নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশপ্রেম এক ভয়ানক আত্মঘাতী ও ব্যাহায়া অসুখ

১০ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:০৮

দেশপ্রেম এক ভয়ানক আত্মঘাতী ও ব্যাহায়া রকমের অসুখ, আমি এই অসুখে আক্রান্ত। ২০১৩ সালের হেফাজতি তাণ্ডবের পর থেকে কতবার ভেবেছি দেশ ছেড়ে চলে যাব। একবার গিয়েছিলামও, দেড়মাস পর ফিরে এসেছি, ওই অসুখের কারণেই। ওই দেড় মাস আমার মনে হয়েছিল- একটা অদৃশ্য বোতলে বন্দী হয়ে আছি, চারপাশের পরিবেশ ও মানুষ অচেনা, গাছগুলো আমাকে ঠিকমতো অক্সিজেন দিচ্ছে না, বাতাসে চেনা গন্ধ পাচ্ছি না! লিখতেও পারতাম না তেমন। চারপাশের মানুষগুলোকে অচেনা মনে হতো, কোনো মানুষের ভেতরটা অচেনা হলে তার কথা কী করে লিখবে লেখক! ভেতরটা ঠিকঠাক চিনতে হলে তো দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস করতে হয়। আবার নিজের দেশের চেনা মানুষদের নিয়েও লিখতে পারতাম না, মনে হতো দূর থেকে ছুঁতে পারছি না তাদের, মানুষ-প্রকৃতি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতো, লেখা ধরা দিত না।

আমার কোনো পিছুটান নেই, চাইলে টাকা-পয়সা খরচ করে পাশ্চাত্যের কোনো দেশে চলে যেতে পারতাম, কিন্তু যাইনি ওই এক কারণে, যদি লিখতে না পারি! লেখার জন্য জীবনের কতকিছু স্যাক্রিফাইস করলাম, কত চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিলাম, লিখতেই যদি না পারি তবে বেঁচে থাকা মানে তো কেবল অন্তসারশূন্য কালযাপন করা!

নানা সময়ে দেশের ৪২ টা জেলা আমি ভ্রমণ করেছি, বিশেষত গত দু-বছর ধরে দেশের নানা প্রান্ত ভ্রমণ করে বুঝতে পারছিলাম, এই দেশে আর থাকা যাবে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তালেবান শাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে গান-বাজনা, যাত্রা, বাউলগান, পালাগান সব বন্ধ। এসবের জায়গা দখল করেছে ওয়াজ মাহফিল। ফিরে এসে এসব নিয়ে লিখেছিও ব্লগে-ফেসবুকে। লেখা পড়ে ব্লগে আমাকে গালাগালি করেছে, ভারতের দালাল বলেছে, গুজব রটনাকারী বলেছে।

বারবার লিখেছি- প্রান্তিক জনপদে তালেবানি শাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত, শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষা। এবার শেখ হাসিনার পতনের পর সেই সুযোগ পেয়ে তালেবানিরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আদিবাসীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে; সারাদেশের ভাস্কর্য ভেঙে, যাদুঘর-পাঠাগার ভেঙে, সিনেপ্লেক্স ভেঙে, শিশু একাডেমিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমি একবিন্দু মিথ্যা বলিনি।

নিজচোখে প্রত্যন্ত জনপদের পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করার পর আবারও দেশত্যাগের চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি। কাছের মানুষেরা আমার দেশত্যাগের কথাশুনে আমাকে নানাভাবে বোঝায় দেশে থাকার জন্য, বলে- ‘দেশ তো তোরও, তুই দেশ ছাড়বি কেন?’

আমি জানি দেশ আমারও, কিন্তু দেশ কি ভাবে আমি তার? তা ভাবলে দেশের ধর্ম থাকে কী করে?

দেশ ছাড়ব কী ছাড়ব না এই দ্বিধাদন্দ্বে ভুগি আর দেশপ্রেম নামক ব্যাহায়া অসুখের ঘোরে দেশ নিয়েই স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি আমার মায়ের নামে একটা লোকশিল্প যাদুঘর করব। পাঠাগার, মুক্তমঞ্চ করব। একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলব। যে জন্য ভারত থেকে ব্যাগভর্তি পুতুল নিয়ে আসি, এপারের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঝগড়া করি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পুতুল, সরা, ঘট, মাছ ধরার বাইন ইত্যাদি সংগ্রহ করে আনি। লোকে আমায় পাগল ভাবে, কোথায় এই বয়সে স্ত্রী আর ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভরা সংসার হবে, বাচ্চারা ঘরময় ছুটোছুটি করবে, তা না আমি শত শত মাটির পুতুলে ঘর ভরেছি! লোকে প্রশ্ন করে- ‘এসব করে লাভ কী?’

কী উত্তর দেব আমি? এদের সাথে কথা বলতেও আমার রুচি হয় না, লাভ ছাড়া জগতে আর কিছু চিন্তা করতে পারে না এরা। মানুষ নয়, এদেরকে আমার লম্বা একখণ্ড মাংসপিণ্ড মনে হয়! যখন আবৃত্তি সংগঠন করেছি, থিয়েটার করেছি, তখনও এই মাংসপিণ্ডরা প্রতিনিয়ত আমাকে প্রশ্ন করেছে- ‘এসব করে লাভ কী?’

জগতটা ব্যবসার জায়গা না, জগতে সবাই লাভ করতে আসে না। আমার কাছে পৃথিবী এক বিস্ময়কর পর্যটনকেন্দ্র। আমি পরিভ্রমণে এসেছি। পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ উপভোগ করতে করতে একদিন ফিরে যাব। যাবার আগে পৃথিবীকে ধূলিকণাসম হলেও কিছু দিয়ে যেতে চাই, তাই করতে চেয়েছি লোকশিল্প যাদুঘর সহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এর জন্য জায়গা খুঁজে বেরিয়েছি নানা জায়গায়। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার একটা জায়গা দেখে পছন্দও হয়েছিল, কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল- এখানে জমি কিনলে জমিসহ আমি গায়েব হয়ে যাব! মানুষ হতে গেলে নূন্যতম যে সুশিক্ষা, সংস্কৃতি থাকতে হয়, তা সেখানকার মানুষের মধ্যে নেই! কুয়াকাটা, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে, শ্রীমঙ্গলেও গিয়েছি জায়গা দেখতে। আবারও একজন শ্রীমঙ্গলের জমির ভিডিও পাঠিয়েছে, যাবার পরিকল্পনা করছিলাম এরই মধ্যে ঘটে গেল এইসব তাণ্ডব। ভাগ্যিস এর আগে জমি কিনে ফেলিনি।

অনেক বছর আগে বিরুলিয়ার বারোভাজা বিক্রেতা নারায়ণ কাকার সাথে কথা হচ্ছিল ১৯৬৪ সালে বিরুলিয়ার হিন্দু হত্যা নিয়ে। একদিনে মুসলিমরা ২৪ জন মানুষকে কচুকাটা করেছিল। অনেকে পালিয়ে চলে গিয়েছিল ভারতে। প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আপনারা যাননি কেন?’

তিনি বলেছিলেন, ‘বাপ-কাকারাও আজ যাই কাল যাই কইরা আর গেল না। আমারও আজ যাই কাল যাই কইরা আর যাওয়া অইলো না।’

নারায়ণ কাকাও দেশপ্রেম নামক ভয়ানক আত্মঘাতী ও ব্যাহায়া অসুখে আক্রান্ত। কিন্তু আমার নিজের রোগের উপশম এবার করতেই হবে। এই দেশে পুতুল যাদুঘর বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার সাধ আমার মিটে গেছে! এখন প্রাণটা নিয়ে দেশ ছাড়তে পারলেই বাঁচি। তবে পুতুল যাদুঘর বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নিশ্চয় হবে, বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে!

১০ আগস্ট, ২০২৪

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:৩২

সোনাগাজী বলেছেন:



কোমলমতিরা যদি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকে, অনেক হিন্দুরা ভয়ে পালাবে।

১০ ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:০১

মিশু মিলন বলেছেন: সেই ১৯৪৬ সাল থেকেই পালাচ্ছে, যাত্রা অব্যাহত থাকবে এই আর কী।

২| ১০ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:৩৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আপনার হয়তো অপরাধবোধের কারণে একটা দেশছাড়ার ফুফিয়া পাইছে। গুনি মানুষ ছিলেন কালো চশমা দিয়ে দেশের প্রতিটি প্ররিস্থিতি দেখেছেন বলেই হয়তো আয়না ঘর কিংবা হারুনের নির্যাতন কিংবা অকাতরে কোমলমুতিদেরকে গুলিতে মেরে ফেলা চোখ এড়িয়ে গিয়েছে!
এই দেশ নিয়ে লিখার মতো কি বা বাকী থাকতে পারে আপনার কাছে, ভবিষ্যতে কিবা করতেন বুঝে গেছি।

১০ ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

মিশু মিলন বলেছেন: শেখ হাসিনার দুঃশাসন আমার চোখে এড়িয়ে গেছে এটা কে বলল আপনাকে? কার চোখে দেখেছেন? নিজের চোখে আমার পুরনো পোস্টগুলো দেখে আসেন।
সব লেখার মধ্যে নিজের পছন্দের উপাদান খোঁজাটা চরম ফ্যাসিবাদী লক্ষণ। আপনাদের মতো চিন্তার মানুষের জন্য এই দেশ কখনো স্বৈরশাসকমুক্ত হয় না। অশিক্ষিত মাংসপিণ্ড।

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:২৫

আরশাদ রহমান বলেছেন: আমারা জাতী হিসাবে খুব যে ভালো তা বলা যাবেনা। মাঝে মাঝে মনেহয় হয়তো কোনো একদিন সত্যিই আমাদের চরিত্র বদলাবে আবার মনেহয় কোনোদিন বদলাবে না তাই মনেহয় মেনে নেই আমারা যেরকম রকমই। আমরা পাপ পূণ্য বিচার করি ধর্ম বর্ণ দিয়ে।

১১ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৫১

মিশু মিলন বলেছেন: এই লুণ্ঠনপরায়ণ জাতি কোনো দিনও ভালো হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.