নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
সীতা। কলঙ্কিনী সীতা, জনম দুঃখিনী সীতা, পোড়াকপালে সীতা, হতভাগিনী সীতা। তোমার নামের সাথে কত না ব্যথিত শব্দ দীর্ঘশ্বাসের মতো ঝরে পড়ে-মানুষের মুখ থেকে। রামমঙ্গল পালা দেখতে দেখতে তোমার জন্য মৌন হাহাকার করে, অঝোরে চোখের জল ফেলে-অগনিত ভক্ত। আবার তারা রামচন্দ্রকেও ভীষণ ভালবাসে! এ কেমন দ্বিমুখী ভালবাসা!
বাল্যকালে আমিও রামচন্দ্রকে খুব ভালবাসতাম। অমন সুদর্শন রাজপুত্র-তাবৎ অনুমান যার ভক্ত! ধনুক হাতে-তীর ছুঁড়ে যে রাবণ নিধন করে, এমন এক চরিত্র উঠতি বালকের কাছে ভাল না লেগে পারে! আমারও ভাল লেগেছিল। খুব ভাল লেগেছিল!
তাইতো সেই বাল্যকালে কতোবার রামচন্দ্র সেজেছি! প্রিয় কুকুর লালুকে ভেবে নিয়েছি হনুমান! বাঁশের চটা দিয়ে ধনুক বানিয়েছি, পাটকাঠির ছিদ্রে খেজুর কাঁটা ঢুকিয়ে বানিয়েছি তীর। তারপর একের পর এক ছুঁড়েছি সেই তীর বাঁশঝাড়ে- নিরীহ শালিককে রাবণ ভেবে! আমার হনুমান লালুও না বুঝে লেজ নেড়ে, ঘেউ ঘেউ করে ছুটোছুটি কম করেনি। সেই নকল রামচন্দ্র বা নকল হনুমান, দুজনের কেউ-ই একটাও রাবণ নিধন করতে পারেনি কোনদিন!
এখন আমি রামচন্দ্রকে একজন সাম্রাজ্যলোভী, লোকনিন্দার ভয়ে কুন্ঠিত, ভীরু, নৈতিক বোধ-বুদ্ধিহীন, অপৌরুষেয় হৃদয়হীন পুরুষ ছাড়া অন্যকিছু ভাবতেই পারি না। সেদিন রামচন্দ্র পারতো না-তুচ্ছ লোকনিন্দা আর অন্ধ সমাজ বিধান উপেক্ষা করে, সাম্রাজ্য ছুঁড়ে ফেলে, তোমার হাত ধরে রাজ প্রাসাদ থেকে বেড়িয়ে আসতে? ....রামচন্দ্র পারেনি। এখন আমি রামচন্দ্রকে কেবল করুণা-ই করতে পারি।
বাল্যকালে আমি তোমাকে কি চোখে দেখতাম, এখন আর তা মনে পড়ে না। এখন ইচ্ছে হয়, তোমাকে পেলে প্রিয়তমা প্রেমিকার মতো, পত্নী মতো বুকে আগলে রেখে আদর করি! হৃদয়হীন রামচন্দ্রকে দেখিয়ে দিই- ভালবাসা কারে কয়!
ভাবছো বানিয়ে বলছি? মোটেই না। অযোধ্যায় না থাক, বাংলায় এমন ভালবাসার নজির অনেক আছে। একবার রাবণেরা বাংলা আক্রমণ করেছিল। লঙ্কার রাবণ নয়, সিন্ধু পাড়ের পাক রাবণ! নির্বিচারে মানুষ মেরেছিল ওরা, লক্ষ লক্ষ সীতাদের সম্ভ্রম লুন্ঠন করেছিল। তারপর যখন বাংলার মানুষেরা গর্জে উঠলো, পরাজিত সিন্ধু পাড়ের রাবণেরা তখন নতজানু হয়ে সিন্ধু পাড়েই ফিরে গেল। তখন ওদের বন্দীশালা থেকে বেরিয়ে এলো আমাদের সীতারা। সেদিন বাংলার হৃদয়ের বরপুত্ররা বুকে টেনে নিয়েছিল সব হারানো বাংলার সীতাদের। লোকনিন্দার ভয়ে ভীত না হয়ে, তারা সীতাদের ভালবেসেছিল, ঘর বেঁধেছিল, সীতাদের জঠরে ফুঁটিয়েছিল-পবিত্র ফুল!
আর কেউ কেউ-যারা রামচন্দ্রের মতো, তারা লোকনিন্দার ভয়ে সীতাদের দূরে ঠেলে দিয়েছিল। তাইতো কিছু সীতা-গলায় দড়ি দিয়েছিল, বিষপান করেছিল, জলে ডুবে মরেছিল। আর কিছু সীতা, পাগলিনী হয়ে দেশান্তরি হয়েছিল।
তোমার প্রতি আমার অভিমান হয় জানো সীতা, সেদিন তুমি কেন অমন নাটকীয় আত্মাহুতি দিতে গেলে? তবে কি তুমিও অন্ধ ছিলে রামচন্দ্র আর তার সাম্রাজ্যের মোহে! তাই আকাক্সিত মানুষ আর প্রজাসাধারণের কাছে অপমানিত হয়ে, অপমানিত সম্রাজ্ঞী হয়ে বেঁচে থাকতে চাওনি! সে কারণেই বেছে নিলে আত্মাহুতির পথ!
কেন সীতা?
সেদিন অযোধ্যায় কি এমন একজন পুরুষও ছিল না-যার হয়তো রাজ্য ছিল না, বংশ গৌরব ছিল না, কিন্তু হৃদয়ের গৌরব ছিল! তুমি পারতে না ঐ প্রহসনের রাজপ্রাসাদ ছেড়ে, চন্দন কাঠের বর ছেড়ে, কোন একজন হতদরিদ্র হৃদয়ের বরপুত্রের গলায় পুনর্বার মালা পরিয়ে তার জীর্ণ কুঠিরে থাকতে! সেদিন তুমি যদি অমন নাটকীয় আত্মাহুতি না দিয়ে-তাই করতে, তবে তোমার নামে আরো বেশি জয়ধ্বনি পড়তো। আর আজকের বেশিরভাগ সীতারাও তাদের জীবনসঙ্গী হিসেবে, কেবল বিত্তবান হৃদয়হীন চন্দন কাঠের রামচন্দ্র না খুঁজে, হয়তো হৃদয়ের বরপুত্র খুঁজতো!
©somewhere in net ltd.