নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরা ও কাঁঠালেরা

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৬



কয়দিন আগে এক বিদগ্ধ পাঠক মধু মাসের ফল আম বিষয়ে জানতে চাইয়া আগ্রহ প্রকাশ কইরা দিছিলেন। এখন আমদের মাস না, পান্তার মাস। রোমান্টিক বৃষ্টি আইসা লোকেদের রোমান্স ধুইয়া লইয়া যাওয়ার মাস।

এখন মধু মাসের খবর পান্তা মাসে আইসা খুঁজলে হবে? হবে না। আপনি যদি আর্কিমিডিসরে জিজ্ঞাসেন, ‘বলেন তো থিওরি অব রিলেটিভিটি কি জিনিস?’

আর্কিমিডিস কি করবে? ড্যাবড্যাবাইয়া চাইয়া থাকবে না? আর্কিমিডিসের সেই চাউনি দেইখা আইনস্টাইনে মিচকা হাসি হাসতে থাকবে। থাকবে কিনা বলেন।

তবু কৌতুহলী মন আম বিষয়ে তার কৌতুহল প্রকাশ কইরা ফেলছে। এই কৌতুহলরে তো হেলা করা যাবে না। বৈশাখ মাসের কৌতুহল আষাঢ় মাসে আইসা জানান দিলেও কিছু করার নাই। মন হয় রহস্যময় বস্তু। মনের এই রহস্যময়তারে সন্মান জানায়া হইলেও আম বিষয়ক দুইটা কথা আমারে হবে।

আমের আসল নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা। ডাকনাম আম। আম হয় একটা গণতান্ত্রিক ফল। লোকেরা আমেরে ফলদের রাজা ডাইকা থাকে। ফলেদের রাজা ডাকা হইলেও আম কিন্তু তার নাম দিয়া নিজেরে সাধারণ হিসাবে ঘোষণা কইরা ফেলছে। এই কারণেই লোকে আমজনতা বললে সকলে সাধারণ জনগণ বোঝে। গণতান্ত্রিকতার এই নমুনা দেখানোর বুকের পাটা ফল সমাজের আর কোনও ফলের নাই।

মানবসমাজে যেমন লাল মানুষ, কালা মানুষ, ধলা মানুষ, বাদামি মানুষ আছে। তেমনি চৈনিক, জাপানি, তুর্কি আমরিকি, ফ্রঁসি ইত্যাদি জাত দিয়াও মানুষদেরকে ভাগাভাগি করা হইয়া থাকে। এইরকম ভাগাভাগি আম সমাজেও আছে। একইভাবে আমদেরকেও ভাগ করা হইছে। দুনিয়ায় পঁয়ত্রিশ জাতের আম আছে বইলা খবর আছে। পরিচিত ল্যাংড়া লুলা আমেরা ছাড়াও আরও আছে গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আপামর বাংলাদেশে নৌকায় কইরা আমেদের এক স্থান হইতে আরেক স্থানে আনা নেওয়া করা হইয়া থাকে। তখন ঢেউয়ে ঢেউয়ে নৌকা দোলে। তবে বাংলাদেশের আম সাধারণদের এই দুলুনি নৌকারে ডুবাইতে পারে নাই। পারবে যে, সেই সম্ভাবনাও তারা উদিত করতে পারে নাই।

তো পঁয়ত্রিশ জাতের আম লইয়া অন্তত পঁয়ত্রিশটা জীবনী লেখা যাবে। শেষ হবে না। তাই সেদিকে যাইতেছি না। খালি আম সমাজের দুঃখর কথা বলি। ফলেদের রাজা হইয়াও আম আমাদের জাতীয় ফল না। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এইটা আম সমাজের জন্য অপমানজনক। এই কাঁঠালরেই আম সমাজ নিজেদের দুঃখ বইলা গণ্য কইরা থুইছে। কাঁঠাল হয় আমদের দুঃখ।

আম সমাজের এই দুঃখর আসল নাম আর্টোকার্পাস হেটেরোফাইলাস। তবে আপনি যদি ফলের দোকানে গিয়া এই নাম ধইরা কাঁঠাল খোঁজাখুঁজি করেন তাইলে দোকানদার আপনারে বাইন্ধা থুইতে পারে। দোকানির কাছে আপনারে আর্টোকার্পাস হেটেরোফাইলাসের ডাক নাম বলতে হবে। ডাক নাম হয় কাঁঠাল। তাতে দোকানি আপনারে কাঁঠাল না দিলেও অন্তত বাইন্ধা থুইবে না।

কাঁঠাল হয় চশমখোর টাইপ ফল। কাঁঠাল তার গাছেদের যত্রতত্র হইয়া থাকে। এমন কি গাছেদের যে শিঁকড়, সেই শিঁকড়েরেও কাঁঠালে ছাড় দেয় না। মাটির নিচের শিঁকড়ে ধইরা বইসা থাকে। বড় হইয়া মাটি ফাইট্টা নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। লোকেরা মাটি খুঁইদা কাঁঠালেরে বাইর করে। ফল সমাজ এই ঘটনারে ফল সমাজের জন্য লজ্জাজনক হিসাবে ঘোষণা দেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ কইরা থুইয়া দিছে। এই কারণে ফল সমাজ আড়ালে কাঁঠালরে বেহায়া ফল বইলাও অভিহিত কইরা থাকে।

তবে কাঁঠালদের এই বেহায়া স্বভাব আর আড়াল নাই। স্বীকৃতী অর্জন কইরা ফেলছে। তারই নিদর্শন হিসাবে কাঁঠালের আঠা বইলা একটা কথা আমাদের বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠিত হইয়া আছে। বাজারে আপনি কাঁঠালের আঠা বইলা কোনও আঠা পয়সা দিয়া কিনতে পাইবেন না। দোকানিরা এই দ্রব্য বেচে না। কল কারখানারাও এই আঠা তৈরি করে না। বস্তুত এই আঠা হয় কাঁঠালের জেনেটিক। বিরাট হারামি আঠা। ভয়াবহরকম বিরক্তর উদ্রেক করে। কাঁঠালের আঠা হইতে বাঁচতে লোকেরা কাঁঠাল ভাঙ্গার আগে দুই হাতে উত্তমরূপে প্রশাসনিক ত্যাল লাগায়া লয়।

আপামর বাংলাদেশে নৌকায় কইরা কাঁঠালদেরও এক স্থান হইতে আরেক স্থানে আনা নেওয়া করা হইয়া থাকে। তখন ঢেউয়ে ঢেউয়ে নৌকা দোলে। তবে বাংলাদেশের কাঁঠালেরা আম সাধারণদের মতন নহে। শিক্ষানবিশ কাঁঠালেরা অত্যন্ত সফলতার সহিত নৌকারে দুলাইতেছে। এই দুলুনি নৌকারে যদিও এখনও ডুবাইতে পারে নাই। তবে ডুবাইয়া দিতে পারবে। সেই সম্ভাবনা তারা উদিত করতে পাইরা ফেলছে।

এইসব শিক্ষানবিশ কাঁঠালেরা নৌকায় উইঠা ধরারে সরা জ্ঞান করতেছে। লোকেরা তাদেরে যে জাতীয় ফল নির্বাচিত করছে, সেই নির্বাচনরে তারা মূল্যায়ন করতেছে না। আম সমাজের ফলমতরে বুইড়া আঙুল দেখায়া তারা তাদের কাঁটাযুক্ত শরীলের জোর দেখাইতেছে। এই সকল ঘটনা আম সমাজের ভিতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া বানায়ে ফেলছে।

আম সমাজের ফলমত ক্ষমতাসীন জাতীয় ফল কাঁঠাল তুড়ি মাইরা উড়ায়া দিতেছে। তারা আমেরে সিজিজিয়াম ক্যুমিনি সহিত মিলায়া ফেলতেছে। সিজিজিয়াম ক্যুমিনি চিনতে পারছেন তো? সিজিজিয়াম ক্যুমিনি হয় জামের ভালো নাম। ডাক নাম জাম।

ফল সমাজে জাম সবচেয়ে পরহেজগার ফল। সারাক্ষণ ধর্মর কর্ম করার কথা বলে। ধর্মর কর্মর কথা বললেও নিজেরা ধর্মর কর্ম তেমন একটা করে না। করে ফলনীতি। লতাপাতা বাইয়া খালি গাছের শীর্ষে যাইতে চায়। জাম দেখতে হয় কালা। যেইখানে যায় দাগ বানায়ে দেয়।... এই ইতিহাস এখন থাকুক। পরে কোন একদিন বলা যাবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:২৬

নজসু বলেছেন:




রম্য।
কিন্তু উপভোগ্য।
কিঞ্চিৎ শিক্ষণীয়।

সুন্দর।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৩

মুবিন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৭

অলিউর রহমান খান বলেছেন: উপভোগ্য! বেশ মজার ছিল। ভালো লেগেছে।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৪

মুবিন খান বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: আজকাল আমার এই রকম পোষ্ট গুলোই ভালো লাগে।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৭

মুবিন খান বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও খুব ভালো লাগল।... আচ্ছা এটা কি রকম পোস্ট বলেন তো?!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.