নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
পশ্চিমা সাহিত্যের সেরা হাস্য-রসাত্বক লেখকদের একজন হিসেবে খ্যাত ফরাসী নাট্যকার ও অভিনেতা মলিয়ের। তার রচনাগুলোর মধ্যে ল্য মিসান্থ্রপি, ল্য এক্ল্ দেস্ ফেমেস্, টারটুফে অউ ল্য ইম্পোস্তার, ল্য আভ্রে, ল্য মালাদে ইমাজিনারে, ল্য বুর্জোয়িস জেন্টিওম্মে উল্লেখযোগ্য। তত্কালীন ফরাসি রাজার চোখে পড়ায় মলিয়েরের নাট্যদল রাজভাতাও লাভ করেছিল। রাজার সুনজরে পড়ার সুবাদে তার নাট্যদল রাজ ভাতাও লাভ করে এবং ত্রপে দে র্য বা রাজনাট্যদল উপাধিতে ভূষিত হয়। বিনোদনের জন্য সরকারী লেখক হিসেবে মলিয়ের নিয়োজিত হন। যদিও তিনি রাজা ও প্যারিসের অধিবাসীদের ভূয়সী প্রশংসা পান, তার বিদ্রূপাত্মক লেখা নীতিবাদী ও ক্যাথলিক চার্চের সমালোচনার মুখে পড়ে। ধর্মীয় ভণ্ডামিকে আক্রমণ করে তার একটি লেখা চার্চের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে এবং এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৬৭৩ সালের আজকের দিনে ফুসফুসজনিত যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নাট্যকার ও অভিনেতা মলিয়েরের আজ ৩৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। মলিয়ের এর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মলিয়ের ১৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম জ্যঁ বাপ্টিস্ট পোকেলিন। সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম ও কলেজ দে ক্লেরমন্ট- এর মতো নামকরা পড়াশোনা করার সুবাদে থিয়েটারে যোগ দেয়া তার জন্য বেশ সহজ হয়েছিল। ভ্রামমাণ অভিনেতা হিসেবে তের বছরের অভিজ্ঞতা তার লেখার হাস্যরসাত্বক উপাদানকে উন্নত করতে সাহায্য করেছিল। যেখানে তিনি ইতালীয় ঘরানার কমেডিয়া দেল'আর্টে এর উপাদানের সাথে ফরাসী পরিমার্জিত হাস্য-রসের সংমিশ্রণ ঘটান। ভ্রাম্যমাণ অভিনেতা হিসেবে ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা তার লেখার হাস্যরসাত্মক উপাদানকে উন্নত করতে সাহায্য করেছিল। ওরলিয়েন্স এর ডিউক, ১ম ফিলিপ -যিনি ছিলেন রাজা চতুর্দশ লুইসের ভাই- এর মতো কয়েকজন প্রভাবশালী অভিজাতের পৃষ্ঠপোষকতায়, মলিয়ের লুভ্র্ -এ রাজার সম্মুখে একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে সক্ষম হন। পিয়েরে কর্ণেলী- এর একটি ক্লাসিক নাটক ও তার নিজের লেখা প্রহসন ল্য ডক্টর আম্যোরাক্স মঞ্চস্থ করার মধ্য দিয়ে মলিয়ের লুভ্র্ এর নিকটেই পেটিট ব্যোর্বন নামক প্রশস্থ কক্ষ নাটক প্রদর্শনের কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পান। পরবর্তীকালে তিনি প্ল্যাইস রয়্যাল ব্যবহারের সুযোগ পান। উভয় মঞ্চেই তার নাটকগুলো সাফল্য লাভ করে, যার মধ্যে ল্য প্রেসিউস রিডিকুলেস, ল্য এক্ল্ দেস্ মারিস, ল্য এক্ল্ দেস্ ফেমেস্ উল্লেখযোগ্য।
(সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় ‘কঞ্জুস’ নাটকের একটি দৃশ্য)
এ দেশের মঞ্চে দর্শকদের কাছে মলিয়েরের হাসির নাটক অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর মধ্যে অন্যতম 'কঞ্জুস' ও 'পেজগী'। অতি কৃপণ এক মানুষের যাপিত জীবন অত্যন্ত হাস্যরসাত্মকরূপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কঞ্জুস নাটকের মধ্য দিয়ে। ফরাসি নাটকের মূল পটভূমি ঠিক রেখে বাংলাদেশের পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বৈচিত্রপূর্ণ জীবন-সংস্কৃতি রূপায়িত হয়েছে কঞ্জুসের মঞ্চায়নে। নাটকের কুশীলবদের মুখে উর্দু-বাংলার মিলিত ভাষারূপ এ কমেডি নাটকের পূর্ণতা দিতে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশের সমসাময়িক সামাজিক দৈন্যতা ও স্খলনের নানা প্রসঙ্গও যুক্ত হয়েছে কঞ্জুসের সংলাপের মাধ্যমে।
(সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায়‘পেজগী’ নাটকের একটি দৃশ্য)
মলিয়েরের পেজগী নাটকে এক অশিক্ষিত কাঠমিস্ত্রির কবিরাজ হয়ে ওঠা এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের এক মেয়ের ভুল চিকিৎসার মধ্য দিয়ে নাটকের কাহিনি এগোতে থাকে। ভুল চিকিৎসা করেও চালাকির মাধ্যমে কবিরাজ বহুবার বেঁচে যায়। তবে শেষ রক্ষা হয় না। তাকে ধরা পড়তে হয়। কবিরাজের চালাকি ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে নাটকের সমাপ্তি ঘটে। নাটকটির মাধ্যমে নাট্যকার মূলত অশিক্ষা যে কী ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন।
(অতি সাধারণ চিকিৎসক' নাটকের একটি দৃশ্য)
মলিয়ের এর প্রহসন Li medicin Volant , যা টিমোথি মোনি’র ইংরেজী অনুবাদর্ Flaying Doctor অবলম্বনে রচিত আরও একটি উল্লেখযোগ্য নাটক ‘অতি সাধারণ চিকিৎসক’। মধ্যবিত্ত পরিবারের এক লোভী পিতা তার একমাত্র কন্যাকে তার মতের বিপরীতে শঠ সন্দেহজনক এক উকিলের ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেলে কিছু না বুঝেই। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে তরুণীটি তাদের বিশ্বস্ত ভৃত্য এবং তরুনটি তার বিশ্বস্ত ড্রাইভারের সহায়তা চায়। বুদ্ধিমান ড্রাইভার বাড়ীর ভৃত্যের সহায়তায় ডাক্তার সেজে নিজের উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে অর্ধশিক্ষিত গোঁড়ার ব্যক্তিটিকে বোকা বানায় এবং পরবর্তীতে তরুণ তরুণী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করে। তাদের স্বপ্ন সার্থক হয়। মলিয়ের “অতি সাধারণ চিকিৎসক” এর এই হচ্ছে সাদামাটা গল্প। এই নাটকের মাধ্যমে মলিয়ের তথাকথিত মধ্যবিত্তের বুর্জোয়া মানসিকতা ও দূর্বলতাকে হাস্যরসাত্মকভাবে উপস্থাপন করেছেন। মানবিক চিরন্তর সত্যকে খুঁজে পেতে অসংগতিকে তির্যকভাবে খোঁটা দিয়েছেন।
নাটকের কাজে অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে মলিয়েরের স্বাস্থ্য দূর্বল হতে শুরু করে, ফলশ্রুতিতে ১৬৬৭ সালে তিনি বাধ্য হন মঞ্চ থেকে সাময়িক অবসর নিতে। দীর্ঘ বিরতির পরে ১৬৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ফুসফুসজনিত যক্ষ্মায় আক্রান্ত অবস্থাতেই তার জীবনের শেষ নাটক ল্য মালাদে ইমাজিনারে তে অভিনয় করেন মলিয়ের। আর্গন নামক স্বাস্থ্য আতঙ্কিত রোগীর ভূমিকায় অভিনয়রত অবস্থাতেই উপর্যুপরি কাশি ও রক্তস্রাবের শিকার হন তিনি। নাটকটির অভিনয় শেষ করে মঞ্চেই ঢলে পড়েন এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন মলিয়ের। মৃত্যুৃকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫১ বছর। আজ এই নাট্যকারের ৩৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ফরাসি নাট্যকার, অভিনেতা, পশ্চিমা সাহিত্যের সেরা ব্যঙ্গ লেখকদের অন্যতম মলিয়েরকে তার মৃত্যুদিনে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১২
এনামুল রেজা বলেছেন: মলিয়েরের কঞ্জুস হয়ে গেছে এক কিংবদন্তি।
এই মহান নাট্যকারের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শুভেচ্ছা নুরু ভাই।
৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
মহান অতন্দ্র বলেছেন: প্রিয়তে নিচ্ছি । +++
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৯
কালের সময় বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই