নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।
প্রিয় মৃত্তিকা,
ভাল আছ আশা করছি । আজকাল চিঠি লেখার চল উঠেই গেছে । চিঠি লেখা এখন সেকেলে ধারণা । তবু আজ তোমাকে লিখতে বসলাম । আমি ভাল নেই । আমার মনটা খুব খারাপ হয়েছে আজ । তোমার সঙ্গ থেকে বঞ্চিত থাকা তো তার প্রধান কারণ বটেই, তার সঙ্গে আজ যুক্ত হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি । তোমার উচ্চতা থেকে নিজেকে আমি অনেক নিচুতে বলেছি বলে তুমি মন খারাপ করেছ । প্রচণ্ড অভিমানে নিজেকে আড়াল করেছ । আমি দিশাহারা হয়েছি । অসহায় বোধ করেছি । তোমাকে কি করে বোঝাই এই উচ্চতা হল আমার পক্ষে তোমাকে সর্বোচ্চ সন্মান জানানো । তবু তুমি ঠোঁট ফুলিয়ে রইলে ।
তুমি তো জানো, তেরো বছর বয়সের একটি ছেলেকে আজ বেঁধে জনসম্মুখে চোর অপবাদ দিয়ে মারতে মারতে মেরেই ফেলল । যারা মেরেছে তারা সবাই ওই ছেলেটির প্রায় দ্বিগুণ বয়সি । কেউ কেউ তারও বেশী । ‘আমি মরি যাইয়ার! কেউ আমারে বাঁচাও রে বা!’ বলে চিৎকার করলেও কেউ প্রতিবাদ করল না, ছেলেটিকে বাঁচাতে এগিয়ে এল না । মৃত্যুর আগে রাজন নামের ছেলেটি পানি খেতে চেয়েছিল । পানি দেয় নি হত্যাকারীরা । তাকে তারই শরীর থেকে অঝরে ঝরতে থাকা ঘাম পান করতে বলছিল হত্যাকারীরা । আচ্ছা বলত মৃত্তিকা ভালবাসার প্রাবল্যে যে তুমি ঠোঁট ফোলাও অভিমানে, তোমারই বক্ষে ওই মানুষগুলো অমন অমানুষ কি করে হয়ে উঠল !
তুমি তো নারী । নারী মানে তো মা । মায়ের কাছে তার সকল সন্তান এক হলেও আমরা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের তোমার শ্রেষ্ঠ সন্তান বলি, তুমি কখনও আপত্তি করো নি । তোমার জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান জানো বলেই করো নি । অথচ এই তো কদিন আগে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন । সেখানে একজন শীর্ষস্থানীয় আমলা তাঁকে অপমান করেছিল । সে অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলেন মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান । তোমার ওখানে কোন অন্যায় যেন ঘটতে না পারে সে জন্যে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে দলবদ্ধ হয়েছে বেশ কিছু মানুষ । তারা রাজনীতির নামে তোমার সকল মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের আজ দুইটি মেরুতে দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে । এরাও বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলি হত্যার জন্যে দায়ী ওই আমলার শাস্তির দাবি করছে না । রাজনীতি কি এতই স্বার্থপর মৃত্তিকা ?
গেল মাসে দেখলাম শিক্ষায় কর আরোপ করা হয়েছে । মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের শক্তিই এটি করেছে । অথচ শিক্ষা জীবনের শুরুতে আমরা শিখেছিলাম পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম । আমরা আরও শিখেছিলাম মৌলিক অধিকার হল যে অধিকার নিয়ে আমি তুমি আর আমাদের চারপাশের সকল মানুষ সঙ্গে নিয়ে জন্মায় । তবে এখনকার মানুষ আর শিক্ষার অধিকার নিয়ে জন্মায় না ? তবে কি শিক্ষা এখন পণ্য হয়ে গেছে যে কর আরোপ করা হয়েছে ? শিক্ষাকে মুনাফালোভীরা পণ্য বানানোর তৎপরতায় চোখ জুড়ান যে কিন্ডারগার্টেন মোড়কে মুড়িয়ে পণ্য বানানোর পাঁয়তারা শুরু করেছিল, আজ সেটা সফল হয়েছে । প্রাইভেট স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় জয়কার দেশজুড়ে, তুমি চাইলে তাদের অভিনন্দন জানাতে পার ।
এসব নিয়ে আমার মোটেও ভাবনা নেই মৃত্তিকা । প্রবহমান হাজারও অন্যায়ের ভীড়ে ষোল কোটি মানুষ এই অন্যায়গুলোও মেনে নেবে । বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করবে না, উচ্চকিত হবে না এর বিরোধে । রোজ সকালে চায়ের কাপ হাতে পত্রিকায় এই খবরগুলো দেখবে আর বলবে, 'কিচ্ছু হবে না এই দেশের, এই দেশে মানুষ থাকে ?' তারপর অমানুষ হওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত করে সব ভুলে বেরুবে নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে ।
তুমি তো এমন নও মৃত্তিকা । অমানুষ হওয়ার প্রক্রিয়ায় তো তোমার কান্না পায় । ভালবাসার কষ্ট তো তোমার বুকে দীর্ঘশ্বাস তৈরি করে । দুহাত প্রসারিত করে তোমার দিকে বাড়িয়ে না এলে তোমার বুক ব্যাথা করে । ভালবাসায় জাপটে না ধরলে তুমি ঘুমাতে পার না । তুমি কি করে বাস করছ এই মানুষগুলো নিয়ে । কি করে ক্ষমা করছ এদের ? তোমার প্রতি আমার করজোর অনুরোধ তোমার অনুভূতি এই ষোল কোটির মাঝে ছড়িয়ে দাও । মানুষ বানানোর প্রক্রিয়াটা শুরু করো ।
বিশেষ আর কিছু বলার নেই । যদি অজান্তে তোমায় ব্যাথা দিয়ে থাকি তবে ক্ষমা কোরো । ভাল থেক ।
ইতি
তোমারই
মুবিন
©somewhere in net ltd.