নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের প্রখ্যাত গজলশিল্পী, গজল সম্রাট জগজিৎ সিং এর ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫



বিশিষ্ট ভারতীয় সংগীত পরিচালক, সুরস্রষ্টা ও গজল গায়ক জগজিৎ সিং। যার সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বময়। উপমহাদেশের প্রখ্যাত গজলশিল্পী জগজিৎ সিং যিনি "গজল-সম্রাট" নামেই বহুল পরিচিত। গজলে নিপুণতার জন্যে শ্রোতারা তাকে 'গজল সম্রাট' নামে অভিহিত করতেন। তার স্ত্রী চিত্রাকে সঙ্গে নিয়ে জগজিৎ সিং ভারতে গজলের পুনর্জাগরণ সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করা হয়। গজল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি জটিল ধারা। সিং গজলের সঙ্গে "গীত" ধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে এই ধারাটিকে সরল করে তোলেন। এরই ফলে গজল পুনরায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাণিজ্যিক দিক থেকেও তিনি ছিলেন একজন সফল গজল শিল্পী। প্রায় পাঁচ-দশকব্যাপী সংগীতজীবনে তিনি ৮০টি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। মৃত্যুর আগে বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার কণ্ঠে গাওয়া বেদনা মধুর হয়ে যায়, নদীতে তুফান এলে কূল ভেঙে যায়, চোখে চোখ রেখে আমি সুরা পান করিনি, বুঝিনি তো আমি পৃথিবীতে ভালবাসা সবচেয়ে দামি, তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে- জনপ্রিয় রোমান্টিক ধাঁচের বাংলা গানগুলো গেয়ে এ দেশের শ্রোতাদেরও মুগ্ধ করেছেন গজলসম্রাট। ১৯৪১ সালের আজকের দিনে তিনি ব্রিটিশ ভারতের বিকানীর রাজ্যের শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ গজল সম্রাটের ৭৩তম জন্মদিন। জন্মদিনে গজল সম্রাটকে ফুলেল শুভেচ্ছা।



জগজিৎ সিং ১৯৪১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বিকানীর রাজ্য শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মগত নাম জগমোহন সিং। বাবা অমর সিং এবং মা বচন কাউরের ১১ সন্তানের মধ্যে জগজিৎ ছিলেন তৃতীয়। তিনি শ্রী গঙ্গানগরের খালসা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন ডিগ্রী অর্জন করে সরকারী মহাবিদ্যালয়, শ্রী গঙ্গানগর অধ্যয়ন করেন এবং কলা বিভাগে ডিএভি কলেজ, জলন্ধর থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। অতঃপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জগজিৎ সিং সঙ্গীতের সাথে যুক্ত ছিলেন শৈশবকাল থেকেই। গঙ্গানগরের পণ্ডিত চাগনলাল শর্ম্মা'র কাছে দু'বছর সঙ্গীতশাস্ত্রে শিক্ষালাভ করেন। এরপর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম ধারা - খেয়াল, ঠুমরী, ধ্রুপদ শিখেন উস্তাদ জামাল খানের 'সাইনিয়া ঘরানা বিদ্যালয়' থেকে। ১৯৬৫ সালে জগজিৎ গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মুম্বাইয়ে চলে যান। শুরুতেই তাকে বিরূপ পরিবেশ ও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। প্রস্তুতি-পর্বে নিজেকে যোগ্যতা প্রমাণ ও যাচাইয়ের মুখোমুখিও হতে হয়েছে অনেকবার। সেজন্যে প্রয়োজনে তাকে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে হয়েছে। এখানে তিনি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল ও পার্টিতে গান গাওয়া শুরু করেন।



(স্ত্রী চিত্রা সিং এর সাথে জগজিৎ সিং)

ভারতের আর এক জনপ্রিয় গজল গায়িকা চিত্রা সিং। ১৯৬৭ সালে বাঙ্গালী মেয়ে চিত্রা দত্তের সাথে পরিচিত হন জগজিৎ সিং। দু'বছর ভাব বিনিময়ের এক পর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ১৯৬৯-এর ডিসেম্বরে জগজিৎ সিংকে বিয়ে করেন চিত্রা দত্ত। বিয়ের পর চিত্রা দত্তের নতুন পরিচয় হয় চিত্রা সিং নামে। চিত্রার আগের ঘরের মেয়ে মনিকাকে নিয়ে ওয়াডরাউন রোডের ছোট্ট এক রুমের একটি বাড়িতে সংসার শুরু হয় গজল দুনিয়ার জনপ্রিয়তম জুটি জগজিৎ-চিত্রা সিংয়ের। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাঁরা গানের ভুবনে নিজেদেরকে নতুনভাবে সন্নিবেশ ঘটান এবং গজল গীতসহ ভারতীয় সঙ্গীত জগতে নতুন এক মাত্রা এনে দেন। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে জগজিৎ এবং চিত্রা সিং ভারতীয় সংগীত জগতে প্রায় একই সঙ্গে খ্যাতনামা হয়ে ওঠেন। তাঁদের দুজনকে আধুনিক গজল সংগীতের পথপ্রদর্শক মনে করা হয়। ভারতের ফিল্মি গানের ধারার বাইরে থেকেও তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। ১৯৮২ সালে অর্থ ও সাথ সাথ ছবিতে ব্যবহৃত তাঁদের গাওয়া গজলের সংকলন এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়; এটি ছিল তাঁদের সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবাম। জগজিৎ ও চিত্রা সিং প্রথম ভারতীয় সুরস্রষ্টা যিনি ডিজিটাল মাল্টি-ট্র্যাক রেকর্ডিং পদ্ধতিতে গান রেকর্ড করেন। ১৯৮৭ সালে এই পদ্ধতিতে রেকর্ড করা তাঁদের প্রথম অ্যালবামটি ছিল বিয়ন্ড টাইম।



(স্ত্রী চিত্রা সিং, পুত্র বিবেক এর সাথে জগজিৎ সিং)

তবে সাফল্যের শিখরে আরোহণের মাহেন্দ্রক্ষণে সিং দম্পতির জীবনের চরম শোকাবহ ঘটনাটি ঘটে। ১৯৯০ এর ২৮ জুলাই তাদের একমাত্র সন্তান বিবেক (২১) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ ঘটনা অনেকটাই স্থবির করে দেয় তাদের। এর ধারাবাহিকতায় চিত্রা সিং গানের জগতকে বিদায় জানান অর্থাৎ প্রকাশ্যে গান গাওয়া ত্যাগ করেন। তবে তার আগে পুত্রের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত তাদের শেষ অ্যালবামটির (সামওয়ান সামহোয়ার) কাজ তারা শেষ করে নেন। লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ১৯৯১ সালে জগজিৎ সিং প্রকাশ করেন সাজদা অ্যালবামটি। তিনি পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু, বাংলা, গুজরাটি, সিন্ধি ও নেপালি ভাষাতেও গান গেয়েছিলেন। প্রেম গীত (১৯৮১), অর্থ ও সাথ সাথ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে এবং টিভিসিরিয়াল মির্জা গালিব (১৯৮৮) ও কহকশান (১৯৯১)-এ গজল গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান। তাঁর নয়ি দিশা (১৯৯৯) ও সমবেদনা (২০০২) ছিল ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশিষ্ট হিন্দি কবি অটলবিহারী বাজপেয়ীর লেখা গানের সংকলন। ২০০৩ সালে সংগীত ও সংস্কৃতি জগতে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বে-সামরিক পুরস্কার 'পদ্মভূষণ' খেতাব দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এছাড়াও ২০০৬ সালে শিক্ষকদের উদ্দীপনা পুরস্কারে ভূষিত হন। চার দশক ধরে সঙ্গীত ভুবনে তিনি অনেক আধুনিক, চলচ্চিত্রের নেপথ্য শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি গজল গায়ক হিসেবেই সমধিক পরিচিত।



গজল শিল্পীর বাইরে জগজিৎ সিং ছিলেন একজন, সমাজকর্মী ও শিল্পোদ্যোগী। জগজিৎ সিং ও চিত্রা সিং দম্পত্তি তাদের সমূদয় আয়ের বিরাট অংশ ভারতে নিয়োজিত বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার তহবিলে প্রদান করতেন। রবিশঙ্কর ও অন্যান্য সংগীতশিল্পী ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে তিনি ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। শাস্ত্রীয় ও লোকশিল্পীদের তিনি নানাভাবে সাহায্য করতেন। মুম্বইয়ের সেন্ট মেরি স্কুলের লাইব্রেরি নির্মাণ, বম্বে হসপিটাল গঠন এবং ক্রাই, সেভ দ্য চিলড্রেন ও আলমা প্রভৃতি সংগঠনের কাজকর্মেও তিনি প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেন। উল্লেখ্য ২০০৭ সালের ১২ মে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ঝর্ণা ধারায় সিক্ত করেন জগজিৎ সিং। গজল সন্ধ্যায় বিজ্ঞাপনী সংস্থা ক্রিয়েটার্সের আমন্ত্রণে সফর মহাব্যবস্থাপক অভিনব কুমার উপাধ্যায়-সহ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ও তাঁর গুরুদেব দীপক কুমার, শম্ভুলাল পণ্ডিত, শেখ জাবেদ মমতাজ আহমেদ, কুলদীপ বাবু, অনন্তাবাল দেশি, অতুল শান্তাল রেনিঙ্গা, অভিলাষ ফুকান ও দেবেন্দর রাজ ভাটকে নিয়ে আসেন জগজিৎ। উল্লেখ্য, এর আগে তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন ১৯৯৯ সালে।



বয়সজনিত কারণে জগজিৎ সিং প্রায়ই হৃদরোগের চিকিৎসা নিতেন। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপেরও সমস্যা ছিল তাঁর। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত গুরুতর সমস্যায় তাঁকে ভারতের মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। ১০ অক্টোবর, ২০১১ইং, সোমবার, সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে ঐ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭০ বছর বয়সে কিংবদন্তি এ গজলশিল্পী পরলোকে চলে যান। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইং গজল সম্রাটের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে গজল সম্রাটকে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

সোহানী বলেছেন: অসাধারন গায়িকী তাঁর। মন্ত্র মুগ্ধের মতো এখনো শুনি তাঁর গান। আর চিত্রার গান এখনো মিস্ করি। জানি সহস্র শতাব্দিতে এমন একজন প্রতিভা জন্মে।

লিখায় +++++++++

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সোহানী আপু অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
গজল সম্রাটকে জন্মদিনে
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

শাহ আজিজ বলেছেন: জগজিৎ সিং এমন সময়ে গজলের এক ভিন্ন ধারা নিয়ে এলেন যে মেহদি হাসানের একক সাম্রাজ্য নড়ে উঠল । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনলাম আর বললাম গজল এমন হয়?? ৮০র দশকের প্রথম ডিক। ভারতীয় নতুন ছাত্ররা সাথে নিয়ে এলো জগজিতের লেটেসট । জগজিতের মৃত্যুর খবর শুনে কেদে ফেললাম ঝরঝর করে । ওর একটা গান সেঁটে দিলাম এখানে----

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আজিজ ভা্ই
অনেক দিন পরে আপনার
মন্তব্য পেয়ে। গজল সম্রাটের
গান সংযোজন করার জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.