নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয় পারসীক কবি ওমর খৈয়াম। বহুমূখী প্রতিভার এই মনিষী ছিলেন একাধারে কবি, গণিতজ্ঞ, শিক্ষক, জ্যোতির্বিদ, চিকিৎসক, দার্শনিক, সুফী এবং চার লাইনবিশিষ্ট কবিতা রুবাই-এর স্রষ্টা। তিনি মূলত ও প্রধানত একজন বিজ্ঞানী। জ্যোর্তিবিজ্ঞান, অঙ্কশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, ভুগোল নিয়ে গবেষণায় তিনি নিজেকে সর্বক্ষন নিয়োজিত রেখেছেন। তবুও কবি হিসেবেই তাঁর সমধিক পরিচিতি। তার কারণ বোধ হয় ওমরের কবিতা কেবল ভাষা আর ভাবের ফুলঝুরি নয়, এগুলো রচিত হয়েছিল গভীর দর্শন অনুভূতি থেকে। ইরানের প্রথম সারির কবিদের মধ্যে হাকিম ওমর খৈয়াম সারা বিশ্বেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে, গত দুই শতকে তিনি পাশ্চাত্যে কবি হিসেবে অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসাবে। এর কারণ তার কবিতা সমগ্র, যা ওমর খৈয়ামের রূবাইয়াত নামে পরিচিত। ইংরেজীভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজ মনিষী টমাস হাইড প্রথম অপারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমর কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন। তার নামে পাশ্চাত্যে গড়ে উঠেছে অনেক ফ্যান-ক্লাব এবং সভা-সমিতি। কয়েক বছর আগে ইরান সফরের সময় তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খৈয়ামের কবিতার প্রতি তার গভীর অনুরাগের কথা জানিয়েছিলেন। বিশ্ববিশ্রুত ইরানী মনীষী, বিজ্ঞানী ও কবি হাকিম ওমর খৈয়ামের আজ ৮৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১১৩১ সালের আজকের দিনে তিনি ইরানের নিশাপুরে মৃত্যুবরণ করেন। পারসীক কাব্য সাহি্ত্যের অবিস্মরণীয় কবি ওমর খৈয়ামের মৃত্যু দিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ওমর খৈয়াম ১০৪৮ সালের ১৮ মে ইরানের উত্তর খোরাসানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ইরানের পুরাতন নাম ছিল পারস্য আর তার রাজধানী ছিল খোরাসান। তাঁর পূর্ণ নাম আবুল ফাত্হ ওমর ইবনে ইবরাহীম আল খৈয়াম। খৈয়াম শব্দের অর্থ তাঁবু নির্মাতা। তাঁর পিতা ছিলেন তাঁবুর কারিগর ও মৃৎশিল্পী। ওমর খৈয়াম ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। তার স্মরণ শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। যেকোন জটিল বই কয়েকবার পড়লেই তাঁর মুখস্থ হয়ে যেত। গণিতের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ আকর্ষণ। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা তাঁর জ্ঞান চর্চার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জ্ঞান চর্চার প্রতি তিনি এতই মনোযোগী ছিলেন যে, কোন বই হাতে পেলেই তিনি তা পড়ে শেষ করে ফেলতেন। ছোটবেলায় তিনি বালি শহরে সে সময়কার বিখ্যাত পণ্ডিত শেখ মুহাম্মদ মানসুরীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। যৌবনে তিনি ইমাম মোআফ্ফাক-এর অধীনে পড়াশোনা করেন।ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছু সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালক্ শহরে। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনিষী মহাম্মদ মনসুরীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত ইমাম মোয়াফ্ফেক নিশাপুরির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
ফার্সী কাব্য-জগতে ওমর খৈয়াম এক বিশেষ চিন্তাধারা ও বিশ্বদৃষ্টির পথিকৃৎ। তিনি এমন সব চিন্তাবিদ ও নীরব কবিদের মনের কথা বলেছেন যারা সেসব বিষয়ে কথা বলতে চেয়েও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তা চেপে গেছেন। কেউ কেউ ওমর খৈয়ামের কবিতার নামে বা তার কবিতার অনুবাদের নামে নিজেদের কথাই প্রচার করেছেন। আবার কেউ কেউ ওমর খৈয়ামের কবিতার মধ্যে নিজের অনুসন্ধিৎসু মনের জন্য সান্তনা খুঁজে পেয়েছেন। ওমর খৈয়াম তাঁর বিখ্যাত 'রুবাইয়াত'-এর জন্যেই বিশ্বসাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। রুবাইয়াত হচ্ছে চার পঙক্তির সুরেলা ফার্সি কবিতা। রুবাই শব্দের বহুবচন হলো 'রুবাইয়াত। রুবাইয়াত ১ম, ২য় ও ৪র্থ পংক্তিতে মিলযুক্ত চতুষ্পদীতে লেখা। এ জাতীয় এক হাজারেরও বেশি কবিতা তিনি রচনা করেন। পৃথিবীর রূপরস, বুলবুলির গান, টিউলিপ ফুল, গোলাপের সুবাস, বসন্তের সমীরণ, উষার আলো, জোৎস্নার রাত প্রভৃতি বিষয় তার কবিতায় বার বার ঘুরে এসেছে । ১৮৫৯ সালে বিখ্যাত ইংরেজ কবি এডওয়ার্ড ফিটজিরান্ড সর্বপ্রথম তাঁর রুবাই-এর অনুবাদ প্রকাশ করেন। এই অনুবাদের ফলেই ইংরেজিসহ ইউরোপের অন্যান্য ভাষাভাষী অঞ্চলে খৈয়ামের কাব্যখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ অনুবাদের মাধ্যমে ফিটজেরাল্ড নিজেও খ্যাতিমান হন। রুবাইয়াত সম্পর্কে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ওমরের রুবাইয়াত বা চতুষ্পদী কবিতা চতুষ্পদী হলেও তার চারটি পদই ছুটেছে আরবী ঘোড়ার মত দৃপ্ত তেজে সম-তালে- ভন্ডামী, মিথ্যা বিশ্বাস, সংস্কার, বিধি-নিষেধের পথে ধূলি উড়িয়ে তাদের বুক চূর্ণ করে। 'রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম'নামক বইটির ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, 'খেজুর-গাছের রস যেমন তার মাথা চেঁছে বের করতে হয়, ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতও বেরিয়েছে তার মস্তিষ্ক থেকে'। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত থেকে প্রায় দুইশটি রুবাই বাংলায় অনুবাদ করেছেন।
অনেকেই মনে করেন, ওমর খৈয়ামের অবদান সবচেয়ে বেশী বীজ গণিতে। তিনিই প্রথম বীজগণিতের সমীকরণগুলোর শ্রেণী বিন্যাসের চেষ্টা করেন। জ্যামিতির সমাধানে বীজগণিত আর বীজগণিতের সমাধানে জ্যামিতি পদ্ধতি তারই অভূতপূর্ভ আবিস্কার। আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে বীজগণিতের যেসব উপপাদ্য এবং জ্যোতির্বিদ্যার তত্ত্ব ওমর খৈয়াম দিয়ে গেছেন সেগুলো এখনও গণিতবিদ এবং মহাকাশ গবেষক ও জ্যোতির্বিদদের গবেষণায় সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আসলে খৈয়াম নিজ যুগে মূলতঃ গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসেবেই খ্যাত ছিলেন এবং তিনি নিজেও তাই মনে করতেন। এছাড়া, চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। ওমর খৈয়াম সম্পর্কে ফিজরেন্ড বলেছেন, 'কবিতা না রচনা করলে তিনি হয়ত গণিতজ্ঞ হিসেবেই অমর হয়ে থাকতেন। অনেকে ওমর খৈয়ামকে নৈরাশ্যবাদী এবং ভোগবাদী বলে ভুল ধারণা করে থাকেন। আসলে তিনি আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর অস্তিত্বকেই নশ্বর বা অস্থায়ী বলতে চেয়েছেন। এভাবে তিনি মানুষকে স্থায়ী শক্তি বা সত্ত্বা হিসেবে আল্লাহমুখী হবার ওপরই জোর দিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন ওমর খৈয়াম ছিলেন একজন বড় সুফী সাধক বা আরেফ। যুগের অন্যতম সেরা জ্ঞানী হওয়া সত্বেও বিনয় বা নম্রতা ছিল ওমর খৈয়ামের অন্যতম প্রধান ভূষণ। তাইতো মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থাশীল ওমর বলেছেনঃ
একদা মোর ছিল যৌবনের অহঙ্কার
ভেবেছিলাম গিঁঠ খুলেছি জীবনের সব সমস্যার ।
আজকে হয়ে বৃদ্ধ জ্ঞানী বুঝেছি ঢের বিলম্বে,
শূন্য হাতড়ে শূন্য পেলাম যে আঁধারকে সে আঁধার।
(ইরানের নিশাপুরে ওমর খৈয়ামের সমাধি)
বিশ্বখ্যাত এ মনীষী ১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে ইরানের নিশাপুরে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার ছাত্রদের শেষ বারের মত বিশেষ কোন উপদেশ দেয়ার জন্য ডাকেন। এরপর তিনি ভালভাবে ওজু করে এশার নামায আদায় করেন। নামাযের শেষ সেজদায় গিয়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তোমার দয়া ও করুণার গুণে আমাকে মাফ করে দাও। এরপর তিনি আর মাথা তোলেননি। সেজদা অবস্থাতেই মহান প্রভূর কাছে চলে যান। আজ এই মনিষীর ৮৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। পারসীক কাব্য সাহি্ত্যের অবিস্মরণীয় কবি ওমর খৈয়মের মৃত্যু দিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ৮৮৩ বছর! কল্পনা করা যায়! অথচ তিনি এখনো নক্ষত্রের মতোই উজ্জ্বল। সে উজ্জলতা কমছে না, বরং বেড়েই চলছে। +
ভালো থাকবেন ভ্রাতা।।
৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
আলম 1 বলেছেন: ভাল লেখা ।
৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮
শাহিনুল হক শাহিন বলেছেন: সুন্দরম
৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪২
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: অনেকে ওমর খৈয়ামকে নৈরাশ্যবাদী এবং ভোগবাদী বলে ভুল ধারণা করে থাকেন। ভুল নয় ঠিকই । তার নৈরাশ্যবাদের বিষয়ে কিছু লিখলেন না,অনেক লেখা অাছে। শেষ বয়সে আপনি- আমি সবাই এরকম দুর্বল হয়ে যাব। যদি পরম খোদা বিশ্বাসী হতেন, তাহলে এত কিছু আবিষ্কার করতে পারতেন না। খোদার ধ্যানেই থাকতেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
মনিরা সুলতানা বলেছেন: পারসীক কাব্য সাহি্ত্যের অবিস্মরণীয় কবি ওমর খৈয়মের মৃত্যু দিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখা ভাল লেগেছে ...
+++++++++++ এবং প্রিয় তে ।