নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আবু সাইয়ীদ মাহমুদ সংক্ষেপে এ, এস, মাহমুদ। সব দিক থেকে তিনি ছিলেন বিরল বিশ্বাসের অনন্যসাধারণ একজন মানুষ। তাঁকে মনে করা হতো বাংলাদেশের 'ফাদার অব মিডিয়া'। সাহিত্য, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি জগতের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন 'আমাদের আপন একজন'। সংস্কৃতি অঙ্গনের এমন কোন মাধ্যম নেই যে মাধ্যমে তাঁর পদচারনা ছিলো না। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রেরিয়াল টেলিভিশন "একুশে টেলিভিশনের" প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। একুশে টেলিভিশন ছিলো তাঁর স্বপ্ন তৈরির কারখানা। এছাড়াও তিনি বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০১ সালে একুশে টেলিভিশন যখন হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সৃষ্টিশীল এই মানুষটি দারুন মনোকষ্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। ইংল্যাণ্ডে থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরন করেন এবং শেষ ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। আজ আবু সাইয়ীদ মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
আবু সাইয়ীদ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ১০ জুলাই সিলেটের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার ডাক নাম ছিলো ননী। তিনি ছিলেন একটু চঞ্চল প্রকৃতির প্রাণবন্ত, হাসিখুশি মানুষ। বাংলা সাহিত্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তার মামা। আবু সাইয়ীদ মাহমুদ নিজের দেশকে ভালোবাসতেন এবং বাংলাদেশের শক্তি ও স্বাধীনতায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বিচ্ছিন্নতা, অসাম্য ও হতাশায় নিমজ্জিত দেশটিকে বদলে দেওয়ার, নতুন দিন আনার অমিত শক্তি ও সম্ভাবনা আছে এ দেশের মানুষের। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রেরিয়াল টেলিভিশন "একুশে টেলিভিশনের" প্রতিষ্ঠাতা আবু সাইয়ীদ মাহমুদের বর্ণাঢ্যময় জীবনে বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। পরে তিনি যোগ দেন ইস্ট পাকিস্তান অয়েল কোম্পানিতে। কোম্পানিটি পরিচালনা করত পশ্চিম পাকিস্তানিরা, তাদের জাত্যভিমান সহ্য করা এ এস মাহমুদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে অনেকের মতো তিনিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তেল সরবরাহের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যখন লক্ষ করেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক লোকবল মোতায়েন ও প্রচুর পরিমাণ লজিস্টিকস আনা হচ্ছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসবকিছু করছিল ২৫ মার্চের রাতে নারকীয় সামরিক হামলা পরিচালনার প্রস্তুতি হিসেবে। তিনি তখন ফতুল্লা তেল ডিপোকে সামরিক ট্যাংকারগুলোকে তেল না দিতে নির্দেশ দেন । পরবর্তীতে ডিপো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তিনি মার্চের শেষে সপরিবারে লন্ডন চলে যান।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ফিরে এসে ১৯৯১ সালের ১৪ জানুয়ারি আবু সাইয়ীদ মাহমুদ প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টার। তিনি ছিলেন "ডেইলী স্টার" পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। অল্পদিনের মধ্যেই পত্রিকাটি সংবাদপত্র জগতে নতুন নজির সৃষ্টি করল, দেখাল নতুন দিগন্ত। এছাড়াও তিনি "ট্রান্সকম লিমিটেডের ডিরেক্টর, এবং দু'বার ঢাকা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী রেডিও "মেট্রো ওয়েভের" প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। প্রিন্ট মিডিয়া ছেড়ে এলেন 'ইলেকট্রনিক মিডিয়া'য়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের একজন অকৃত্রিম বন্ধু আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক ও মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিংকে নিয়ে এলেন ঢাকায়।তাঁদের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠল এক নতুন মুক্তধারার টেলিভিশন। ২০০৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর জন্ম নিল 'একুশে টেলিভিশন"।এস, এ মাহমুদ স্বপ্ন দেখার সাহস করেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন। একুশে টেলিভিশন" ছিল তাঁর স্বপ্ন, সেই স্বপ্নকে তিনি বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠল 'একুশে' অল্পদিনের মধ্যেই। বিশেষ করে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে আনল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একুশে টেলিভিশন ছিলো তাঁর স্বপ্ন তৈরির কারখানা। সন্তানের মত আগলে রেখেছিলেন তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে। চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস মাহমুদ একদম শুরু থেকেই একুশে টেলিভিশন গড়ে তোলার সব কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন: এর দর্শন, এর আধেয়, এর ভাবমূর্তি এবং দেশে একটা পরিবর্তন সূচিত করার কাজে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার। এস এ মাহমুদ ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িকতায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন; মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাগুলো তাই তাঁর মনে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল। এই মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন একুশে টেলিভিশনকে।
খবর, তথ্য, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো দিয়ে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) জয় করেছিল কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়। ইটিভি তাদের সামনে খুলে ধরেছিল পুরো পৃথিবী এবং বাংলাদেশের সব মানুষের মধ্যে তৈরি করেছিল যোগাযোগের সেতুবন্ধন। ইটিভির এই সাফল্যই শেষ পর্যন্ত ছিল তার পতনের কারণ। ইটিভির সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর দুই বছরের কিছু বেশি সময় পেরোলে আবির্ভাব ঘটে তাঁদের, যাঁরা ইটিভি বন্ধ করে দেওয়ার সংকল্প করেন। ২০০১ সালে সরকার-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খড়্গহস্ত নেমে এল, কেস ঠুকল 'একুশে'র নামে। বন্ধ করে দেওয়া হলো একুশে টেলিভিশন। দিনটা ছিল ২৯ আগস্ট ২০০২। হুমকি-ধমকির কারণে নিজের প্রাণ বাঁচাতে এ এস মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশ ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প রইল না। হঠাৎ করে একুশে টেলিভিশনকে বন্ধ করে দিলে সৃষ্টিশীল এই মানুষটি দারুন মনোকষ্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। সাইমন ড্রিং হলেন বিতাড়িত। কিছুটা অভিমান, দুঃখে দেশে আর ফিরলেন না তিনি।ইংল্যান্ডে নির্বাসিত এ এস মাহমুদ ২০০৩ সালের ২২ জানুয়ারি মৃত্যুবরন করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এসএ মাহমুদ আজ আর আমাদের মাঝে নেই। আছে তাঁর সৃষ্টি ডেইলি স্টার, একুশে টেলিভিশন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। মৃত্যু দিনে তার বন্ধুবান্ধব ও সহযোগীরা তাঁকে স্মরণ করবেন তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বহুমুখী প্রতিভার জন্য। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রেরিয়াল টেলিভিশন "একুশে টেলিভিশনের" প্রতিষ্ঠাতা "ফাদার অব মিডিয়া" আবু সাইয়ীদ মাহমুদের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ নিস্পাপ একজন
আপনার নিস্পাম মন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা জানবেন।
২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
নাজির বলেছেন: আবু সাইয়ীদ মাহমুদ উনার কর্মের দ্বারা বেঁচে থাকবেন আজীবন। ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই। আপনার মাধ্যমে একজন গুণির কথা জানতে পারলাম।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ নাজির ভাই
গুণীজনদের সামাদর না করলে সে দেশে
গুণীজনের জন্ম হয়না। ধন্যবাদ গুণী মানুষকে
শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫
নিস্পাপ একজন বলেছেন: ভালো পোষ্ট। অনেক কিছু জানা গেল।