নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
১ম পর্বঃ একের পর এক ইস্যু নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলার পাঁয়তারা - পর্ব - ০১ - এই ক্রান্তিলগ্নে এই সকল সুবিধাভোগীদের চিনে রাখুন ভালো করে
প্রথমেই দুঃখিত, ১ম পর্বের পর ২য় পর্বটা বের করতে কিঞ্চিত দেরি করার জন্য । দেশে এখন অনেকটাই রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটছে, এক দিনের ব্যবধানে যেখানে চিত্র পালটে যাচ্ছে, সেখানে ২য় পর্ব আমি যখন লিখছি তখন হয়তো আরও অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে । যাই হোক, আমার এই লেখার এটাই শেষ পর্ব, কারণ আমি এটা নিয়মিত লেখার অংশ বানাতে চাচ্ছি না । এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু সবাইকে বুঝানো যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের শাসনামলে কি পরিমাণ চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে ।
যাই হোক, চলে যাই মূল লেখায় ।
যখন একের পর এক বাক্য বিনিময়ের পরও দেশের ছাত্র সমাজকে থামানো যাচ্ছিল না, তখন আওয়ামী মতাদর্শী ঘেঁষা সুশীল সমাজ কিন্তু থেমে নেই । তারা পরবর্তী উপায় খুঁজে বের করার পাঁয়তারা করতে থাকে । ধীরে ধীরে এই সুশীল সমাজ পরিণত হয় "আফসোস লীগে" । আফসোস লীগ খালি কথায় কথায় আফসোস করে । "এমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম?", "কই আগে তো এরকম হতো না!!", "ছাত্ররা বেশি বাড়াবাড়ি করছে, ইশ, তাদের দেখার কি কেউ নেই?", "মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কি এই ছাত্ররা নিশ্চিত করতে পারছে?" কিংবা "ছাত্রদের অধীনে জনজীবনের স্বস্তি কি ফিরে এসেছে?" ইত্যাদি কতশত পোস্টে সোশ্যাল মিডিয়া সয়লাব । আর এটা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই ।
ওহ বলে রাখা ভালো, এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সরকার সমর্থক ছাত্র জনতার বেশ কয়েকটি ভুল চোখে আসতে থাকে । যেমন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রথম নিযুক্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের বলা উক্তি, "দল গোছান, আপনারা (আওয়ামী লীগ) তো নিষিদ্ধ না" । এই একটা বক্তব্যের পর ছাত্র জনতা যারা কিনা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিল তারা ফুঁসে উঠে ক্ষোভে । অবশেষে সেই ক্ষোভের পরিণতি হিসেবে তাকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
সংখ্যালঘুদের ব্যানারে ছাত্রলীগ, ভালো করে বললে আওয়ামী লীগ শাহবাগের আন্দোলনে পেরে উঠতে না পেরে শাহবাগ চত্ত্বর খালি করে দেয় ।
সুশীলরা এরপর তাদের হাতে থাকা আরেকটি খেলা শুরু করে । এবার তাদের দাবার গুটি হয়ে দাঁড়ায় আনসার বাহিনি । জী হ্যাঁ, নিরীহ আনসার বাহিনীকে বাংলাদেশে মূলত "গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী"-ও বলা হয়ে থাকে । এই আনসার বাহিনী হঠাৎ গত মাসের শেষদিকে সচিবালয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করতে আসে । এক পর্যায়ে কোন এক গোপন নির্দেশে তারা ধ্বংসাত্মক আচরণ প্রদর্শন করা শুরু করে । এক পর্যায়ে তারা সচিবালয় ঘেরাও করে । সে সময় সচিবালয়ে উপদেষ্টাদের পাশাপাশি উপদেষ্টাদের সহযোগী দুই ছাত্র ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহও সেখানে আটকা পড়ে । এক পর্যায়ে আনসার বাহিনীর মধ্যে কতিপয় সদস্য তাদের উপর হামলা করে । এমনকি তারা আশেপাশে যত ছাত্র পায়, মারধর করা শুরু করে । এমনকি ৫ই আগস্ট পূর্ববর্তী তৎকালীন সরকার ও তাদের পোষ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপুর দুষ্কৃতিকারী যেভাবে গুলি চালিয়ে ছাত্র আন্দোলন নিরৃত্ত করার চেষ্টায় ছিল, আনসার বাহিনীর সদস্যরাও অতর্কিত গুলি চালানো শুরু করে । এতে কেউ মারা না গেলেও কয়েকজন গুরুতর আহত হয় ।
অবশেষে ছাত্রনেতাদের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্ররা সচিবালয়ের দিকে এসে আনসার বাহিনীকে নিরৃত্ত করতে সমর্থ হয় । ধারণা করা হয়, তৎকালীন শরিয়তপুরের কোন এক আসনের এমপির আত্মীয় ছিল তৎকালীন আনসার বাহিনীর ডিজি । তার নির্দেশেই এই প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করা হয় । ছাত্ররা আনসার বাহিনীকে পরাস্ত করে তাদেরকে সেনাবাহিনীর জিম্মায় ন্যস্ত করে । তবে এই ঘটনা জনগণের চোখে আঙ্গুল দিয়ে একটি জিনিস দেখিয়ে দেয় । দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা একেবারেই কম । যেখানে সচিবালয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের জীবনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন ভূমিকা চোখে পড়লো না, সেখানে সাধারন মানুষের কি অবস্থা, একবার খালি চিন্তা করা যায় । যাই হোক, এ যাত্রায় আরেকটি প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা সফলভাবে প্রতিরোধ করা হয় ।
কিন্তু এর অল্প কয়েকদিন পরই সেই শাহবাগ চত্ত্বরে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করে ঢাকা শহরের প্যাডেল চালিত রিকশাওয়ালারা । তাদের আন্দোলন মূলত ব্যাটারিচালিত রিকশাওয়ালা এবং কিছু অন্যায়ের বিরুদ্ধে । ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই প্যাডেল চালিত রিকশাওয়ালারা দলে দলে শাহবাগ চত্ত্বর ঘিরে রাখে এবং মুহমুহ শ্লোগান দিতে থাকে ।
তারা প্রথমে ৭ দফা, পরবর্তীতে ১০ দফা দাবি নিয়ে হাজির হয় । এর জন্য ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামও দিয়ে দেয় তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। অবশেষে সরকার থেকে আশ্বাস পেয়ে তারা আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত হয়।
রিকশাওয়ালাদের আন্দোলন পরবর্তী আন্দোলনের হুমকি প্রদান করে সারাদেশের পল্লীবিদ্যুৎ এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা । বেতন, বকেয়া ইত্যাদির দাবিতে এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নেতারা । তবে এই আন্দোলনের খবর পূর্বেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলে সমালচনার তীর আসতে থাকে পল্লীবিদ্যুৎ এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর। তাই এই আন্দোলন এত জোরেশোরে করা হয়নি ।
এই আন্দোলনের ধারা কিন্তু এখানেই শেষ নয় । এরপর অতি সম্প্রতি ডাক্তারদের উপর একদল দুর্বৃত্তদের হামলার প্রতিবাদে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে "কমপ্লিট শাটডাউন" কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় । অতি দ্রুত সকল ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত ডাক্তারদের সংগঠনগুলো এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানায় ।
ইত্যাদি আরও কত কত ছোট ছোট আন্দোলনের কথা আমি এখানে নিয়েই আসি নাই । অনেকেই তো মজা করেও বলে ফেলছেন, এরপর আন্দোলনগুলো অনুমান করা যাক । যেমনঃ ঢাকাস্থ ভাড়াটিয়াদের আন্দোলন, বাড়ির গৃহিণীদের সমঅধিকার পাওয়ার আন্দোলন, রাস্তার ফকিরদের আন্দোলন কিংবা বাসার কাজের বুয়াদের আন্দোলন ইত্যাদি আর কি কি আন্দোলনের আশংকা আপনি করছেন, কমেন্টে জানাতে পারেন ।
বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে, বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি । দাবি দাওয়া এখন স্বাধীন ভাবে চাইবো । আগে যা বলতে পারিনি, এখন তা বলবো । অনেকেই বলছেন, "এই ১৭ বছর চুপ থাকার পর এখন এত সরব কেন?" আমি অবশ্য এটা বলি না । ১৭ বছর চুপ ছিলাম তার মানে এই না যে বাকি জীবনও চুপ থাকতে হবে । আন্দোলন নাগরিকের ন্যায্য সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার । তবে আমাদের নতুন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে রাষ্ট্র উন্নয়নের ও মেরামতের । এমন অনেক রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি নেওয়া হবে ভবিষ্যতে, যাতে অনেকের দাবি অটোমেটিক পূরণ হয়ে যায় ।
মনে রাখতে হবে, আপনি দাবী যেটা দিচ্ছেন, সেটা একটি সামগ্রিক স্বার্থকে বিবেচনা নিয়ে চাইতে হবে, একক বা ব্যক্তিগত স্বার্থকে মাথায় নিয়ে নয় । দিনশেষে একই জিনিসের দাবী দুই জন মিলে করে বসলে, একজনের দাবি হয়তো পূরণ হবে, অন্যজন হয়তো বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করে বসতে পারে ।
আবার ফিরে যাই সুশীল সম্প্রদায়ের কাছে । এত এত আন্দোলন হচ্ছে, এর জন্য দায়ী পুরোপুরি কি এই সুশীল সমাজ (ভালো করে বললে সুশীল লীগ)? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ আবার না । সুশীল লীগের ষড়যন্ত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আন্দোলনের ধারা শুরু হয়, এটা সত্যি কিন্তু কিছু আন্দোলন সত্যিই যৌক্তিক । এমনকি ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা ছাত্র জনতাকেও এই গণদাবীগুলো আমলে নিতে হবে । সকল দাবিকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উড়িয়ে দেওয়া চলবে না । মনে রাখতে হবে, "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বেশি কঠিন" । আমাদের ছোট্ট কোন ভুলের জন্য স্বাধীনতা অর্জনের স্বাদ যেন কোন অংশে কমে না যায়, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে ।
ধন্যবাদ সবাইকে ।
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৫
কামাল১৮ বলেছেন: অনেক মিল কারখানা পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।এই সব শ্রমিকরা যখন বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবে তখন চোখে সর্ষের ফুল দেখা ছাড়া কোন পথ থাকবে না।
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০৮
প্রহররাজা বলেছেন: বিদেশে অবস্হানরত লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা দেওয়া উচিত, এরা সাকিবের মতো আমেরিকা কানাডা থেকে গুলি করে ঢাকায় ছাত্র মেরেছে। এছাড়া জুলাই মাসে যারা ফেসবুকে আন্দোলনের পক্ষে কোন পোষ্ট দেয় নাই তাদের বাসা বাড়িতে সেনা তত্তাবধানে মেধাবি ছাত্র দিয়ে ভাংচুর, চুরি, অগ্নিসংযোগ করা হোক। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে " ১৫ বছর চুপ ছিলেন।, এখন কেনো কথা বলতে আসছেন" --একথা বলে রাস্তায় বেদম পিটানো উচিত।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:২৯
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর আওয়ামী ক্ষমতায় ছিলো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনগুলোতে নিজেদের পছন্দের মানুষজন বসিয়েছে। ফলে তারা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের মানুষদের যৌক্তিক দাবীদাওয়াও আওয়ামী সরকারের নিকট উপস্থাপন করেনি। সব জমে আছে।
তাই চারদিকে এতো এতো আন্দোলন, দাবীদাওয়া....
আমি আশাবাদী, ভালো কিছু হবে।