নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এক নামে যার দেশব্যাপী পরিচিতি তিনি সকলের শ্রদ্ধেয় আতিকুল হক চৌধুরী। একটা সময় ছিল যখন সৃজনশীল নাটক মানেই আতিকুল হক চৌধুরীর নাটক। তারঁ নাটক সব সময়ই শৈল্পিক ও নান্দনিকতায় ভাস্বর। ৫০ বছরের সুদীর্ঘ নাট্যজীবনে তিনি অগণিত নাটক লিখে প্রযোজনা করেছেন, প্রযোজনা করেছেন অন্যের নাটকও। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, টলোস্টয়ের মতো নন্দিত লেখকদের বহু গল্প-উপন্যাসের স্বার্থক নাট্যরূপ দিয়ে তিনি দর্শক নন্দিত হয়েছেন। উপহার দিয়েছেন অনেক নতুন নাট্যকার, অনেক নতুন মুখ, যাঁরা বর্তমানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের আকাশে এক একটি উজ্জ্বল তারকা হিসেবে অবস্থান করছেন। তাঁর নিজের লেখা অনেক কালজয়ী নাটকের মধ্যে 'বাবার কলম কোথায়?', 'দূরবীন দিয়ে দেখুন', 'সার্কাস দেখুন', 'নীল নকশার সন্ধানে', 'নিঝুম দ্বীপের সন্ধানে', 'অন্বেষণ', 'জুলেখার ঘর', 'সভাপতির অভিভাষণ' 'জলাশয় কত দূর' মামার বালিশ কোথায়, উল্লেখযোগ্য। বিশিষ্ট এই নাট্যকার, পরিচালক, নাট্যশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরীর ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। নাট্যব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরীর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
আতিকুল হক চৌধুরী ১৯৩১ সালের ১৫ ডিসেম্বর বরিশালের বাটামাড়া সৈয়দ বাড়িতে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি বরিশাল জেলার প্রসিদ্ধ উলানীয়া জমিদার বাড়ি। তার পিতা সেরাজুল হক চৌধুরী, মা সৈয়দা লুৎফুন্নেসা (রওশন আরা ) বেগম। চার ভাইয়ের মধ্যে আতিকুল হক চৌধুরী সবার বড়। আতিকুল হক চৌধুরীর স্কুলজীবন কেটেছে বিভিন্ন স্থানে। বরিশালের সাহেবগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ স্কুল, গৌরনদী হাইস্কুল, ভোলা সরকারি স্কুল, বরিশাল জেলা স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন। বরিশালের বিএম কলেজে তার কলেজ জীবন কেটেছে । এরপর ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রী অর্জন করার পর ১৯৫৩ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল রেডিও পাকিস্তানের নাটক বিভাগের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে। তারপর পাকিস্তান টেলিভিশনে ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে উপ-মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বর্ণাঢ্য ও কর্মবহুল জীবনের ইতি টেনে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যত্বত্ত বিভাগে যোগদান করেন। এখানে তিনি দীর্ঘ ১০ বছর শিক্ষকতা করেন। এর পরে যোগদান করেন একুশে টেলিভিশনের 'পরিচালক অনুষ্ঠান' হিসেবে। সেখান থেকে নবারূন মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান ও সিইও পদে নিযুক্ত থাকার পর তিনি আবার একুশে টেলিভিশনের উপদেষ্টা পদে অধিষ্ঠিত হন।
খ্যাতিমান নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৭ই জুন মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর পরে তাঁকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আতিকুল হক চৌধুরী মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পযর্ন্ত একুশে টেলিভিশনের উপদেষ্ঠা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ কর্মবহুল জীবনে রেডিও ও টেলিভিশনে তিনি তিন শতাধিকের উপর নাটক পরিচালনা করেছেন। তাঁর হাত ধরেই আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনে শতাধিকের উপর নাট্যশিল্পীর আগমন ঘটে। যে কারনে তাকে বলা হয়ে থাকে, তারকা আবিস্কারের উজ্জল তারকা। আতিকুল হক চৌধুরীর হাত ধরে বেশ ক'জন গুণী অভিনয়শিল্পী টেলিভিশন পর্দায় পা রেখেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন_ আবদুল্লাহ আল মামুন, ফেরদৌসী মজুমদার, শবনম, আবুল হায়াত, হুমায়ুন ফরীদি, মিতা চৌধুরী, কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী, সুলতানা জামান, কেয়া চৌধুরী, শম্পা রেজা, ফাল্গুনী হামিদ, জিনাত বরকতউল্লাহ, নোবেল, সালমান শাহ, শংকর সাঁওজাল, আহমেদ রুবেল, মুনমুন আহমেদ, মানাম আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, নাদের চৌধুরী, টিসা, শামীম আরা নীপা, পিলু মমতাজ, খালেদ খান, শমী কায়সার, সালমান শাহ, নাতাশা হায়াতসহ অনেকেই। বিটিভিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি ৩০০টিরও বেশি কালজয়ী নাটক প্রযোজনা করেন। বাবার কলম কোথায়, দুরবীন দিয়ে দেখুন, নীল নকঁশার সন্ধানে, জুলেখার ঘর ইত্যাদী তাঁর লিখিত ও পরিচালিত জনপ্রিয় ও বিখ্যাত সব নাটক। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। যথাঃ শ্রেষ্ঠ নাট্য প্রযোজক হিসেবে তিনি ১৯৭৬ সাল লাভ করেন জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার। এছাড়া তিনি অর্জন করেছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থা পুরস্কার, সিকোয়েন্স পুরস্কার, শেরেবাংলা স্মৃতি পুরস্কার, স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি পুরস্কার, রংধনু পুরস্কার, অগ্রপথিক পুরস্কার, ঋষিজ পদক, নাট্যসভা পদক, লাইফ পুরস্কার, টেনাসিনাস পুরস্কার, যায়যায়দিন পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার, কথক সাংস্কৃতিক পুরস্কার, ঢাকা আর্টস কাউন্সিল পুরস্কার, অর্জন সাংস্কৃতিক পুরস্কার, আনন্দ থিয়েটার পুরস্কার, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, ঢাকা লায়ন্স পদকসহ আরো নানা পুরস্কার। তিনি নয়া দিল্লীর উন্নয়ন সংসদ কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।
শ্রেষ্ঠ নাট্য প্রযোজক হিসেবে তিনি ১৯৭৬ সাল লাভ করেন জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার। এছাড়া তিনি অর্জন করেছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থা পুরস্কার, সিকোয়েন্স পুরস্কার, শেরেবাংলা স্মৃতি পুরস্কার, স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি পুরস্কার, রংধনু পুরস্কার, অগ্রপথিক পুরস্কার, ঋষিজ পদক, নাট্যসভা পদক, লাইফ পুরস্কার, টেনাসিনাস পুরস্কার, যায়যায়দিন পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার, কথক সাংস্কৃতিক পুরস্কার, ঢাকা আর্টস কাউন্সিল পুরস্কার, অর্জন সাংস্কৃতিক পুরস্কার, আনন্দ থিয়েটার পুরস্কার, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, ঢাকা লায়ন্স পদকসহ আরো নানা পুরস্কার। তিনি নয়া দিল্লির বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। জনপ্রিয় এই নাট্যব্যক্তিত্বের আজ ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। সকলের শ্রদ্ধেয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরীর জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।
©somewhere in net ltd.