নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবসে আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লেরেন্স নাইটিঙ্গেলের ১৯৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৮


মানবসেবায় অনন্য দায়িত্বপালনকারী সেবিকাদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শনের দিন আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবস আজ। আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক মহীয়সী সেবিকা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সেবাকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্মদিন ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে যারা দিন রাত মানুষের সেবা করে থাকেন তারাই সেবিকা। রোগীর জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শের চেয়ে কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় সেবিকার সেবা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নার্সঃ পরিবর্তনের এক সহায়ক শক্তি ব্যয় সাশ্রয়ী কার্যকর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে।’আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক মহীয়সী সেবিকা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সেবাকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্মদিন আমার শ্রদ্ধার্ঘঃ

দ্যা লেডি ইউথ দ্যা ল্যাম্প নামে খ্যাত আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, লেখক এবং পরিসংখ্যানবিদ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তিনি তার জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন মানুষের সেবায়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈন্যদের পরিচর্যার মাধ্যমে নার্সিং শিল্পের অগ্রদূত হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে ইউরোপের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিলো ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কিংডম অব সার্ডিনিয়ার সাথে রাশিয়ার। ১৮৫৩ সালে সেই দ্বন্দ্বই যুদ্ধে রূপ নেয় যা ইতিহাসে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। তিন বছরের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে বহু সেনা টাইফয়েড ও কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিল। নাইটিঙ্গেল সেই সেনাদের পরম যত্নে সেবা দিয়ে তাদের অনেককে সারিয়ে তুলেছিলেন। এ কারণে বহু মনীষী তাঁকে ঈশ্বরের দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ১৮৫৪ সালে তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষনা করলো। আত্নীয় স্বজন পরিজনের সব বাঁধা উপেক্ষা করে ফ্লোরেন্স তুরস্কের হাসপাতালে সুপারিনটেড্ন্ট পদে যোগ দেন। ফ্লোরেন্স ছিলেন এই হাসপাতালের এক সেবার প্রতিমূর্তি।দিনরাত অকাতরে তিনি সেবা করে যেতেন। রুগীরা তার নাম দিয়েছিলো দীপ হাতে রমণী। তিনি নারীমুক্তির জন্যও পূর্ণ মাত্রায় সোচ্চার ছিলেন। ফ্লেরেন্স তার জীবদ্দশায় ১৮৫৩ সাল থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনের ‘কেয়ার অব সিক জেন্টলওমেন ইনিস্টিটিউটের’ তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করে গেছেন। যুদ্ধের পর তিনি বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আজ এই মহীয়সী নারীর ১৯৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৮২০ সালের আজকের দিনে তিনি ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। নার্সিং পেশার পাইওনিয়ার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্সে এক ধনাঢ্য ব্রিটিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিঙ্গেল এবং মা ফ্রান্সিস নাইটিঙ্গেল। তার ছোটবেলা কেটেছে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার অঞ্চলের তাদের পুরনো বাড়িতে। সেই সময়ের ধনী পরিবারের নারীরা ভালো বিয়ে ও সন্তান লালন-পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতেন। কিন্তু নাইটিঙ্গেল ছিলেন ব্যতিক্রম। মেয়েকে নানা দেশের ভাষা, ছবি আঁকা, সংগীত সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করে তুলেছিলেন বাবা। কিন্তু মেয়ে চাইলো সেবিকা হতে। এ ব্যপারটা মোটেই পছন্দ হলোনা বাবার। তথাপি একটু বড় হবার পর ফ্লোরেন্স লন্ডনের হার্লে স্ট্রিটের একটি মেয়েদের জন্য নির্মিত হাসপাতালেই যোগ দিলেন। একজন মা কিংবা স্ত্রী হওয়ার মধ্যে নিজেকে সীমিত রাখতে চাননি তিনি। কবি রিচার্ড মঙ্কটন মিলনেস নাইটিঙ্গেলের পানিপ্রার্থী ছিলন। কিন্তু নাইটিঙ্গেল তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার ব্রত নিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই কেউ অসুস্থ হলে ফ্লোরেন্স সেখানে ছুটে যেতেন সেবা করার জন্য। তিনিবিশ্বাস করতেন স্রষ্টা তাকে সেবিকা হওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ডার্বিশায়ার থেকে লন্ডনে আসেন। সে সময় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এর অন্যতম কারণ এ পেশাকে সবাই খুব ছোট করে দেখতেন। সে সময়ে কেউ সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না। কিন্তু একজন অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও মা এবং বোনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তিনি এ কাজ বেছে নেন। বিলাস ও আরাম বহুল জীবন ছেড়ে মানবতার সেবায় তিনি প্রবল তুষারপাত ও বৃষ্টির মধ্যেও বিভিন্ন হাসপাতলে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতেন। এভাবে আর্তের সেবার নিয়োজিত ছিলেন সারাটি জীবন।

নাইটিঙ্গেলের বিশ্বাস ছিল, মানবসেবার এহেন কর্মে নিজেকে উত্সর্গ করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে তার ডাক এসেছে। এক্ষেত্রে মা ও বোনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ক্ষুধামুক্ত উন্নত জনস্বাস্থ্যের অধিকারী ভারতের সমর্থক ছিলেন নাইটিঙ্গেল। ১৮৫৫ সালে তিনি নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেন। ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নেও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৮৫৯ সালে তিনি ‘রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির’ প্রথম সারির সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৯ সালে নাইটিঙ্গেল ফান্ডের জন্য প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন। এছড়াও লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশারূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং । এখন যারা এ পেশায় নতুন আসেন তারা ‘নাইটিঙ্গেল প্লেজ’ নামে একটি শপথ গ্রহণ করে তার প্রতি সম্মান জানান। ১৮৬৭ সালে ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সাথে যৌথভাবে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গবেষণা চালান। যা ভারতবর্ষে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবদান রাখে।

ফ্লেরেন্স নাইটিঙ্গেল আর্ত মানবতার সেবা ছাড়াও বিভিন্ন সময় নার্সিংয়ের উপর বইও লিখেছেন। লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প নামে খ্যাত ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল তার কাজের স্বীকৃতি সরূপ অসংখ্য পদক আর উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ১৮৮৩ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। প্রথম নারী হিসাবে ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। এ ছাড়াও ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’। যার মধ্যেমে সম্মান জানানো হয় এক নারীকে যিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন- নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। বলা যায়, তার হাত ধরেই পেশা হিসেবে নার্সিং পরবর্তীকালে বিকশিত হয়।

নারীমুক্তির জন্য পূর্ণ মাত্রায় সোচ্চার, আধুনিক নার্সিং পেশার পাইওনিয়ার এই মহীয়সী নারী ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে লন্ডনে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেহত্যাগ করেন। যুদ্ধাহতদের সেবায় প্রাণপাত করা এই নারীর কথা আজীবন মনে রাখবে পৃথিবীর মানুষ। আজ অন্ধকারে আলো হাতে যাত্রী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের ১৯৫তম জন্মবার্ষিকী। নার্সিং পেশার পাইওনিয়ার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.