নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
অভিনেতা, নাট্যসংগঠক ও লেখক অহীন্দ্র চৌধুরী। চরিত্র চিত্রায়ণে অহীন্দ্র চৌধুরীর সমতুল্য কোন অভিনেতার নামকরা সত্যিই দূরূহ। মঞ্চ বেতার ও চিত্র এই তিন ক্ষেত্রেই অহীন্দ্র চৌধুরী ছিলেন সমভাবে সমুজ্জ্বল। নাটক সম্পর্কে তার উৎসাহ ছেলেবেলা থেকেই। তাই অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই থিয়েটার, যাত্রা এবং সিনেমা এই তিন মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। তার অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় ১০০। অভিনয়ে অসামান্য দক্ষতার জন্য তিনি সাধারণের নিকট ‘নটসূর্য’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯২৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালীন অভিনয়জীবনে অহীন্দ্র চৌধুরী বহু নাটকের প্রায় প্রতিটি চরিত্রে স্মরণীয় অভিনয় করে নাট্যজগতে একটি যুগের সৃষ্টি করেন, যাকে ‘অহীন্দ্রযুগ’ বলে অভিহিত করা হয়। প্রিয়তমা, চিরকুমার সভা, তটিনীর বিচার, রাজনর্তকী, সোনার সংসার, ডাক্তার, শেষ উত্তর, কৃষ্ণকান্তের উইল, কঙ্কাবতীর ঘাট প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাঙালি এই অভিনেতা ১৮৯৫ সালের আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১২০তম জন্মবার্ষিকী। নটসূর্য অহিন্দ্র চৌধুরীর জন্মবাার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
(নটসূর্য অহীন্দ্র চৌধুরী)
অহীন্দ্র চৌধুরী ১৮৯৫ সালের ১২ আগস্ট পশ্চিম বঙ্গের কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লন্ডন মিশনারি স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। কিন্তু অল্প বয়সেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি থিয়েটার ও যাত্রাভিনয়ে যোগ দিয়ে এখানে সেখানে শখের থিয়েটার দলে অভিনয় করে বেড়াতেন। ১৯২৩ সালে কর্ণার্জুন নাটকে তাঁর প্রথম অভিনয়। এছাড়া শ্রীরামচন্দ্র, অশোক, চক্রব্যূহ, শাহজাহান, মহারাজ নন্দকুমার, চন্দ্রগুপ্ত, মিশরকুমারী ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। চন্দ্রগুপ্ত নাটকে যে অভিনেতা রণপরিচালক সেনানায়ক সেলুকাসের ভূমিকায় আশ্চর্যভাবে বিশ্বাসযোগ্য, তিনিই আবার 'শাহজাহান' নাটকে বৃদ্ধ সম্রাটের অবিকল প্রতিমূর্তি। আবার চিরকুমার সভায় রসিকের ভূমিকায় যখন নেমেছেন, তখন রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পিত চরিত্রটি নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর শেষ অভিনীত নাটক শাহজাহান মঞ্চস্থ হয় ১৯৫৭ সালে মিনার্ভা থিয়েটার মঞ্চে। এই নাটকে তিনি নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন।
(বেতার-নাটকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, অহীন্দ্র চৌধুরী, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য শিল্পীরা)
মঞ্চের পাশাপাশি অহীন্দ্র চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ১৯২১ সালে ফটো প্লে সিন্ডিকেট নামে একটি প্রতিষ্ঠান যখন তারই লেখা সোল অব দি সস্নেভ বইখানি চিত্রায়িত করেন, তখন তিনি তাতে ধর্মদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সাধারণ লোকসমাজে এবং সমালোচকদের নজরেও বইখানি যথেষ্ট প্রশংসা পায়। ১৯২২ সালের মার্চ মাসে কর্নওয়ালিস থিয়েটারে ছবিটি মুক্তি লাভ করে। ছবিটিতে অহীন্দ্র চৌধুরীর অভিনয় বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। অহীন্দ্র চৌধুরী ১৯৩১-৫৪ সাল পর্যন্ত ১২৫টিরও বেশি সবাক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন। অহীন্দ্রচৌধুরীর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিঃ ১। সোল অব দি সস্নেভ (১৯২২), ২। বিষবৃক্ষ ( ১৯২২, নায়িকা - নিভাননী, প্রভা), ৩। প্রেমাঞ্জলি ( ১৯২৪), ৪। মিসর রানী (১৯২৫, নায়িকা- নিহার বালা), ৫। দুর্গেশ নন্দিনী (১৯২৭), ৬। শাস্তি কী শান্তি (১৯২৮, নায়িকা - প্রভাবতী, তারাসুন্দরী), ৭। রাজসিংহ (১৯৩০, নায়িকা- পেসেন্স কুপার ও ইন্দিরা), ৮। ঋষির প্রেম (১৯৩১, কর্নাটরাজ চরিত্রে), ৯। প্রহলাদ (১৯৩১, নায়িকা - নিহার বালা ও দেব বালা), ১০। বিষ্ণুমায়া (১৯৩২, কংস চরিত্রে, নায়িকা - শিশুবালা), ১১। চাঁদ সওদাগর (১৯৩৪, নাম ভূমিকায় তিনি, নায়িকা- নিহার বালা), ১২। রূপলেখা (১৯৩৪, সম্রাট অশোক চরিত্রে), ১৩। মহুয়া (১৯৩৪, হুমড়ো সরদার চরিত্রে), ১৪। দক্ষযজ্ঞ (১৯৩৪, দক্ষ চরিত্রে), ১৫। ভক্ত কী ভগবান (হিন্দি ছবি, ১৯৩৪, নায়িকা- দেব বালা), ১৬। কবীর (হিন্দি ও বাংলা ছবি, ১৯৩৫, নায়িকা- উমাশশী, তারা বাঈ), ১৭। বিদ্রোহী (১৯৩৫, নায়িকা- ডলি দত্ত, ইন্দু বালা), ১৮। কণ্ঠহার (১৯৩৫), ১৯। প্রফুল্ল (১৯৩৫, নায়িকা- শ্রীমতি প্রভা ও রানী বালা), ২০। বলিদান (হিন্দি, ১৯৩৫), ২১। তরুবালা (১৯৩৬), ২২। কৃষ্ণসুদামা (১৯৩৬), ২৩। পরপারে (১৯৩৬), ২৪। রজনী (১৯৩৬), ২৫। দেবী ফুল্লরা (১৯৩৮, নায়িকা- শিশু বালা) ইত্যাদি। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি শ্রাবণ সন্ধ্যা (১৯৭৪)।
১৯৫৪ সালে অহীন্দ্র চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত-নাটক আকাদেমির অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘গিরিশ লেকচারার’ মনোনীত করে। তাঁর প্রদত্ত বক্তৃতামালা বাংলা নাট্য বিবর্তনে গিরিশচন্দ্র শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর অপর গ্রন্থ নিজেরে হারায়ে খুঁজি আত্মজীবনীমূলক রচনা। অভিনয়ে অসামান্য দক্ষতার জন্য ১৯৫৮ সালে সঙ্গীত-নাটক আকাদেমি কর্তৃক তিনি পুরস্কৃত হন এবং নাট্য শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্টার থিয়েটার পদক’ (১৯৭২) লাভ করেন। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৭৪ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যু বরন করেন নটসূর্য অহিন্দ্র চৌধুরী।তবে দেহপট সনে নট যে সকলই হারায় না সেটাই যেন প্রমাণ করে গেলেন নটসূর্য অহিন্দ্র চৌধুরী। আজ অভিনেতা, নাট্যসংগঠক ও লেখক অহীন্দ্র চৌধুরীর ১২০তম জন্মবার্ষিকী। নটসূর্য অহিন্দ্র চৌধুরীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.