নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। বাঙালীর অহংকার ভাষার মাসের শেষ দিবস। শেষ হয়ে গেলো ভাষার মাস। একুশ আমরা উদযাপন করেছি পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। দুনিয়াব্যাপী উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদ মিনার একেবারে প্রথমটাও ভেঙ্গে দিয়েছিল পাকিস্তানীরা। নতুনভাবে তৈরি হয়েছিল পরে। একাত্তরেও মর্টার ও কামান দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল। আবার তৈরি হয়েছে নতুনভাবে। তৈরি হয়েছে সারাদেশে। এখন তৈরি হচ্ছে দুনিয়ার নানা দেশে। এ দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষাকে সত্যিকার এবং আক্ষরিক অর্থেই প্রাণ দিয়ে ভালবাসে এবং একই সঙ্গে দুনিয়ার সব জাতির সব মানুষের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু পাকিস্তানে?
পাকিস্তানে কি তার প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহ সাহেবের ইচ্ছা অনুযায়ী উর্দু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? হয়নি। যদি হতো তাহলে এত বছর পরে কোন নাগরিকের উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার জন্য রিট আবেদন করার দরকার হতো না। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস। আজও পাকিস্তানের দাফতরিক ভাষা ইংরেজী, সরকারী কাজকর্মও ইংরেজীতে হয়। দেশটির শাসকগোষ্ঠীর 'পেয়ারা' ভাষার স্থান ওদের নিজের দেশেই আজও হলো না। কিছুদিন আগে সানাউল্লাহ নামে লাহেরের বাসিন্দা পাকিস্তানী নাগরিক লাহোর হাইকোর্টে এক রিট আবেদন করেছেন তাতে তিনি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার অনুরোধ করেন। ওই রিট আবেদনে তিনি জানান, ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় ঘোষণা করেছিলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আজও সে ঘোষণা পাকিসত্মানে বাস্তবায়ন হয়নি। ওই আবেদনকারী তাঁর রিট আবেদনে আরও বলেছেন, পাকিস্তানের সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার বিধান রাখা আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজও ওই কাজটি হয়নি পাকিস্তানে। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!
পাকিস্তানে মাত্র ৭.৫৭% নাগরিক উর্দুতে কথা বললেও ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় ঘোষণা করেছিলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ঢাকায় জিন্নাহ সাহেবের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ হলো। বাঙালীদের মূলত দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। কিন্তু ওই অন্যতমটুকুও করা চলবে না, বাংলাকে কোন স্থানই দেয়া যাবে না, এটাই ছিল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী হর্তাকর্তা সবার কথা। দুনিয়ার সবকিছু করা যাবে কিন্তু বাঙালীদের দাবি মানা যাবে না। এই গোঁয়ার্তুমি এবং একই সঙ্গে এই মূর্খতা ছিল তাদের। বাঙালীরা দাঁতভাঙ্গার চাইতেও বেশি কঠোর জবাব শেষ পর্যন্ত ওদের দিয়ে ছেড়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গে বাঙালীদের উপর উর্দু চাপিয়ে দেবার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে হেয়েছিল আন্দোলন। ধীরে ধীরে সে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি বাংলা ভাষার দাবীর দুর্বার আন্দোলনে পাকিস্তানী শাসনাধীন ঢাকায় গুলি চালিয়ে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেদিন ভাষার দাবিতে প্রাণ দেন বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারসহ অনেকে। তার পরের ইতিহাস সবার জানা।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে সংগ্রাম এগিয়ে চলে এবং নানা সংগ্রাম আন্দোলনের পথ ধরে ধীরে ধীরে একাত্তর। মুক্তিযুক্ত, স্বাধীনতা সংগ্রাম। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা। তারও পর ২০০০ সাল। জাতিসংঘ ঘোষণা করল অমর ওই একুশ ফেব্রুয়ারি হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাকে বাংলায় স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছে বাঙালীরা। একুশের চেতনা, প্রেরণা বাংলাদেশ ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ল জগতময়।
©somewhere in net ltd.