নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
দীর্ঘ জীবনে যিনি ছবির মাধ্যমে শিল্পরসিক বাঙালিকে বাংলার রূপ, রস, গন্ধ দেখিয়েছেন তিনি শিল্পজগতের প্রবাদপুরুষ স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। যিনি আমাদের দৃষ্টি রুচিটাই ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছেন তাঁর সুক্ষ্ম তুলির আঁচড়ে। অনেকেই বলেন, কাইয়ুম চৌধুরীর ভেতর শিল্পী জয়নুল আবেদীন এবং কামরুল হাসানের ধারাকে দেখা যায়। শুধু ক্যানভাসই নয়, বইয়ের প্রচ্ছদে ও অলঙ্করণেও সেই রূপকে তুলে এনেছেন তিনি, অবদান রেখেছেন বাঙালির শিল্পরুচি গঠনে। প্রায় ছয় দশকের অধিক সময় ধরে একাগ্র শিল্পচর্চায় আমাদের চারুকলার জগেক যিনি ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছেন, আমগ্ন নিষ্ঠাবান সাধনা দ্বারা অনুপ্রাণিত করেছেন বহু শিক্ষার্থী ও শিল্পীকে। সত্যিকার অর্থে কাইয়ুম চৌধুরী একজন বিশ্বমানের চিত্রশিল্পী। সত্যজিৎ রায়ের পর গ্রাফিকস কিংবা প্রচ্ছদশিল্পকে অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এ জন্য তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শিল্পজগতের প্রবাদপুরুষ স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে তিনি ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৮১তম জন্মবার্ষিকী। দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ৮১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ৯ মার্চ ফেনী জেলার এক সম্ভ্রান্ত জমিদা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষয়িঞ্চু যে-জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম সেখানে বিত্তের পূর্বতন জৌলুস বিশেষ অবশিষ্ট ছিল না, কিন্তু এই পরিবারে শিক্ষা ও উদার মানসের ছিল জোরদার অবস্থান। পারিবারিক পরিবেশ ছাড়াও পিতার সামাজিক যোগাযোগও ছিল অনেক বিস্তৃত। তার পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরবর্তীতে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কাইয়ুম চৌধুরী বাংলার অনেক এলাকায় ঘুরে ফিরেছেন। কাইয়ুম চৌধুরীর শিক্ষার হাতেখড়ি মক্তবে , তারপর ভর্তি হন চট্টগ্রামের নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল কুমিল্লায় কাটিয়ে চলে যান নড়াইলে। চিত্রা পাড়ের এই শহরে কাটে তাঁর তিনটি বছর। সেখান থেকে সন্দ্বীপ এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুলে ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে তাঁর ঠাঁই বদল হয় ফেনীতে। ভর্তি হলেন ফেনী হাই স্কুলে, সেখানে থেকে যান ফরিদপুরে। ফরিদপুর থেকে ময়মনসিংহ এসে ১৯৪৯ সালে সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে যখন ম্যাট্রিক পাশ করেন।
স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক দেখা গিয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে কাইয়ুম চৌধুরী কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজ করেছেন । তেল রঙ, জল রঙ, কালি-কলম, মোমরং, রেশমছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তাঁর প্রকটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ। বস্তুতঃ তাঁর ছবি নকশা প্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তাঁর প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং তিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। এই বর্ণভঙ্গী তাঁর চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর ক্যানভাসের আয়তন প্রায়শঃ বর্গাকার। এছাড়া তাঁর চিত্রাবলিতে এদেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাড়িঁ, মীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পুনঃপৌণিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
(স্ত্রী তাহেরা খানমের সাথে শিল্পী কাই্য়ূম চৌধুরী)
১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে বন্ধুবর গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের সন্ধানী প্রকাশনী যাত্রা শুরু করে জহির রায়হানের 'শেষ বিকেলের মেয়ে' গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে মাওলা ব্রাদার্স সৃজনশীল প্রকাশনার অধ্যায় উন্মোচন শুরু করে আবদুশ শাকুরের 'ক্ষীয়মাণ' এবং সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগ্রন্থ 'একদা এক রাজ্যে' প্রকাশ দ্বারা। এই দুই প্রকাশনা সংস্থার কাজের পেছনে বরাবরই কাইয়ুম চৌধুরী সক্রিয় থেকেছেন। তিনি আরও প্রচ্ছদ আঁকেন ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে। ১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে রেলওয়ের টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে কাইউম চৌধুরী ১৯৬০ সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে পরিনয়-বন্দনে আবদ্ধ হন। তাহেরা খানম ছিলেন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া প্রথম চারজন ছাত্রীর একজন। তাঁর শৈল্পিক প্রয়াসের জন্য অনুকূল ছিল এবং স্ত্রীর ভূমিকা প্রেরণাদায়ক ছিল।
মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয় দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী গত বছর স্বাধীনতা পুরস্কারের ভূষিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মনোনীত ব্যক্তি ও তাঁদের প্রতিনিধিদের হাতে মর্যাদা সম্পন্ন স্বাধীনতা পদক তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পুরস্কারের জন্য মনোনীতরা একটি করে স্বর্ণপদক এবং একটি সম্মাননাসূচক প্রত্যয়নপত্র পেয়েছেন। এর সঙ্গে নগদ পুরস্কার হিসেবে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী ১৯৮৬ সালেএকুশে পদক এবং ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক লাভ করেন।
গত বছর ৩০ নভেম্বর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভালের চতুর্থ দিনে তার বক্তব্য দেয়ার সময় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। সেখান থেকে তাকে সি এম এইচ- এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। শিল্পজগতের প্রবাদপুরুষ স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ৮১তম জন্মবার্ষিকী আজ। স্বাধীনতা আন্দোলন এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
০৯ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আজিজ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী জয়নুল বা কামরুলের
ছায়াপথে না হাটলেও অনেকের মতে তিনি তাদের
দ্বারা প্রভাবিত। যা হোক প্রত্যেকেরই স্বকীয়তা আছে
শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীও তার বাইরে নন। আমরা তার
জন্মদিনে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১২
শাহ আজিজ বলেছেন: শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী মোটেও জয়নুল বা কামরুলের ধারার উপর প্রতিষ্ঠিত নন। কারো নিজস্বতা সৃষ্টির অন্তরায় এই দুই সিনিয়র শিল্পীকে সর্বদা ট্যাগ করে দেওয়া হয়। মধ্য বয়েসেই কাইয়ুম বেছে নেন নিজস্ব ভুবন। সবার মতো পশ্চিমা ধারার অনুকরনে বাংলার আকাশ, নদী, নৌকা ও নারীকে এক অদ্ভুত ভঙ্গীতে প্রকাশ তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এ ব্যাপারে তার ইলাসট্রেশন বেজ ওয়ার্কমানশিপ বেশিই প্রভাব ফেলেছে। এই যৌথ বাদনের সফলতা পুরোটাই কাইয়ুমের। স্মরণ করি কাইয়ুম স্যারকে ।