নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সব দুঃখের মূল এই দুনিয়ার প্রতি অত্যাধিক আকর্ষণ – হযরত আলী (রাঃ)
খুনের ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রথমে কি করেন?
ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আপনি প্রথমে কি করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা আমাদের যে তথ্য দিয়েছেন তা
হচ্ছে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরের সময়কে তারা দুইভাগে ভাগ করে নেন।
১ম ধাপে তারা নিম্নরূপ কাজগুলো সম্পাদন করেনঃ
প্রথমে তারা ঘটনাস্থল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এর পর Crime ক্রাইম সিন সংরক্ষন,ছবি তোলা,আলামত জব্দকরন,ভিকটিমকে উদ্ধার,সনাক্তকরন,ঘটনার বিষয়ে অবগত হওয়া,খুনের কাজে ব্যবহৃত অস্র উদ্ধারের চেষ্টা করা এবং ঐ অস্র সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা লাভ করা এই কাজগুলো সাধারণত এই ধাপে করেন।
২য় ধাপে তারা নিম্নরূপ কাজগুলো সম্পাদন করেনঃ
আঘাতের চিহ্ন শনাক্তকরণ করা, যে আঘাতের কারনে ভিকটিমের মৃত্যু সঙ্ঘটিত হয়েছে তা নির্ণয় করা,খুনির আগমন ও গমন পথ নির্ণয়, এই খুনের কারনে কে লাভবান হয়েছে অর্থাৎ beneficiary কে শনাক্তকরণ করা।
খুনের আলামত সংরক্ষণঃ
খুনের সঙ্ঘটিত হওয়া স্থানকে বেষ্টন করা
তারা আমাদের জানান যে,তারা প্রথমে খুন সঙ্ঘটিত হওয়া স্থানকে Crime Scene Don’t Cross লেখা সংবলিত হলুদ ফিতা দ্বারা বেষ্টন করে রাখেন।আর যদি Crime Scene Don’t Cross লেখা সংবলিত টেপ না পাওয়া যায় অথবা সহজলভ্য না হয় তখন দড়ির সাহায্যে ঐ খুন সঙ্ঘটিত হওয়া স্থানকে বেষ্টন করা হয়।
ফটোগ্রাফি
ঐ স্থানকে বেষ্টন করার পর শুরু হয় ফটোগ্রাফির কাজ। মূলত মৃতদেহের আশপাশের এরিয়াকে ফটোগ্রাফির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর ফটোগ্রাফির সাহায্যে মৃতদেহের স্থায়ী ভাবে রেকর্ড রাখা যায়।ফটোগ্রাফি নেওয়ার সময় কোন ছবি ডিলিট করা যাবে না।পুরু মৃতদেহের ছবি নিতে হবে প্রয়োজনে বিভিন্ন অবস্থান থেকে নেওয়া লাগবে।ফটোগ্রাফি সর্বঅবস্থায় সবখানে করা প্রয়োজন।সম্ভাব্য সকল স্থানের ফটোগ্রাফি নেওয়া হয়।
মৃতদেহের বাহ্যিক আকৃতি লিপিবকরণদ্ধঃ
১। লাশের শরীরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধকরণ।
২। লাশের পরিহিত জামাকাপড়ের রং এবং কোথাও ছেঁড়া থাকলে তার বর্ণনা।
৩। শরীরে কোন বিশেষ চিহ্ন থাকলে তার উল্লেখ।
৪। লাশের পাশে কোন শপিং ব্যাগ থাকলে তার বর্ণনা।
রক্ত,বীর্য,হাতের নখ,পায়ের নখ,মুখের লালা,শরীরের বিভিন্ন কাঁটা অংশ,সিগারেট এর প্যাকেট,গুলির খোসা,ছুরি ইত্যাদি খুব সাবধানতার সহিত হাতে গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় সংরক্ষন করা হয়।
ঘটনাস্থলে আগত ব্যক্তিদের নাম এবং ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখা।
তারা সবাই খুনের তদন্তের জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করেন তবে ব্যবহৃত সরঞ্জামের মান নিয়ে তারা প্রশ্ন তলেন।
এখন পর্যন্ত সবাই আপনার কয়টি খুনের মামলার তদন্ত হয়েছে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে সবাই একই ধরণের উত্তর দিয়েছে যে,কেউই ৪টির বেশি মামলার তদন্ত করে না।
খুনের তদন্তে সমস্যাবলীঃ
খুনের মামলার তদন্তে সমস্যার সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেয়েছি। নিচে সমস্যাগুলো উল্লেখ করা হলঃ
১। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বে মামলার আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া।
২। হত্যাকাণ্ড সঙ্ঘটিত হওয়ার পর প্রথমে পুলিশকে খবর না দেওয়া।
৩। অপরাধিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা।
৪। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না করা।
৫। অজ্ঞাতনামা লাশের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকা যেমনঃহতের আঙুলের ছাপ, পায়ের ছাপ,ডিএনএ টেস্টের সুযোগ খুব সীমিত থাকা।
৬। অডিও, ভিডিও রেকর্ডিং এর সুযোগ সীমিত থাকা।
খুনের তদন্তের সমস্যাবলির সমাধানঃ
১। অতিদ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং টেপ দিয়ে খুনের স্থান বেষ্টন করা।
২। সন্দেহের তালিকাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে কমিয়ে নিয়ে আসা।
৩। হাতের আঙুলের ছাপ ও পায়ের ছাপ উত্তলনের শিট।
৪। ভিডিও এবং স্টিল ক্যামেরা।
৫। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, পাউডার এবং ডি এন এ পরীক্ষা সহজলভ্য করা।
৬। তদন্ত কর্মকর্তাকে অন্যান্য কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে।
আমাদের সুপারিশমালাঃ
আমরা তাদের সাথে কথা বলে তাদের সমসসাবলি অর্থাৎ খুনের তদন্তে যেইসব সমসসাবলি রয়েছে তা অনুধাবন করতে পারি এবং নিচে এই সমস্যা সমধানের লক্ষে আমাদের কিছু সুপারিশ উল্লেখ করা হলঃ
১। দ্রুততার সাথে খুন সঙ্ঘটিত হওয়ার স্থানে অর্থাৎ occurrence of place এ পৌছার ব্যবস্থা করা।
২। খুনের তদন্ত কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৩। যারা তদন্ত কাজে নিয়োজিত তাদেরকে অন্য কোন কাজের দায়িত্ব না দেওয়া।
৪। উন্নত প্রযুক্তি থানা পর্যায়ে নিয়ে আসা অর্থাৎ ফরেনসিক ল্যাব,হাতের ছাপ,পায়ের ছাপ, উন্নত ভিডিও রেকর্ডিং এর জন্য উন্নত মানের ক্যামেরার ব্যবস্থা,অপরাধপ্রবণ এলাকাকে সিসি টিভির আওতায় নিয়ে আসা।
৫। খুনের মামলার তদন্ত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
৬। প্রসিকিউটর এবং সংশ্লিষ্ট খুনের তদন্ত কর্মকর্তার সাথে মিটিং এর ব্যবস্থা করা।
৭। যেহেতু খুনের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবসময় মানসিক ভাবে খুব ব্যস্ত থাকেন তাই তাদের পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৮। তদন্ত কর্মকর্তাদের সাইকলজিস্ট দ্বারা কউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। যেহেতু খুনের তদন্ত খুব ঝুঁকিপূর্ণ তাই তাদের জন্য ঝুকি ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে করে মানুষ খুন সঙ্ঘটিত হওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে সবার আগে খবর দেয় কারন তাহলে আর মামলার আলামত নষ্ট করতে পারবে না।
©somewhere in net ltd.