নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মার্কিন উদ্ভাবক এবং বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। যার আবিষ্কারেই প্রথম আলোকিত হয়েছিল গোটা পৃথিবী। এডিসন গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতি (বাল্ব) সহ বহু যন্ত্র তৈরি করে বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলেন। গণযোগাযোগ খাতে বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাতে তার বহু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার অবদানের জন্য তিনি সর্বস্বীকৃত। যার মধ্যে একটি স্টক টিকার, ভোট ধারনকারী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারী, বৈদ্যুতিক শক্তি, ধারনযোগ্য সংগীত এবং ছবি। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনকারী তাঁর কাজগুলো তাঁকে জীবনের শুরুর দিকে একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে গড়ে তোলে। বাসস্থান, ব্যবসায়-বানিজ্য বা কারখানায় বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন ও বন্টনের ধারনা এবং প্রয়োগ দুটিই এডিসনের হাত ধরে শুরু হয় যা আধুনিক শিল্পায়নের একটি যুগান্তকারী উন্নতি। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন দ্বীপে তাঁর প্রথম বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীদের অন্যতম বলে বিবেচিত এডিসন নিজের নামে ১,০৯৩টি মার্কিন পেটেন্টসহ যুক্তরাজ্যে, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে পেটেন্ট রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের আজ ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে দিনে মৃত্যুবরণ করেন। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
টমাস আলভা এডিসন ১৮৪৭ সারের ১১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও, মিলানে জন্ম গ্রহন করেন। এডিসন পিতা স্যামুয়েল অগডেন এডিসন ও মাতা ন্যন্সি ম্যাথিউস এলিয়টের সপ্তম এবং সর্বশেষ সন্তান। তাঁর পিতা ছিলেন ওলন্দাজ বংশোদ্ভুত। এ সময় তাঁর পিতার আর্থিক সচ্ছলতা ছিল। ফলে এডিসনের ছেলেবেলার দিনগুলো ছিল আনন্দদায়ক। ১৮৫৪ সালে এডিসনের পরিবার মিশিগানের পোর্ট হুরনে চলে যায়। সেখানেই স্কুলে যোগ দেন এডিসন। অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন এডিসন । স্কুলের শিক্ষকরাও তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। কিন্তু স্কুলের গন্ডিবাঁধা পড়াশুনা তাঁর নিকট একঘেঁয়েমি মনে হত। রেভেরেন্ড অ্যাঙ্গল নামের এক শিক্ষককে একদিন পেছন হতে 'বোকা' বলায় তিন মাসেই স্কুলজীবনের সমাপ্তি ঘটে এডিসনের। আর কোনদিন স্কুলে যাননি এডিসন। এবার মায়ের নিকট তাঁর পড়াশুনা শুরু হল। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বই পড়ে ফেলেন এডিসন। জ্ঞানচর্চায় তাঁর আগ্রহ প্রকাশ পায়। বাকি জীবন অন্যদের উৎসাহ দিয়েছেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। এডিসন ছোটবেলা থেকে পারিপার্শ্বিক যা কিছু আছে, যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন এগুলো নিয়ে। বেশ মজার ঘটনা। একবার তিনি মুরগির মতো ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে পারেন কিনা তা দেখবার জন্য ঘরের এক কোণে ডিম সাজিয়ে বসে পড়লেন। এর কয়েক বছর পর তিনি বাড়িতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটা ছোট ল্যাবরেটরি তৈরি করলেন। কিছুদিন যেতেই তিনি হাতে-কলমে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনে ফেললেন। এ সময় বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি স্থির করলেন কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করবেন। অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন এডিসন। একবার স্টাফোর্ড জংশনে রাত্রিবেলায় ট্রেন ছাড়ার সিগনাল দেওয়ার কাজ পেলেন। রাত জেগে কাজ করতে হত এবং দিনের বেলায় সামান্য কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিয়ে নিজের গবেষণার কাজ করতেন। এ সময় তিনি একটি ঘড়ি তৈরি করলেন যেটি আপনা থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে সিগনাল দিত। এর পরে বোস্টন শহরে কাজ করার সময় দেখলেন, অফিস জুড়ে ভীষণ ইঁদুরের উৎপাত। তিনি হঠাৎ করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করলেন যা সহজেই ইঁদুর ধ্বংস করতে সক্ষম।
১৮৬৬ সালে ১৯ বছর বয়সে কেন্টাকির লুইসভিলে চলে যান এডিসন। সেখানে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হয়ে কাজ শুরু করেন। রাতের পালায় ডিউটি থাকায় সে সময় তিনি লেখাপড়া এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতেন। ১৮৬৮ সালে এডিসনের বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের দেখতে বাড়িতে ফিরে যান এডিসন। বুঝতে পারেন এখন থেকে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। বাড়ি থেকে এডিসন চলে যান বোস্টনে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কোম্পানির হয়ে কাজ শুরু করেন। সে সময় বোস্টন ছিল আমেরিকার বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। এডিসন এই সুযোগটাকে কাজে লাগান। কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরির কাজে হাত দেন। এভাবেই তৈরি করে ফেলেন ইলেকট্রনিক ভোটিং রেকর্ডার, যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা করা যেত। ধীরে ধীরে বোস্টনে এডিসনের পরিচিতি বাড়তে থাকে। তাঁর উদ্ভাবিত পণ্য মানুষ কিনতে শুরু করে এবং এডিসন আরো নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এিডসন অনেক আবিস্কারের পথপ্রদর্শন করে গেছেন। নিজে চেষ্টা করে যদিও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, তবুও পরবর্তীতে তাঁর ধারণাকে পুঁজি করেই এসব তৈরি করা হয়। যেমনঃ ১। উল্কি যন্ত্র, ২। লোহা নিষ্কাশক যন্ত্র, ৩। বৈদ্যুতিক মিটার, ৪। ফল সংরক্ষণ যন্ত্র, ৫। ব্যাটারিচালিত গাড়ি, ৬। কনক্রিট বাড়ি, ৭। টেকসই আসবাব, ৮। কথা বলা পুতুল ইত্যাদি।
(স্ত্রী মেরি স্টিলওয়েল এর সাথে টমাস আলভা এডিসন)
ব্যক্তিগত জীবেন ২ বার বিয়ের পিড়িতে বসেন আলভা এডিসন। ১৮৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ১৬ বছর বয়সি মেরি স্টিলওয়েলকে বিয়ে করেন। তারা তিনটি সন্তান গ্রহণ করেন যথা্ঃ ১। মেরিওন এসটেলা এডিসন (১৮৭৩-১৯৬৫), ২। টমাস আলভা এডিসন জুনিয়র (১৮৭৬-১৯৩৫), এবং ৩। উইলিয়াম লেসলি এডিসন (১৮৭৮-১৯৩৭)। ১৮৮৪ সালের ৯ আগস্টের প্রথম স্ত্রী মেরি স্টিলওয়েলের মৃত্যু হলে ওহিওতে বিখ্যাত উদ্ভাবক লুইস মিলারের কন্যা ২০ বছর বয়সি মিনা মিলারকে বিয়ে করেন। তাদেরও তিনটি সন্তান ছিলো। যথাঃ ১। মেডেলিইন এডিসন (১৮৮৮-১৯৭৯), ২। চার্লস এডিসন (১৮৯০-১৯৬৯), (যিনি তার বাবার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করতেন এবং পরে নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচিত হন) এবং ৩। থিওডর এডিসন (১৮৯৮-১৯৯২), পদার্থবিদ যার ৮০টির বেশি পেটেন্ট রয়েছে।
এই পরিশ্রমী বিজ্ঞানী অবশেষে ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করলেন। তাঁর মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল মানুষের ইতিহাসে এডিসনের মাথার দাম সবচেয়ে বেশি। কারণ এমন সৃজনীশক্তি অন্য কোনো মানুষের মধ্যে দেখা যায় নি। তাঁর শেষ নিঃশ্বাসটুকু একটি টেস্টটিউবে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে হেনরি ফোর্ড জাদুঘরে। তার মৃত্যুতে সমাপ্ত ঘটে একটি নিরলস প্রচেষ্টায় গাঁথা কর্মবহুল জীবনের। তবে তি্নি পৃথিবীতে রেখে যান অসংখ্য আবিষ্কার যা তাঁকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে।পৃথিবীর অগ্রগতিতে তার অবদান বেঁচে থাকবে মানুষের বয়সে। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
©somewhere in net ltd.