নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ফররুখ আহমদ। মুসলিম বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি ফররুখ আহমদের সাহিত্য অনুরাগ ও কাব্যপ্রীতি অল্প বয়স কাল থেকেই লক্ষ্যণীয় এবং তাঁর আত্নপ্রকাশ ছাত্র জীবনেই পরিলক্ষিত হয়। তাঁর লেখনী যেন সদ্য প্রস্ফূটিত একটি গোলাপী পদ্ম। তাঁর প্রতিটি কাব্যে ফুটে উঠেছে মানব প্রেম ও অকৃত্রিম পল্লীপ্রীতি। তাঁর কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এই বাঙ্গালী কবি 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি একাধারে গীতি-কবিতা, সনেট, মহাকাব্য, ব্যঙ্গ-কবিতা, কাব্যনাট্য, গীতিনাট্য ও শিশু-কিশোর কবিতা রচনা করেছেন যা হাসনা হেনা ফুলের মত সুরভিত করেছে জগৎ ও জীবনকে। কবি ফররুখ আহমদ প্রথম জীবনে প্রখ্যাত মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব কমরেড এম,এন রায়ের শিষ্য ছিলেন। কিন্তু জন্মসূত্রে ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্যের অধিকারী কবি ফররুখ আহমদ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ধর্মীয় চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন। এর বহিঃপ্রকাশ তাঁর সাহিত্য কর্মের মধ্যে অন্তর্নিহিত। মুসলিম রেনেসাঁর বাঙ্গালী কবি ফররুখ আহমদ ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে ৫৬ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ কবির ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী। কবি ফররুখ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
(যৌবনকালে ফররুখ অাহমদ)
ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ই জুন তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শ্রীপুর থানার অনত্মর্গত মাঝআইল গ্রামের বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ হাতেম আলী এবং মাতা বেগম রওশন আখতার। পুলিশ ইন্সপেক্টর সৈয়দ হাতেম আলী আই.এ. পাশ করেই চাকরিতে যোগ দেন। প্রাচীন শিক্ষিত পরিবার হিসেবে গ্রামে তাঁদের ব্যাপক সম্মান ও খ্যাতি ছিল। ফররুখ আহমদের দাদা ছিলেন সরকারী চাকরিজীবী আর দাদী ছিলেন তৎকালীন সময়ের শিক্ষিত জমিদার কন্যা। সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত হাতেম আলীর দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে পর পর তিনটি মেয়ে জন্মের পর রমজান মাসে ফররুখ আহমদের জন্ম হয়। এই জন্য দাদি তাঁকে আদর করে রমজান বলে ডাকতেন। ফররুখ ছিলেন সচ্ছল পরিবারের সন্তান। ছয় বছর বয়সে ১৯২৪ সালে মাতৃহারা হয়েছিলেন ফররুখ। প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা যাবার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার পিতা সৈয়দ হাতেম আলী। ১৯৪৩ সালে ফররুখের বাবা ইন্তেকাল করেন। তাঁর দাদিও ঐ বছর মারা যান। বাল্যকালে মাঝআইল গ্রামের পাঠশালাতেই ফররুখ আহমদের শিক্ষাজীবনের হাতে খড়ি। ফারসি-জানা এক মহিলা বাড়িতে এসে তাঁকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। পরবর্তীতে কলকাতায় এসে তালতলা মডেল এম, ই স্কুলে ভর্তি হন। এরপর কলকাতার বিখ্যাত বালিগঞ্জ সরকারী হাইস্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ১৯৩৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৯ সালে তিনি কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই, এ পাস করেন। কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ ও সিটি কলেজেও পড়াশুনা করেছেন তিনি। আই, এ পাস করার পর প্রথমে তিনি দর্শন ও পরে ইংরেজীতে অনার্স নিয়ে বি, এ তে ভর্তি হন। ইংরেজী সাহিত্যে বেশ কিছু দিন অধ্যয়ন করলেও শেষ পর্যন্ত তাতে তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি।
(ষাটের দশকের শুরুতে স্ক্রিপ্ট লিখছেন ফররুখ আহমদ)
ব্যক্তি জীবনে সৎ, ধার্মিক, মানবতাবাদী ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান কর্মপুরুষ ফররুখ আহমদ ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ 'উপহার' নামে একটি কবিতা লেখেন যা 'সওগাত' পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়। ফররুখ আহমদের ছেলে-মেয়ে ১১ জন। তাঁরা হলেন- সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান (আহমদ আখতার), সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু। দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত কলকাতায় ছিলেন কবি ফররুখ আহমদ। কলকাতায় থাকাকালীন ফররুখ আহমদ অনেকগুলি চাকরি করেছেন। তবে এসব কোনো চাকরিই বেশি দিন করেননি তিনি। তাঁর সবগুলি চকরি ছিল স্বল্পস্থায়ী। শুধুমাত্র 'মোহাম্মদী' ছাড়া অন্যগুলির কোনটিই তাঁর কবিমনের সঙ্গে খাপ খায়নি। ফররুখ আহমদ ১৯৪৩ সালে আই,জি,প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৫ জলপাইগুঁড়িতে একটি ফার্মেও কিছু দিন চাকরি করেন। এর পর ১৯৪৫ সালে মাসিক 'মোহাম্মদী'-র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কিন্তু তাঁর একটি কবিতা সেই সময়কার 'মোহাম্মদী' ও 'আজাদ' সম্পাদক নিজের নামে ছাপানোর কারণে তিনি ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে 'মোহাম্মদী'-র চাকরি ছেড়ে দেন। এর পর ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন ফররুখ আহমদ । ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কিছুদিন পরে কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে তিনি ঢাকা বেতারে ‘স্টাফ আর্টিস্ট’ হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা বেতারে তিনি ‘ছোটদের খেলাঘর’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। ঢাকা বেতারে থাকাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন নিবন্ধ, কবিতা ও সর্বোপরি অসংখ্য গান, হামদ, নাত, গজল লিখে রেডিওতে পরিবেশন করেছেন। সঙ্গীত বিষয়ে কবি ফররুখ আহমদের অগাধ জ্ঞান ছিল। তাঁর লিখিত গান গুলির মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় গানঃ
১। দ্বীন দুনিয়ার সাথী আমার নূরনবী হয়রত ---
২। শুনেছি এ বাণী পথে ঊষার, মান একতা শৃঙ্খলার।
৩। তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে, খোদা -------- ছাড়া ।
৪। চাঁদ ছিল জেগে রাতের মিনারে প্রভাতের কিনারায় ।
(ঢাকা বেতারের একটি কবিতাপাঠের অনুষ্ঠানে (বাম থেকে) কবি আহসান হাবীব, কবি ফররুখ আহমদ, কবি আবুল হোসেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান ও কবি আবদুল কাদির)
কবি ফররুখ আহমদের ছিল অত্যাধিক কবিতা প্রীতি। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর প্রধান পরিচয় 'কবি'। ১৯৪৪ সালে কবি বেনজির আহমদের অর্থানুকূল্যে ঊনিশটি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’। ফররুখ আহমদ কিছু সনেটও রচনা করেছেন। তাঁর এ রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের সার্থক রূপকার কবি ফররুখ আহমদের ‘হাতেম তা’য়ী’ কাব্যটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত এক অমূল্য সম্পদ। এখানে তিনি কবি মাইকেলকে সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করেননি। ‘হাতেম তা’য়ী’ কাব্যটিকে বাংলার অনেক কবি সাহিত্যিক ‘মহাকাব্য ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কবি এখানে পৌরাণিক উপমার আশ্রয় না নিলেও মুসলিম ঐতিহ্যের উপমা সম্ভার ভাষা ও ছন্দের মনোহারিত্বে বর্ণনা করেছেন। এ কাব্য বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। নিম্নে হাতেমতা’য়ী কাব্যের কিয়দাংশ উদ্ধৃত করা হলোঃ
যখন রক্তিম চাঁদ অন্ধকার তাজিতে সওয়ার
উঠে আসে দিগ্বলয়ে, ওয়েসিস নিসত্মব্ধ, নির্জন,
দূরে পাহাড়ের চূড়া ধ্যান-মৌন; অজানা ইঙ্গিতে
তখনি ঘুমনত্ম প্রাণ জেগে ওঠে। তখনি এ মনে
মরম্ন প্রশ্বাসের সাথে জেগে ওঠে বিগত দিনের
দীর্ঘশ্বাস। আঁধো - আলো - অন্ধকারে দেখি আমি চেয়ে
বিস্মৃতির দ্বার খুলে উঠে আসে ঘুমনত্ম স্মৃতিরা
রত্রির অস্পষ্ট পাখী দেখি আমি অজ্ঞাত বিস্ময়ে !
(১৯৬৮ সালে রেডিওতে পুঁথি পাঠ করছেন ফররুখ অাহমেদ)
ফররুখ আহমদ ডানপন্থার প্রতি সমর্থন করলেও তিনি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা তাঁর‘মধুর চেয়ে মধুর যে ভাই আমার দেশের ভাষা ’ গানটি বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল। এ ছাড়া আরবি ও ফারসি শব্দের প্রাচুর্য তাঁর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ফররুখ আহমদ কবিতাকে ভালবাসতেন ছন্দের মহিমায়। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামী ভাবধারার বাহক হলেও তাঁর কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তাঁর কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। তিনি ছিলেন গদ্য ছন্দে কবিতা লেখার বিরোধী পক্ষ। তাঁর ধারণা 'কবিতা মানেই মানুষের মনের ছন্দবদ্ধ কথা, ভাবনার কথা'। ফররুখ আহমদ শিশু মনস্তত্ব সম্পর্কেও সচেতন ছিলেন। তাই শিশুদের জন্যও তিনি অনেক ছড়া, কবিতা ও গান রচনা করেছিলেন। ফররুখ আহমদ শুধু শিশু-মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন তাই নয়, শিশু কিশোরদেরকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতেন। ছন্দ, শব্দ, ছড়া-কবিতার মাধ্যমে শিশু-কিশোররা আনন্দ লাভের সঙ্গে সঙ্গে যাতে চরিত্রবান নাগরিক ও আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি তাঁর বিভিন্ন ছড়া-কবিতার মধ্যে কৌশলে ছোট ছোট কথায় চমৎকার সব উপদেশ ও উৎসাহব্যঞ্জক বাণী পরিবেশন করেছেন। যেমনঃ
নতুন সফরে শুরু হোক আজ জীবন সেই,
মুক্ত প্রাণের রোশনিতে ভয়-শংকা নেই।
অথবাঃ
(মেলায় যাওয়ার ফ্যাঁকরা)
বাপ্রে সে কী ধুম ধাড়াক্কা
দিচ্ছে ধাক্কা, খাচ্ছে ধাক্কা,
গুঁতোর চোটে হয় প্রাণান্ত
হাঁপিয়ে ওঠে ক্যাবলা কাণ্ড!
লাগলো যখন বিষম তেষ্টা
ক্যাবলা করে ডাবের চেষ্টা।
তাকিয়ে দেখে পকেট সাফ,
ভিড়ের ভিতর দেয় সে লাফ।
কিংবাঃ
(চিড়িয়াখানাঃ চিড়িয়াখানা)
দেখতে যাবো কাজের ফাঁকে
প্রাণীর বাসা জগৎটাকে
খোদার গড়া এই দুনিয়ায়
কেউ পানিতে কেউবা ডাঙায়
কেউবা ঘোরে শূন্য হাওয়ায়
দেখি আজব চিড়িয়া খানায়।
হরিণ ঘাটা নদীর বাঁকে
দল বেঁধে ভাই হরিণ থাকে,
একটু খানি শব্দ হ’লে
হাওয়ার আগে হরিণ চলে
বিজলি আলো ঝিলিক দিয়ে,
মিলায় যেন চোখ ধাঁধিয়ে।
এভাবে ফররুখ আহমদ শিশুদের জন্য অসংখ্য ছড়া-কবিতা রচনা করেছেন। বিষয়বস্তুর দিক থেকে এগুলো যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ তেমনি শিশু-কিশোরদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে সম্পূর্ণ উপযোগী। শিশু-কিশোররা আনন্দ লাভের সাথে সাথে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও জানতে পারে। সার্বিক বিচারে বাংলা শিশুতোষ কাব্য রচনার ক্ষেত্রে ফররুখ আহমদের অবদান অসামান্য এবং তিনি এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। কবি ফররুখ আহমদ লিখেছেন অবিরাম ধারায়, কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থঃ
১। সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর, ১৯৪৪), ২। সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২), ৩। নৌফেল ও হাতেম (জুন, ১৯৬১), ৪। মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩), ৫। ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩), ৬। হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬), ৭। নতুন লেখা (১৯৬৯), ৮। কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০), ৯। হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১), ১০। সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩), ১১। দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)
শিশুতোষ গ্রন্থঃ
১। পাখির বাসা (১৯৬৫), ২। হরফের ছড়া (১৯৭০), ৩। চাঁদের আসর (১৯৭০), ৪। ছড়ার আসর (১৯৭০), ৪। ফুলের জলসা (ডিসেম্বর, ১৯৮৫), এ ছাড়াও তাঁর আরো অনেক কাব্য গ্রন্থের অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি রয়েছে। কবি সাহিত্যে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। ১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক "প্রাইড অব পারফরমেন্স" এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাঁকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।
প্রাচুর্য্যের মাঝে জন্মগ্রহন করা এই অভিমানী কবি চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে চিকিৎসার অভাবে পরম পৌরষত্বের সাথে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখ সন্ধেবেলা ঢাকায় ঢাকায় ইস্কাটন গার্ডেনে নিয়তি নির্ধারিত মৃত্যুকে বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ছাপ্পান্ন বছর। কবি ফররুখ আহমদের মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অভাবনীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি' ফররুখ আহমদের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুদিনে কবি ফররুখ আহমদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ইসমাইল ভা্ই
চমৎকার মন্তব্যে কবিকে শ্রদ্ধা
নিবেদনের জন্য।
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কবি ফররুখ আহমদের মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অভাবনীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি' ফররুখ আহমদের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুদিনে কবি ফররুখ আহমদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বড় কষ্ট হয় এমন জাগরণী কবির স্মৃতি অবহেলায় পড়ে রয়!
স্মরনের লোকএ যেন কমে যাচ্ছে দিন িদন!!
আমাদের শেকড়ের বিস্মৃতি
আমাদের আত্ম পরিচয় বিস্মৃতি আমাদের শূন্য করে দিচ্ছে।
আপনার ধারাবাহিক সিরিজের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর অনপ্রানিত করা
মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ ভৃগু ভাই। শুভেচ্ছা ও
শুভকামনা আপনার জন্য।
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪
আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: খুব ভাল লাগল. প্রভূ আপনাকে স্বার্থক করুক
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
সুন্দর প্রত্যাশার জন্য।
৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯
রাবার বলেছেন: স্কুলে থাকতে উনার কবিতা পাঠসুচিতে ছিল। শ্রদ্ধা জানাই মৃত্যুদিনে।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ রাবার
মন্তব্যের জন্য।
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৬
হাবিবুর রাহমান বাদল বলেছেন: ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক "প্রাইড অব পারফরমেন্স" তিনি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই বলে যে নিরীহ মানুষের হত্যায় যাদের হাত তাদের নিকট থেকে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করবেন না। অথচ তৎকালীন কবি সাহিত্যেক কবি শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামালেরা হালুয়া-রুটির জন্য তখন পাকিস্তানের দালালি করেছেন এবং স্বাধীনতার পরে জার্সি বদল করে স্বাধীনতার ধারক-বাহক সেজেছেন। কষ্টের সাথে বলতে হয় প্রাচুর্য্যের মাঝে জন্মগ্রহন করা এই অভিমানী কবিকে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যায়িত করে চাকুরিচ্যুত করে তাকে চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয় এবং বিনা চিকিৎসার পরেও পরম পৌরষত্বের সাথে বিবেকের সাথে আপস না করে এই অভিমানী কবি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তার প্রভুর সার্নিধ্যে চলে যান।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ বাদল ভাই
সাহসী উচ্চারণের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২০
ইসমাইল সোনাতলা বলেছেন: “কবি ফররুখ আর ডেকে ডেকে বলবে না
রাত পোহাবার কত দেরি?
জেগে উঠো নতুন করে
একুশ শতকের পাঞ্জেরী”