নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৭


বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরী। বাংলাদেশে শিল্পসম্মত নাটকের যুগটির হয়তো অবসানই হয়েছে। তবে গুটিকয়েক মানষু যারা নাটকে শিল্প খুঁজেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আনিস চৌধুরী। পেশাগত জীবনে সংবাদপত্র ও বেতারের সাংবাদিক, সাহিত্যের তিনটি শাখায় দৃপ্ত পদচারণা করেছেন। উপন্যাস ও ছোটগল্পে তাঁর ছিল উজ্জ্বল উপস্থিতি। তিনি সমধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন নাটক রচনায়। আনিস চৌধুরী বিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার কথাসাহিত্যে আধুনিক সাহিত্যের ভিত ও গতিধারা নির্মাণ করেছিলেন। জলসিঞ্চন করেছেন সাহিত্যের বিস্তৃত ভুবনে। তাঁর লেখালেখির সূচনা হয়েছিল সাতচল্লিশ-পূর্ব সময়েই। সুদীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক রচনা করেছেন। তাঁর এই সৃষ্টির ভুবনে এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত জীবনের নানা দিক প্রতিফলিত হয়েছে। তার লেখা একসময়ের জনপ্রিয় নাটক মানচিত্র, তবু অনন্য, তারা ঝরার দিন এখনো মানুষের মন থেকে মুছেনি। এছাড়া তার লেখা অ্যালবাম ও মানচিত্র নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে অসংখ্যবার। এখন যারা নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখছেন তাদের কাছে হতে পারে পাঠ্য। নাটকের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন আনিস চৌধুরী। আজ কথাসাহিত্যিক আনিস চৌধুরীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯০ সালের আজকের দিনে ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন নাট্যকার আনিস চৌধুরী। কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন আনিস চৌধুরীর। কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও আনিস চৌধুরীর পিতৃকুলের নিবাস ছিল কুমিল্লা জেলার কসবা থানাধীন গোপীনাথপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নূরুল হুদা চৌধুরী, মাতা আসেমা খাতুন। আনিস চৌধুরীর পিতৃদত্ত নাম আনিসুজ্জামান কামরুদ্দিন। পারিবারিক পদবি চৌধুরী হলেও প্রথম দিকে তাঁর নামের সঙ্গে পদবিটা যুক্ত হয়নি। তাঁর সার্টিফিকেট-নাম ছিল আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তবে পিতৃদত্ত কিংবা সার্টিফিকেট নামের কোনোটাই নয়, বরং আনিস চৌধুরী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন বাঙালি সাহিত্যপিপাসুদের কাছে। কুমিল্লা, কলকাতা এবং ঢাকায় আনিস চৌধুরী তাঁর শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন। আনিস চৌধুরীর লেখাপড়া শুরু হয় মাইজভান্ডার শরিফে। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফ.এ. পরীক্ষা পাসের পর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। স্কুলজীবনে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আজাদ পত্রিকার মুকুলের মহফিলের সভ্য ছিলেন। সেখানেই তাঁর লেখালেখির সূচনা হয়। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ পত্রিকার সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখে তিনি পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে আনিস চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-এসসি পাস কোর্সে ভর্তি হন। সময়টা ১৯৫১-৫২। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটলেও ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাস করেন।

আনিস চৌধুরী এক কর্মময় জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। ১৯৫৪ সালের জুলাইতে আনিস চৌধুরী রেডিও পাকিস্তান ঢাকা শাখায় কারিগরি সহকারী পদে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে হন সহকারী বার্তা সম্পাদক। ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে পদোন্নতি লাভ করেন বার্তা সম্পাদক পদে। ১৯৬৫ সালে তিনি প্রচারমাধ্যম বিষয়ে কানাডা থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে রেডিও ছেড়ে তিনি যোগদান করেন ঢাকা টিভির নিউজ এডিটর পদে। ১৯৭১ সালে তিনি করাচিতে আটকে পড়েন, ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি রেডিও বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে হন বার্তা পরিচালক। এরপর ডেপুটেশনে তিনি যোগ দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ১৯৭৯ সালে তিনি ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন এবং কিছুদিন ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম প্রেস কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে ডি.জি. পদে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের মার্চে এ পদে থাকাকালীন তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি একটি জীবনবীমা কোম্পানির উপদেষ্টা ছিলেন।

আনিস চৌধুরীর পারিবারিক পরিমণ্ডলে সংস্কৃতিচর্চার উদার ও মুক্ত পরিবেশ তাঁর কৈশোরক মানস-গঠনে দূরস্পর্শী ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীকালে তাঁর জীবনচর্যায় ও সাহিত্যকর্মে এ পারিবারিক শিক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে অবধারিতভাবে। প্রগতিশীলতার চর্চায় তাঁর মনন এবং মানস সব সময়ই পরিব্যাপ্ত ছিল। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে তিনি টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য অনেকগুলি নাটক রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত দুটি নাটক হচ্ছে মানচিত্র (১৯৬৩) ও অ্যালবাম (১৯৬৫)। এছাড়া সরোবর (১৯৬৭), সৌরভ (১৯৬৮),শখের পুতুল (১৯৬৮), মধুগড় (১৯৭৪), প্রত্যাশা, ছায়াহরিণ, ছাড়পত্র, জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী (অনুবাদ) ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। আনিস চৌধুরী ছিলেন উচ্চ-মননের মানুষ। মানুষের স্বাধীনতা ও মানবিক চেতনাকে সারাজীবন স্বাগত জানিয়েছেন। নারীমুক্তিতে ছিলেন প্রবল বিশ্বাসী। সহজ-সরল ও নিরাভরণ জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। সত্যনিষ্ঠ ও নিরহংকারী এই মানুষটি ১৯৯০ সালের ২রা নভেম্বর একষট্টি বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। আজ কথাসাহিত্যিক আনিস চৌধুরীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন বরেণ্য নাট্যকার আনিস চৌধুরী। কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.