নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী চিলিয়ান কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা। কলোম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মারকেজ এর মতে নেরুদা কুড়ি শতকের যে কোনও ভাষার অন্যতম কবি। পরাবাস্তববাদ যার হাতে সফলভাবে কর্ষিত হয়েছে। নেরুদার সাহিত্যকর্মে বিভিন্ন প্রকাশ শৈলী ও ধারার সমাবেশ ঘটেছে। একদিকে তিনি যেমন লিখেছেন টোয়েন্টি পোয়েমস অফ লাভ অ্যান্ড আ সং অফ ডেসপায়ার-এর মতো কামোদ্দীপনামূলক কবিতা সংকলন, তেমনই রচনা করেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, এমনকি প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইস্তাহারও। তাঁর রচনা অনূদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়। ১৯২৭ থেকে ১৯৩৫ সাল অবধি নেরুদা চিলি সরকারের রাস্ট্রদূত নিযুক্ত হলেন তৎকালীন বার্মায়, শ্রীলঙ্কায়, জাভা, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা ও স্পেনে। ১৯৭১ সালে নেরুদাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ১৯০৪ সালের আজকের দিনে তিনি চিলির পাররাল নামে একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১১১তম জন্মবার্ষিকী। কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১৯০৪ সালের ১২ জুলাই চিলির পাররাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন পাবলো নেরুদা। পাবলো নেরুদা তার ছদ্ম নাম। কৈশোরে তিনি এই ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। চেক কবি জ্যান নেরুদার নামকরণে তিনি ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা প্রথমে তাঁর ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা পায়। কট্টর নীতিবাগীশ ও পরাবাস্তবাদী বাবা চাকরি করতেন রেলওয়েতে। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। জন্মের কিছু দিন পরেই তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর ছোট্ট নেরুদা বাবার সঙ্গে টিমুকো শহরে চলে আসে। নেরুদার বাবা বাস্তববাদী বলেই আবার বিয়ে করেন। নেরুদার শৈশব, কৈশর ও তরুণ বয়েস কেটেছিল টিমুকো শহরেই। ১৯২১ সাল চিলির রাজধানী সানতিয়াগো শহরে চলে গেল তরুণ নেরুদা। ভর্তি হলেন চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে-ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। অতি অল্প বয়েসেই লেখালেখি শুরু। মাত্র তেরো বছর বয়েসেই লেখা ছাপানো। ষোল বছর বয়েসে পুরোদস্তুর লিখিয়ে। অধিবাস্তববাদী কবিতা, ইতিহাস-নির্ভর মহাকাব্য, রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টো প্রভৃতি তার সৃষ্টিসম্ভার।
১৯২৩ সালে নেরুদা'র প্রথম কাব্যগ্রন্থ “গোধূলির বই” প্রকাতি হয়। পরের বছর বের হয় কুড়িটি প্রেমের কবিতা ও একটি বেপরোয়া গান। যেটিতে ছিলো বেপরোয়া যৌনতার ছড়াছড়ি। সমালোচক মহলে দারুন প্রশংসিত হয় বইটি আর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়। কবির বয়স কম-কাজেই বইটি তুমুল হইচই ফেলে দিয়েছিল। জীবদ্দশায় নেরুদা একাধিক কূটনৈতিক পদে বৃত হয়েছিলেন। একসময় তিনি চিলিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির সেনেটর হিসেবেও কার্যভার সামলেছেন। কনজারভেটিভ চিলিয়ান রাষ্ট্রপতি গঞ্জালেস ভিদেলা চিলি থেকে কমিউনিজমকে উচ্ছেদ করার পর নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে চিলির বন্দর ভালপারাইসোর একটি বাড়ির বেসমেন্টে কয়েক মাসের জন্য লুকিয়ে রাখেন। পরে গ্রেফতারি এড়িয়ে মাইহু হ্রদের পার্বত্য গিরিপথ ধরে তিনি পালিয়ে যান আর্জেন্টিনায়। কয়েক বছর পরে নেরুদা সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দের এক ঘনিষ্ট সহকারীতে পরিণত হন। ১৯৩৭ সালে নেরুদা দেশে ফিরে এসে চিলির রাজনীতি ও সামাজিক ইস্যূতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৩৯ সালে আবার প্যারিস এলেন নেরুদা। নিযুক্ত হলেন কনসাল ফর দ্যা স্পেনিশ এমিগ্রেশন। এর কিছুকাল পরে মেক্সিকোর কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হলেন। সে সময়ই লিখলেন তাঁর বিখ্যাত “ক্যান্টো জেনেলের দ্য চিলি।” এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশ নিয়ে একটি মহাকাব্য। বিষয়: প্রকৃতি, জনগন, ইতিহাস ও নিয়তি। ১৯৫০ সালে এটি প্রকাশিত হয় মেক্সিকোয়। বইটি দশটি ভাষায় অনুদিত হয়। ১৯৫২ সালে পুনরায় চিলি ফিরে এলেন কবি। কেননা, ঐ বছরই কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সালভাদর আলেন্দে ছিলেন চিলির বিশিষ্ট এক সমাজতন্ত্রী নেতা; তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ট হলেন নেরুদা। ১৯৭০ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলেন সালভাদর আলেন্দে। তাঁরই বিশেষ অনুরোধে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ অবধি ফ্রান্সে চিলির রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন নেরুদা। তবে ১৯৭৩ সালে চিলির স্বৈরাচারী জেনারেল অগাস্তো পিনোশের সমাজতন্ত্রী আলেন্দেকে হত্যা ও উৎখাত করে। ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্ববর ক্যান্সারে আক্রান্ত হেয়ে নেরুদা সে সময় চিলির এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর তিন দিন পর ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে কবি পাবলো নেরুদার মৃত্যুকে তখন প্রোস্টেট ক্যান্সার বলা হলেও কবির হত্যামামলার আইনজীবী এডুয়ার্ডো কন্ট্রেরাস এমন কিছু প্রমাণ আদালতে উপস্থিত করেছেন যাতে চিলির সামরিক জান্তা অগাস্তো পিনোশের এজেন্ট কর্তৃক কবিকে বিষপ্রয়োগে হত্যার প্রমাণ রয়েছে। উল্লেখ্য, নোবেল জয়ী কবি পাবলো নেরুদার হত্যা মামলা আদালতে উঠার পর গত বছর ৮ এপ্রিল তাঁর মরদেহ উত্তোলন করা হয় এবং চিলিসহ বিশ্বের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞগণ তাঁর মরদেহ পুঙ্থাণুপুঙ্থভাবে বিশ্লেষণ করে চলেছেন।
কিংবদন্তি নেরুদার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যদিও সৈরাচারী পিনোশের নেরুদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে জনসমক্ষে অনুষ্ঠিত করার অনুমতি দেননি। খলনায়কটি সান্ধ্যআইন জারী করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে এসে কবির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়। পাবলো নেরুদার অন্ত্যেষ্টি পরিণত হয় চিলির সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম গণপ্রতিবাদে। সেটিই ছিল সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে চিলির জনতার প্রথম বিক্ষোভ। আজ এই বিপ্লবী কবির ১১১তম জন্মবার্ষিকী। পরাবাস্তববাদী কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১২ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ কাশেম ভাই
পাবলো নেরুদা'র জন্মবার্ষিকীতে
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
২| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১২
কাবিল বলেছেন: বিপ্লবী কবি পাবলো নেরুদা'র ১১১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১২ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ কাবিল ভাই
পরাবাস্তববাদী কবি ও রাজনীতিবিদ
পাবলো নেরুদা'র জন্মবার্ষিকীতে
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১৫
এম এ কাশেম বলেছেন: এই বিপ্লবী কবির ১১১তম জন্মবার্ষিকী। পরাবাস্তববাদী কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
এবং আপনাকেও শুভেচ্ছা জানাই নুরু ভাই।