নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালজয়ী কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সুবোধ ঘোষের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১০ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২০



ভারতীয় বাঙালি লেখক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ। গত শতকের চল্লিশ দশকের প্রায় প্রারম্ভিক কাল ঘেঁষা বাংলা সাহিত্যের কাল পর্বের জীবন শিল্পী সুবোধ ঘোষ। আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা মনন চিন্তা চেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সুবোধ ঘোষ তার অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। বাঙালী পাঠকসমাজে সুবোধ ঘোষ এখন প্রায় বিস্মৃত। এখনকার বাংলা পাঠকরা কি সুবোধ ঘোষ তেমন পড়েন? তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি সুবোধ ঘোষের ছোটগল্পের ভক্ত। বিশেষ করে তার 'অযান্ত্রিক' এবং 'ফসিল'-এর মত বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প। ভাষার ওপর অনায়াস দক্ষতার প্রমাণ মেলে ওঁর বিভিন্ন স্বাদের গল্পে। মহাভারতের গল্পগুলি বলার জন্যে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার সঙ্গে অযান্ত্রিক বা ফসিলের গল্পে ব্যবহৃত ভাষার কোনও মিল নেই। আজ বিস্মৃত প্রায় কথাশিল্পীর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮০ সালেল আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে তার জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।



সুবোধ ঘোষ ১৯০৯ সালে বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মতারিখ অজ্ঞাত কারণ সন তারিখ মিলিয়ে তার পূর্ণাঙ্গ জীবনপঞ্জি রচিত হয়নি। হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করে হাজারিবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজে ভর্তি হয়েও অভাব অনটনের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকে। বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলো তাঁর জীবন। হেন কাজ নেই তাকে করতে হয়নি সংসারের ঘানি টানার প্রয়োজনে। পড়াশোনা ছেড়ে কলেরা মহামারি আকার নিলে বস্তিতে টিকা দেবার কাজ নেন। কর্মজীবন শুরু করেন বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এরপর সার্কাসের ক্লাউন, বোম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণীর কাজ, চায়ের ব্যবসা, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোর কিপার ইত্যাদি কাজে তিনি তার প্রথম জীবনের যতটা অংশ ব্যয় করেন। বহু পথ ঘুরে ত্রিশ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী। ক্রমে সিনিয়ার এসিস্ট্যান্ট এডিটর, অন্যতম সম্পাদকীয় লেখক।



কথাশিল্পী সুবোধ ঘোষ ১৯৪৪ এ গড়া কংগ্রেস সাহিত্য সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। সুবোধ ঘোষের প্রথম গল্প 'অযান্ত্রিক', এরপর 'ফসিল'। ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট উত্তর দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালী থেকে তিনি গান্ধীজির সহচর থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন দাঙ্গা এবং দাঙ্গাউত্তর কালপর্বে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতাকে। অনামী সঙ্ঘ (বা চক্র) নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পর পর দুটি গল্প 'অযান্ত্রিক' এবং 'ফসিল' লেখেন যা বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। তাঁর আর একটি বিখ্যাত গল্প 'থির বিজুরি'। মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত 'জতুগৃহ' তাঁর একটি প্রখ্যাত ছোটগল্প । জতুগৃহ অবলম্বনে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাঁর রচিত যে সমস্ত গল্প থেকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র হয়েছিল , তা হলঃ ১। ইজাজত (হিন্দি ) মূল গল্প জতুগৃহ। গুলজার পরিচালিত নাসিরউদ্দিন শাহ, রেখা ও অনুরাধা অভিনিত রোমান্টিক ছবি ইজাজত। ৫ বছর পর রেল স্টেশনে দেখা দুজনের। তারপরে স্মৃতি রোমন্থন। সংসার ছিল তাদের একসময়। টেকেনি। ছিল তৃতীয় একজন। ইজাজতের বাংলা ভার্সন জতুগৃহ পরিচালনা করেন তপন সিং। মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার ও অরুন্ধতী। ২। চিতচোর (হিন্দি) - মূল গল্প চিত্তচকোর, ৩। এক অধুরি কাহানি ( হিন্দি ), ৪। বর্নালি, ৫। সুজাতা (হিন্দি ) - মূল গল্প সুজাতা, ৬। শুন বরনারী, ৭। অযান্ত্রিক, ৮। ত্রিযামা ।



শুধুমাত্র গল্পকার হিসাবেই সুবোধ ঘোষ অণ্বেষু শিল্পী ছিলেন না। সুবো্ধ ঘোষ উপন্যাস রচনাও ঋদ্ধ। তার যথার্থ প্রমাণ ’তিলাঞ্জলি’ (১৯৪৪) সুবোধ ঘোষের ঔপন্যাসিক হিসাবে প্রথম প্রভিজ্ঞার স্বাক্ষর ’তিলাঞ্জলি’। এ উপন্যাসে তিনি ’রাজনৈতিক মতাদর্শ’কে উপস্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই উপন্যাসে। মন¦ন্তরের পটভূমিকায় রচিত এ উপন্যাসে তৎকালীন কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ ’জাগৃতি সংঘ’র জাতীয়তা বিরোধী চরিত্রের মতবিরোধের রূপরেখা অঙ্কনে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি এই উপন্যাসে। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারতের প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত), গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া (১৯৫৮) প্রমূখ। সুবোধ ঘোষের ’ভারত প্রেম কথা’ বাংলা গল্প সাহিত্যে তার মাস্টার পিস বললে অত্যুক্তি হয় না। তিনি শুধুমাত্র এ পর্যন্ত লিখেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তার নিজস্ব ঘরানায় মানভূম জেলা অন্ত্যবাসী জীবনের গাথা ’শতকিয়া’ (১৯৫৮) তে উপস্থাপন করেছেন আর এক উপাখ্যান। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সুবোধ ঘোষ আনন্দ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিনী পদক লাভ করেন।



সুবোধ ঘোষ ১৯৮০ সালের ১০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। আজ কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। সংঘাত-সংঘর্ষে ভরা আদিম জীবন প্রবাহকে তার চিন্তা, চেতনা, মেধা, মনন, নিজস্ব বোধ আর প্রতীতির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের কুশলী রূপকার হিসাবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা তাকে অণ্বেষু কালজয়ী শিল্পীরূপে চির ভাস্বর করে রাখবে কথা শিল্পী সুবোধ ঘোষকে। কালজয়ী কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সুবোধ ঘোষের মৃত্যু দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.