নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
আমার খুব কাছের একজন লালনভক্ত বাউল তার নিজ গ্রামে একটা আশ্রম করেছেন। আশ্রম প্রতিষ্ঠায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধা ছিল। পুলিশ, ডিসি, মন্ত্রী, সাংবাদিক এইসব নানা ঝক্কি-ঝামেলা করে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে তাকে। সে-গল্প আরেকদিন বলব।
গত ত্রিশ বছরে বাউলের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ওয়াহাবী হয়ে গেছে। তিনি বাড়ি গেলেই তার এক ওয়াহাবী বন্ধু এসে তাকে বলেন, ‘বন্ধু গান বাজনা খুব খারাপ কাজ, বয়স হয়েছে, এসব ছেড়ে নামাজ-কালাম ধরো। আল্লাহর পথে আসো।’
এই ওয়াহাবী বন্ধুর বাবা আবার শিল্পী ছিলেন, গান গাইতেন। বাবার মৃত্যুর পর সব বাদ্যযন্ত্রও বিসর্জন দিয়েছেন।
বাউল তাকে বলেন, ‘আপনার বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন না?
ওয়াহাবীর উত্তর, ‘ছিলেন।’
‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনার বাবা খারাপ কাজ করবার পারে? আপনার বাবা তো গান-বাজনা করতেন, তিনি কি খারাপ কাজ করছেন?’
ওয়াহাবী বন্ধুটি থতমত খেয়ে যান। কিন্তু ওয়াহাবীর পথ ত্যাগ করেন না, একইভাবে বাউলকে উত্যক্ত করেন।
এই যে একজন শিল্পীর সন্তান ওয়াহাবী হয়েছেন এবং অন্যকে ওয়াহাবী করার চেষ্টা করছেন। এটা এই অঞ্চলের চরম নিষ্ঠুর বাস্তবতা। আজকে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, হিজবুত তাহেরীর, আনসারুল্লাহ বাংলার মতো স্বাধীনতাবিরোধী-মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী খুনি-জঙ্গিদের পক্ষে জনজোয়ার তৈরি হয়েছে, এই উচ্ছ্বসিত জনতার সবার পূর্বপুরুষ কিন্তু এরকম ওয়াহাবী ছিল না। মুসলমান হবার পরও এদের অনেকেরই পূর্ব-পুরুষ বাউল, কবি, পালাকার, যাত্রাশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, বায়স্কোপশিল্পী, পুতুলনাচশিল্পী ছিলেন। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগেও পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ছিল না।
অধিকাংশ মুসলমান শিল্পীর উত্তরপুরুষেরা শিল্পীর আদর্শের পথে থাকে না। এই তো কিছুদিন আগে চাইমব্যান্ডের ভোকালিস্ট খালিদ মারা গেলেন। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ফেইসবুকে লিখেছেন- ‘আমার ছেলে ১২ বছর বয়স থেকে নামাজ পড়ে, মাশাল্লাহ, এই ছেলের গানের গলা থাকা সত্ত্বেও গান না শিখে কোরআন শিখেছে। এই ছেলে বাবাকে নামাজ পড়তে বলতে বলতে হতাশ হয়েছে।’
খালিদের বেশি দূর্ভাগ্য যে তার মৃত্যুর পরে নয়, তার জীবদ্দশাতেই তার পুত্র গোল্লায় গেছে! শিল্পীর সন্তান শিল্পী হবে এমন নিশ্চয়তা নেই, তাই বলে নিজের পূর্বপুরুষ ও তার কর্মকে ঘৃণা করবে! হ্যাঁ করে, কারণ এটাই ইসলামী সংস্কৃতি। নবী মুহাম্মদ নিজের পিতা-মাতাসহ পূর্বপুরুষদের জাহান্নামী বলেছেন!
আজকে ঢাকায় কিংবা গ্রামে থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী যারা শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করছেন, এই যে অনেক কবি-শিল্পীকেই দেখছি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথার প্রতিবাদ করছেন, তাদের বেশিরভাগেরই উত্তরপুরুষ ওয়াহাবী হবে, হবেই। ওই যে বললাম এটা এই অঞ্চলের নিষ্ঠুর বাস্তবতা, ইতিহাস তাই বলে। আপনি যদি শিল্পী হিসেবে অনেক সৃষ্টি রেখেও যান, আপনার এক বা দু-চার প্রজন্ম পরের উত্তরপুরুষ তা মনে রাখবে না, আপনার কর্ম সংরক্ষণ করবে না, কারণ সে জানবে আপনি ইসলামবিরোধী কাজ করেছেন, আপনি জাহান্নামী। কারণ- ইসলামে সংগীত, নৃত্য, বাদ্যযন্ত্র, ভাস্কর্য, চিত্রকলা সব হারাম! হয়তো দু-চারটি ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটবে।
ভারতের বিখ্যাত সানাইশিল্পী ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ’র নাতির নাম- নাজরে হাসান, সে তার দাদুর চারটে সানাই বিক্রি করে দিয়েছিল মাত্র সতের হাজার রূপিতে। রুপায় বাঁধানো ওই সানাইগুলির মধ্যে একটি বিসমিল্লাহ খাঁ বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে বাজাতেন। বাকি তিনটি তিনি উপহার পেয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও, কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল আর বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের কাছ থেকে। অবশ্য সংবাদ পেয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সানাইগুলো উদ্ধার করেছিল। নাতি নাজরে হাসানকেও গ্রেফতার করেছিল।
নিশ্চিতভাবেই সংগীতের প্রতি নাজরে হাসানের কোনো অনুরাগ বা শ্রদ্ধা-ভক্তি ছিল না, দাদুর প্রতিও নয়। আমার ধারনা সে ওয়াহাবী। শুধু সে নয়, বিসমিল্লাহ খাঁ’র উত্তরপুরুষের আরও অনেকেই হয়ত ওয়াহাবী, নইলে সংগীতপ্রেমিরা উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বেনিয়াবাগ এলাকার ভিখম সাহ লেনে অবস্থিত বিসমিল্লাহ খাঁ’র বাড়িটি তার নামে মিউজিয়াম করতে চাইলে উত্তরপুরুষরা তড়িঘরি সেই বাড়িটি কেন ভেঙে ফেলল, কেন সেখানে শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করার উদ্যোগ নিলো? আহা, ওস্তদ বিসমিল্লাহ খাঁ’র স্মৃতি বিজরিত বাড়ি, অনেক লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েও তিনি যে বাড়ি আঁকড়ে পড়ে ছিলেন, যে বাড়ির কক্ষে বসে সানাইয়ে তুলতেন মধুর সুর, যেখানে ছিল তার ব্যবহৃত সমস্ত জিনিসপত্র, পুরস্কার, ছবি, আরও কত কী!
আপনি একজন শিল্পী? ইসলাম ধর্মাবলম্বী? নিশ্চিতভাবেই জেনে রাখুন- আপনার উত্তরপুরুষ হবে ভবিষ্যতের নাজরে হাসান কিংবা হেফাজতের মামুনুল হকের! যারা সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্যকে ঘৃণা এবং ধ্বংস করবে। ধ্বংস করবে আপনার কর্ম, আপনার দর্শন এবং আপনাকেও! মৃত্যুর পর আপনার আবারও মৃত্যু হবে, নৃশংসভাবে! ইসলাম ধর্মাবলম্বী শিল্পীদের কর্ম ও দর্শন নিরাপদ নয় তাদের উত্তরপুরুষদের কাছেই, সুতরাং আপনার কর্ম ও দর্শনের নিরাপত্তায় করণীয় কী তা আপনি-ই ভাবুন।
ঢাকা
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৩
মিশু মিলন বলেছেন: মামুনুল ওয়াহাবী। এই দেখুন মামুনুলের এক ছাত্র ওয়াহাবী ত্যাগ করে সুন্নী হয়েছে।
view this link
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: মিশু ভাই, আপনি ওয়াহাবী বলতে কি বুঝিয়েছেন? এটা বুঝতে পারছিনা।
আমি এতটুকু বুঝেছি যে, '' ইসলামের অনুসারী এবং এর নিয়মনীতি পালনকারীদেরকে আপনি ওয়াহাবী হিসাবে সম্বোধন করেছেন, তাই কি?
ইসলামে পূর্ব পুরুষ কিংবা উত্তর পুরুষকে অন্ধভাবে অনুসরন করতে বলা হয়েছে। সে আপনার বাপ-মা যেই হোক না কেন। আপনাকে ন্যায়ের সাথে ভালোর সাথে থাকতে বলা হয়েছে। খারাপের সংগ ও তার দোসরদের পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
এখন সেই হিসাবে চেতনার দলে যদি খারাপ মানুষ থাকে তাকে যেমন বর্জন-পরিত্যাগ করতে কোন প্রশ্ন ছাড়া ঠিক তেমনি যদি হেফাজতে কিংবা জামাতে যদি ভালো মানুষ থাকে তবে তাকে অনুসরন করাও দোষের কোন কাজ বলে বিবেচিত হবেনা।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১৭
মিশু মিলন বলেছেন: মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের মতানুসারীদের ওয়াহাবী বলা হয়। এটি একটি চরমপন্থী ইসরামী আন্দোলন। এরা ভিন্নমত ও অপরের ধর্মীয় বিশ্বাস দমনে সংহিস পথ বেছে নেয়। শিরকের দোহাই দিয়ে মন্দির ভাঙে, মাজার ভাঙে। ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ধর্মান্তর কিংবা দেশছাড়া করতে চায়।
অবশ্য বাংলাদেশের সাধারণ সুন্নী মুসলমানদের বিরাট অংশের মধ্যেই এইসব প্রবণতা আছে অনেক আগে থেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু ও আদিবাসীদের মন্দির ভাঙচুর, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট এবং মাজারপন্থী মুসলমানদের মাজার ধ্বংস তার বড় প্রমাণ।
আর নিচের দুই প্যারায় আপনি যা বলেছেন, তা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ আপনি আপনার বিশ্বাসের জায়গা থেকে বলেছেন। আমি বললে আপনি আঘাত পাবেন। অনেক তর্ক করেছি, আমার আর বিশ্বাসী মানুষের সাথে বারবার একই তর্কে যেতে ভালো লাগে না। ভালো থাকুন।
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৩৪
কামাল১৮ বলেছেন: আগে দেখতাম মুসলীম লীগের বড় বড় নেতার ছেলেরা কমিউনিষ্ট হয়ে যাচ্ছ।তার মধ্যে প্রধান হলো কমরেড আবদুল হক,বদরুদ্দীন উমর রাশেদখান মেনন সহ অনেকে।আজকে অবস্থা বিপরীত।এই জন্য মোল্লাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে এবং তারা সফল হয়েছে।
এমন চলতে থাকলে আফগান হতে বেশিদিন লাগবে না।এই সরকারকে ঠেকানে না পারলে এরাই আফগান বানিয়ে ছাড়বে।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১৯
মিশু মিলন বলেছেন: একদম, আপনার সঙ্গে একমত কামাল ভাই।
আফগান তো প্রায় হয়েই গেছে।
৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৫
কামাল১৮ বলেছেন: আসল ইসলাম কিন্তু ওহাবীরাই। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব এই মতের প্রতিষ্ঠাতা।তিনি ইসলামের মৌলিক দিকগুলি ব্যাখ্যা করেন এই অর্থে তারা মৌলবাদী।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২৩
মিশু মিলন বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ভাই, আসল ইসলাম ওয়াহাবীরাই। নবী নিজেই তো এইসব ধ্বংসাত্বক কাজকর্ম করতেন। কামাল ভাই আমি আপনার একটা ভিডিও ইন্টারভিউ নিতে চাই মুক্তিযুদ্ধের ওপর। জানাবেন প্লিজ- [email protected]
৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:৫৬
অগ্নিবেশ বলেছেন: মিশুভাই, প্রোফাইলে পিক দিয়েছেন, ইসলাম নিয়ে কিছু না লেখাই বেটার। যাদের সমালোচনা করছেন তারা কিন্তু সূফী বা বাউল না, তারা হল শান্তিকামী কল্লাফেলা মুসলমান।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৩
মিশু মিলন বলেছেন: জানি ভাই, আমি নিরাপদ নই। কিন্তু যা হচ্ছে, তা সহ্য করতে পারছি না।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫১
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: ওহাবী নিয়ে ছিলেন ওহাবী নিয়েই থাকতেন, মামুনুল আর হেফাজতকে ডাকতে গেলেন কেন? ওরাওতো ওহাবী বিরোধী!