নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট, সংক্ষেপে এফডিআর। কর্মদক্ষতার বিচারে যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছেন। আমেরিকা তথা বিশ্বের দীর্ঘতম সময়ব্যাপী ক্ষমতায় থেকে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছেন ফ্রাংকলিন ডিলান্ডো রুজভেল্ট। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও কাজ করে গেছেন দেশের জন্য। জাতিসংঘ সৃষ্টিতেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পৃথিবী যখন অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত এমন সময় তিনি পৃথিবীর কেন্দ্রীয় এক চরিত্রে পরিণত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে উইনস্টন চার্চিল এবং যোসেফ স্ট্যালিনের মতো বিশ্ব নেতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সেরা প্রেসিডেন্টের অন্যতম ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে জর্জিয়ার ওয়ার্ম স্প্রিংসে পরলোকগমন করেন। আজ তার ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের মৃত্যবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
( কিশোর বয়সে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট (Franklin Delano Roosevelt)
ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট (Franklin Delano Roosevelt) ১৮৮২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক, হাইড পার্কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাসভূমি স্প্রিং উড এস্টেটে। রুজভোল্টর বাবার নাম জেমস রুজভেল্ট ও মায়ের নাম সারা অ্যান ডিলানো। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রুজভেল্ট। জানা যায়, তার প্রপিতামহ ছিলেন ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত। রুজভেল্টের পড়াশোনা গর্টন স্কুলে। তার জীবনে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এন্ডিকোট প্রিবডির অসামান্য প্রভাব পড়েছিল। পরবর্তীকালে তিনি হার্ভার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে তার প্রথম প্রবেশ ঘটে ১৯৩৩ সালের ৪ মার্চ আমেরিকার ৩২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এর আগে তিনি একজন সিনেটর, নৌবাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ১১ বছর আগে তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হন। এতে তাঁর কোমরের নিচের অংশ চিরতরে অবশ হয়ে যায়। কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনার পরও থেমে থাকেননি রুজভেল্ট। ১৯৩৩ সালে রুজভেল্ট যখন প্রথমবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়, বেকারত্বের হার ছিল উচ্চ। এ সময় রুজভেল্ট বিভিন্ন হুকুম জারি করে এ অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন।
মায়ের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তিনি পছন্দের এলিনূরকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল মেয়াদে সবচেয়ে দীর্ঘদিন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি ছিলেন। ফার্স্ট লেডি হিসেবে নতুন পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। মানবাধিকার বিষয়ে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের সম্মানার্থে প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান তাঁকে বিশ্বের ফার্স্ট লেডিরূপে আখ্যায়িত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন এলিনূর। ১৯৪৫ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর এলিনূর লেখকরূপে আবির্ভূত হন এবং মানবাধিকার বিষয়ে মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।
আমরা জানি, একজন ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। যুক্তরাষ্ট্রের তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তিনবার এ দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার কার্যকাল ছিল ১২ বছর ১ মাস ৮ দিন। শুধু তাই-ই নয়, চতুর্থবারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন তিনি। তবে শারীরিক অবস্থা তাঁর পক্ষে ছিল না। টানা চতুর্থ মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ছক আঁকছিলেন, তত দিনে তার বয়স প্রায় ৬৩ বছর। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১২ বছর এবং এর আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ৮ বছর অর্থাৎ টানা ২০ বছর তাকে অমানুষিক শ্রম দিতে হয় এবং অসংখ্য দেশ ও রণাঙ্গনে ঘন ঘন ভ্রমণ করতে হয়। এতে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৯৪৫ সালের ১২ এপ্রিল বিকালে তিনি মাথার পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসকদের মতে, তার মাথায় তীব্র রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ওইদিনই বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে রুজভেল্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রুজভেল্টের মৃত্যুতে আমেরিকার পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় ৩০ দিন জাতীয় শোক পালন করা হয়। তাকে স্প্রিং উড এস্টেটের রোজ গার্ডেনে সমাহিত করা হয়। ' রুজভেল্টের মৃত্যুর এক মাসের মধ্যে হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং জাপানের পরাশক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তার উত্তরসূরি হেরি এস ট্রু ম্যান আমেরিকা তথা মিত্রশক্তির এ বিজয়কে রুজভেল্টের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও রাজনীতির ব্যাপারে ইংল্যান্ডের ৪৭ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে ক্ষমতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তায় ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের তালিকায় শীর্ষস্থানে বসানো হয়। যে তিনটি কারণ দেখিয়েতাঁরেক শীর্ষে রাখা হয়েছে তা হলোঃ ১। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি, ২। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং ৩। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে একজন সুদক্ষ কূটনীতিক। রুজভেল্টের পরের অবস্থানে রয়েছেন আব্রাহাম লিংকন আর তৃতীয়স্থানে রয়েছেন জজ ওয়াশিংটন। এছাড়া চর্তুথ-টমাস জেফারসন্স, ৫ম তিয়োডোর রুজভেল্ট, ৬ষ্ঠ উডরো উইলসন, ৭ম হেরি ট্রু ম্যান ও ৮ম স্থানে আছেন রোনাল্ড রিগ্যান। ৩১তম স্থানে রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ (জুনিয়র)। আর বিল ক্লিনটন রয়েছেন ১৯ ও জন এফ কেনিডি রয়েছেন ১৫তম স্থানে। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টকে অনেকে আব্রাহাম লিঙ্কন ও জর্জ ওয়াশিংটনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ তিন রাজনীতিবিদ বলে থাকেন। রুজভেল্টের অবদানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, 'আজ থেকে শতসহস্র বছর পরও মানুষ হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরকে এই বলে ধন্যবাদ দেবে যে, হোয়াইট হাউসে একদা ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি, অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সুদক্ষ কূটনীতিক ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:১৩
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
বিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের মৃত্যবার্ষিকীতে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি ।