নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা কথাসাহিত্যের সম্রাজ্ঞী ভারতীয় মহিলা ঔপন্যাসিক আশাপূর্ণা দেবীর ১০৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫


ঘর যাঁর পরিসীমা, বার যাঁর অজানা সীমাহীন ব্যাপ্তি তিনিই কথাসাহিত্যের সম্রাজ্ঞী আশাপূর্ণা দেবী। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তাঁর জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাঁকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন। তাঁর প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তাঁর একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। বাংলা কথাসাহি্ত্যের বিশিষ্ট ভারতীয় মহিলা ঔপন্যাসিক আশাপূর্ণা দেবীর জন্মদিন ১০৫তম আজ। ১৯০৯ সালের আজকের দিনে তিনি উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা কথাসাহি্ত্যের সম্রাজ্ঞী আশাপূর্ণা দেবীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা।

ভারতীয় ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ১৯০৯ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতাযর পটলডাঙায় মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস হুগলী জেরার বেগমপুর গ্রামে। তাঁর পিতা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত , মাতা সরলাসুন্দরী দেবী। বাবা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন কমর্শিয়াল আর্টিস্ট । সেযুগের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকাগুলিতে ছবি আঁকতেন তিঁনি। গুপ্ত-পরিবারের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার বেগমপুরে। যদিও আশাপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গে এই অঞ্চলটির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। তাঁর ছোটোবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতাতেই ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর পাঁচ পুত্রের একান্নবর্তী সংসারে। পরে হরেন্দ্রনাথ যখন তাঁর আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড) নিজস্ব বাসভবনে উঠে আসেন আশাপূর্ণার বয়স তখন সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু বাল্যের ওই কয়েকটি বছর তাঁর মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। প্রথাগত শিক্ষার সৌভাগ্য আশাপূর্ণার হয়নি ঠাকুরমার কঠোর অনুশাসনে। পরবর্তীজীবনে এক স্মৃতিচারণায় এই প্রসঙ্গে আশাপূর্ণা বলেছিলেন, “...ইস্কুলে পড়লেই যে মেয়েরা... বাচাল হয়ে উঠবে, এ তথ্য আর কেউ না জানুক আমাদের ঠাকুমা ভালোভাবেই জানতেন, এবং তাঁর মাতৃভক্ত পুত্রদের পক্ষে ওই জানার বিরুদ্ধে কিছু করার শক্তি ছিল না।” তবে এই প্রতিকূল পরিবেশেও মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে দাদাদের পড়া শুনে শুনে শিখে গিয়েছিলেন পড়তে। বর্ণপরিচয় আয়ত্ত করেছিলেন বিপরীত দিক থেকে। মা সরলাসুন্দরী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। সেই সাহিত্যপ্রীতি তিনি তাঁর কন্যাদের মধ্যেও সঞ্চারিত করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। বাড়িতে সেযুগের সকল প্রসিদ্ধ গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। এই অনুকূল পরিবেশে মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই পাঠ্য ও অপাঠ্য নির্বিশেষে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করে দেন আশাপূর্ণা। পরবর্তী কালে এই বাল্যকাল সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “হিসেব মতো আমার ছেলেবেলাটা কেটেছে, সংসার উর্ধ্বের একটি স্বর্গীয় জগতে। বই পড়াই ছিল দৈনিক জীবনের আসল কাজ।” মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯২৪সালে কালিদাশ গুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ধীরে ধীরে তাঁর জীবনের ধারা বদলে যায়। স্বামীর উৎসাহে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। তাঁর কলম দিয়ে একে একে বেরিয়ে আসে কালজয়ী সব উপন্যাস।

আশাপূর্ণা দেবীর রচনায় দেখা যায় সমাজের অন্তর-বাহিরের সূক্ষ অনুভূতির নিটোল বুনন। বুননদার আশাপূর্ণা দেবী শতবর্ষ অতিক্রম করেও জনপিয়তার শিকরেরই রয়ে গেছেন। কঠোর পারিবারিক অনুশাসন, অন্ধথ সামাজিক সংস্কারের বেড়া টপকে তিনি স্বশিক্ষতা হয়ে উঠেছিলেন একজন সত্যিকারে লেখিকা। একাত্তর বছরের সাহিত্য সাধনায় লিখেছেন ২৫টি উপন্যাস, ৬৭টি গল্পগ্রন্থ, তিন হাজারের বেশি ছোট গল্প আর ৬৭টি শিশু-কিশোরদের উপযোগী গল্প-উপন্যাস। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তাঁর জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাঁকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন। তাঁর প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তাঁর একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।

আশাপূর্ণাদেবীর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীঃ
প্রথম রচনাঃ বিবাহ, সাহিত্য জীবন : প্রথম পর্ব,পুত্রশোক, সাহিত্য জীবন : দ্বিতীয় পর্ব, সাহিত্য জীবন : তৃতীয় পর্ব, সাহিত্য জীবন : চতুর্থ পর্ব, সাহিত্য জীবন : শেষ পর্ব, প্রয়াণ। , প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা, বকুলকথা, নিলয়-নিবাস,দিব্যহাসিনীর দিনলিপি, সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক, চিত্রকল্প, দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে, লীলা চিরন্তন, চাবি বন্ধ সিন্দুক, অগ্নিপরীক্ষা, আর এক আশাপূর্ণা, এই তো সেদিন, অলয় আদিত্যের ইচ্ছাপত্র রহস্য, গজ উকিলের হত্যা রহস্য, ভূতুরে কুকুর, রাজকুমারের পোশাকে, মনের মুখ, মধ্যে সমুদ্র, যাচাই, ভুল ট্রেনে উঠে, নিমিত্তমাত্র, কখনো কাছে কখনো দূরে, নষ্টকোষ্ঠী, মজারু মামা, ষড়যন্ত্রের নায়ক, চশমা পাল্টে যায়, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কাঁটাপুকুর লেনের কমলা, নেপথ্য নায়িকা,জনম্ জনম্‌কে সাথী, লঘু ত্রিপদী, শৃঙ্খলিতা, সানগ্লাস, শুক্তিসাগর, সুখের চাবি, সুয়োরানীর সাধ, সুরভি স্বপ্ন, যার বদলে যা, বালির নিচে ঢেউ, বলয়গ্রাস, যোগবিয়োগ, নির্জন পৃথিবী, ছাড়পত্র, প্রথম লগ্ন, সমুদ্র নীল আকাশ নীল, উত্তরলিপি, তিনছন্দ, মুখররাত্রি, আলোর স্বাক্ষর, জীবন স্বাদ, আর এক ঝড়, নদী দিক হারা ইত্যাদি।

দেড় হাজার ছোটোগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার সহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার। ভারত সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপে ভূষিত করেন। ১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই গড়িয়ার কানুনগো পার্কে এই লেখিকার জীবনাবসান হয়।

কথা সাহিত্যের বুননদার আশাপূর্ণা দেবীর ১০৬তম জন্মদিন আজ। বাংলা কথাসাহিত্যের সম্রাজ্ঞী ভারতীয় মহিলা ঔপন্যাসিক আশাপূর্ণা দেবীর ১০৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.