নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
নারী শিক্ষার অগ্রদূত, সমাজসংস্কারক এবং উনিশ শতকের বাঙলার পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা প্যারীচরণ সরকার। যিনি প্রথম বৃটিশ শাসিত বাংলার মানুষদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তার পাঠ্যবই বাঙালির সমগ্র প্রজন্মকে ইংরেজি ভাষায় পরিচিত করেছে। তাঁর পাঠ্যবইসমূহ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে এবং অধিকাংশ ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলায় নারী শিক্ষার অগ্রদূত ছিলেন প্যারীচরণ সরকার এবং এজন্য তাঁকে 'প্রাচ্যের আর্নল্ড' বলা হতো। তিনি তাঁর সময়কালে সুরাপান নিবারকরূপে সকলের দৃষ্টি ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। বাঙালির ইংরেজি শিখবার তৎকালীন প্রবণতায় তাঁর রচিত 'ফার্স্ট বুক' বইটি বাঙলার সামাজিক ইতিহাসে অক্ষর-মূর্তি হয়ে আছে। অতি সহজ সরল ভাষায় ইংরেজি ভাষা উচ্চারণ বিধির একেবারে গোড়ার নিয়মকানুনগুলি লেখা আছে এই বইতে। অনেক গুণীজনের খুব পছন্দের ছিল এটি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নিজে ছোটবেলায় পড়েছেন এই বই। আজ এই শিক্ষাবিদের ১৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৭৫সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। নারী শিক্ষার অগ্রদূত, সমাজসংস্কারক প্যারীচরণ সরকারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্যারীচরণ সরকার ১৮২৩ সালেল ২৩ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার চোরবাগানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বৈরব চন্দ্র সরকার। প্যারীচরণ সরকার ডেভিড হেয়ারের পটলডাঙ্গার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮৩৮ সালে হেয়ার সাহেবের স্কুল থেকে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। অতপর হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে সিনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক চল্লিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৪৩-এ হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ করেন। হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ করে কিছুকাল হুগলী ব্যাংকে চাকরি করার পর হুগলী স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। পরে তিনি বারাসতের গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধাণ শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ১৮৪৬-১৮৫৪ পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কৃষি বিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।এরপর কুলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর চেষ্টায় স্কুলটির নাম পরিবর্তিত হয়ে হেয়ার স্কুল হয়। পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন প্যারীচরণ সরকার।
প্যারীচরণ সরকার তার শিক্ষকতা জীবনে ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে দেখেন, এদেশীয় ছাত্রদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি শেখার বই নেই। তখন তিনি নিজেই লিখে ফেললেন 'ফার্স্ট বুক অফ রিডিং ফর নেটিব চিলড্রেন'। পরে তিনি এর দ্বিতীয় ভাগ ও লিখেছিলেন। প্যারীচরণ সরকারের ফার্স্ট বুক হয়ত আজকাল আর কোন স্কুলে পড়ানো হয়না । কিন্তু তাঁর লেখা এই বই এর একটা কবিতা এখনো অনেকে মুখস্থ রেখেছেন, আর ছোটদের মুখস্থ করান। সেটা হল এইরকমঃ
Thirty days have September,
April, June and November,
February has Twenty -Eight alone,
And the rest have thirty-one.
প্যারীচরণ সরকার শুধু লেখেন নি, নিজে সেই বই ছাপাতেনও। উত্তর কলকাতায় এখনো রয়েছে তাঁর সেই বাড়ি এবং ছাপাখানা, যদিও জরাজীর্ণ অবস্থায়। ১৮৭৫সালের আজকের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন প্যারীচরণ সরকার। আজ এই শিক্ষাবিদের ১৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। নারী শিক্ষার অগ্রদূত, সমাজসংস্কারক প্যারীচরণ সরকারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
©somewhere in net ltd.