নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
হিন্দি, তথা হিন্দি সিনেমার উর্দু গানের, বিশেষত গজলের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদ। সুমধুর, মসৃণ সুরেলা কণ্ঠে তাঁর গীত গজল তাঁকে 'গজল সম্রাট' উপাধি এনে দিয়েছিলো। হিন্দি সিনেমার প্লে-ব্যাকে গজলের জনপ্রিয়তা এসেছিল তালাতের হাত ধরেই। পাশাপাশি, সুদর্শন ও সুপুরুষ তালাত মাহমুদ তাঁর সময়ে বেশ কিছু হিন্দি সিনেমায় নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হলো। সেই সময়ে বাংলার জনতা তার মুখে শুনলো ‘দু’টি পাখি দুটি তীরে মাঝে নদী বহে/ছিড়িল বীণার তার মুছে গেল পরিচয়’। এ গান তখন নয়, এখনও তামাম জনতার মুখে মুখে রয়েছে। সম্ভবত বাঙালিরা এ গান কোনো দিন ভোলতে পারবে না। ১৯৬০ এ তিনি কিছু সময়ের জন্য ঢাকায় এসে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশামের 'রাজধানীর বুকে' ছায়াছবিতে আমদের সিনেমার ইতিহাসের দুটি কালজয়ী গানে ( তোমারে লেগেছে এত যে ভালো/ চাঁদ বুঝি তা জানে, এবং আমার সে গান) কণ্ঠদান করেন। সেসময়, তালাত মাহমুদ পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহন করে ঢাকায় থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেও, পরবর্তীতে মত বদলিয়ে ভারতেই ফিরে যান। আজ কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের আজকের দিনে তিনে মৃত্যুবরণ করেন। গজল সম্রাট তালাত মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তালাত মাহমুদ ১৯২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌর এক সম্ভ্রান্ত ও রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই তিন বোন ছিলেন তালাতরা। বড় দুই ভাই এবং ছোট তিন বোন কেউই গানের জগতে আসেননি। তবে ছেলেবেলা থেকেই তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রতি শুরুতে দুর্বল ও পরে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। শৈশবের রঙিন দিনগুলো তার কেটেছিল কড়া শাসনের মাঝে। তালাতের অপূর্ব কণ্ঠ ছিল জন্মগত। ছোটবেলা থেকেই তার গলা সবাইকে বিমোহিত করত। লক্ষ্ণৌ ছিল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পীঠস্থান। পণ্ডিত এস সি আর ভাট এর কাছে সঙ্গীতে তালিমের পাশাপাশি তিনি রাতের পর রাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জলসায় কাটাতে থাকেন। সিনেমার প্রতিও তাঁর প্রবল আগ্রহ দেখা যায়, যা তাঁর রক্ষণশীল পরিবার কোনও ভাবেই মেনে নিতে সম্মত ছিল না। একসময় অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে হয় তালাতকে সঙ্গীতের ও ফিল্মের ক্যারিয়ার বেছে নিয়ে পরিবার ত্যাগ করতে হবে, নয়ত সব ত্যাগ করে পারিবারিক ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। তালাত সঙ্গীতের জীবন বেছে নেন এবং তাঁর পরিবার সুদীর্ঘ এক যুগ পরে, কেবল তালাত সফল হওয়ার পরই, তাঁর ক্যারিয়ারকে মেনে নেয়। সঙ্গীতে তালাতের ক্যারিয়ার শুরু হয় একজন বিশুদ্ধ গজল শিল্পী হিসাবে। ১৯৩৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি দাগ, জিগর, মির এমন কয়েকটি সিনেমায় গজল গেয়ে সাড়া ফেলে দেন। এসময়েই তিনি অল- ইন্ডিয়া রেডিওতে সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে যোগ দেন। এইচ এম ভি, তরুন তালাতের প্রতিভায় আকৃস্ঠ হয়ে তাঁকে চুক্তিবদ্ধ করে এবং ১৯৪১ তালাত 'সব দিন এক সমান নাহি থা' গজলটি রেকর্ড করেন। গজল শিল্পী হিসাবে তালাতের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে। তালাত তখন লক্ষ্ণৌ ছেড়ে কোলকাতায় চলে যান, তিনি পৌঁছানোর আগেই তাঁর খ্যাতি কোলকাতার সঙ্গীত জগতে পৌঁছে গিয়েছিল। ১৯৪৪ এ তাঁর বিখ্যাত গজল, 'তাসভির তেরি দিল মেরা বেহেলা না সাকো গি' বের হয়। গজলটি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা পায় এবং এর সুবাদেই সারা ভারতবর্ষে তালাত মাহমুদের নাম ছড়িয়ে পরে। কোলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তখনই তাঁর বিষয়ে আগ্রহী হয়। সুদর্শন তালাত মোট ১৬ টি ছায়াছবিতে তখন অভিনয় করে ফেলেন। কোলকাতায় থাকতেই তিনি 'তপন কুমার' নাম নিয়ে বেশ কিছু বাংলা আধুনিক গান, চিত্রগীতি ও কয়েকটি নজরুল গীতি রেকর্ড করেন। গানগুলো বাংলা গানের কালজয় করে, এমনকি অন্য ভাষাভাষীদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পায়।
তালাত মাহমুদ কোলকাতার পাট চুকিয়ে বোম্বেতে স্থায়ী নিবাস গড়েন ১৯৪৯ সালে । হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তালাতের জনপ্রিয়তা হয় গগনচুম্বী। বিশেষ করে অনিল বিশ্বাসের সঙ্গীত পরিচালনায় 'আরজু' ছবিতে তাঁর গাওয়া গজল তাঁকে অমরত্ব এনে দেয়। পাশাপাশি ১২ টি হিন্দি সিনামায় তিনি নাম ভুমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে হিন্দি ফিল্মের গানে রক এন রোলের প্রভাব পড়তে থাকে ও উচ্ছল কণ্ঠের মহম্মদ রফি ও মুকেশের গান প্রবল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে এবং সিল্কি ও বিষাদময় কণ্ঠে তালাতের প্লে-ব্যাকের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। তালাত তখন তাঁর মুলে, অর্থাৎ গজলে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি 'গজল সম্রাট' হিসাবে খ্যাতির শিখরে থেকে যান। তালাত মাহমুদ হিন্দি সিনেমায় গানের পাশাপাশি নন-ফিল্ম গজল, গীত, হামদ, নাত, ভজন ও ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার গানে কণ্ঠ দান করেছিলেন। তবে তাঁর ক্যারিয়ার মুলত কোলকাতা থেকে শুরু হলেও, তাঁর বাংলা গানের সর্বমোট সংখ্যা ('রাজধানীর বুকে'র দুটি গান সহ) মাত্র ৪৯ টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গানঃ অনেক সন্ধ্যাতারা ফোটে ওই আকাশে, এই তো বেশ নদীর তীরে, ঘুমের ছায়া চাঁদের চোখে, আমার সে গান (রাজধানীর বুকে), ভেঙে গেল যদি বাসা, দুটি পাখি দুটি তীরে, ঘুমের ছায়া চাঁদের চোখে, হায় ভালোবাসা সে কি, হয়তো সে কথা তোমার স্মরণে নাই, যে বিরহ দিলে, তুমি সুন্দর যদি নাহি হও, রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে, ফুল দিতে যদি ভুল, তোমারে লেগেছে এত যে ভালো (রাজধানীর বুকে), তুমি বোঝো না তো কেন, তুমি চিরদিন যদি নাহি রবে মোর জীবনে, আধোরাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়, তুমি শুধু গেছো ভুলে, টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে, তুমি ফিরে এসো ও শোন গো সোনার মেয়ে। চার দশকে তিনি ৮০০’র মতো গান করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য তিনটি অ্যালবাম হলোঃ ১। গোল্ডেন কালেকশন অব তালাত মাহমুদ, ২। তালাত মাহমুদ ইন আ সেন্টিমেন্টাল মুড এবং ৩। এভারগ্রিন হিটস অব তালাত মাহমুদ। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাকে রাষ্ট্রীয় ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৯৮ সালের ৯ মে ৭৪ বছর বয়সে, গজলের কিংবদন্তী, সত্যিকারের সজ্জন ও একজন জেন্টলম্যান, তালাত মাহমুদ ইন্তেকাল করেন। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তার গান ফুরিয়ে যায়নি। জীবদ্দশায় তিনি যেমন ছিলেন তেমনি আজও ঘরে ঘরে তালাত মাহমুদের গাওয়া বাংলা ও হিন্দি গান শোনা যায়। বাংলা, হিন্দি, উর্দু ভাষায় হাজারও গানের পাশাপশি গজল গায়ক হিসেবে তিনি আজও অমর। আজ তাঁর ১৭তম মৃত্যবার্ষিকী। কিংবদন্তি নায়ক-গায়ক তালাত মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ কাবিল,
স্বাগতম আপনাকে আমার ব্লগে।
আশা করি আগামীতেও সাথে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯
কাবিল বলেছেন: ভাল শেয়ার এর জন্য ধন্যবাদ।