নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সব্যসাচী ব্যক্তিত্ব বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৫



ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ এবং আইনজীবী বিচার পতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বহু গুণের অধিকারী বিচারপতি হাবিবুর রহমান তাঁর মেধা ও পাণ্ডিত্য দিয়ে জাতির ‘অভিভাবক-স্বরূপ’ মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, বিচারক ও লেখক। সারাজীবন তিনি সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাস্তবায়নে একজন ভাষা যোদ্ধার ভূমিকা পালন করে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবন শুরু করলেও পরে আইন পেশায় চলে যান। ১৯৭৬ সালে উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে যোগ দেন, আর ১৯৯৫ সালে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন। ৭০টির বেশি বইয়ের লেখক বিচারপতি হাবিবুর রহমান ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০০৭ সালে একুশে পদক অর্জন করেন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি অসংখ্য খেতাব ও সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছরের আজকের দিনে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। সব্যসাচী ব্যক্তিত্ব বিচার পতি হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।



মননশীল লেখক, ভাষাসৈনিক, আইনজীবী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জংগীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে শিক্ষিত ও রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারে পিতা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন একজন আইনজীবী। হাবিবুর রহমানের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয় বাংলা, আরবি, উর্দু ও ইংরেজি এই চার ভাষা নিয়ে। ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে আই.এ. ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে আই.এ. পাশ করে চলে আসেন রাজশাহী। সে বছরের শেষ দিকে রাজশাহী কলেজে বি.এ. ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে বি.এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। স্নাতক পাশ করে ভর্তি হন এম.এ. শ্রেণীতে। উল্লেখ্য ১৯৪৯-৫১ সালের এম.এ. ক্লাশে প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাস চর্চা শুরু হয়। এরপরই ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে কার অন্তরীন হন হাবিবুর রহমান। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি রাজশাহী চলে যান। কয়েক সপ্তাহ পরে ঢাকায় ফিরে এসে আইনের ক্লাশ করতে শুরু করেন। লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তাঁর বন্ধুরা ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে তাঁরও প্রভাব ছিল। ১৯৫১ সালে তাঁর বন্ধু-বান্ধবরা ফজলুল হক হল ইউনিয়নের নির্বাচনে জয়ী হন। তিনিও নির্বাচনে অংশ নিয়ে সলিমুল্লাহ হলের সহ- সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫১ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এলএলবি পাশ করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে হাবিবুর রহমান ইতিহাস বৃত্তি নিয়ে উরস্টার কলেজ অক্সফোর্ডে যান, 'আধুনিক-ইতিহাসে' বিষয়ে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে তিনি উরস্টার কলেজ, অক্সফোর্ড হতে আধুনিক ইতিহাসে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। এর আগেই ১৯৫৯ সালে লন্ডনের লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার-এট-ল ডিগ্রি লাভ করে তিনি ইংলিশ বারে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন।



ছাত্রজীবন শেষ করেই তিনি অধ্যাপক হালিমের আমন্ত্রণে ১৯৫২ সালের ১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবন শুরু করলেও পরে আইন পেশায় চলে যান। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি সহকারী অ্যাডভোকেট জেনারেল, ১৯৭২ সালে হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন। হাবিবুর রহমান ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৯৫ সালে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে তিনি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সেই সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তাল ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সব ধরনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে বিচারপতি হাবিবুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন এবং সুচারুভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় বিচারপতি হাবিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন দেশের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম ভরসাস্থল। তাঁর নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় সফলভাবে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।



আইন বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনেও পদচারণা রয়েছে হাবিবুর রহমানের। পবিত্র কোরআন শরিফের কাব্যময় অনুবাদ করেছিলেন তিনি। কোরআন শরিফের বিষয়ভিত্তিক উদ্ধৃতি নিয়ে লেখেন কোরানসূত্র। বাংলা ভাষার ওপর ছিল তাঁর অসাধারণ দখল, অভিধান প্রণয়নে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাঁর গবেষণার অন্যতম বিষয়। ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিভাষিক গ্রন্থ 'ডু নট বিল্ড এ কেজ ফর ম্যান' অর্থাত্‍ 'মানুষের জন্য খাঁচা বানিও না' । ইংরেজি থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন ছু জি ওয়ে। এছাড়া্ও তিনি দৈনিক জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন। বহু গুণের অধিকারী বিচারপতি হাবিবুর ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই রাত সাড়ে ১০টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। আজ তাঁর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। সব্যসাচী ব্যক্তিত্ব বিচার পতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.