নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।
আমার খুব বাজে একটা অভ্যাস আছে । ভুল বানান দেখলেই কট কট করে চোখে লাগে । ইচ্ছা করে কলম নিয়ে তক্ষুনি বানানটা ঠিক করে দেই । আমার খুব কাছের মানুষ যারা ভুল বানান লিখছে তাদের বলি বানানটা ঠিক করতে । তারা কিছু মনে করে না । তবে সবাই যে করে না সেটা অবশ্য বলা যাবে না । এই তো সেদিন বন্ধু খোনকারকে বললাম বলে খোনকার মহা চটে গেল । আসলে ওর নাম খন্দকার । আমরা বন্ধুরা একটা আঞ্চলিক টান এনে ডাকতাম খোনকার ।
খোনকার আমাদের খুব পুরনো বন্ধু । স্কুল জীবন থেকে পরিচয় । তখন অবশ্য অত বন্ধুত্ব ছিল না । বন্ধুত্বটা হয় আরও পরে । খোনকার অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছেলে । অন্যদিকে রঙিন পৃথিবীর দিকেও ওর প্রবল আকর্ষণ । তখন বাংলাদেশে নতুন স্যাটেলাইট চ্যানেল হয়েছে । খোনকার আকর্ষণের প্রবল টানে আক্ষরিক অর্থেই নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলে দিনরাত সেখানে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল ।ওর শরীর শুকিয়ে গেল । চোখের নিচে কালসিটে দাগ পড়ল । একদিন শুনি ও সত্যি সত্যি প্যাকেজ নাটক বানিয়ে ফেলেছে । আমরা উচ্ছন্নে যাওয়া বন্ধুরা আড্ডায় এ নিয়ে হাসাহাসি করি । খোনকার মাঝে মাঝে কঠিনভাবে ক্ষেপে যায় । তখন খুব গম্ভীর হয়ে যায় । আমরা পাত্তা দিই না । আমাদের হাসি চলতে থাকে ।
অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটা চ্যানেলে খোনকার তার বানানো প্যাকেজ নাটকটি প্রচার করতে সমর্থ হল । আমি তখন সাংবাদিকতা করি । ফলে খবরাখবর রাখতে হয় । একদিন দেখি আমাদেরই পত্রিকায় খোনকারের বানানো প্যাকেজ নাটকের সমালোচনা লিখেছে । পত্রিকাটার একটা কপি সঙ্গে নিয়ে এলাম । রাতে আড্ডায় সবাইকে দেখালাম । পত্রিকায় যা লিখেছে তাতে সহজভাবে বললে বলা যায় খোনকারকে সাবান ছাড়া ধুয়ে পরিষ্কার করতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে । ওটাই ছিল সেদিন আমাদের 'টক অব দ্য আড্ডা ।' মজার ব্যাপার হল খোনকার কিন্তু এতটুকু রাগ করে নি ! উল্টো বিপুল আগ্রহ নিয়ে দেখেছে কি লিখেছে !
তবে আমরা বন্ধুরা বাংলাদেশের দর্শক কেন নিজ দেশের টেলিভিশন নাটক দেখতে চায় না কি সেটা জেনে গেলাম । অন্যদিকে খোনকার কিন্তু বেশ সবলীল গতিতে এগিয়ে যেতে লাগল । সেটা অবশ্য সফল নাট্যকার বা নাট্য নির্মাতা হিসেবে নয় । সফল ব্যবসায়ী হিসেবে । খুব দ্রুত বেশ টাকা পয়সা বানিয়ে ফেলল । কিছুদিনের মধ্যে গাড়ি কিনে ফেলল । সে গাড়ি নিয়ে আমাদের আড্ডাতেও এল একদিন । আমাদের একজনের গাড়িটি কেমন জানতে চালিয়ে দেখতে চাইল । কৌতূহলী আমরা উচ্ছন্নে যাওয়া সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম । শহরে ছোট একটা চক্কর দিয়ে আগের জায়গায় এসেই আমাদের বন্ধুটি খোনকারের গাড়িটি আরেকটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে রাস্তার পাশের ড্রেনে ফেলে দিল । খোনকার রেগে বেগুনী হয়ে গেল । শখের ড্রাইভার বন্ধুটিকে যা নয় তা বলে বকাঝকা করল । ওর গাড়ির দুঃখে দুঃখী হলেও খোনকারের গরম মেজাজ দেখে আমাদের খুব হাসি পেল । কিন্তু উচ্ছন্নে গেলেও আমাদের ভদ্রতাবোধ ছিল প্রবল । আমরা প্রকাশ্যে হাসলাম না ।
অনেক বছর পেরিয়ে গেছে । খোনকার এখন আরও সফল মানুষ । দেশের টাকাওয়ালা মানুষদের একজন । যদিও সেটা সে কিরা কসম কেটে অস্বীকার করে । টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় ওর অবাধ যাতায়াত । নিজেও নাকি একটা টেলিভিশন চ্যানেল খুলবে । খুবই সরগরম অবস্থা । হঠাৎ একদিন শুনি খোনকার নারী নির্যাতন মামলায় জেলে গেছে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী নির্যাতনের মামলা তিন রকম । প্রথমটা বদমেজাজি বউ যদি ক্ষেপে যায় তখন দেয় । দ্বিতীয়টা যৌতুকের জন্যে বউ পেটালে । আর তৃতীয়টা চরিত্রগত ।
এখন কথা হল, খোনকার যেমন মিষ্টি আর সফল মানুষ তাতে ওর বউ যতই বদমেজাজি হোক নারী নির্যাতনের মামলা দিবে না । আর দ্বিতীয়টা তো ধোপেই টেকে না । তাহলে তৃতীয়টা... ধুর আমরা আসলেই উচ্ছন্নে গেছি ।
কিছুদিন আগে খোনকার জেল থেকে বেরিয়েছে । খোনকার এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে । তাহাজ্জুদের নামাজও বাদ দেয় না । ওমরাও করেছে । দুদিন আগে বলল, 'দোস্ত, আমি ধোয়া তুলসি পাতা ।' আমি বললাম, 'সেটা আমাকে বলতে হবে কেন ! তুই আমার বন্ধু না ! তোরে আমি খুব ভাল করে চিনি ।' ভুল বানানে আরও অনেক কথাই বলল । আমি ওকে বললাম শুদ্ধ বানান লিখতে । বানান ভুল হলে অনেক সময় শব্দের অর্থ বদলে যায় । খোনকার মাইন্ড করল কিনা কে জানে, আমাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে দিল । আমি এখন আইজুদ্দিনের মতই কষ্টে আছি। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
আমার খুব বাজে একটা অভ্যাস আছে । ভুল বানান দেখলেই কট কট করে চোখে লাগে । ইচ্ছা করে কলম নিয়ে তক্ষুনি বানানটা ঠিক করে দেই । আমার খুব কাছের মানুষ যারা ভুল বানান লিখছে তাদের বলি বানানটা ঠিক করতে । তারা কিছু মনে করে না । তবে সবাই যে করে না সেটা অবশ্য বলা যাবে না । এই তো সেদিন বন্ধু খোনকারকে বললাম বলে খোনকার মহা চটে গেল । আসলে ওর নাম খন্দকার । আমরা বন্ধুরা একটা আঞ্চলিক টান এনে ডাকতাম খোনকার ।
খোনকার আমাদের খুব পুরনো বন্ধু । স্কুল জীবন থেকে পরিচয় । তখন অবশ্য অত বন্ধুত্ব ছিল না । বন্ধুত্বটা হয় আরও পরে । খোনকার অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছেলে । অন্যদিকে রঙিন পৃথিবীর দিকেও ওর প্রবল আকর্ষণ । তখন বাংলাদেশে নতুন স্যাটেলাইট চ্যানেল হয়েছে । খোনকার আকর্ষণের প্রবল টানে আক্ষরিক অর্থেই নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলে দিনরাত সেখানে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল ।ওর শরীর শুকিয়ে গেল । চোখের নিচে কালসিটে দাগ পড়ল । একদিন শুনি ও সত্যি সত্যি প্যাকেজ নাটক বানিয়ে ফেলেছে । আমরা উচ্ছন্নে যাওয়া বন্ধুরা আড্ডায় এ নিয়ে হাসাহাসি করি । খোনকার মাঝে মাঝে কঠিনভাবে ক্ষেপে যায় । তখন খুব গম্ভীর হয়ে যায় । আমরা পাত্তা দিই না । আমাদের হাসি চলতে থাকে ।
অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটা চ্যানেলে খোনকার তার বানানো প্যাকেজ নাটকটি প্রচার করতে সমর্থ হল । আমি তখন সাংবাদিকতা করি । ফলে খবরাখবর রাখতে হয় । একদিন দেখি আমাদেরই পত্রিকায় খোনকারের বানানো প্যাকেজ নাটকের সমালোচনা লিখেছে । পত্রিকাটার একটা কপি সঙ্গে নিয়ে এলাম । রাতে আড্ডায় সবাইকে দেখালাম । পত্রিকায় যা লিখেছে তাতে সহজভাবে বললে বলা যায় খোনকারকে সাবান ছাড়া ধুয়ে পরিষ্কার করতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে । ওটাই ছিল সেদিন আমাদের 'টক অব দ্য আড্ডা ।' মজার ব্যাপার হল খোনকার কিন্তু এতটুকু রাগ করে নি ! উল্টো বিপুল আগ্রহ নিয়ে দেখেছে কি লিখেছে !
তবে আমরা বন্ধুরা বাংলাদেশের দর্শক কেন নিজ দেশের টেলিভিশন নাটক দেখতে চায় না কি সেটা জেনে গেলাম । অন্যদিকে খোনকার কিন্তু বেশ সবলীল গতিতে এগিয়ে যেতে লাগল । সেটা অবশ্য সফল নাট্যকার বা নাট্য নির্মাতা হিসেবে নয় । সফল ব্যবসায়ী হিসেবে । খুব দ্রুত বেশ টাকা পয়সা বানিয়ে ফেলল । কিছুদিনের মধ্যে গাড়ি কিনে ফেলল । সে গাড়ি নিয়ে আমাদের আড্ডাতেও এল একদিন । আমাদের একজনের গাড়িটি কেমন জানতে চালিয়ে দেখতে চাইল । কৌতূহলী আমরা উচ্ছন্নে যাওয়া সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম । শহরে ছোট একটা চক্কর দিয়ে আগের জায়গায় এসেই আমাদের বন্ধুটি খোনকারের গাড়িটি আরেকটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে রাস্তার পাশের ড্রেনে ফেলে দিল । খোনকার রেগে বেগুনী হয়ে গেল । শখের ড্রাইভার বন্ধুটিকে যা নয় তা বলে বকাঝকা করল । ওর গাড়ির দুঃখে দুঃখী হলেও খোনকারের গরম মেজাজ দেখে আমাদের খুব হাসি পেল । কিন্তু উচ্ছন্নে গেলেও আমাদের ভদ্রতাবোধ ছিল প্রবল । আমরা প্রকাশ্যে হাসলাম না ।
অনেক বছর পেরিয়ে গেছে । খোনকার এখন আরও সফল মানুষ । দেশের টাকাওয়ালা মানুষদের একজন । যদিও সেটা সে কিরা কসম কেটে অস্বীকার করে । টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় ওর অবাধ যাতায়াত । নিজেও নাকি একটা টেলিভিশন চ্যানেল খুলবে । খুবই সরগরম অবস্থা । হঠাৎ একদিন শুনি খোনকার নারী নির্যাতন মামলায় জেলে গেছে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী নির্যাতনের মামলা তিন রকম । প্রথমটা বদমেজাজি বউ যদি ক্ষেপে যায় তখন দেয় । দ্বিতীয়টা যৌতুকের জন্যে বউ পেটালে । আর তৃতীয়টা চরিত্রগত ।
এখন কথা হল, খোনকার যেমন মিষ্টি আর সফল মানুষ তাতে ওর বউ যতই বদমেজাজি হোক নারী নির্যাতনের মামলা দিবে না । আর দ্বিতীয়টা তো ধোপেই টেকে না । তাহলে তৃতীয়টা... ধুর আমরা আসলেই উচ্ছন্নে গেছি ।
কিছুদিন আগে খোনকার জেল থেকে বেরিয়েছে । খোনকার এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে । তাহাজ্জুদের নামাজও বাদ দেয় না । ওমরাও করেছে । দুদিন আগে বলল, 'দোস্ত, আমি ধোয়া তুলসি পাতা ।' আমি বললাম, 'সেটা আমাকে বলতে হবে কেন ! তুই আমার বন্ধু না ! তোরে আমি খুব ভাল করে চিনি ।' ভুল বানানে আরও অনেক কথাই বলল । আমি ওকে বললাম শুদ্ধ বানান লিখতে । বানান ভুল হলে অনেক সময় শব্দের অর্থ বদলে যায় । খোনকার মাইন্ড করল কিনা কে জানে, আমাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে দিল । আমি এখন আইজুদ্দিনের মতই কষ্টে আছি। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
©somewhere in net ltd.