নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুজিবনগরে তিনি তাজউদ্দীনের বিচক্ষণ কর্মকাণ্ড সরেজমিনে কাছ থেকে দেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাঁর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বর্তমানে তিনি শিল্পকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা যামিনী এবং বাংলা মাসিকপত্র কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ বছর সাহিত্যের জন্য ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা 'পদ্মভূষণ' এ ভূষিত হয়েছেন। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৩৭ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপকের আজ ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে শিক্ষাবিদ ও লেখক আনিসুজ্জামানকে ফুলেল শুভেচ্ছা।
আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতাল পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ছিল তাঁদের পরিবার। তাঁর বাবা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন, গৃহিনী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন। তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান, তারপর আরেকটি ভাই। বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন। কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবনের শুরু করেন আনিসুজ্জামান। ওখানে পড়েছেন তৃতীয় শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত। পরে এদেশে চলে আসার পর অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন খুলনা জেলা স্কুলে। কিন্তু বেশিদিন এখানে পড়া হয়নি। একবছর পরই পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় ভর্তি হন প্রিয়নাথ হাইস্কুলে। আনিসুজ্জামান ছিলেন প্রিয়নাথ স্কুলের শেষ ব্যাচ। কারণ তাঁদের ব্যাচের পরেই ওই স্কুলটি সরকারি হয়ে যায় এবং এর নাম-পরিবর্তন করে রাখা হয় নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুল। সেখান থেকে ১৯৫১ সালে প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করে বাংলায় অনার্স নিয়ে বিএ ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি অনার্স পাস করলেন এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে এমএ পাস করার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমীর প্রথম গবেষণা বৃত্তি পেলেন। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক শূন্যতায় বাংলা একাডেমীর বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে। সে সময়ে বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শহীদ মুনীর চৌধুরীকে।
১৯৫৬ ও ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক সম্মান এবং এমএতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। অনার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ “নীলকান্ত সরকার” বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ড. আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য যোগদান করেন। বিষয় ছিল ‘ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারায ১৭৫৭-১৯১৮’। ১৯৬২ সালে তাঁর পিএইচডি হয়ে গেল। তাঁর পিএইচডির অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল ‘ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা (১৭৫৭-১৯১৮)’। ১৯৬৪ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন ডক্টরাল ফেলো হিসেবে বৃত্তি পেয়ে। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস। কর্মজীবনে আনিসুজ্জামান ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি ছিলেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক। বাংলা একাডেমীর বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে আনিসুজ্জামান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর। প্রথমে অ্যাডহক ভিত্তিতে চাকরি হলো তিন মাসের। চাকরি চলে যাওয়ার পর কয়েক মাস বেকার থাকলেন। তারপর পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণা বৃত্তি পেলেন। এর কয়েক মাস পর অক্টোবর মাসে আবার যোগ দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায়। ১৯৬৯ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেছিলেন। পরে ভারতে গিয়ে প্রথমে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে গবেষণা করেন। জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পে অংশ নেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে । পরে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে আবার যুক্ত হন। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। এছাড়াও তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের গবেষণা, মৌলিক প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও সম্পাদিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। যথাঃ
১। মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪), ২। মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯), ৩। মুনীর চৌধুরী (১৯৭৫), ৪। স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), ৫। আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), ৬। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৮৩), ৭। পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), ৮। আমার একাত্তর (১৯৯৭), ৯। মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮), ১০। কাল নিরবধি (২০০৩)
বিদেশি সাহিত্য অনুবাদঃ
১। অস্কার ওয়াইল্ডের An Ideal Husband এর বাংলা নাট্যরূপ 'আদর্শ স্বামী' (১৯৮২), ২। আলেক্সেই আরবুঝুভের An Old World Comedy -র বাংলা নাট্যরূপ 'পুরনো পালা' (১৯৮৮)
গ্রন্থ একক ও যৌথ সম্পাদনাঃ
১। রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮), ২। বিদ্যাসাগর-রচনা সংগ্রহ (যৌথ, ১৯৬৮), ৩। Culture and Thought (যৌথ, ১৯৮৩), ৪। মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১-৪ খণ্ড (১৯৮২-১৯৮৬), ৫। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড (যৌথ, ১৯৮৭), ৬। অজিত গুহ স্মারকগ্রন্থ (১৯৯০), ৭। স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন (১৯৯২), ৮। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৩), ৯। নজরুল রচনাবলী ১-৪ খণ্ড (যৌথ, ১৯৯৩), ১০। SAARC : A People's Perspective (১৯৯৩), ১১। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মকথা (১৯৯৫), ১২। নারীর কথা (যৌথ, ১৯৯৪), ১৩। ফতোয়া (যৌথ, ১৯৯৭), ১৪। আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী (১ম খণ্ড, যৌথ ২০০১), ১৫। ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দসংগ্রহ (যৌথ ২০০৩), ১৬। আইন-শব্দকোষ (যৌথ, ২০০৬) ইত্যাদি
সাহিত্য কর্মে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশে-বিদেশে বহু পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে আছেঃ ১। ১৯৫৬ সালে নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক, ২। ১৯৬৫ সালে দাউদ পুরস্কার, ৩। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ৪। ১৯৮৫ সালে একুশে পদক, ৫। ১৯৯৩ সালে আনন্দ পুরস্কার, ৬। ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট, এবং গতবছর শিক্ষা ও সাহিত্যে পদ্মভূষণ পেয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এটি ঘোষণা করা হয়। ‘পদ্মভূষণ’ ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদক।
১৯৩৭ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আজ তার ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে শিক্ষাবিদ ও লেখক আনিসুজ্জামানকে ফুলেল শুভেচ্ছ।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য প্রদানের জন্য।
ভালো থাকবেন আরণ্যক রাখাল। শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব প্রতিভাবান আর পরিশ্রমী ছাত্র ছিলেন বোঝাই যায়| তাকে অনেক সম্মান