে নিবেদিত রায় বাহাদুর
রণদাপ্রসাদ সাহার জন্মদিনে
শুভেছ্ছা জানানোর জন্য।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
কাবিল বলেছেন: রণদাপ্রসাদ সাহার ১১৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ কাবিল ভাই
দানবীর রায় বাহাদুর
রণদা প্রসাদের জন্ম
দিনে শুভেচ্ছা
জানানোর
জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: দানবীর ও সমাজ সেবক রায় বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহার ১১৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন নিরন্তর।