নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের প্রখ্যাত চারণ কবি, আধ্যত্নিক চিন্তা-চেতনার প্রাণপুরুষ পাগল বিজয় সরকারের ১১২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪০


উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, ও গায়ক ও চারণ কবি বিজয় সরকার। বিজয় সরকার তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। তার আধ্যাত্মিক বিভিন্ন কর্মের জন্য ভক্তরা তাকে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সম্বধন করেন। নিজের লেখা গানেও নিজেকে পাগল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বিজয় সরকার। যুগে যুগে যেসব ভাবুক কবি এসে আমাদের সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে আলোকিত করেছেন, মানুষের মনের ভেতরের অন্ধকারকে দূর করে পবিত্র আলোর শিখা পৌঁছে দিয়েছেন, ঈশ্বর বন্দনায়, আধ্যাত্মিকতায় এই অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলেছিলেন-বিজয় সরকার ছিলেন তাঁদেরই একজন। কবিগানের উৎকর্ষ সাধনে তার অবদান অসামান্য। তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও ঈশ্বর বন্দনায় মগ্ন একজন মানুষ। বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের আজকের দিনে তিনি নড়াইলের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১১২তম জন্মবার্ষিূকী। চারণ কবির জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।

(নড়াইলে কবি বিজয় সরকারের বাড়ি)
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল মরমী গানের গীতিকার, সুরকার, গায়ক, চারণ কবি বিজয় সরকারের জন্ম ১৩০৯ সালের ৭ ফাল্গুন (বাংলা), ইংরেজী ১৯০৩ সালের ১৯ ফেব্রয়ারি নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নবকৃষ্ণ আধিকারী এবং মা হিমালয় দেবী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বিজয় সরকারের প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী। বিজয় সরকার স্থানীয় স্কুলে নবমশ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। মতান্তরে মেট্রিক পর্যন্ত। তারপর ঐ স্কুলেই পড়ান কিছুকাল। পরে স্থানীয় জমিদারীর কাচারিতে নায়েবের চাকরি নেন। অবসর সময়ে গান করতেন। তিনি ছিলেন আধ্যত্নিক চিন্তা-চেতনার প্রাণপুরুষ। যেকোনো ধর্মের প্রতিও সহনশীল। কৈশোরে তিনি কবি পুলিন বিহারী ও পঞ্চানন মজুমদারের সহচর্যে আসেন ও পাচালী গানের দীক্ষা পান এবং পরবর্তিতে পাচালী গানে খ্যতি অর্জন করেন। ১৯২৯ সালে তিনি কবিগানের দল গঠন করেন। সঙ্গীত সাধনার জন্য তিনি ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে বিজয় সরকারের গানের আসরে উপস্থিত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদদীন, কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন, সাহিত্যিক হাবিবুল্লাহ বাহার, ধীরেন সেন প্রমুখ। তারা তার গান শুনে মুগ্ধ হন। বিশ্ববরেন্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সঙ্গেও তার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। সুলতান বার বার ছুটে যেতেন বিজয় সরকারের বাড়িতে ।

প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সঙ্গীতসাধক মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে চমৎকার সুরব্যঞ্জনায় ফুটিয়ে সবার অন্তরে ঠাঁই নিয়েছিলেন। তাঁর সমসাময়িক ছিলেন নড়াইলে প্রখ্যাত জারী গায়ক মোসলেম উদ্দিন বয়াতী। বিজয় ছিলেন আধ্যত্নিক চিন্তা-চেতনার প্রাণপুরুষ। যেকোনো ধর্মের প্রতিও সহনশীল। জাতি ধর্ম বর্ণের উর্দ্ধে থেকে এই চারণ কবি প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগীতি, আধ্যাতিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান। ফকির লালন শাহ্‌ এর “বাড়ির কাছে আরশি নগর” এবং জসীমউদ্দিনের “নকশী কাঁথার মাঠ” নিয়ে ও তিনি গান লিখেছেন। তিনি একাধারে লিখেছেন আধ্যাত্মিক গান, ইসলামি গান প্রেমের গান, বর্ষার গান প্রভৃতি।
‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে,
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’-

চিরায়ত নিয়মের এই মর্মবাণীটি যার কথায় এবং সুরে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় তিনি কবিয়াল বিজয় সরকার। কবিয়াল বিজয়ের কয়েকটি অসম্ভব জনপ্রিয় গান হলোঃ

১. পোষাপাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে
২. এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে
৩. কালার প্রেমে এতো জ্বালা হারে আমি আগে জানি নাই
৪. আল্লাহ রসুল বল মোমিন আল্লাহ রসুল বল
৫. নকশি কাঁথার মাঠেরে আজও কাঁদে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি
৬. শুধু পাষাণ নয় এই তাজমহলের পাথর
৭. আমি কৃঞ্চ বলিয়া ত্যাজিব পরাণ যমুনার তীরে
৮. আমায় পাগল পাগল করেছে কালার বাঁশিতে
৯. তুমি জানোনা'রে প্রিয়
১০. সুন্দর এই পৃথিবী
১১. কি সাপে কামড়াইলো
১২. জানিতে চাই দয়াল
১৩. পরবাসি হইয়া


জীবদ্দশার শেষ দিকে বিজয় সরকার খুলনা বেতারের নিয়মিত গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রয়ারি কলকাতার ‘ভারতীয় ভাষা পরিষদ’ বিজয় সরকারকে সংবর্ধিত করে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক চারন কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯৮৫ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোক গমন করেন। মৃত্যুর পরে তাকে পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার বাড়িতে সমাহিত করা হয়। দেশ ও সমাজের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য শিল্পকলায় (মরণোত্তর) একুশে পদক ২০১৩ জন্য মনোনীত হয়েছেন বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী (চারন কবি বিজয় সরকার)। বাংলাদেশ সরকার সরকার ২০১৩ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়। বাংলা লোকসংস্কৃতির এই অসামান্য স্বীকৃতির জন্য আমরা গর্বিত।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ধারা, কবি গানের উৎকর্ষ সাধনে আধ্যত্নিক চিন্তা-চেতনার প্রাণপুরুষ বিজয় সরকারের ১১২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯

কবি আলমগীর গৌরিপুরী বলেছেন: তথ্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬

জেন রসি বলেছেন: বিজয় সরকার সম্পর্কে জানতাম না।জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩১

সাজিদ ঢাকা বলেছেন: পোস্টে ++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.