নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষোলকলা

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:০৫




খুব বিখ্যাত একটা গান আছে না, 'নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে।' সম্ভবত উত্তম-সুচিত্রার সিনেমার গান। খুব রোমান্টিক গান। চাঁদ তো গোলাকার। সূর্যের আলোর কারসাজিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন আকৃতি দেখি। চাঁদ যে আসলে বাঁকা নয় সেটা তো প্রতি পূর্ণিমায় দেখাই যায়। তাহলে চাঁদ বাঁকা বলে অমন চরম একটা রোমান্টিক গান তৈরি হল কেন ! সে গান আবার বিপুল জনপ্রিয়তাও পেল ! রহস্য কি ? তবে কি আমাদের মন বাঁকা ? আমরা বস্তুর সঠিক আকৃতিকে বাঁকা করে দেখতে ভালোবাসি বলেই এমন গান লেখা হয়, সুর করা হয়, গাওয়া হয় এবং সে গান তুমুল জনপ্রিয়তাও পায় ? আমি সত্যিই জানি না। আমি বিভ্রান্ত বোধ করি।

বিতর্ক, জটিলতা, এইসব ভালো লাগে না। জীবনে তো জটিলতা কম নাই। তার ওপর জীবন নিজেও যথেষ্ট জটিল। কি দরকার এইসবের মধ্যে থাকার? কোন দরকার দেখি না। তাই হালকা থাকি। থাকতে চাই। বন্ধু কল্লোল সেটা কেমন করে যেন ধরে ফেলল। সেদিন আড্ডায় বলেও ফেলল সে কথা। বলে, 'মুবিনের হাসির বাতিক আছে। যে কোনো উপাত্ত নিয়ে হাসতে ও হাসাতে চায়।

কথা সত্য। সত্য কথা শুনে আমি হাসি। কঠিনতম সিরিয়াস বিষয় নিয়েও আমি হাসতে পারি। হাসি স্বাস্থ্যর জন্যে ভালো। মুখের মাংসপেশীর ব্যায়াম হয়। হাসলে হার্ট ভালো থাকে। আমি মুখের মাংসপেশির ব্যায়াম চালিয়ে যাই। হার্ট ভালো রাখার চেষ্টা করি।

তবে মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটে যাতে এই অনুশীলনের ব্যাঘাত ঘটে। অবশ্য আপাত আমি এসব পাত্তা দেই না। ভাবলেশহীন থাকার চেষ্টা করি। ঘটে যাওয়া ঘটনার কোন দাগ মুখের মাংসপেশি বা হার্টে পড়তে দেই না। আমার স্বাস্থ্যবান হার্ট আমার মুখটাকে বেশ সফলভাবে ভাবলেশহীন করে রাখে। ঘটনা ঘটন পটিয়সি বুঝতেই পারেন না আমার আরোপিত ভাবলেশহীনতা। সকল বিষয়ে অসফল আমি'র এ এক আশ্চর্য সফলতা।

খুব মনে আছে ক্লাস ফোরে বাংলা বইয়ে 'বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা' কবিতাটি আমরা পড়েছিলাম। কবিতার পাশে হাতে আঁকা ছবি ছিল। ছবিতে একজন লোক জায়নামাজ বিছিয়ে তাতে বসে দুহাত তুলে মোনাজাত করেছেন। আমরা কবিতাটি পড়তে পড়তে লোকটির প্রার্থনা কল্পনা করতাম। বড় হয়ে জানতে পারি রবীন্দ্রনাথের 'গীতাঞ্জলী' গ্রন্থের চতুর্থ সঙ্গীতের অঞ্জলি ওটি। তাতে ক্লাস ফোরে পড়া আমাদের কোন সমস্যা হয় নি। আমরা জেনেছিলাম জায়নামাজের মোনাজাতে ওই কবিতা না হোক নিজের মানসিক শক্তি বর্ধিত করতে ওরকম কথাবার্তা বলতে হয়।

বাংলা ভাষার অন্যতম সফল লেখকদের একজন হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন ঘোরতর বিজ্ঞানের মানুষ। রসায়নের মত কঠিন বিষয় নিয়ে কেবল পড়াশুনা করেছেন তা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের শিক্ষকও ছিলেন। হুমায়ুন আহমেদ আকণ্ঠ রবীন্দ্রনাথ পান করতেন। তাঁর সকল বইয়ে সে ছাপ পড়ুয়ারা দেখেছেন। জ্যোৎস্না নিয়ে তাঁর যে অনেক রকমের বাড়াবাড়ি ছিল সে কথা তিনি নিজেই বহুবার লাজুক মুখে মিটিমিটি হাস্যরসের সঙ্গে বলেছেন।

হুমায়ূন আহমেদ বিজ্ঞানের মানুষ। তিনি খুব ভালো করেই জানতেন চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল।চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ।চাঁদে অভিকর্ষ বল পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের এক ভাগের ছয় ভাগ। মানে হল, পৃথিবীতে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদে তার ওজন হবে শুধু ২০ পাউন্ড। প্রতি সাড়ে ২৯ দিনে চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। বিভিন্ন লেখায় আমরা যে ষোলকলা পড়ি সেটাও এই চাঁদ থেকে এসেছে। চাঁদের এই ষোলকলা হল, অমৃতা, মানদা, পূষা, তুষ্টি, পুষ্টি, রতি, ধৃতি, শশিনী, চন্দ্রিকা, কান্তি, জ্যোৎস্না, শ্রী, প্রীতি, অক্ষদা, পূর্ণা এবং পূর্ণামৃতা। আর পূর্ণিমা চাঁদের ষোলকলার একটি কলা। এটি তখনই ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবীর যে পাশে সূর্য অবস্থিত তার ঠিক উল্টো পাশে অবস্থান করে। এতসব জেনেও হুমায়ূন আহমেদ জ্যোৎস্না নিয়ে কি অসম্ভব পাগলামি করেছেন। শুধু যে নিজে করেছেন তা নয়। সে পাগলামি ছড়িয়েও দিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের জ্যোৎস্না প্রেমে সরাসরি রবীন্দ্রনাথ দায়ী না হলেও রবীন্দ্রনাথ যে তাতে ঘি ঢেলেছেন সেটা হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বিভিন্ন লেখায় বলেছেন।

রবীন্দ্রনাথের প্রভাব যদি আমাদের ছোটবেলার পাঠ্য থেকে শুরু করে মনিষীদের ওপর এমন প্রাবল্য বিস্তার করে, তাহলে আমার বা আমার মত অতিশয় নির্বোধদের কি করুণ দশা হতে পারে সেটা ভাবাও যায় না। রবীন্দ্রনাথ তখন আশীর্বাদ থাকেন না। তাচ্ছিল্য হয়ে ওঠেন। গানের নিশি রাতের বাঁকা চাঁদ আর রোমান্টিক থাকে না। ষোলকলার এক কলা অমৃতা বা পূষা হয়ে ওঠে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.