নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের মধ্যে অন্যতম মার্কিন রক্ সঙ্গীত শিল্পী এলভিস প্রিসলি। সঙ্গীত প্রিয়দের কাছে 'কিং অব রক এন্ড রোল ' অথবা শুধু 'দ্য কিং' নামে খ্যাত এলভিস প্রিসলি তার ডাকনাম এলভিস নামেও বহুল পরিচিত। ৬০ এবং ৭০ দশকের বহুল আলোচিত এই গায়ক-অভিনেতা এখনও দর্শক শ্রোতাদের মাঝে সমান জনপ্রিয়৷ কন্ঠশিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাও ছিলেন। প্রিসলীর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম "লাভ মি টেন্ডার" (Love me Tender)। ছবিটি ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে মুক্তি পায়। বেঁচে থাকলে, হৃদয়ের কাছাকাছি আরো কতো গানই যে তিনি উপহার দিতেন আমাদের৷ সৃষ্টি করতেন অনবদ্য সব সঙ্গীত৷ সৃষ্টি করতেন ‘ম্যাজিক’৷ কিন্তু বিধাতার অমোঘ নিয়ম যেতে নাহি দিবো তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। কিংবদন্তিতুল্য এই রক সঙ্গীত শিল্পী ১৯৭৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। থেকে যায় শুধু তার সেই ভুবন ভোলানো কন্ঠ, প্রেমের মূর্ছনা৷ আজ এলভিস প্রিসলির ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তিতুল্য মার্কিন রক্ সঙ্গীত শিল্পী এলভিস প্রিসলির মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(শিশু বয়সে এলভিস প্রিসলি)
ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম এলভিস প্রিসলি ১৯৩৫ সালের ৮ই জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি রাজ্যের টুপেলো শহরে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তার বাবার নাম ভ্যারন এলভিস এবং মায়ের নাম লাভ প্রিসলি। প্রিসলি যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তার বাবার বয়স ছিল ১৮ এবং মায়ের বয়স ছিল ২২ বছর। কিশোর বয়েস থেকেই ‘গিটার' নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত এলভিস'কে৷ অথচ, ক্লাসে তাঁর গান শুনে এলভিসের সঙ্গীত শিক্ষক নাকি বলেছিলেন, ‘‘এ ছেলেকে দিয়ে গান হবে না৷'' ভাবা যায় ? মাত্র ১৩ বছর বয়সে পারিবারিক কারণেই টেনেসি'র মেমফিস শহরে চলে যেতে হয় এলভিস'কে৷ সেখানে ১৯৫৪ সালে "Sun Recordings" নামে একটি সংগীত বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে গান গাওয়ার মাধ্যমে তার নিজের সংগীত ক্যারিয়ার শুরু করেন প্রেসলি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯ বছর ৷ প্রেসলি প্রথমে ‘কান্ট্রি', পরে রিদম অ্যান্ড ব্লুস' ইত্যাদি চেষ্টা করলেও, দু-বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে একেবারে ভিন্ন মাত্রার সুরে ডুব দেন তিনি ৷ ভেসে যান ‘রক এন রোল'-এর ছন্দে, তার মূর্ছনায়৷ গাইলেন ‘লাভ মি টেন্ডার'...
১৯৫৮ সালে বাধ্যতামুলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন প্রিসলি। ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে ফোর্ট হুড-এ প্রথমিক প্রশিক্ষণের পর, মার্কিন বাহিনীর হয়ে জার্মানির ফ্রাইবুর্গ শহরে আসেন রমনী-মোহন এলভিস প্রেসলি৷ আর সেখানে অদূরের বাড নয়হাইম শহরে ১৯৫৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর এলভিসের আলাপ হয় সঙ্গীতশিল্পী প্রিসিলা বিউলিউ-এর সঙ্গে৷ প্রায় সাত বছর পর তাকেই বিয়ে করেন এলভিস৷ রচনা করেন বিখ্যাত সব রোমাঞ্চকর, আবেগ-আপ্লুত প্রেমের গান৷ একরকম বাধ্য হয়েই তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ আর সে সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এলভিসের মা৷ অবশ্য এর আগেই, তিনি গেয়েছিলেন বহু বিখ্যাত গান৷ যার মধ্যে অন্যতম ‘হার্টব্রেক হোটেল'৷ সেনাবাহিনী ছেড়ে প্রিসলি আবার সংগীত জগতে ফিরে আসেন কিছু তুমুল জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। তিনি সেসময় মঞ্চে গাইতে শুরু করেন, তার সে সময়কার গাওয়া গানগুলো বানিজ্যিকভাবে প্রচুর সফলতা পায়। ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্টে ফিরে আসার পর, প্রথমে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন এলভিস৷ নির্মান করেন একটার পর একটা হিট ছবি৷ ‘রিটার্ন টু সেন্ডার', ‘ভিভা লাস ভেগাস', ‘ক্রাইং ইন দ্য চ্যাপেল' মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ! শিল্পী থেকে ধীরেধীরে রাজা হয়ে ওঠেন এলভিস প্রেসলি ৷ পান তাঁর প্রথম ‘গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস' ৷ সাদা জামা-প্যান্ট, ঝকঝকে জুতো, সুন্দর করে পাতানো চুল - সবকিছু মিলিয়ে সৃষ্টি করেন তিনি নিজস্ব এক স্টাইল ৷ গাইলেন ‘ইটস নাও অর নেভার'৷
১৯৭৩ সালে এলভিস প্রিসলির স্টেজে করা একটি গান প্রথমবারের মত স্যাটেলাইট থেকে দেখানো হয়। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় বিলিয়ন দর্শক গানটি সরাসরি উপভোগ করে। তিনি জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৭৩ সাল থেকেই শরীর ভেঙে পড়ে এলভিসের৷ তার ওপর বিবাহ বিচ্ছেদ ও ড্রাগের যথেচ্ছে ব্যবহার এলভিস'কে জীবনবিমুখ করে তোলে ৷ অতপর ১৯৭৭ সালের ১৬ই আগস্ট হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান। বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। তবে অনেকেই মাদকাদ্রব্যকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন। তবে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জা্নাগেছে কিংবদন্তি এই সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যুর কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। এলভিসের মৃত্যুর সময় তার সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক জর্জ নিক নিকোপুলস। ময়নাতদন্তের পর তিনি এখন বিশ্বাস করেন, সময়মতো অস্ত্রপাচার করতে রাজি হলে অকাল মৃত্যু এড়াতে পারতেন প্রেসলি। কিন্তু এলভিস কিছুতেই প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাচার করাতে রাজি হননি। জর্জ মনে করেন লোকলজ্জার ভয়েই মূলত এলভিস তার এ জটিলতার কথা কাউকে জানাতে চাননি।
মৃত্যুর এত বছর পরও সমান জনপ্রিয় রক্ স্টার এলভিস প্রিসলি । এখনও এলভিস মানে এক উন্মাদনা, এক অবিনশ্বর তারুন্য।আজ এলভিস প্রেসলির ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তিতুল্য মার্কিন রক্ সঙ্গীত শিল্পী এলভিস প্রিসলির মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
©somewhere in net ltd.