নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদার। ভারতীয় জরিপ বিভাগের কর্মকর্তা আর বিখ্যাত বনের খবরের লেখক প্রমদারঞ্জন রায়ের কন্যা তিনি। এছাড়াও শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিসি লীলা মজুমদার। অনেক ছোটবেলা থেকেই তার লেখালেখির জীবন শুরু। যিনি অকাতরে দিয়েছেন কিশোর সাহিত্যকে। ভূতের গল্পে যার জুড়ি মেলা ভার। যিনি রচনা করতেন অদ্ভূতুড়ে সব স্বপ্ন। যে স্বপ্ন কেবল ছোটরাই দেখে। ভীষণ দ্যুতিময় তার গল্প বলার ঢঙ। তার কল্পনা আকাশ ছুঁয়ে যায়। রায়বাড়ির এ মেয়ে মাত্র তের বছর বয়সে লেখার হাতেখড়ি হয় শিশুদের চিরকালের প্রিয় পত্রিকা সন্দেশ-এ। ১৯২২ সালে এ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প লক্ষ্মীছাড়া প্রকাশিত হয়। যদিও এর পরে অনেকদিন পত্রিকাটি অপ্রকাশিত ছিলো। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় সন্দেশ পত্রিকা পূনর্জীবিত করলে ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ অবধি ভাতিজা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যুগ্মভাবে সহ-সম্পাদক হিসাবে ‘সন্দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পরে ১৯৯৪-এ তাঁর স্বাস্থের অবনতির জন্য অবসর নেন। ১৯০৭ সালের আজকে দিনে মৃত্যুবরণ করেন কালজয়ী এই শিশু সাহিত্যিক। আজ এই লেখিকার ৮ম মৃত্যুৃবার্ষিকী। কালজয়ী শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লীলা মজুমদার ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার গড়পাড়া রোডের বিখ্যাত রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। লীলা মজুমদারের আদি নিবাস ছিলো বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মসূয়া গ্রামে। তার পিতার নাম প্রমদারঞ্জন রায় এবং মাতার নাম সুরমাদেবী এবং চাচার নাম উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। রায় পরিবারের সদস্য হয়েও লীলা মজুমদার ছিলেন অনেক স্বতন্ত্র । লীলার বাল্যজীবন কাটে শিলঙে যেখানকার লরেটো কনভেন্টে তিনি পড়াশোনা করেন। শৈশবে ডানপিটে ছিলেন লীলা মজুমদার। গাছে চড়া, পাহাড় বাওয়া, অবাধ্যতা, মারামারি, ঝগড়া আর জেদের কোনো কমতি ছিল না তার। জীবনের সব দস্যিপনাগুলো তার সাহিত্যকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। তবে লেখাপড়ায় অত্যান্ত মেধাবী লীলা মজুমদার বি-এ এবং এম-এ দুই পরীক্ষাতেই ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ইংরেজিতে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
(পুত্র কন্যার সাথে লীলা মজুমদার)
স্বর্ণপদক নিয়ে এমএ পাস করা কালজয়ী এ শিশু-কিশোর সাহিত্যিকের কর্মজীবনও ছিল কালজয়ী বটে। বিশ্বভারতী, আশুতোষ কলেজে শিক্ষকতা, আকাশবাণীর প্রযোজকের চাকরি, শান্তিনিকেতনের ইংরেজি শিক্ষিকা, আর নিজের লেখালেখি তো আছেই। লোরেটা কনভেন্টের ছাত্রী লীলা মজুমদার পারিবারিক ধারার সঙ্গে মিশে ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গেও তার পরিচয়টা ছিল গভীর। তার গদ্যে জ্যাঠামশাই উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর প্রভাব রয়েছে। শুধু তাই নয়, চাচাতো ভাই সুকুমার রায় শিশু সাহিত্যের পট পরিবর্তনের যে পথ দেখিয়েছেন, লীলা মজুমদার তাকে নিয়ে গেছেন ভিন্নমাত্রায়। লীলা মজুমদারের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্য এক শতের অধিক।
পদী পিসির বর্মী বাক্স, পাকদণ্ডী, টং লিং, নতুন ছেলে নটবর, সব ভুতুড়ে, আর কোনখানে, খেরোর খাতা, বদ্যিনাথের বাড়ি, দিনদুপুরে, বাতাসবাড়ি, কিশোরসাথী, হলদে পাখির পালক তার উল্লেখ যোগ্য রচনাবলী। লীলা মজুমদারের পাকদণ্ডী নামে লেখা আত্মজীবনীতে তাঁর শিলঙে ছেলেবেলা, শান্তিনিকেতন ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে তাঁর কাজকর্ম, রায়চৌধুরী পরিবারের নানা মজার ঘটনাবলী ও বাংলা সাহিত্যের মালঞ্চে তাঁর দীর্ঘ পরিভ্রমণের কথা বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি অনেক শিক্ষামূলক রচনা ও রম্যরচনা ইংরাজী থেকে বাংলায় অনুবাদও করেন।
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য লীলা মজুমদার বহু পুরুস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেঃ রবীন্দ্র পুরুস্কার, আনন্দ পুরুস্কার, লীলা পুরুস্কার, ভারতীয় শিশুসাহিত্যের রাষ্টীয় পুরুস্কার প্রভৃতি। কালজয়ী এ শিশু-কিশোর সাহিত্যিক ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই লেখিকার অষ্টম মৃত্যুৃবার্ষিকী। কালজয়ী শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
অর্বাচীন পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ নুর ভাই লীলা মজুমদারের মৃত্যুবার্ষিকী মনে করিয়ে দেবার জন্য