নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
Welfare officer যার বাংলা অর্থ হলো 'কল্যাণ কর্মকর্তা।' শুনতে যেমন ভালো শোনা যায় তেমনি তার কাজ কর্ম, দায় দায়িত্ব পালনের মধ্যেও কল্যাণ ফুটে ওঠে। একজন কল্যাণ কর্মকর্তার কাজ তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকলের সুযোগ, সুবিধা, অসুবিধা, সমস্যা ইত্যাদি সব কিছু দেখা শুনা করা । মালিক ও শ্রমিক এই দুইয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে কল্যাণ কর্মকর্তার অবদান অবিস্মরণীয়।
যদিও দেশের বাইরে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই এই কল্যাণ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়, কিন্তু বাংলাদেশে শুধু সেই সকল প্রতিষ্ঠানে এই পদের নিয়োগ দেখা যায়, যেখানে কমপ্লায়েন্স বা বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা (লিগ্যাল প্রয়োজনীয়তা, কাস্টমার কর্তৃক সৃষ্ট প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি) পূরনের জন্য আলাদা বিভাগ আছে সেখান । বাংলাদেশে এই Welfare officer পদটি বেশি দেখা যায় আমাদের তৈরি পোশাক কারখানা বা পোশাক প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে । সেখানে এইচআরএডমিন এবং কমপ্লায়েন্স (HRAC) বিভাগ এর অধীনেই মূলত এই Welfare officer বা 'কল্যাণ কর্মকর্তা' কে নিয়োগ দেওয়া হয় । যদিও বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এই পদটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় কোন মহিলা অফিসার কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে এই পদটিতে পুরুষ অফিসারও নিয়োগ দেওয়া হয় ।
আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাটা বরাবরই আঁতকে উঠার মত । আজকে একটু ক্যারিয়ার বিষয়ক আলোচনা করবো । বলতে পারেন, এই লেখার মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার বিষয়ক লেখার হাতে খড়ি করলাম ।
অনেকেরই ইচ্ছা থাকে এই Welfare officer বা 'কল্যাণ কর্মকর্তা' হওয়ার । আবার অনেকেই ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে বলতে পারেন না, যে তাকে আদতে নিয়োগ দিলে তিনি করবেন কি? আবার অভিজ্ঞতা আছে, এমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে এই পদে অন্য কোথাও দায়িত্ব পালন করার পরও গুলিয়ে ফেলেন যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় আপনি একজন ওয়েলফেয়ার হিসাবে প্রতিদিন কি কি দায়িত্ব পালন করেন?
অনেকেই বলে ফেলেন শ্রম আইনে বিধি ৭৯ উপধারা (২) এ যে ১৪ টি দায়িত্ব কর্তব্যের কথা বলা আছে। তার বলার মধ্যে কোনো ভুল হয়ত নাই কিন্তু যিনি ইন্টারভিউ বোর্ডে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তিনি মুখস্ত করা কোনো দায়িত্ত্ব কর্তব্য কল্যাণ কর্মকর্তা কে নয়, বরং যিনি বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে যে যে দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই পালনে কতটুকু কল্যাণ শব্দটি জড়িয়ে বা মিশে আছে এটাই খুঁজেন।
তাই অভিজ্ঞদের বলতে চাই অনেক সময় মুখস্ত দায়িত্ব কর্তব্যের কথা না বলে আপনি প্রতিদিন যে যে কাজ করেন সেইগুলো বলবেন। এতে করে আপনার ভিতরের কল্যাণ ভাব ফুটে উঠবে যা আপনাকে কল্যাণ কর্মকর্তা নামের সার্থকতা দিবে। আর ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই মুখস্ত বিদ্যা করা ছাড়া অন্য উপায় থাকেও না ।
একজন Welfare officer বা কল্যাণ কর্মকর্তার দৈনন্দিন দায়িত্বগুলোর মধ্যে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো পড়ে,
১. প্রধান দায়িত্ব হলো সঠিক সময় কর্মস্থলে আসা,
২. তারপর হাজিরা দেয়া এবং মহিলা শ্রমিক যে পথ দিয়ে প্রবেশ করে সেখানে তাদের সাথে ইশারায় সাক্ষাৎ করা । এর ফলে তাদের মনে বিশ্বাস ও ভালোবাসার ভীত শক্ত হয়,
৩. তারপর কাউন্সেলিং খাতা নিয়ে কাউন্সেলিং করতে ফ্লোরে ফ্লোরে যাওয়া কিংবা জায়গা ভাগ করে সেখানে যাওয়া,
৪. কেউ সদ্যই কোন একটি দিন অনুপস্থিত থাকলে, সে কেন অনুপস্থিত ছিল তা বিশ্লেষণ করা এবং তার উপরে counselling বা পরামর্শ প্রদান করা,
৫. কেউ অসুস্থ্ থাকলে অভ্যন্তরীণ মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা কিংবা প্রয়োজনে বাইরের মেডিকেলে পাঠাতে হলে সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের সাথে আলোচনা করা,
৬. কারো ছুটির প্রয়োজন হলে প্রোডাকশন বিভাগে বা ঐ কর্মীর স্ব বিভাগে যিনি দায়িত্ব প্রাপ্ত আছেন তার সাথে আলোচনা করে ছুটির ব্যবস্থা করা,
৭.মেটার্নিটি বা মাতৃত্বকালীন ফলোআপ-এ যারা আছেন তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাওয়া এবং লাইন চিফ বা সুপারভাজার বা ইনচার্জ এর সাথে কথা বলা যাতে গর্ভবতিকে দিয়ে চাপসৃষ্টি মূলক কাজ না করায় এবং তাকে ছুটির ৫ মিনিট আগে কর্মস্থল থেকে ছেড়ে দেয়। তা না হলে একসাথে সবাই চলাচলে গর্ভবতী আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে,
৮. পিসি (পারটিসিপেশন) কমিটি এবং অন্যান্য সদস্যদের সাথে দেখা করা এতে করে সম্পর্ক মধুর হয় । এছাড়াও অনেক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়,
৯. সকল শ্রমিক তাদের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি বা পিপিই সঠিক ভাবে ব্যাবহার করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা, যদি না ব্যবহার করে তাহলে ব্যাবহার এর সুফল বলে উৎসাহ দেয়া,
১০. ফ্লোর এ আইলস মার্ক বাধাগ্রস্থ আছে কিনা, যদি থাকে ওই লাইন বা ফ্লোরে এ দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি কে সচেতন করা,
১১. ফ্লোর ডাস্ট বা অপ্রয়োজনীয় কিছু পরে থাকলে ক্লিনার কে দিয়ে পরিষ্কার করানো,
১২. ফার্স্ট এইড বক্স বাধা মুক্ত আছে কিনা, সেই সাথে ফার্স্ট এইডার দের সাথে দেখা করা, যাতে শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় সজাগ থাকে, প্রয়োজনে মেডিকেল এ যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া,
১৩. টয়লেট এ চেক করা যেমন: জুতা, টাওয়াল, সাবান এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা, না থাকলে ক্লিনার কে অবগত করানো,
১৪. একই সাথে ফ্লোরে পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা আছে কিনা চেক করা,
১৫. গার্মেন্টস হলে, কাটিং সেকশনে কাটার ম্যান মেটাল হ্যান্ড গ্লাভস ব্যাবহার করছে কিনা এবং সিজার বেধে কাজ করছে কিনা চেক করা,
১৬. প্রতিদিন ফ্লোর ভিজিট করে যে যে সমস্যা বা মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো ডাইরিতে নোট করে আনা এবং ম্যানেজমেন্ট এর সাথে আলোচনা করে সমাধান করার প্রচেষ্টা করা,
১৭. তারপর শ্রমিকদের সচেতন করার লক্ষে প্রতিদিনের ট্রেনিং এর জন্য প্রত্যেক শাখা বা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কে অবহিত করা যেন ট্রেনিং সময় শ্রমিকদের ট্রেনিংস্থলে যথা সময়ে পাঠিয়ে দেয়,
১৮. শ্রমিকদের যে ট্রেনিং করানো খুব দরকার সেই বিষয়ে প্রোডাকশন বা বিভাগের ম্যানেজার থেকে শুরু করে শাখা বা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত ইনচার্জ দের বুঝানো, ফলে তারাও আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক ট্রেনিং এর জন্য পাঠিয়ে দেবে,
১৯. কেন্টিন ফলোআপ করা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা, কেন্টিন পরিচালনায় যিনি দায়িত্ব পালন করছেন তার সাথে সাক্ষাৎ করা, খাবারের মান ও মূল্য চেক করা,
২০. প্রতি সপ্তাহে পিসি কমিটির সদস্য নিয়ে অভিযোগ বক্স খোলা, খোলার সময় ছবি তোলা, কোনো অভিযোগ পেলে ম্যানেজমেন্ট কে দেখানো, ম্যানেজমেন্ট অভিযোগ এর সমাধান করলে সেটার ফলো আপ রাখা।প্রাপ্য অভিযোগ একটা রেজিষ্টার খাতায় সংরক্ষণ করা এবং তোলা ছবি, সময় ,তারিখ ও বার উল্লেখ করে রেজিস্ট্রি খাতায় লিপিবদ্ধ করা,
২১. পিসি কমিটি ২ মাস পরপর এবং সেইফটি কমিটি প্রতি ৩ মাস পরপর ও অন্যান্য কমিটি যদি থাকে সেইগুলো নোটিশ প্রদান থেকে শুরু করে মিটিং এর যাবতীয় কার্যাদি সম্পূন্ন করা,
২২. চাইল্ড কেয়ার এ বাচ্চাদের খোঁজ খবর নেয়া, তাদের ঠিক মত খাবার বা অন্যান্য সুবিধা যা যা প্রাপ্য তা যেনো ঠিক মত পায় সেই বিষয়ে যিনি দায়িত্বে আছেন পরামর্শ করা এবং রেজিষ্টার খাতা চেক করা,
২৩. মেডিকেল ডক্টর ও নার্সের সাথে কুশল বিনিময় করা, সেই সাথে মেটার্নিটি ফলোআপ রেজিস্ট্রার ঠিক মত হচ্ছে কিনা চেক করা কোন শ্রমিকের অসুস্থতার কারণে ছুটি লাগলে পরামর্শ করা,
২৪. প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় শ্রমিকদের কারখানা আইন শৃংখলা বিষয়ে allowance করা,
২৫. গার্মেন্টস হলে অডিট বা বায়ার ফেস করার যে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সে দিকে সোচ্চার থাকা এবং ওয়েলফেয়ার সংক্রান্ত সকল ট্রেনিং, মিটিং , মেটার্নিটি রেজিষ্টার সহ অন্যান্য রেজিস্ট্রার আপডেট রাখা,
২৬. বিভিন্ন চেক লিস্ট যেমন: টয়লেট চেকলিস্ট, ফার্স্ট এইড চেক লিস্ট ঠিক মত আপডেট করা হয় কিনা ফলোআপ করা,
২৭. পিপিই রেজিস্ট্রার খাতায় যে শ্রমিকের পিপিই দরকার তার নাম, আইডি নাম্বার, পদবী, শাখা লিখে লিপিবদ্ধ করা
ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখানে যতগুলো পয়েন্ট উল্লেখ করা আছে, বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি । একজন কল্যাণ কর্মকর্তা মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সেতু বন্ধন হিসাবে কাজ করে। তাই মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখাই হলো একজন ওয়েলফেয়ার অফিসার বা ওয়েলফেয়ারের প্রধান দায়িত্ব।
এখন যারা যারা জানলেন তারা যদি ইন্টারভিউ বোর্ডে স্মার্টভাবে মুখে মৃদ হাসি নিয়ে উপস্থাপন না করতে পারেন, একটু আফসোস লাগবে। আপনি যদি নির্দিষ্টও বিষয়ে জেনে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে যান এবং জানা বিষয়গুলো তাদের জানাতে পারেন, তবে চাকুরি হবে কি হবে না, সেটা তাকদিরের উপর ছেড়ে দিবেন শুধু । তবে সেই সাথে শ্রম আইন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, অডিট সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং সব শেষে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দক্ষতা থাকতে হবে।
বি: দ্র: যদিও এখানে ওয়েলফেয়ার রিলেটেড কাজ বলতে বেশিরভাগ গার্মেন্টস সেক্টরের উদাহারন দেওয়া হয়েছে কারণ সেখানে ওয়েলফেয়ারের কাজের পরিধি অনেকটা ব্যপ্তি জুড়ে থাকে । আমার এই ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ ধীরে ধীরে নিয়ে আসবো । তবে আমার লেখায় সরকারী বা ব্যাংক নয়, বরং বেসরকারি ম্যানুফাকচারিং কোম্পানির দিকগুলো ফুটে উঠবে ।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৬
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: আপনি এই কি এই পদে কাজ করতে আগ্রহী ? তাহলে এপ্লাই করতে থাকুন । ক্যারিয়ার বিষয়ক পোস্ট দেওয়া অর্থ এই না যে লোকজন ঠিক ঐ নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারের শুন্য পদ হাতে নিয়ে বসে থেকে পোস্ট করে ।
ধন্যবাদ আপনাকে কমেন্ট করার জন্য
২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: গুড পোষ্ট।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০১
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৪
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
এই পদে চাকুরী আপনার কাছে আছে?