নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুর্লভ

০৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৩

এক দেশে ছিল এক বামন । তার বন্ধুর কোন অভাব ছিল না । কিন্তু তাকে কেউ বুঝত না । তাই মনে মনে বামনটা ছিল খুব নিঃসঙ্গ । এটা কেউ জানত না । নিজের নিঃসঙ্গতা কাটাতে বামনটা একজন বন্ধু খুঁজতে লাগল । বিজ্ঞাপনও দিল । কিন্তু বিজ্ঞাপনে কাজ হল না । বামনটা তখন করল কি, নিজেই বন্ধু খুঁজতে বের হল । কাজটা সে চুপি চুপি করতে রাতকে বেছে নিল । প্রতি রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বামনটা ঘর থেকে বেরিয়ে যায় । সারারাত ধরে পুরো দুনিয়া চষে বেড়ায় বন্ধুর খোঁজে । ভোরে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে । কেউ কিছু বুঝতে পারে না । পরের রাত আবার বের হয় । এভাবেই চলছিল ।
একরাতে বামনটা এমনি বের হয়েছে । দুনিয়াটা একটা চক্কর দেওয়া হয়ে গেছে । আরেকবার ঘুরবে ভাবছে আবার ক্লান্তও লাগছে । অনেক দূর থেকে হঠাৎ একটা হ্রদ দেখতে পেল । কোন এক অদ্ভুত কারণে হ্রদের পানি আলোতে ঝলমল করছে । সেই ঝলমলে আলোতে হ্রদের পাড়ে একটা সবুজ বাগানও রয়েছে । বামনটা ভাবল এখানে একটু বিশ্রাম নেয়া যাক । সেখানে নেমে প্রথমে হ্রদের পানিতে তৃষ্ণা মেটালো । তারপর বাগানের ভেতরে ঢুকল বিশ্রাম নিতে । হাঁটতে লাগল বাগানের সবচেয়ে বড় গাছটার দিকে । কিন্তু গাছটার কাছে যেতেই সে বিশ্রামের কথা ভুলে গেল । গাছটা থেকে একটা নরম আলো বেরুচ্ছে । সেখানে দৃষ্টি আটকে গেল । গাছটা আলোয় ঝলমল করছিল ! কোত্থেকে এল এত আলো ! খুব অবাক হল বামন । অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল গাছটার দিকে ।
হঠাৎ হাসির শব্দ শোনা গেল । কে যেন খিলখিল করে হাসছে । এই গভীর রাতে এমন নির্জন জঙ্গলে কে হাসে ! বামন সচকিত হয়ে চারপাশে মাথা ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগল হাসির উৎস । কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না । হাসির মাত্রাটা আরও বেড়ে গেল তখন । খুব ভয় পেয়ে গেল বামনটা । তারপর শুনল এক মেয়ে কন্ঠ,
- এই তুমি খুব ভয় পেয়েছ ?'
- ক্ক কে ? কে কথা বলে ?' চমকে ভয়ে তোতলাতে লাগল বামনটা ।
- ভয় পেয়ো না, আমি কথা বলছি ।' আবার বলল অদৃশ্য কন্ঠস্বর ।
- কে তুমি ? সামনে আসছো না কেন ?' একটু ধাতস্ত তখন ।
- আমি তো তোমার সামনেই আছি ।'
- কোথায় ? আমি তো তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না ।'
- এই যে আমি । ওপরে তাকাও ।'
বামন ওপরে তাকিয়ে গাছটাকে দেখতে পেল । বিশাল ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছটা । বামন বলল,
- তুমি কি ওই গাছে বসে আছ ?' আবার হাসির শব্দ শোনা গেল । তারপর কন্ঠটা বলল,
- আরও ওপরে তাকাও ।' বামন তাকাল । নাহ, অন্ধকার আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না । বলল সে কথা । তখন কন্ঠটা বলল,
- একেবারে কিছু দেখছ না, তা কি করে হয়, কি দেখছ বল তো ?
- আকাশ দেখা যাচ্ছে ।
- আর কি দেখছ ?' বলল আবার অদৃশ্য কন্ঠ ।
- আর তো কিছু দেখার নেই ! শুধু অন্ধকার !
- অন্ধকারেই আর কি দেখা যাচ্ছে ?
এবার একটু চিন্তিত হয়ে ভালো করে নিরীক্ষণ করতে লাগল বামন । হঠাৎ চকিতে গাছের ফাঁক দিয়ে অন্ধকার আকাশে বিশাল গোলাকার আগুনের থালার মতো চাঁদটা লক্ষ্য করল । বলল,
- চাঁদ দেখা যাচ্ছে ।' এবার মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেল । তারপর অদৃশ্য কন্ঠটা বলল ,
- এবার ঠিকই ধরেছ । আমিই সেই । আমিই চাঁদ ।' বামনের বিশ্বাস হতে চায় না । অবিশ্বাসী কন্ঠে প্রশ্ন করে,
- চাঁদ ! তুমি কথা বলতে পারো !'
- পারবো না কেন ? সবার সঙ্গে বলি না, তোমার সঙ্গে বললাম ।'
- সবার সঙ্গে বল না তো আমার সঙ্গে কেন বললে !
- তুমি যে আমার বন্ধুর কাছে এসে বসেছ আর আমার বন্ধুও তোমায় কিছু বলে নি, তাই বলেছি ।'
- কে তোমার বন্ধু ?' কৌতূহলী গলায় বলল বামন ।
- এই যে গাছটার নীচে বসেছ, এই গাছটাই আমার বন্ধু । দেখছ না ও কেমন আলো ছড়াচ্ছে । আমার সঙ্গে গল্প করার সময় ও এমন আলোকিত হয়ে ওঠে ।'
শুনে বামন অবাক হলেও তার খুব ভাল লাগল । তারও চাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে খুব ইচ্ছে হল । কিন্তু সাহসের অভাবে সে কথা মুখ ফুটে বলতে পারল না । চাঁদটা যেন বামনের মনের কথাটা পড়ে ফেলল । মিটিমিটি হাসিতে বামনকে বলল,
- তুমি কি আমার বন্ধু হতে চাও ?'
একেই কি বলে হাতে চাঁদ পাওয়া ! আর এই প্রশ্নে বামনের যে অনুভূতি হচ্ছে, এটাকেই কি বলে আনন্দে আটখানা হওয়া ! বামন কোন উত্তর দিল না । সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । নিশ্চুপ দেখে চাঁদটা আবার বলল,
- কি, আমার বন্ধুত্ব চাও না ?'
আকাশ থেকে পড়ল যেন বামন । চায় না মানে ? সারাজীবন তো সে এমন একজন বন্ধুই খুঁজছিল । তাড়াতাড়ি বলল,
- না না, কেন চাইব না ! আমি তো তোমার মত বন্ধুই খুঁজছিলাম । তোমার মত অসাধারণ একটা বন্ধু, যা আর কারও নেই ।' তখন চাঁদটা বলল,
-ঠিক আছে, তাহলে আমরা এখন থেকে বন্ধু ।'
তারপর বামন আর চাঁদ বাকি রাতটা গল্প করে কাটাল । বামন চাঁদের গল্প শুনল । কিন্তু গল্প শেষ হওয়ার আগেই ভোর হয়ে গেল । গল্পের বাকিটা পরদিন শোনাবে বলে চাঁদ বামনকে ফিরে যেতে বলল । ঘরে ফিরে বামনের ঘুম এলো না । না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিল দিনটি । আর পুরোটা সময় চাঁদের কথা ভাবল । সে কেবল থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর বলে, 'আহা ! চাঁদটা এত কষ্ট করেছে !' চাঁদের কষ্টে বামনের বুক ভেঙে যায় । চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে । অস্থির হয়ে অপেক্ষা করে সন্ধ্যা নামার ।
সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ আসার সঙ্গে সঙ্গেই বামন সেই হ্রদের ধারের গাছটার কাছে চলে গেল । অধীর হয়ে শুনতে চাইল চাঁদের গল্পের বাকিটা । নিজের এই গল্পটা বলতে চাঁদের খুব কষ্ট হয় । ব্যাথা হয় বুকে । চোখ ভিজে যায় জলে । তবু বামনের আগ্রহে চাঁদ তার গল্পের বাকিটা বলতে আরম্ভ করল ।
বামন জানলো, মানুষ যে দাগটাকে চাঁদের কলঙ্ক বলে চেনে, সে দাগ আদৌ নয় কলঙ্ক । ওটা ভালোবাসার দাগ, কষ্টের শুকনো ক্ষত । আরও জানলো চাঁদের বুক জুড়ে যে কালচে নকশাকে মানুষ চাঁদের বুড়ি আর তার নকশা কল্পনা করে, সেগুলো প্রতারণার পাহাড় । একেজন চাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করে আর চাঁদের বুকে অনেকগুলো পাহাড় জমে । চাঁদের কষ্টে বামনের বুকের পাঁজরের হাড়গুলো এবার ভাঙতে শুরু করল । চোখে জল জমে দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে গেল । সূর্য সারাদিন তার জলন্ত অঙ্গারে পৃথিবীকে দাহ করে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রামে গেলে চাঁদ সারাটা রাত কোনকিছু প্রাপ্তির আশা না করে পৃথিবীকে স্নিগ্ধ আলোতে স্নান করায়, আর সেই চাঁদের বুকে এত কষ্ট এত ব্যাথা লুকিয়ে আছে ! হৃদপিণ্ডটা কে যেন চেপে ধরে বামনের, পাঁজরের হাড়গুলো ভাঙার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে । চাঁদের যন্ত্রণা উপলব্ধিতে পুরো শরীর নীল হয়ে যায় বামনের ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.