নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আজ ৬ আগস্ট ২০১৫ ইং বৃহস্পতিবার ৭০তম হিরোশিমা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালের ৫ আগস্ট 'মেজর জেমস আবি হপকিং' স্বাক্ষরিত নির্দেশনার মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত হয় হিরোশিমা মিশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহ্বানে জাপান সাড়া না দেয়ায় তার নির্দেশেই ঠাণ্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় এই হামলা। এর উদ্দেশ্য ছিলো দুইটি। জাপানিদের জব্দ করা আর জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। এই মিশলে অংশ নেয় মোট ৭ টি বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের নির্দেশে হিরোশিমার স্থানীয় সময় সকাল ৭:০০ মিনিটে পর পর তিন বার সর্তক সাইরেন এজে উঠে। ভীত সন্ত্রস্ত হিরোশিমা বাসী আকাশে অনেক উচুতে কয়েকটি যুদ্ধ বিমান চক্কর দিতে দেখে। একটু পরে এদের সাথে যুক্ত হয় আরেকটি বিমান । অল্প পরেই বিমানগুলো দৃ্ষ্টির বাইরে মিলিয়ে যায়। ৭:৩০ মিনিটে বিপদমুক্ত সাইরেন বেজে উঠে হিরোশিমা বাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু, ৮:০০ টায় আবার ৩ টি বিমান আকাশে আবির্ভূত হয়। এবার এটা কে মামুলি বিমান বিবেচনা করে আর কোন সাইরেন বাজানো হয় নি। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই ঘটে গেল বিভিষিকা। হঠাৎই দানবের মতো হিরোশিমার আকাশের নিলিমায় উদয় হলো মার্কিন বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান এনোলা গে।
তিনিয়ান থেকে যাত্র পথে ক্যাপটেণ পর্সন্স ও ইলেকট্রনিক বিশেষঞ্জ লেফটেন্যান্ট জেপসন ' লিটল বয়ে'র সংযোজনের কার্য চুড়ান্ত সম্পন্ন করেন। লক্ষ্য থেকে ৩০ মাইল দূরে অঅবস্থান কালে সকাল ৭:৩০ মিনিটে ক্যাপটেন পর্সন্স কর্তৃক লিটল বয়ের গায়ে লাল প্লাগ সংযোজনের মাধ্যমে প্রস্তুতি পর্ব শেষ হয়। ৮:১৫ মিনিটে হিরোশিমার আকাশ হতে প্রায় ৬ মাইল (৩১,৬০০ ফুট) উপরে অবস্থান কালে ২৬ বছর বয়সী মেজর ফেরেবী (Ferebee) চুড়ান্ত নিক্ষেপেকর কাজ টি সম্পন্ন করেন। ৪৩ সেকেন্ড পর ভুপৃষ্টের ১৮৯০ ফুট উপরে বিস্ফোরিত হয় 'লিটল বয়'। বিমান থেকে ফেলা বোমাটি প্রায় ৫শ মিটার উচুঁতে হিরোশিমায় বিস্ফোরিত হয়। ঘুমের মধ্যেই মারা যায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবা। বিস্ফোরণ কেন্দ্রের তিন মাইলের মধ্যে ১৩ কিলোটন টিএনটি সমপরিমাণ ক্ষমতাসম্পন্ন ধ্বংসলীলা ঘটায়। বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে এক বর্গমাইল, মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যায় হিরোশিমার ৯০ ভাগ স্থাপনা। এর ঠিক তিন দিন পর নাগাসাকি শহরে ‘ফ্যাটম্যান’ নামে সাড়ে চার হাজার কেজির আরেকটি বোমা ৪০ হাজার মানুষকে তাত্ক্ষণিক লাশে পরিণত করে। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বেশিরভাগ দালান-কোঠা। লিটল বয় নামের এই পারমাণবিক বোমা হামলায় কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়। হিরোশিমায় হামলার তিন দিন পর নাগাসাকিতে আরেকটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তবে জাপানের আসাহি শিমবুনের এক হিসাবে বলা হয়েছে, বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের কারণে দুই শহরে চার লাখের মতো মানুষ মারা যায়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা হামলা। এই হামলার মধ্য দিয়ে মোড় ঘুরতে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। মূলতঃ এই হামলার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে হামলার কিছুদিনের মধ্যে আত্মসমপর্ণ করে জাপান।
(হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্ক)
হিরেশিমা হামলার সাত দশক পার হয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা এখনো ভোলেনি জাপানের মানুষ। কারণ এখনো সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিরোশিমার ও নাগাসাকির মানুষ। আণবিক বোমা হামলার এতো বছর পরও শহর দুটোতে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু, ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে বহু মানুষ। জাপানের দাবি, যুদ্ধের সময় ও এর প্রভাবে নানা রোগে ভুগে প্রায় ৪ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু হিরোশিমায় মারা গেছে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ‘পারমাণবিক বোমার আঘাতে শুধু হাজারো মানুষের মৃত্যুই হয়নি, অবর্ণনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে লাখো মানুষকে। তবে হিরোশিমা আজ সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এটি এখন সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির শহরে পরিণত হয়েছে। দিবসটি পালনে দেশটির সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশেও হিরোশিমা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার জোরালো আহ্বান আসবে এসব কর্মসূচি থেকে। প্রাণঘাতী পারমাণবিক বোমা হামলার ৭০তম দিবসে সেই সময়ে নিহতদের স্মরণে হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে।
শিরোশিমার মোটোইয়াসু নদীতে হাজারো প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন হারানো মানুষগুলো আজও সময়ের ঢেউয়ে আলোর মতো জ্বলছে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ও হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতুসির সঙ্গে স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যারোলিন কেনেডি। শান্তি কামনায় তারা কবুতর ও শান্তির বার্তা লেখা কাগজ উড়িয়ে দেন। তারা পরমাণু বোমামুক্ত একটি শান্তিময় পৃথিবীর প্রত্যাশা করেন। আজ যখন হিরোশিমার ভয়াবহতা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, প্রত্যাশা, তখন কি আমারা পরমাণু বোমামুক্ত একটি পৃথিবীর প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে পেরেছি? নতুন করে কোনো দেশকে পরমাণু বোমা তৈরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না হয়তো, কিন্তু যাদের কাছে পরমাণু বোমার বিশাল ভা-ার রয়েছে, তারা কি করছে? তারা কি তাদের বোমাগুলো ধ্বংস করবে? এই মুহূর্তে চোখ বুঝে বলে দেওয়া যায়, না, না এবং না। তাহলে শান্তির জন্য আমরা কাজ করছি কোথায়? শক্তির জোরেই তো শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। অন্তত বিশ্বের দিকে তাকালে এখন তাই দেখা যাবে। এক হাতে পরমাণু বোমা, অন্য হাতে শান্তির বাণী- এভাবে চলতে পারে না। আমরা চাই, পরমাণু বোমা নিঃশেষ হোক, মানুষের জন্য নিরাপদ হোক পৃথিবী।
২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমরা কখন বানাবো?
৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩
ছাসা ডোনার বলেছেন: আমেরিকা জাপানে পারমানবিক বোমা ফেলে পৃথিবীতে নিজেদের আধিপত্য বিরাজ করেছে। কস্ট পেয়েছে জাপানের জনগন লাভবান হয়েছে আমেরিকান রা। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বোমা ফেলে আমেরিকানরা শুধু মজা লয় নিজেদের দেশে ইচ্ছে মত ডলার ছাপিয়ে তাদিয়ে জংগী সংগঠন গুলোোকে চালায় এই হল আমেরিকার আসল রুপ। কি দিয়ে ওরা ইনকাম করে? সারা দুনিয়ার মানুষদের ভয় দেখিয়ে যেভাবে ইচ্ছে চালায়। কোনদেশ নিজের মত করে স্বাধীনভাবে দেশ চালাতে পারে না।যে কোনদেশে মানুষ সুখে থাকলে ওদের সহ্য হয় না। গন্ডগোল লাগিয়ে ঐ দেশের অর্থনীতির বারোটা না বাজানো পর্যন্ত পিছে লেগে থাকবে। হে আল্লাহ ধ্বংস হোক আমেরিকার একনায়কতন্ত্র ।
৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩২
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: মানবতার ইতিহাসে এমন ঘটনা পৃথবীতে আর না ঘটুক সেটাই আমরা চাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আজ যখন হিরোশিমার ভয়াবহতা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, প্রত্যাশা, তখন কি আমারা পরমাণু বোমামুক্ত একটি পৃথিবীর প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে পেরেছি? নতুন করে কোনো দেশকে পরমাণু বোমা তৈরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না হয়তো, কিন্তু যাদের কাছে পরমাণু বোমার বিশাল ভা-ার রয়েছে, তারা কি করছে? তারা কি তাদের বোমাগুলো ধ্বংস করবে? এই মুহূর্তে চোখ বুঝে বলে দেওয়া যায়, না, না এবং না।
তাহলে শান্তির জন্য আমরা কাজ করছি কোথায়?
শক্তির জোরেই তো শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। অন্তত বিশ্বের দিকে তাকালে এখন তাই দেখা যাবে।
এক হাতে পরমাণু বোমা, অন্য হাতে শান্তির বাণী- এভাবে চলতে পারে না।
কোটিবার সহমত।
আমরা চাই, পরমাণু বোমা নিঃশেষ হোক, মানুষের জন্য নিরাপদ হোক পৃথিবী।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++