নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মার্কিন সাহিত্যিক, প্রভাষক ও রম্য লেখক মার্ক টোয়েইন। তাঁর প্রকৃত নাম (Samuel Langhorne Clemens) স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহোর্ণ ক্লিমেন্স। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব টম সায়ার এবং অ্যাডভেঞ্চারস অব হাকেলব্যারি ফিন। তার বৃহস্পতি যখন তুঙ্গে, তখন সম্ভবত সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তম তারকা। এ প্রসঙ্গে গ্রন্থকার উইলিয়াম ফকনারের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘টোয়েইন প্রকৃত এবং প্রথম আমেরিকান লেখক, আমরা তার উত্তরাধিকারী মাত্র।’ মার্ক টোয়েইন কখনো স্কুলে যাননি। কিন্তু লেখালেখির জন্য তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পেয়েছিলেন সম্মানসূক ডি. লিট ডিগ্রি। মাত্র ১১ বছর বয়সে টোয়েইন বাবাকে হারান। পরিনত বয়সে মার্ক টোয়েইন অলিভিয়া ল্যাঙডনকে বিয়ে করেছিলেন।অনেক মজার মানুষ ছিলেন মার্ক টোয়েন। তাঁর সব লেখাই কৌতুক করে লেখা। মার্ক টোয়েইন তাঁর হাস্যরসমূলক লেখালেখির জন্য ব্যবহৃত ছদ্ম নাম মার্ক টোয়েইন নামে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে ছিলেন। জনিপ্রিয় এই মার্কিন রম্য লেখক ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১০৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ছোট বড় সবার প্রিয় এই রম্য লেখকের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(১৫ বছর বয়সে মার্ক টোয়েইন)
স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহোর্ণ ক্লিমেন্স (মার্ক টোয়েইন) ১৮৩৫ সালের ৩০ নভেম্বর আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের মিসৌরির মো নামের এক ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের মধ্য দিয়ে মার্কিন সাহিত্যাকাশে জন্ম হয় এক ধুমকেতুর। উল্লেখ্য সে বছরই আবিস্কৃত হয়ে ছিলো হ্যালির ধুমকেতু। মার্ক টোয়েইনের বাবার নাম জন মার্শাল ক্লিমেন্স আর মা জেন ল্যাম্পটন ক্লিমেন্স। মার্ক টোয়েইন ছিলেন তার বাবা মার ষষ্ঠ সন্তান। মোট সাতটি ভাইবোন ছিল তার, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন বেঁচে ছিলেন। বাকীরা শৈশবেই মারা যান। টোয়েইনের বয়স যখন চার বছর তখন তার পরিবারটি মিসিসিপির হ্যানিবেলে সরে আসে। এলাকাটি ছিল মিসিসিপি নদীর ধারে। টোয়েইনের শৈশব কাটে মিসিসিপি নদীর তীরে হ্যানিবেল শহরে। মিসিসিপি নদী ছিল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন মার্ক টোয়েইনের আসল স্কুল, সত্যিকারের শ্রেণীকক্ষ। মিসৌরিতে তখন দাসপ্রথা বৈধ ছিল, যা খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান টোয়েইন। এ পর্যবেক্ষণের নিখুঁত অভিব্যক্তি ঘটে পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকর্মে। মিসিসিপির জলের মুখচ্ছবিতে মার্ক টোয়েইন লিখেছেন, ‘এটি ছিল একটা বই’। অন্ধ-অশিক্ষিত মানুষের কাছে যার ভাষা মৃত ও অর্থহীন। কিন্তু মিসিসিপি আমার কাছে একটা খোলা বই।’ মূলত মিসিসিপি নদীই তাঁকে গড়ে তুলেছিল চিরসফল, চিরস্মরণীয়, বরেণ্য এক সুরসিক লেখক আর সত্যিকারের মানুষ হিসেবে। টোয়েনের বয়স যখন ১১ বছর সে সময় হঠাৎ তার বাবা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যার ফলে তাকে জীবকা নির্বাহের তাগিদে কাজে নেমে পড়তে হয় তাকে। তিনি প্রথমে টাইপ সেটিং এর কাজ নেন। আগের দিনে পত্রিকায় অক্ষর বসিয়ে লেখা ছাপানো হত। এর জন্য আলাদা আলাদা টাইপ তৈরি করতে হতো। হানিবল জার্নাল নামের পত্রিকায় এই কাজ দিয়ে মার্ক টোয়েন তার কর্ম জীবন শুরু করেন। পত্রিকাটি ছিলো তার বড় ভাই অরিয়নের। সেই পত্রিকাতে তিনি প্রথম লিখতে শুরু করেন। এগুলো সবই ছিল হাসির।
সারা জীবন হাসির গল্প লিখেছেন মার্ক টোয়েইন। তার অনেক লেখাই ছিল ছোটদের জন্য। কিন্তু বড়রাও সেসব লেখা পড়ে মজা পেত এবং এখনও পায়। টোয়োইনের ছিলো ঘোরাঘুরির মারাত্মক নেশা। তিনি তার ভাইকে নিয়ে দেশের ভেতর ক্যালির্ফোনিয়া, সান ফ্রান্সিসকো ছাড়াও ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটেই তিনি পরবর্তীকালে ১৮৬৯ সালে লেখেন ‘দি ইনোসেন্স অ্যাব্রড’। তার সেরা লেখার মধ্যে রয়েছে ’অ্যাডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার’, ’অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকলবেরি ফিন’, ’দি প্রিন্স অ্যান্ড দি পপার’সহ আরো অনেক লেখা। রসাল-কৌতুককর লেখার জন্য আজও তিনি বেঁচে আছেন বিশ্বমানবের মনের মধ্যে। যদিও টোয়েইন আর্থিক আর বানিজ্য বিষযক ব্যাপারে বাধাগ্রস্থ ছিলেন, তা সত্বেও তার রম্য রসবোধ আর চপলবুদ্ধি ছিল তীক্ষন, এবং তিনি জনসমক্ষেও ছিলেন ভীষন জনপ্রিয়। তার সবচেয়ে জনপ্রিয সাহিত্য কর্ম হচ্ছে "অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টম সয্যার" এবং "অ্যাডভেঞ্চার্স অফ হাকলবেরি ফিন"। এই উপন্যাসদ্বয বিশ্ব সাহিত্যে ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করেছে। টম সয়্যারের রোমাঞ্চকর কাহিনী টোয়েন তার নিজের শৈশবকাল থেকেই নিয়েছিলেন। মার্ক টোযেইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁর গল্প বলার এবং খুঁটিনাটিকে প্রাণবন্তভাবে তুলে ধরার অসাধারণ ক্ষমতা। উপরোক্ত দুটো বইতে তাঁর নিজের শৈশব ধরা পড়েছে বলেও তা হয়ে উঠেছে অত্যন্ত আন্তরিক।
মার্ক টোয়েইনের ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার’ সব সময় সকল মানুষের প্রিয় হবে থাকবে। খুবই মজার এবং রোমহর্ষক একটি বই। বইয়ের একটি চরিত্র টম। তাঁর বাল্য জীবনের বন্ধু ছিল টম ব্ল্যাংকেনশিপ। তাঁর বাবা ছিলেন পাঁড মাতাল। তিনি টমকে দেখাশুনা করতেন না যেমনটি একজন বাবার করা দরকার। এই বইয়ের প্রধান চরিত্র হাকলবেরি ফিন হচ্ছে তাঁর সেই বন্ধু টম। খুবই দুষ্টু ছেলে টম। তার মাথায় রাজ্যের দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরে বেড়ায়। এই জন্য তার খালা তাকে কড়া শাসনে রাখেন। কিন্তু দুষ্টুদের তো আর বুদ্ধির অভাব হয় না। সে ঠিকই ফাঁকি দেয় খালাকে। কিন্তু খালার শাসনে একসময় অতিষ্ট হয়ে ওঠে টম। পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে একটা ডাকাত দল গড়ে তোলে সে। গভীর রাতে পাহাড়ের গোপন সুড়ঙ্গে হাত কেটে শপথ নেয় তাড়া। পরিকল্পনা আটে কীভাবে তারা মানুষদের ধনসম্পদ লুট করবে। কিন্তু ডাকাতি করতে গিয়েই একসময় তারা নিজেরাই পড়ে সত্যিকার একদল ডাকাতের কবলে। শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা ডাকাত দলকে ধরিয়ে দিতে সমর্থ হয়। আর সেই সাথে তার আর হাক ফিনের ভাগ্যে আসে অনেক গুপ্তধন। এলাকায় তারা হিরো হয়ে যায়। এই ঘটনায় টমের শৈশব যেন আমাদের সকল কিশোরের শৈশব। এই গল্পের চরিত্রগুলো কিন্তু একেবারে কাল্পনিক নয়। তার স্কুল জীবনের দুই বন্ধু জন ব্রিজ এবং উইল বয়েন দুজন মিলে হয়ে যায় টম। এই গল্পে আরেকটি চরিত্র আছে যার নাম হাকেলবেরি ফিন। এই হাক হলো তার ছোট বেলার বন্ধু টম ব্লাঙ্কেনশিপের আদলে তৈরি করা এক চরিত্র।
তার আরেকটি নামকরা কাহিনী হলো ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকেলবেরি ফিন’। এই গল্পের নায়ক টম সয়ারের বন্ধু হাক ফিন। যে কিনা অনেকটাই ভবঘুরে। মাতাল বাবার অত্যাচার থেকে বাঁচতে সে একদিন পালায়। পথে তার সাথে দেখা হয় পালিয়ে যাওয়া এক নিগ্রো দাস জিমের। তারপর তারা একত্রে পালাতে থাকে। মিসিসিপি নদীতে তারা নৌকা নিয়ে পালাতে গিয়ে নানান ঘটনার সম্মুখীন হয়। কিন্তু তারপর তারা পালাতে পারে না। এই বইটি একসময় আমেরিকায় নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু পাঠকদের জোর দাবির মুখে সরকার তা তুলে নিতে বাধ্য হয়। তবে হাকলবেরি ফিন এই বই আরেকটি কারনে বিখ্যাত। এর আগে সবাই জানতো স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহর্ন ক্লিফোর্ডকে লেখার জন্য মার্ক টোয়েন নামটি বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই নামের মানে কি কেউ তা জানতো না। এই বইয়ে তিনি তার এই নাম বেছে নেবার কারণ এবং এর মানে কি তা উল্লেখ করেন।
‘দি প্রিন্স এন্ড দি পপার’ মার্ক টোয়েইনের আরেকটি জনপ্রিয় বই। এই গল্পের নায়ক কিন্তু দুজন একজন রাজার ছেলে আরেকজন রাস্তার ছেলে। কিন্তু দুজনে চেহারা এক। একদিন তাদের এক জায়গায় দেখা হয়। খেলাছলে তারা দুজন তাদের পোশাক বদল করে। এরপর রাজার ছেলেকে আর কেউ চিনতে পারে না। তাকে রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর রাস্তার ছেলে হয়ে যায় রাজপুত্র। এরপর আসল রাজপুত্রের জীবনে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। সে আবারও রাজপ্রাসাদে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কীভাবে রাজার ছেলে আবার রাজপ্রাসাদে ফিরে আসে সেই নিয়ে তৈরি হওয়া কাহিনী "দি প্রিন্স এন্ড দি পপার"।
(হ্যালির ধূমকেতু)
মার্ক টোয়েইনের জন্ম হয়েছিল যে বছর, সেবার পৃথিবীর আকাশে আবির্ভাব হয়েছিল হ্যালির ধূমকেতুর। ১৯০৯ সালে কোনো এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ১৮৩৫ সালে হ্যালির ধূমকেতুর সঙ্গে এসেছি"। সে আসে ৭৫ বছর পর পর। গত ১৯১০সালে সে আবার এসেছিলো এই পৃথিবীর আকাশে। টোয়েন বলতেন, "আমি তার সঙ্গে এসেছি তার সঙ্গেই চলে যেতে চাই। যদি যেতে না পারি, তবে সেটা হবে খুবই কষ্টকর"। 'মার্ক টোয়েন আর হ্যালির ধূমকেতু হলো ব্যাখ্যাতীত বিস্ময়। ওরা একসঙ্গে এসেছে, তাই ওদের যেতেও হবে একই সঙ্গে!’।
২১ এপ্রিল ১৯১০! যখন পৃথিবীর আকাশে আরেকবার দেখা গেল হ্যালির ধূমকেতু। কাকতালীয় ভাবে সেদিনই, হার্ট অ্যাটাকে চিরনিদ্রায় শুয়ে পড়লেন মার্ক টোয়েন। সত্যিই মার্ক টোয়েন আর হ্যালির ধূমকেতু যেন ব্যাখ্যাতীত বিস্ময়। মার্ক টোয়েইন ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। নিউইয়র্কের "ওল্ড ব্রীক" প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চে টোয়েইনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এবং নিউইয়র্ক শহরের এলমিরায় তাঁদের পারিবারিক "উডলন সমাধি"তে তাকে সমাহিত করা হয়। আজ তাঁর ১০৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। জনপ্রিয় মার্কিন সাহিত্যিক টোয়েইনের মৃত্যুদিনে তাঁর জন্য গভীর শ্রদ্ধা।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
ময়না বঙ্গাল বলেছেন: ভালো লাগলো এই মহান লেখককে তুলে ধরার জন্য । সামনে মত চিন্তা বিনিময়ে সময় দিয়েন ভাই ।