নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের অন্যতম কবি ও প্রাবন্ধিক, লোকসাহিত্যের গবেষক ও সংগ্রাহক রওশন ইজদানী। বর্তমানে আমাদের সাহিত্য পরিমন্ডলে রওশন ইজদানী এখন প্রায় বিস্মৃত একটি নাম। অথচ তিনি কেবল বহুমাত্রিক কবিই ছিলেননা, তিনি জসীম উদ্দীনের অনুসরনে সে সময়ে পূর্ব বাংলার লোক সংস্কৃতি অবলম্বনে নতুন শিল্প-সৃষ্ঠির স্বপ্নও দেখেছিলেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই কবি সাহিত্যের সকল শাখায়ই বিচরনণ করেছেন। রওশন ইজদানী সৃজনে ও মননে এদেশের লোক-সাহিত্যের সম্পদ সম্পর্কে যে প্রীতি ও মমতার পরিচয় দিয়েছেন তা অবিস্মরনীয়। বিস্মৃত প্রায় এই কবির আজ মৃত্যুদিন। ১৯৬৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান কবি । আজ কবির ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি লোক সাহিত্যের গবেষক ও সংগ্রাহক কবি রওশন ইজদানীকে।
প্রখ্যাত কবি ওশন ইজদানী ১৯১৭ ইং সাল, বাংলা ১৩২৪ সালের ১৫ ফাল্গুন ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বিদ্যাবল্লভ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ আলী কবির। পিতা শেখ আলী কবিরের পেশা ছিলো কবিরাজি চিকিৎসা। ১০ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে স্থানীয় ওল্ড স্কিম মাদ্রাসায় রওশন ইজদানীর বিদ্যাশিক্ষার হাতে খড়ি। পরে আশুজিয়া হাইস্কুলে ভর্তি হন রওশন ইজদানী। এ স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন তিনি। ১৮ বছর বয়সে মাতৃ বিয়োগ হওয়ার কারণে তাঁর পড়া লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। মাতৃবিয়োগের পর উদাসীন হয়ে বাউলদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন ইজদানী এবং বাউল গান গেয়ে সময় কাটান। এর কিছুকাল পর জুবায়দা আখতার খাতুনকে বিবাহ করে সংসার ধর্মে প্রত্যবর্তন করেন। প্রথম জীবনে ১৩৪৬ সালে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন ইজদানী। এর কিছুকাল পরে ঋণ সালিসি বোর্ডের কেরানির চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৪৮ সালে 'দৈনিক আজাদের' রিডিং সেকশনে যোগ দেন তিনি। এর পর ১৯৫৮ সালে ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের প্রুফ রিডার, গ্রেড-১ পদে যোগ দান করেন। ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য ১৯৫৯ সালে প্রুফ রিডারের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
রওশন ইজদানী মূলতঃ পল্লী কবি হিসেবে খ্যাত। লোকসাহিত্য নিয়ে তিনি অনেক লেখালেখি করেছিলেন। তার গবেষনা গ্রন্থ মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য ও পূর্ব পাকিস্তানের লোক সাহিত্য। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ সুলতান ‘নবীবংশ’ এবং ‘রসুল বিজয়’ নামে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনভিত্তিক দু’টি সেরা কাব্য রচনা করেছেন। বিংশ শতাব্দীর কবি রওশন ইজদানী রসুল (সা.)-এর উপর একটি পুরো কাব্য ‘খাতামুন নবীঈন’ রচনা করেন। ফররুখ আহমদ ‘সিরাজুম মুনীরা’ নামে ৩০২ পংক্তির একটি দীর্ঘ কবিতা লেখেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থঃ চিনু বিবি-১৯৫১ মোতামুন নাবীয়িন (১৯৬০), বজ্রবানী (১৯৪৭), রঙ্গিলা বন্ধু (১৯৫১), ইউসুফ জুলেখা প্রভৃতি। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ভাঙ্গাবীনা (১৯৪৪), বজ্রবানী (১৯৪৭), নীল দরিয়া (১৯৪৬), রাহগীর (১৯৪৯) খ্যাতমুন নাবীঈন, ইসলাম জাহানের দুই সেতারা, খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৭৯), " মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য " ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কবি রওশন ইজদানীর প্রকাশিত গ্রন্থ ২৬টি এবং অপ্রকাশিত গ্রন্থ ১৮টি। পাঠ্য পুস্তক প্রকাশনার সংখ্যা ৬টি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ হলো নীল দরিয়া, মরুর কাফেলা, হৃদয় বীণা, ভাঙ্গা বীণা, বজ্রবাণী, ইউসুফ জুলায়খা, পূর্ব পাকিস্তানের লোক সাহিত্য, মোমেনশাহীর প্রাচীন পল্লী ও সমাজ জীবন ইত্যািদি।
রওশন ইজদানী ‘খাতামুন নবী ঈন’ লিখে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দে সাহিত্য কর্মের জন্য "আদমজী পুরস্কার" লাভ করেছিলেন। নেত্রকোণার খাঁটি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বিস্মৃত প্রায় এই কবি ১৯৬৭ সালের ২০ জুন ময়মনসিংহে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি লোক সাহিত্যের গবেষক ও সংগ্রাহক কবি রওশন ইজদানীকে।
এখানে কবি রওশন ইজদানী’একটি ভাটিয়ালি গান তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য।
পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া
-কবি রওশন ইজদানী
পরের ঘরে একদিন আমার যায় বারো বছর,
আমি দারুন যমের ঘর করিলাম-দিলনা নাইওর।
বারো বছর গায় লাগেনা-বাপের বাড়ির বাও,
হাওয়া-বাতাস ঠান্ডা জলে শীতল হয়না গাও।
পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া-
আইলো গাঙে গেলো জোয়ার-গাঙে শুকায় পানি,
মোর অভাগীর এক নাইওরে গেলো জিন্দেগানী।
হইয়ে পঙ্খি উইড়্যা যাইতাম- হাওয়া ধরতাম পর,
জন্মের নাইওর কইর্যা যাইতাম এ্যাই নিলউখ্যার চর।
©somewhere in net ltd.