নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রঙ-তামশা

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৬



ভদ্রমহিলা দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি করছেন। কি যেন খুঁজছেন। তিনি একা খুঁজছেন না। তার স্বামীও তার সঙ্গে সঙ্গে খুঁজে চলেছেন। তাদের সঙ্গে তিন চার বছর বয়সের দুটা বাচ্চা। ভাইবোন। তারাও বাপ মাকে খুঁজতে সাহায্য করছে। একটু পর পরই দুজনে চিৎকার করে উঠছে,

‘উম্মি! হাদি!’

বলে তাকাচ্ছে মায়ের দিকে। মা বিচক্ষণতার দৃষ্টিতে ভালো করে দেখে নিয়ে না বোধক ভঙ্গীতে মাথা নাড়ছেন। না, এটা নয়।

ছোট্ট দুই ভাইবোনের একটাই ঘর। তবে বিছানা দুটা। বোনটার বিছানার সামনে একটা কার্পেট চাই। সেই কার্পেটকে গোলাপি রঙের হতে হবে। তারা সেই গোলাপি কার্পেটটাই খুঁজছিলেন।

আচ্ছা, গোলাপি রঙটা যে মেয়েদের একলার সম্পত্তি, এই নিয়মটা নির্মাণ কে করেছে? আমার বড় জানতে ইচ্ছা করে। আজ ইভলিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,

-‘ইভলিন, বল তো, গোলাপি রঙটা যে মেয়েদের জন্যে, এই নিয়ম কে বানিয়েছে?’

ইভলিন আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। আমার উদ্ভট প্রশ্নে ও মাঝে মাঝেই বাকহারা হয়। আমি পাত্তা দিলাম না।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রোজিতা বলল, ‘মুবিনের বোধহয় খুব বোরিং লাগছে, তাই উল্টাপাল্টা কথা জিজ্ঞেস করছে।’

বলে রোজিতা হাসতে লাগল। আমি রোজিতাকেও পাত্তা না দিয়ে ওকে কম্পিউটরের সামনে থেকে সরিয়ে গুগল করলাম।

গুগলে জেনিফার রাইট জানাল, ১৮৬৯ সালে এইমি নামের এক মহিলা ফ্রেঞ্চ ফ্যাশানে তার দুই বাচ্চাকে গোলাপি আর নীল রিবন বেঁধেছিল ছেলে আর মেয়ে আলাদা বোঝাতে।

তার আগে পর্যন্ত নাকি বাচ্চাদেরকে সাদা রঙের পোশাকই পরানো হত। তারমানে গোলাপি রঙটা মেয়েদের সম্পদ হয়েছে ছয়শ’ বিলিয়ন বছরের মধ্যে দেড়শ’ বছরেরও কম সময় ধরে। তার আগে গোলাপি রঙটা নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সকলেরই ছিল।

আমাদের বাংলাদেশের মানুষেরও রঙ নিয়া বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা। গোলাপি রঙ নিয়াও তাদের উৎসাহর বিপুলতার কমতি নাই। আপনি যদি জরিপ চালান তাহলে কয়েক হাজার মেয়ে পাবেন যাদের নাম ‘গোলাপি।’ আরও বেশিও হতে পারে। সতেরো কোটি মানুষের দেশ তো।

প্রয়াত লেখক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন তো গোলাপি নাম নিয়া সিনেমাই বানায়ে ফেললেন। সিনেমার নাম ‘গোলাপি এখন ট্রেনে।’ আমি একবার আমজাদ হোসেনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কথা বলতে গেছিলাম। তো মূলে যাওয়ার আগে তবলার টুংটাং হিসাবে জানতে চাইছিলাম, ‘আমজাদ ভাই, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে কেন?’ কেন ট্রেনে কেন রহিমা, করিমা কিম্বা আম্বিয়া নয়?’

এর উত্তরটা আপনি জানেন, আমি জানি, সবাই-ই জানে। তবে আপনাদের জানা, আমার জানা আর একজন কিংবদন্তি মানুষের জানার মধ্যে ফারাক আছে। ফারাক আছে বলেই ‘গোলাপি’ রহিমা, করিমা কিংম্বা আম্বিয়া হয় নাই। হয়ত রহিমা, করিমা, আম্বিয়া ট্রেনে থাকলে দর্শক সেইভাবে নিত না যেইভাবে গোলাপিকে নিয়েছে।‘গোলাপি’ নারীর প্রতিনিধিত্ব করে বলেই গোলাপি হয়েছে? নাকি আমজাদ ভাই বাঙালির রঙপ্রীতিটা বুঝে ফেলেছিলেন?


তবে ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ সাদাকালো সিনেমা হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রাঙ্গন কিন্তু বাংলা সিনেমার মতই সম্পূর্ণ রঙিন। সম্ভবত ‘৯৪ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রচ্ছদ শিরোনাম করেছিল ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ সিনেমার একটা সংলাপ, ‘একটা কিছু ক গোলাপি!’ এই গোলাপি ছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমরা দেখলাম বেগম খালেদা জিয়াকে গোলাপি ডাকার পর তিনিও গোলাপির মতন আচরণ করছিলেন। সিনেমায় গোলাপি ভূমিকায় রূপদানকারী ববিতা যেমন ‘কিছুই কয় নাই’, তেমনি সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রীও ‘কিছুই কন নাই।’ কেবল ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে চেয়ে দেশের অরাজকতা দেখছিলেন।

হায় হায়! লেখায় রাজনীতি কোত্থেকে আসলো! ক্যামনে আসলো! আমার বিষয় তো রাজনীতি না! রাজনীতির মত পেজগি ল্যাশিংয়ের মধ্যে আমি নাই। আমি রঙ বিষয় নিয়া কথা বলছি। আসেন রঙ নিয়া বলি।

তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষকেরা অরাজনীতি করেন, তাদের দলগুলোর নামও কিন্তু রঙ দিয়া। সাদা দল, নীল দল, গোলাপি দল…ধুরো! আবার রাজনীতি! রাজনীতির সমস্যা কি!

আসেন আমরা আমাদের আগের বিষয়ে ফিরে যাই। তো বলছিলাম নীল রঙ নিয়া।

কথা হল, মানুষের চাইতে তার চিন্তাভাবনাগুলা বেশি স্বার্থপর। সে একলাই রাজা, একলাই উজির। আবার একলা একলাই রাজা-উজির মারে। তারপর রাজা-উজিরের শোকে মাতমও করে। একলাই। রাগ করে, অভিমান করে, জেদ করে- সেও একলা একলা। মোট কথা রবীন্দ্রনাথের ‘একলা চলো রে’ গানটারে আপন জাতীয় সঙ্গীত বানিয়ে ফেলে। বানিয়ে ফেলে জটিলতা কিংবা কুটিলতা অথবা উভয়েরই দিকেই অনুসন্ধিৎসু হইয়া ওঠে।

তা হন, কোনও সমস্যা নাই। সমস্যা আসলে ভাবনাতে। আপনাপন ভাবনা। আপনার ভাবনা যতক্ষণ একান্তই আপনার, যতক্ষণ অন্যর সু বা কু যুক্তিরে সে পাত্তা দেয় না, বরং উল্টা নিজে গাল ফুলায়া নিজের আগমন, নির্গমন বা বহির্গমন বার্তা ছুপায়া চক্ষু লাল কইরা বাকরুদ্ধ হইয়া থাকেন, ততক্ষণ আপনার ওই ভাবনা আপনার চাইতে বেশি স্বার্থপর। সে এতই বেশি স্বার্থপর যে আয়নার দিকে চাইলে বেছে বেছে কেবল দুঃখ দেখে, কষ্ট দেখে, অশ্রু দেখে, আর কয় ‘বেদনার রঙ নীল!’

হিমু রূপাকে ফোন করে বলে কাল বিকেলে যেন রূপা তার নীল রঙের শাড়িটা পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে।

পরদিন রূপা নীল রঙের শাড়ি, চুলে নীল রঙের ফিতা, কপালে নীল টিপ আর নীল চটি জুতা পায়ে বারন্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। হিমু আসে না। রূপা জানে হিমু আসবে না। তবুও সে দাঁড়িয়ে থাকে হিমুর অপেক্ষায়।

কী রোমান্টিক না? এইখানে দেখেন, নীল রঙটাই রোমান্টিক!

আমাদের পাড়ায় একবার ছিনতাই করতে গিয়া এক ছিনতাইকারী জনতার হাতে ধরা পড়ল। জনতা আচ্ছা মতন ধোলাই দিল ছিনতাইকারীকে।পুলিশ চলে আসাতে বেচারা বেঁচে গিয়েছিল। পুলিশ যখন ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে তখন তার গায়ে কোনও পোশাক ছিল না। জনতা মারতে মারতে ছিঁড়ে নিয়েছিল। ছিনতাইকারীর উদাম শরীর ছেয়ে গিয়েছিল কালশিটে দাগে। সেই দাগগুলোর অনেকেই হয়ে উঠেছিল কলশিটে গাঢ় নীল। এইটাই কী বেদনার দাগ? এই বেদনার রঙকেই কী নীল বলা হয়?

আমি জানি না।

তবে এটা বোঝা গেল নীল শুধু বেদনাই হয় না; রোমান্টিকও হয়। সেটা ব্যক্তি কিংবা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

আরও বোঝা গেল কেউ কাউরে কষ্ট দিলে গণপিটুনিতে ডলা খাওয়ার অনুভূতি হয়।

তো শুরুতে যেটা বলেছিলাম; নীল রঙটা যে মেয়েদের একলার সম্পত্তি, এই নিয়মটা নির্মাণ করেছে কে?…

-কী! নীল রঙ বলি নাই! গোলাপি বলেছিলাম! বলেন কি! আমার কোনও দোষ নাই। কিরা। লেখার মাঝখানে রাজনীতি ঢুকে পড়ছিল। রাজনীতির নিয়মই এই। লালরে নীল বানিয়ে দেয়। এইখানে নীলকে গোলাপি বানিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ! গোলাপিকে নীল বানিয়েছে? বাদ দেন তো ভাই। রাজনীতি বিষয়টাই বিরাট জটিল। জটিলতা ভালো লাগে না। যাই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের লোকজন ছিনতাইকারীদের খুব ভাবে মারে। কেউ বলে না- পুলিশের কাছে দিয়ে দেই। খুব মারে। খুব মর্মান্তিক।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০০

মুবিন খান বলেছেন: ঠিক বলেছেন। খুব দুঃখজনক।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০০

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: ভালো লাগলো রঙ নিয়ে রঙ্গ :)

আমজাদ হোসেন প্রয়াত হলেন কবে??

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০২

মুবিন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার প্রশ্নটির উত্তর আমি দেবার আগেই মি. নজসু দিয়ে ফেলেছেন।

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১০

নজসু বলেছেন:



@প্রিয় আর্কিওপটেরিক্স আমজাদ হোসেন ১৮ নভেম্বর প্রয়াত হয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.