নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
(কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার)
-ঃবুঝিবে সে কিসেঃ-
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।
যতদিন ভবে, না হবে না হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।
এই জনপ্রিয় কবিতার কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ছিলেন একজন নিভৃতচারী মানুষ। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষক ছিলেন। সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা- এই তিন ক্ষেত্রেই তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের খ্যাতি মূলত নীতিকবি হিসেবে। তাঁর মতো আর কোনো কবি শুধু নীতিকবিতা লিখে এতখানি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি। বলতে গেলে এক্ষেত্রে তাঁর জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। উনিশ শতকের শেষ দশকে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সদ্ভাবশতক ব্যাপক সমাদৃত ছিল। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ছিলেন দেশ প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার কবিতায় একদিকে নৈতিক মূল্যবোধ অন্যদিকে দেশ প্রেমের চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে। তাঁর লেখনির প্রধান বিষয়বস্তু ছিল দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম। তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্য গ্রন্থ "সদ্ভাবশতক" ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালে। বইটির অধিকাংশ কবিতা নীতিমূলক। নীতি ও উপদেশমুলক এ কাব্যগ্রন্থ পারস্য কবি হাফিজ ও শেখ সাদীর কবিতার কাব্যাদর্শে রচিত। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সূচনা পর্বে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ভূমিকা গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি ঢাকার প্রথম সাহিত্যপত্র মাসিক কবিতা কুসুমাবলী বা কুসুমাঞ্জলি, মাসিক মনোরঞ্জিকা, সাপ্তাহিক বিজ্ঞাপনী এবং সাপ্তাহিক ঢাকাপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার কাব্য গ্রন্থ ‘সদ্ভাবশতক’ শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। তার এই অসামান্যতাকে আজ আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। নীতি কাব্যের কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের আজ ১০৮তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ১৯০৭ সালের আজকের দিনে মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
স্বনামধন্য বাঙালি কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ১৮৩৪ সালের ১০ জুন খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মাণিক্যচন্দ্র এবং মায়ের নাম ব্রহ্মময়ী। ছয় মাস বয়সে পিতৃহীন হন তিনি। মাতামহ ছিলেন বরিশালের কীর্তিপাশার জমিদার। সেনহাটীতে টোলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। বরিশালে পড়াশুনা শেষ করে তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের সহায়তায় ঢাকা নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকে এন্ট্রাস (বর্তমান এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ল’ পরীক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু পাস করতে পারেননি। কিছুদিন ফার্সি শিখে পালিয়ে যান কলকাতায়। ১৮৫৭ সালে বিয়ে করেন এবং জীবিকার তাগিদে ফেরেন ঢাকায়। বরিশালের কীর্তিপাশাস্থ ‘বাঙলা বিদ্যালয়ে’ শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তাঁর চাকরি জীবন শুরু। ১৮৬০ সালে ঢাকায় ‘বাঙ্গলা যন্ত্র’ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায় মাসিক ‘মনোরঞ্জিকা’ ও ‘কবিতা কুসুমাবলী’ প্রকাশিত হয়৷
১৮৬১ সালে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায় ঢাকা থেকে ঢাকার প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক ‘ঢাকা প্রকাশ’ প্রকাশিত হয়৷ পত্রিকাটি প্রতি বৃহস্পতিবার বাবুবাজারের ‘বাঙ্গলা যন্ত্র’ থেকে আট পৃষ্টার ২৫০ কপি প্রকাশিত হতো। কৃষ্ণচন্দ্র স্কুল ছেড়ে ২৫ টাকা বেতনে চাকরি নেন 'ঢাকা প্রকাশে'। তিনি ‘ঢাকাপ্রকাশ’ পত্রিকায় চাকরি নেবার পর নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ইংরেজি শেখার চেষ্টা করেন। ১৮৬৫ সালে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ‘ঢাকা প্রকাশ’ ছেড়ে ‘বিজ্ঞাপনী’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় যোগ দেন। দেড় বছর তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর পুনরায় ‘ঢাকা প্রকাশ’ সম্পাদনায় ফিরে আসেন। ১৯৫৯ সালের ১২ এপ্রিলের সংখ্যাটি ছিল ‘ঢাকা প্রকাশ’-এর শেষ সংখ্যা; যেটি সম্পাদনা করেছিলেন আবদুর রশিদ খান৷ শেষ সংখ্যাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে৷ ষাটের দশকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘ঢাকা প্রকাশ’-এর পুরাতন সংখ্যাগুলোকে সমকালীন জীবন ও জনগণের অসামান্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যা শুধু বর্তমানের নয় ভবিষ্যতের গবেষক ও পাঠকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। ১৮৬০ সাল থেকে যশোর জেলা স্কুলে যোগদান করার পূর্ব পর্যন্ত (১৮৭৪) অর্থাৎ, ১৪ বছর কবি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। এ সময় তাঁকে অনেক প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। যশোর জেলা স্কুলে চাকরিকালীন পত্রিকা প্রকাশের নেশা তাঁর যায়নি। তিনি এখানে বসে ‘দ্বৈভাষিকী’ নামে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।এছাড়াও তিনি ঈশ্বরগুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার লেখক ছিলেন।
(কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ও দীননাথ সেন)
১৮৭০ সালে আবারও ব্রাহ্ম সমাজের 'ব্রাহ্ম স্কুলে' চাকরি নেন কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারে। এসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এক পর্যায়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হন৷ ১৮৭৪ সালে সুস্থ হয়ে পুনরায় তিনি যশোর জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন৷ ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে চাকরি করেন৷ সেখান থেকে ১৮৮৬ সালে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় মাসিক ‘বৈভাষিকী’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। এজন্য তিনি একজন বিশিষ্ট কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন৷ কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। যার মধ্যে সদ্ভাবশতক, (১৮৬১) মোহভোগ (১৮৭১), জীবনীগ্রন্থ রা-সের ইতিবৃত্ত (১৮৬৮), প্রবন্ধগ্রন্থ কৈবল্যতত্ত্ব (১৮৮৩) উল্লেখযোগ্য। তবে সদ্ভাবশতক গ্রন্থ ছাড়া অন্য কোনো গ্রন্থ জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি। এ কাব্যগ্রন্থের কবিতা
নীতিগর্ভ ও হৃদয়গ্রাহী বলে তা ব্যাপকভাবে পাঠ করা হতো। সদ্ভাবশতকের কবিতা নীতিকথায় পরিপূর্ণ বলে শিক্ষার্থীদের হৃদয়কে প্রভাবিত করে এবং জীবনকে কল্যাণের পথে এগিয়ে দেয়। উনিশ শতকের শেষ দশকে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সদ্ভাবশতক ব্যাপক সমাদৃত ছিল।সদ্ভাবশতক’ ও ‘মোহভোগ’ একসময় ছাত্রদের নীতিশিক্ষা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হত। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় নাটক ‘রাবণবধ’। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি যেমন ছিলেন সৎ, তেমনি ছিলেন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বারবার পরিবর্তন হয়েছে। সনাতন ধর্ম থেকে ব্রাহ্মধর্ম, ব্রাহ্মধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধমর্, সবশেষে আবার সনাতন ধর্মে কবির আস্থা ফিরে আসতে দেখা যায়। পরিবেশ পরিস্থিতিই তাঁর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
বইয়ের তাক থেকে কেন যেন প্রিয় কবিতার বইগুলোই হারিয়ে যায় বারবার ! পাঠকদের জন্য তাই স্মরণে থাকা প্রিয় কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জনপ্রিয় আরো দু'টি কবিতাঃ
-ঃদুখের তুলনাঃ-
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে !
দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,
অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার,
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন
নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ ?
এবং
-ঃঅপব্যয়ের ফলঃ-
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
যে জন দিবসে মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি,
আশু গৃহে তার দখিবে না আর
নিশীথে প্রদীপ ভাতি।
তার কর্মময় জীবনের অবসর নেয়ার পর আবারও তিনি ফিরে আসেন, খুলনার ঐতিহ্যবাহী সেনহাটী গ্রামে। এখানে আসার পর তিনি ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৩১৩ বঙ্গাব্দের ২২শে পৌষ, ১৯০৭ সালে জানুয়ারীতে কবি জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সাতদিন পর অর্থাৎ ২৯শে পৌষ মোতাবেক ১৯০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি সকালে মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। আজ তাঁর ১০৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে নীতি কাব্যের কবির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ,
সাথে থাকবেন আগামীতে
সেই প্রত্যাশায়.................
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৪
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: চমৎকার কবিতা আমার এখনও সব মুখস্ত
৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
ভাম_বেড়াল বলেছেন: মালুরা আর যাই হোক, স্বদেশপ্রেমী নয়।
৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৫
ইফতেখার রাজু বলেছেন: অসম্ভব জীবনমুখী এ নীতি কবি দার্শনিকের জন্য শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত হয়ে আসে। বিদ্যালয় জীবনে অসংখ্যবার তার রচিত কবিতার সারাংশ সারমর্ম পড়েছি, যদিও সেগুলোর মর্ম বুঝেছি অনেক পরে। চলে গেলেও তিনি রয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্যের জীবন জগতে। তার লেখনি বাংলা ভাষায়কে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। মানুষটির জন্য অনেক ভালোবাসা রইলো। লেখককে ধন্যবাদ, কবির অমরত্ব আমাদের আরেকবার মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।
৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯
জুন বলেছেন: অসাধারন একজন কবি আর তেমনি তার কাব্য প্রতিভা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৬
সাজেদ বলেছেন: পড়ে ভাল লাগলো।