নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
শাফী ইমাম রুমী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বল বীর গেরিলা যোদ্ধা। তিনি ছিলেন শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের টর্চার সেলে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রুমীকে অমানুষিক অত্যাচার করে। রুমীর দুই পা শিকল দিয়ে বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে ফেলে দেয়, আবার ওপরের দিকে তুলে ঝুলিয়ে রাখে। তার পরও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখ থেকে নরপশুরা কোনো কথা বের করতে পারেনি। পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন রুমী। স্বাধীনতার পর শহীদ রুমী বীরবিক্রম (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত হন। জাহানারা ইমাম রচিত "একাত্তরের দিনগুলি" গ্রন্থে রুমী অন্যতম প্রধান চরিত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি পান। মুক্তি যোদ্ধা শাফী ইমাম রুমী ১৯৫২ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ৬৩তম জন্মবার্ষিকী। গেরিলা যোদ্ধা বীর বিক্রম শাফী ইমামর রুমীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
(১৯৫৮ সালে বাবা-মায়ের সাথে দুই ভাই রুমী ও জামী)
শাফী ইমাম রুমী ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শরীফ ইমাম ও মাতা জাহানারা ইমাম। প্রিয় কবি জালালুদ্দিন রুমীর মতো জ্ঞানী ও দার্শনিক হবে এই চিন্তা করেই শিশুটির ডাকনাম রাখা হয়েছিল রুমী। পিতামাতা ও পরিবার পরিজনের স্নেহছায়ায় ক্রমশই শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে উপনীত হয়েছিলেন। পড়াশুনা ও খেলাধুলায় অসম্ভব প্রতিভাবান ও চৌকস সেই তরুণ ছিলেন স্পষ্টভাষী, সাহসী, ও দৃঢ় চিত্তের অধিকারী। ঢাকার আজিম পুরের একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে রুমীর লেখা পড়ার হাতে খড়ি। ১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তান শিক্ষা বোর্ডের অধীন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট ইস্কুল এ্যান্ড কলেজ থেতে ম্যট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ৩য় স্থান অধিকার করে উর্ত্তীন হন। কলেজে পড়ার সময় রুমী তার কিছু বন্ধুর সাথে ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর এ ভর্তি হন। এই ট্রেনিংএ তিনি সার্জেন্ট পদবী লাভ করেন। এর পর আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে রুমী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানের বুয়েট) ভর্তি হন। এর পর আমেরিকার ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সুযোগ পড়াশুনা করে স্বচ্ছল ও নির্ঝন্ঝাট জীবন গড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশরে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আদর্শগত কারণে দেশকে যুদ্ধের মধ্যে রেখে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পড়তে যাননি। একাত্তরের ২৫মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলায় যেদিন ঘুমন্ত বাংলা ক্ষতবিক্ষত হয়, সেদিনের সেই কালোরাতকে চিরতরে দূর করে প্রিয় দেশকে উজ্জ্বল আলোর মুখ দেখাবে বলে যাঁরা মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে তরুণ রুমী ছিলেন অন্যতম। কুড়িতে পা রাখা অসম্ভব প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর সেই তরুণ তাঁর প্রাণপ্রিয় পিতামাতার মতই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তাই আমেরিকার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের হাতছানি উপেক্ষা করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ রুমী মায়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন যুদ্ধে যাবার। দেশের মানুষকে বর্বর পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত করে এক টুকরো মানচিত্র উপহার দেবেন জন্য মায়ের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। কাতরভাবে বলেছিলেন, ‘আম্মা, দেশের এ রকম অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়তো বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনো দিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও, আম্মা? না, ছেলের এই আকুতি ফিরিয়ে দেবার মত মা তিনি ছিলেন না। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে অবশেষে রাজি করিয়ে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাঁকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন।
দৃঢ়চেতা শাফী ইমাম রুমী পিতামাতার আশীর্বাদ নিয়ে একাত্তরের ১৪জুন যুদ্ধে যাবার প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা ছেড়ে মেলাঘরের উদ্দেশে পাড়ি জমান। ভারতের মেলাঘরে তিনি ২নং সেক্টর এর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হায়দারের অধীনে আনুমানিক দেড় থেকে প্রায় দুই মাস কমান্ডো টাইপ গেরিলা ট্রেনিংসহ সুপার এক্সপোসিভ বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে অন্য গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে তরুণ রুমী ঢাকায় প্রবেশ করে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য। ২৫ আগস্ট রুমীসহ আরও পাঁচজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ধানমন্ডির ২৮ নম্বরে দুর্ধর্ষ গেরিলা অপারেশন সম্পন্ন করেছিলেন। সেদিন বেশ কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা হত্যার পর পাকিস্তানি আর্মিদের একটি জিপ তাদের অনুসরণ করলে রুমী তাঁর স্টেনগানের বাঁট দিয়ে গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙে ফায়ার করে আর্মির চালককে গুলিবিদ্ধ করেন। এর ফলে পাক আর্মির জিপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। রুমীর সাহসিকতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিতার কারণে সেদিন তাঁর সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল। ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
এই অ্যাকশনের পর ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে কাটান। এদিন রুমী তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাসায় গিয়েছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তাদের বাসভবন থেকে বেশ কিছুসংখ্যক গেরিলা যোদ্ধার সাথে রুমীকে পাকিস্তানি আর্মিরা গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল, রুমীর বাবা শরীফ ইমাম, ছোট ভাই জামী, বন্ধু হাফিজ, চাচাতো ভাই মাসুম প্রমুখ। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাক আর্মির অমানুষিক অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেও তিনি তাঁর সহযোদ্ধাদের নাম-অবস্থান প্রকাশ করেননি। ২০ বছরের টগবগে তরুণ সাহসী বীর রুমী অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের কোনো কিছু স্বীকার করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। সকল দায়ভার নিজের ওপর নিয়ে রুমী তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের ছেড়ে দেবার জন্য হানাদারদের সম্মত করতে পেরেছিলেন। তাইতো ধরা পড়ার দুই দিন পর হানাদার বাহিনী সবাইকে ছেড়ে দিলেও তরুণ রুমীকে আর ফিরিয়ে দেয়নি। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট সহযোদ্ধাদের সাথে রুমীর সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয় যায়। এদিনের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর দেখা যায়নি। তাঁর সহযোদ্ধাদের বিভিন্ন লেখায় জানা যায়- ত্রিশ আগস্টের পর আর তাঁরা রুমীর দেখা পাননি। তবে কি এই দিনটিই রুমীর চলে যাবার দিন?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তি যোদ্ধা শাফী ইমামর রুমীর ৬৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। গেরিলা যোদ্ধা বীর বিক্রম শাফী ইমাম রুমীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মিন্টুর নগর সংবাদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শাফী ইমাম রুমীর
জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো্র জন্য।
২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
গেরিলা যোদ্ধা বীর বিক্রম শাফী ইমামর রুমীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও সালাম ।
জাহানারা ইমাম রচিত "একাত্তরের দিনগুলি" পড়েছি, মা হৃদয়-এর এক করুন দিন লিপি ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:২৪
মিন্টুর নগর সংবাদ বলেছেন: গেরিলা যোদ্ধা বীর বিক্রম শাফী ইমাম রুমীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা